somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনিমেষ, মাধবীলতা কিংবা আমার গল্প

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঃএরপর থেকে আমি বহুবর্ণের নারীর মাঝে তাকে খুজে পাওয়ার চেষ্টা করছি । ভুলে থাকার চেষ্টা করছি কিন্তু পারিনি ।
এটা বলে আকাশের দিকে উদাস তাকিয়ে রইলো অনিমেষ ।
আন্টির বাসা থেকে রাতের খাবার খেয়ে হোস্টেলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে হঠাত মনে হলো হোস্টেলে যাবোনা । রেললাইনে সারারাত হাটবো । কাওরানবাজার থেকে মগবাজারের দিকে রেললাইন ধরে হাটার সময় খোলা একটা যায়গায় আমি বসে আছি । আমার ঠিক সামনেই বসে আছে অনিমেষ । আমার মতই নিশাচর । সে বলে চলেছে তার জীবনের গল্প । মাধবীলতার গল্প । ভার্সিটিতে উঠার পর থেকেই মাধবীলতার সাথে পরিচয় । মেয়েটা সবার থেকে আলাদা । একপর্যায়ে ভাললাগা, ভালবাসা । অনিমেষ মাধবীলতা দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসতো । মাধবীলতা সবসময় অনিমেষকে বলতো “ সত্যিকারের প্রেম হচ্ছে সেটা যার মাধ্যমে দুজনের মাঝে ভাল কিছু গুন যুক্ত হয় । তুমি ভালভাবে পড়াশুনা করো । আমি তোমাকে সবার থেকে উপরে দেখতে চাই । ” অনিমেষ বলতো “পড়াশুনা তো করবোই , বাট তোমাকে একটু সময় দেই । প্রিয় মানুষকে দেয়া সবচাইতে দামী গিফট হলো তাকে সময় দেয়া । যেটা টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না ” । মাধবীলতা বলতো “ তবুও তোমাকে পড়তে হবে আরো ভাল করে । আমিতো আর চলে যাচ্ছিনা ।” অনিমেষ চিন্তা করে দেখলো এটাও ঠিক । একদিন সে মাধবীলতাকে বললো “ আজ থেকে আমি পড়া শুনায় আরো একটু বেশি সময় দিবো । তোমার সময় কমে গেলো । মন খারাপ করনা’’ । মাধবীলতা হেসে বললো “ মন খারাপের কি আছে ? আমি তোমার ছিলাম, আছি ,থাকবো ’’ । অনিমেষ মাধবীলতাকে অনেক বিশ্বাস করতো । সে পড়ায় মনযোগ দিলো । আর তখনই শুরু হলো মাধবীলতার অভিযোগ “ তুমি আমায় আজকাল সমই ই দাওনা , ভুলেই যাচ্ছো আমায় ”। অথচ অনিমেষ যথেষ্ট সময় দিতো মাধবীলতাকে । মাধবীলতাদের বাড়িতে সবাই অনিমেষকে চিনতো , কিন্তু তবুও অনিমেষ মাধবীলতার অনুমতি ছাড়া রাতে ফোন দিতো না । মাধবীলতা কেমন যেন চেঞ্জ হয়ে গেলো হঠাত । সে আর বাইরে দেখা করতে আসে না, ক্যাম্পাসে কথা বলে না ,ফোন দিলে রিসিভ করে না । রাতে বিভিন্ন অজুহাতে ফোন দিতে নিষেধ করে । আজ বাবা জেগে থাকবে, কাল গেষ্ট আসছে, পরশু বান্ধবীর বাসায় থাকবো এভাবে এড়িয়ে চলতে শুরু করে মাধবীলতা । হঠাত একদিন অনিমেষ রাতে ফোন দিয়ে দেখে ওয়েটিং । পরের দিন মাধবীলতা জানায় ছোট বোনের কাছে ফোন ছিলো । পরের দিন রাতেও ফোন দিয়ে ফোন বিজি পায় । এভাবে প্রতিটি রাত ফোন বিজি । যেহেতু মাধবীলতাকে অনিমেষ অন্ধের মত বিশ্বাস করতো তাই সন্দেহ করেনি । অনিমেষের কথা ছিলো মাধবীলতা যদি বলে সুর্য পশ্চিমে উঠে তবু আমি বিশ্বাস করি । কিন্ত একপর্যায়ে ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায় ।কারন ইদানিং মাধবীলতা তাকে অনেক এড়িয়ে চলছে । একদিন রাতে অনিমেষ চিন্তা করে সে দেখবে কত রাত কথা বলে ।ওয়েটিং ওয়েটিং ওয়েটিং । রাত ৫ টার দিকে মাধবীলতা ফোন ধরে । খুব স্বাভাবিক ভাবে সে অনিমেষকে জানায় “ দেখো অনিমেষ, তোমার সাথে আমার আর রিলেশন রাখা সম্ভব নয় । আজ থেকেই তোমার আমার সব সম্পর্ক শেষ’’। মাধিবীলতা ফোন কেটে দেয় । অনিমেষ বার ফোন দেয় মাধবীলতা ফোন কেটে ফোন বন্ধ করে দেয় ।
অনিমেষ আমায় বলতে থাকে
ঃ বুঝলে বন্ধু যখন তুমি রিলেশন রাখতে যাবে তখন তোমার ক্যারিয়ার থাকবেনা । আর যখন ক্যারিয়ার এর দিকে মন দিবে তখন রিলেশন থাকবেনা । মেয়েরা তোমার কাছে দুইটাই চাবে । তাকে সময় দিতে হবে আবার তোমার ক্যারিয়ার ঠিক রাখতে হবে ।
আমি অবাক হয়ে অনিমেষের কথা শুনতে থাকি ।
ঃ চেষ্টা করেছিলাম মাধবীলতাকে ফিরিয়ে আনতে বাট পারিনি আসলে সে অনেক আগে থেকে একটা রিলেশন করতো বাট আমায় কখনো বলেনি । বললেই পারতো । অভিনয় এর দরকার ছিলো না । সেই ছেলেটার সাথে কিছুটা মনমালিন্য থাকায় সে আমার সাথে রিলেশন করে । বাট ওই ছেলেটা যখন ফিরে আসে তখন আমায় ছুড়ে ফেলে । এরপর থেকে আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় । আসলে আমি ছোট ছোট বিষয় গুলোও তাকে নিয়ে ভাবতাম । তাই একা একা আর স্বপ্ন সাজাতে পারিনি । এখন পাগলের মত ঘুরে বেড়াই । বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিলো । সে সব কিছুই পুরন করতে পারিনি ।
আমিও উদাস হয়ে যায় অনিমেষের কথায় । এই পৃথিবীতে যারা পাগল তারা কিছুনা কিছু ভালবেসেই পাগল হয়েছে । নিজেকেও পাগল মনে হচ্ছে । আমিওতো বালিকার প্রেমে হারিয়ে ফেলেছি নিজস্ব সত্বা । সেই বিদ্রোহী ভাব, সেই একলা চলতে হয় , সেই অসম্ভব কিছু নেই । সেই একসময় বলতাম যদি ভাল না বাসো তবে পরোয়া করিনা ।
মসজিদে মাইকের শব্দে চেতনা ফিরে আসে “সেহেরি খাওয়ার সময় শেষ ।আর কেউ সেহেরি খাবেননা । ...... ”আজকেও সেহেরি না খেয়েই রোজা রাখতে হবে । অনিমেষ কখন যে চলে গেছে খেয়াল করিনি । একা বসে আছি রেললাইনে । যখন অনুভব তার অনুভুতি হারিয়ে ফেলে, তখন মানুষ ভীষন রকম প্রাকৃতিক হয়ে ওঠে । জীবনে অনেক কষ্ট বেদনা হাসি কান্না লুকিয়ে থাকে । এমন কিছু প্রশ্ন যা বিবেককে নাড়া দেয় কিন্তু প্রকাশ করা যায় না আবার উত্তরও খুজে পাওয়া যায়না । এমন কিছু কষ্ট যা প্রকাশ করা যায় না অথচ এর আগুনে পুড়ে মরতে হয় । কিছু বেদনা যা বুকের গভীরে লুকিয়ে থাকে, প্রকাশিত হয়না আবার সহ্যও হয়না । সত্যি বলতে যার জীবনটা কষ্টের মধ্যে সে কষ্ট উপলব্ধি করতে পারেনা ।
উঠে দাড়াই, হাটা শুরু করি । অচেনা পথিক কোথা যাবি চল.........
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১:২৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×