ঃএরপর থেকে আমি বহুবর্ণের নারীর মাঝে তাকে খুজে পাওয়ার চেষ্টা করছি । ভুলে থাকার চেষ্টা করছি কিন্তু পারিনি ।
এটা বলে আকাশের দিকে উদাস তাকিয়ে রইলো অনিমেষ ।
আন্টির বাসা থেকে রাতের খাবার খেয়ে হোস্টেলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে হঠাত মনে হলো হোস্টেলে যাবোনা । রেললাইনে সারারাত হাটবো । কাওরানবাজার থেকে মগবাজারের দিকে রেললাইন ধরে হাটার সময় খোলা একটা যায়গায় আমি বসে আছি । আমার ঠিক সামনেই বসে আছে অনিমেষ । আমার মতই নিশাচর । সে বলে চলেছে তার জীবনের গল্প । মাধবীলতার গল্প । ভার্সিটিতে উঠার পর থেকেই মাধবীলতার সাথে পরিচয় । মেয়েটা সবার থেকে আলাদা । একপর্যায়ে ভাললাগা, ভালবাসা । অনিমেষ মাধবীলতা দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসতো । মাধবীলতা সবসময় অনিমেষকে বলতো “ সত্যিকারের প্রেম হচ্ছে সেটা যার মাধ্যমে দুজনের মাঝে ভাল কিছু গুন যুক্ত হয় । তুমি ভালভাবে পড়াশুনা করো । আমি তোমাকে সবার থেকে উপরে দেখতে চাই । ” অনিমেষ বলতো “পড়াশুনা তো করবোই , বাট তোমাকে একটু সময় দেই । প্রিয় মানুষকে দেয়া সবচাইতে দামী গিফট হলো তাকে সময় দেয়া । যেটা টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না ” । মাধবীলতা বলতো “ তবুও তোমাকে পড়তে হবে আরো ভাল করে । আমিতো আর চলে যাচ্ছিনা ।” অনিমেষ চিন্তা করে দেখলো এটাও ঠিক । একদিন সে মাধবীলতাকে বললো “ আজ থেকে আমি পড়া শুনায় আরো একটু বেশি সময় দিবো । তোমার সময় কমে গেলো । মন খারাপ করনা’’ । মাধবীলতা হেসে বললো “ মন খারাপের কি আছে ? আমি তোমার ছিলাম, আছি ,থাকবো ’’ । অনিমেষ মাধবীলতাকে অনেক বিশ্বাস করতো । সে পড়ায় মনযোগ দিলো । আর তখনই শুরু হলো মাধবীলতার অভিযোগ “ তুমি আমায় আজকাল সমই ই দাওনা , ভুলেই যাচ্ছো আমায় ”। অথচ অনিমেষ যথেষ্ট সময় দিতো মাধবীলতাকে । মাধবীলতাদের বাড়িতে সবাই অনিমেষকে চিনতো , কিন্তু তবুও অনিমেষ মাধবীলতার অনুমতি ছাড়া রাতে ফোন দিতো না । মাধবীলতা কেমন যেন চেঞ্জ হয়ে গেলো হঠাত । সে আর বাইরে দেখা করতে আসে না, ক্যাম্পাসে কথা বলে না ,ফোন দিলে রিসিভ করে না । রাতে বিভিন্ন অজুহাতে ফোন দিতে নিষেধ করে । আজ বাবা জেগে থাকবে, কাল গেষ্ট আসছে, পরশু বান্ধবীর বাসায় থাকবো এভাবে এড়িয়ে চলতে শুরু করে মাধবীলতা । হঠাত একদিন অনিমেষ রাতে ফোন দিয়ে দেখে ওয়েটিং । পরের দিন মাধবীলতা জানায় ছোট বোনের কাছে ফোন ছিলো । পরের দিন রাতেও ফোন দিয়ে ফোন বিজি পায় । এভাবে প্রতিটি রাত ফোন বিজি । যেহেতু মাধবীলতাকে অনিমেষ অন্ধের মত বিশ্বাস করতো তাই সন্দেহ করেনি । অনিমেষের কথা ছিলো মাধবীলতা যদি বলে সুর্য পশ্চিমে উঠে তবু আমি বিশ্বাস করি । কিন্ত একপর্যায়ে ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায় ।কারন ইদানিং মাধবীলতা তাকে অনেক এড়িয়ে চলছে । একদিন রাতে অনিমেষ চিন্তা করে সে দেখবে কত রাত কথা বলে ।ওয়েটিং ওয়েটিং ওয়েটিং । রাত ৫ টার দিকে মাধবীলতা ফোন ধরে । খুব স্বাভাবিক ভাবে সে অনিমেষকে জানায় “ দেখো অনিমেষ, তোমার সাথে আমার আর রিলেশন রাখা সম্ভব নয় । আজ থেকেই তোমার আমার সব সম্পর্ক শেষ’’। মাধিবীলতা ফোন কেটে দেয় । অনিমেষ বার ফোন দেয় মাধবীলতা ফোন কেটে ফোন বন্ধ করে দেয় ।
অনিমেষ আমায় বলতে থাকে
ঃ বুঝলে বন্ধু যখন তুমি রিলেশন রাখতে যাবে তখন তোমার ক্যারিয়ার থাকবেনা । আর যখন ক্যারিয়ার এর দিকে মন দিবে তখন রিলেশন থাকবেনা । মেয়েরা তোমার কাছে দুইটাই চাবে । তাকে সময় দিতে হবে আবার তোমার ক্যারিয়ার ঠিক রাখতে হবে ।
আমি অবাক হয়ে অনিমেষের কথা শুনতে থাকি ।
ঃ চেষ্টা করেছিলাম মাধবীলতাকে ফিরিয়ে আনতে বাট পারিনি আসলে সে অনেক আগে থেকে একটা রিলেশন করতো বাট আমায় কখনো বলেনি । বললেই পারতো । অভিনয় এর দরকার ছিলো না । সেই ছেলেটার সাথে কিছুটা মনমালিন্য থাকায় সে আমার সাথে রিলেশন করে । বাট ওই ছেলেটা যখন ফিরে আসে তখন আমায় ছুড়ে ফেলে । এরপর থেকে আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় । আসলে আমি ছোট ছোট বিষয় গুলোও তাকে নিয়ে ভাবতাম । তাই একা একা আর স্বপ্ন সাজাতে পারিনি । এখন পাগলের মত ঘুরে বেড়াই । বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিলো । সে সব কিছুই পুরন করতে পারিনি ।
আমিও উদাস হয়ে যায় অনিমেষের কথায় । এই পৃথিবীতে যারা পাগল তারা কিছুনা কিছু ভালবেসেই পাগল হয়েছে । নিজেকেও পাগল মনে হচ্ছে । আমিওতো বালিকার প্রেমে হারিয়ে ফেলেছি নিজস্ব সত্বা । সেই বিদ্রোহী ভাব, সেই একলা চলতে হয় , সেই অসম্ভব কিছু নেই । সেই একসময় বলতাম যদি ভাল না বাসো তবে পরোয়া করিনা ।
মসজিদে মাইকের শব্দে চেতনা ফিরে আসে “সেহেরি খাওয়ার সময় শেষ ।আর কেউ সেহেরি খাবেননা । ...... ”আজকেও সেহেরি না খেয়েই রোজা রাখতে হবে । অনিমেষ কখন যে চলে গেছে খেয়াল করিনি । একা বসে আছি রেললাইনে । যখন অনুভব তার অনুভুতি হারিয়ে ফেলে, তখন মানুষ ভীষন রকম প্রাকৃতিক হয়ে ওঠে । জীবনে অনেক কষ্ট বেদনা হাসি কান্না লুকিয়ে থাকে । এমন কিছু প্রশ্ন যা বিবেককে নাড়া দেয় কিন্তু প্রকাশ করা যায় না আবার উত্তরও খুজে পাওয়া যায়না । এমন কিছু কষ্ট যা প্রকাশ করা যায় না অথচ এর আগুনে পুড়ে মরতে হয় । কিছু বেদনা যা বুকের গভীরে লুকিয়ে থাকে, প্রকাশিত হয়না আবার সহ্যও হয়না । সত্যি বলতে যার জীবনটা কষ্টের মধ্যে সে কষ্ট উপলব্ধি করতে পারেনা ।
উঠে দাড়াই, হাটা শুরু করি । অচেনা পথিক কোথা যাবি চল.........