somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ ও কনস্পিরেসি থিওরি

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে আমার এক সাংবাদিক বন্ধু স্ট্যাটাস দিয়েছে, ‘’ফিলিস্তিনে ইসরাইলের হত্যাকাণ্ডের অনেকটা দায় আরব রাষ্ট্রগুলোর নিতে হবে। ছয় দিন হত্যাকাণ্ড চলার পর আরব লিগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের মিটিং হল। মিশর যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দেয়ার পর ইসরাইল তা গ্রহণ করেছে। কি কারণে হামলার আগেই তারা ইসরাইলকে নিবৃত্ত করলেন না? মিশর, তুরস্ক আর ইরান সম্মিলিত কোনো প্রস্তাব দিলে ইসরাইল কেন তার বাপ আমেরিকাও তা মানতে বাধ্য।’’ সাম্প্রতিক গাজায় যা হয়েছে বা হচ্ছে তা নি:সন্দেহে দু:খজনক। তবে এটা নতুন কিছু নয়। সন্ত্রাসবাদ যে কোন পন্থায় নিজের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে। সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য আমেরিকার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ প্রশাসন ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ও ইরাকে হামলা চালায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট বিশ্বব্যাপী তাদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য সন্ত্রাস দমনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করে। যা আজও অব্যাহত রয়েছে।

সন্ত্রাসবাদ কি?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর সন্ত্রাসবাদকে ব্যাখ্যা করেন এভাবে, পরিকল্পিতভাবে অনৈতিক সহিংসতা বা অনৈতিক সহিংসতার হুমকি প্রদানের মাধ্যমে বারবার ভয় প্রদর্শন করা, যা রাজনৈতিক, ধর্মীয় অথবা আদর্শগত কারণে কোন লক্ষ্য উদ্ধারের জন্য সরকার বা সমাজকে দমন করা বা ভয় দেখিয়ে বশে আনাকে সন্ত্রাসবাদ বলে। এ সংজ্ঞা হতে তিনটি বিষয় স্পষ্ট হয়, যা হলো- ১. সহিংসতা ২. ভয় ৩. দমন করা।

রিচার্ড রুবেনস্টাইন বলেন, সন্ত্রাসবাদ হলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত এক প্রকার হিংসাত্মক কাজ। যেখানে জনগনের প্রতিনিধিত্বের দাবী নিয়ে একটি ছোট গোষ্ঠী হিংসাত্মক কাজ করে। যা অপরাধমূলক এবং বেআইনি,রাষ্ট্রব্যবস্থার আইনের দ্বারা অনুমোদিত নয়।

অধ্যাপক ব্রাইন জেনকিন বলেন, সন্ত্রাসবাদ হলো রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য শক্তি প্রয়োগ বা শক্তি প্রয়োগের হুমকি।

সুতরাং সন্ত্রাসবাদ হলো কোন সংগঠিত গোষ্ঠী যারা উদ্দেশ্য অর্জন বা রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার জন্য সরকার বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনা করে। আর এ হিংসাত্মক কার্যকলাপ রাষ্ট্রের কাছে হয়তো বা অনৈতিক, কিন্তু তাদের কাছে সেটা যৌক্তিক। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রও সন্ত্রাস হতে পারে, তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য, আবার ব্যক্তিও সন্ত্রাস হতে পারে। তবে আধুনিককালে বেসরকারী সংস্থার চেয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রামূলক কর্মকান্ডে রাষ্ট্রের ভূমিকাই বেশি লক্ষ্যনীয়।

যুদ্ধ কি ?
ইংলিশ ডিকশনারী অনুসারে,যুদ্ধ হল বিভিন্ন জাতি,রাষ্ট্র বা শাসকবর্গের মধ্যে অথবা একই দেশ বা রাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে পরিচালিত শত্রু তামূলক সংঘর্ষ বিশেষ কোন বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে কিংবা রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থিত কোন বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহার।

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় বলা হয়েছে, পরস্পর বিরোধী নীতি অনুসরণ এবং একে অপরের উপর এর নীতি চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। এমন দুজন মানুষের মধ্যে সংগঠিত শক্তির ব্যবহারের নামই যুদ্ধ।”

সুতরাং যুদ্ধ বলতে দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্যে আক্রমন ও পাল্টা আক্রমন তথা সশস্ত্র প্রতিযোগিতামূলক সংঘর্ষকে বুঝায়। অর্থাৎ কোন শত্রু রাষ্ট্রকে পদানত করার উদ্দেশ্যে উক্ত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াকে যুদ্ধ বলে। এ সশস্ত্র প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক রাষ্ট্রের চরম ও পরম লক্ষ্য থাকে প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রকে পদানত করে স্বীয় শর্তাধীনে শান্তি স্থাপন করতে বাধ্য করা। তাই কোন রাষ্ট্র একতরফাভাবে সশস্ত্র আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে গেলে এবং তদুত্তরে অপর রাষ্ট্র অনুরূপ সশস্ত্র আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ না চালিয়ে গেলে তাকে যুদ্ধ বলা যায় না।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বর্তমান বিশ্বে একটি চলমান প্রক্রিয়া। মূলত বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে ২০০১ সালে মার্কিন বিমান ছিনতাই ও টুইন টাওয়ারে বিমান হামলাকে কেন্দ্র করেই এ যুদ্ধের যাত্রা শুরু। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এ হামলার প্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য মার্কিন কংগ্রেসে আইন পাশ করা হয় এবং এ পরপরই শুরু হয় বিশ্বের সর্বত্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। সন্ত্রাস শব্দটির উদ্ভব হয় ফ্রান্সে ১৭৮৯-১৭৯৯ সালে ফরাসী বিপ্লব চলাকালীন সময়ে। তাই ধারণা করা হয় তখন থেকেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে দুই বৃহৎ শক্তিব্লকের মধ্যে নিজেদের দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকলে,উত্তেজনাপূর্ণ বিশ্বে সন্ত্রাসীদের কাজ করার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং ব্লক বিভক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সন্ত্রাসের অবাধ বিস্তারের সুযোগ করে দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালে কেনিয়ার মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলা, ২০০০ সালে ইউএসএস কোল হামলার ঘটনা ঘটে, যা যুক্তরাষ্ট্রেকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর ঘটনার পর হতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অভিযান চালায়। যার মূল কথা হলো সন্ত্রাসী সংগঠন এবং যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালনা করা। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালের অক্টোবর নাগাদ তার সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের কার্যক্রমে ন্যাটোভূক্ত দেশগুলোকে শরীক করে এবং টুইন টাওয়ারে হামলার জন্য আলকায়দা এবং এর নেতা ওসামা বিন লাদেনকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করে। এছাড়া আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে চিহ্নিত করা হয় আলকায়দার মদদদাতা এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে। এ সম্পর্কে আফগানিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করলে তৎকালীন বুশ প্রশাসন ২০০১ সালে আফগানিস্তানে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের সূত্রপাত করে। বুশের এই আভিযানকে বলা হয় আপারেশন ইনজাস্টিস ২০০২। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক এই যুদ্ধ খুব দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। একই সময়ে ফিলিপাইনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আলকায়দা, জামা-ই-ইসলামিয়া, আবু সায়াফের অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইন আর্মি কর্তৃক সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চালানো হয়। ইথিওপিয়া, জিবুতিতেও একই কারনে অভিযান চালানো হয়। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে সন্ত্রাসের মদদ দাতা ও গণ বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির অযুহাত তুলে ২০০৩ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন যৌথভাবে ইরাক হামলা শুরু করে। ২০০৪ সালের দিকে পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে অভিযান চালানো হয় আল-কায়দার আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে। আর যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ফিলিস্থিন, লেবাননসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই পরিচালিত হয়।

জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের ক্ষেত্রে বেশ কিছু লক্ষ্যের কথা বলেন। সেগুলো হল - সন্ত্রাসীদের পরাভূত করা। যেমনঃ ওসামা-বিন-লাদেন, আবু মুসহাব-আল-জারওয়াই এবং তাদের সংগঠন গুলোকে ধ্বংস করা। সন্ত্রাসী এবং তাদের সংগঠন গুলোকে চিহ্নিত করা, সঠিক স্থান বাহির করা এবং তা ধ্বংস করা। সন্ত্রাসীদের অনুদান দেয়া, সমর্থন করা এবং আশ্রয় দেয়া হতে বিরত থাকা। সন্ত্রাসীদের কোন রাষ্ট্র কর্তৃক আনুদান দেয়া বন্ধ করা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক গ্রহনযোগ্য জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং সমর্থন করা। সন্ত্রাসবাদেও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম ও ইচ্ছুক দেশসমূহের সাথে কাজ করা । দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সমর্থ করে তুলে। সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে কাজ করা জন্য রাষ্ট্রগুলোকে প্ররোচিত করা। অনিচ্ছুক রাষ্ট্রগুলোকে সন্ত্রাসবাদের পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য বাধ্য করা। সন্ত্রাসীরা আশ্রয় ও সাহায্য পায় এমন স্থানসমূহকে ধ্বংস করা। সন্ত্রাসীরা সুযোগ নিতে পারে এমন সকল অবস্থার অবসান ঘটানো। দুর্বল রাষ্ট্রসমূহকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সাহায্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার ব্যবস্থা করা। আদর্শগত এ যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া। ঘরে-বাইরে সর্বত্র যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের রক্ষা করা। আঞ্চলিকতার ধারনাকে দৃঢ় করা। দেশের ভেতওে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বিশ্ব দুটি মেরুতে বিভক্ত হয়। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় এই মেরু প্রবনতা প্রকট হতে দেখা যায়। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের প্রেক্ষাপটে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়। এ অবস্থানে ঠান্ডা যুদ্ধ পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র তার পুজিবাদি ধ্যান ধারনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয় এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের সামরিক এবং রাজনৈতিক জোট গঠন করে নতুন ভূমিকায় অবতির্ণ হয়। নব্বই দশকে উপসাগরীয় যুদ্ধে এবং সোমালিয়া ও হাইতি সংকটে মার্কিন ভূমিকা সত্যকেই স্পষ্ট করে তুলে। এ অবস্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার একক আধিপত্য গড়ে তোলার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নব্য উপনিবেশ গড়ে তোলে এবং বিশ্বায়ন মুক্ত বাজার অর্থনীতির মাধ্যমে তার বাজার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে তৈরি করে তাবেদারি রাষ্ট্র ও সরকার যার অন্যতম উদাহরন হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ইসরাইল। এই নীতির আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, মার্কিন নীতির উদ্দেশ্য বিশ্বের বুকে আধিপত্য বিস্তার করা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর বিদেশী সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সংজ্ঞা ও প্রদান করে। তাদের মতে - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী সংগঠনটি সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে হবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার মত কাজে সংগঠনটিকে যুক্ত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ২০০১ সালের ৫ই অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেসব সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে তালিকা প্রকাশ করে তা হলঃ ১. আবু নিদাল অর্গানাইজেশন (এ এন ও) ২.আবু সায়াফ গ্রুপ ৩. আর্মড ইসলামিক গ্রুপ ৪. আউস সিনরিকিয়া ৫. বাস্ক ফাদারল্যান্ড এ্যান্ড লিবার্টি ৬.গামা’স আল ইসলামিয়া (ইসলাম গ্রুপ) ৭. ঘামাস ৮. হরকাতুল মুজাহিদিন ৯.হিজবুল্লাহ্ ১০. ইসলাইমক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্থান ১১. আল জিহাদ ১২. কাহানে চাই ১৩. কুর্দিস্থান ওয়াকার্স পার্টি ১৪. এল টি টি ই ১৫. মুজাহিদিনে খাল্ক অর্গানাইজেশন ১৬. ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ১৭. প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদ ১৮. প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট ১৯. টি এফ এল পি ২০. পি এফ এল পি- জি সি ২১. আল-কায়েদা ২২. রেড আই আর এ ২৩. রেভ্যুলেশনারী আর্মড ফোর্সেস আব কলাম্বিয়া ২৪. রেভ্যুলেশনারী নিউক্লি ২৫. রেভ্যুলেশনারী পিপলস লিবারেশন আর্মি ফ্রন্ট ২৬. শাইনিং পার্থ ২৭. ইউনাইটেড সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্সেস অব কলাম্বিয়া

সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের প্রথম শিকার আফগানিস্তান। ৯০ এর দশকের শেষের দিকে তালেবানরা যখন একটি ইসলামি আফগান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছিল তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এদেরকে ব্যাপক সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু ৯/১১ পরবর্তীতে জর্জ বুশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে আফগানিস্তানে। এই আক্রমনের লক্ষ্য ছিল টুইন টাওয়ার হামলার কথিত সন্দেহভাজন ওসামা-বিন-লাদেনকে গ্রেফতার করা এবং তার সহযোগী মোল্লা ওমরকে ক্ষমতা থেকে সরানো। কিন্তু এই হামলার মাধ্যমে তালেবানদেরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হলেও আফগানিস্তানে তালেবান একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিতে পরিনত হয় পাশাপাশি পাক-আফগান সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় এরা নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়। মূলত সোভিয়েত বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে মুজাহিদিন গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করেছিল তারাই আজ যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে তালেবান।

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের অপর শিকার হল ইরাক। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে যে ইরাক যুক্তরাষ্ট্রে জন্য একটি হুমকী। কারন দেশটির হাতে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এবং ইরাক আল-কায়েদাকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে। এক্ষেত্রে বুশ প্রসাশন জাতিসংঘের অস্ত্র পরিদর্শক দলকে ইরাকে পাঠালে তারা ইরাক পরিদর্শন করে এসে নিশ্চিত করে যে, সেখানে এরকম কোন মরনঘাতি অস্ত্র নেই। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের ব্যাপারে তাদের গোয়েন্দা তথ্যকে অতিরঞ্জিত করে শক্তি প্রয়োগের ব্যাপরে সিনেটের অনুমতি নিয়ে নেয়। জাতিসংঘের বিরোধীতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ২০শে মার্চ ২০০৩ সালে ক্রুজ মিসাইল হামলার মাধ্যমে ইরাকে আক্রমন শুরু করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এক ফোটাও বিধ্বংসী অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। ইরাক যুদ্ধের বিরোধীতা করে ব্লেয়ার মন্ত্রীসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিন কুক মন্তব্য করেন, “রাসায়নিক অস্ত্রের অযুহাত তুলে ইঙ্গো-মার্কিন শক্তি ইরাক আক্রমন করলেও আজ পর্যন্ত যে পরিমান রাসায়নিক অস্ত্র পাওয়া গেছে তার চেয়ে ইংল্যান্ডের রাডনোর হিলস (ইংল্যান্ডের সর্বাধিক বিক্রিত বোতলজাত পানি) এর এক বোতল পানিতে বেশী পরিমান রাসায়নিক উপাদান রয়েছে।” মূলত ইরাক আক্রমনের মূল লক্ষ্য ছিল ইরাকের তেল সম্পদের উপর যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা এবং মধ্য প্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ন্ত্রকের আসনে যুক্তরাষ্ট্রকে বসানো। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এক্ষেত্রে একটি উপলক্ষ্য মাত্র।

সন্ত্রসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট মিত্র হল পাকিস্তান। আফগানিস্থান আক্রমনের সময় পাকিস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানের ভূমি ও আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেয়। পাশাপাশি নিজেও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষনা করে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর এই ধরনের আচরন সাধারন মানুষ বিশেষত ধর্মীয় উগ্রপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর পছন্দ হয়নি। এ সুযোগে ধর্মীয় উগ্রপন্থি দলগুলোর সাথে যোগসাজসে তালেবান ও আলকায়েদা পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের সমর্থন ও প্রভাব বৃদ্ধি করতে থাকে। যার সর্বশেষ পরিনতি হল সোয়াত উপত্যাকায় শরীয়া আইন জারী এবং এ সকল এলাকা তালেবানদের দখলে চলে যাওয়া, এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদেও নির্মূলের নামে প্রায় প্রতিদিনই পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিসাইল হামলা চালাচ্ছে যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টার্গেট হচ্ছে নিরিহ মানুষ। অন্যদিকে ২০০৮ সালের ২৬-২৯ নভেম্বর ভারতের মুম্বাইতে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। যার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করছে। কারন লস্কর-ই-তয়্যিবা, আল-কায়েদা এসব সন্ত্রাসী সংগঠনকে পাকিস্তান লালন করছে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ পাকিস্তানীসহ আন্তর্জাতিক মহলের বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তানের আজকের এই পরিনতি পাকিস্তানে মার্কিন নীতি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানের অবস্থানরই ফলাফল।

যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের ক্ষেত্রে আল-কায়েদা এবং তালেবান শক্তিদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালে পাকিস্তানী আর্মি বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে অপারেশন চালানো শুরু করে । এর মধ্যে কয়েকজন আল-কায়েদা নেতাকে ধরতে এবং কিছু আল-কায়েদা নেতাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়, যাদের মধ্যে আল-কায়েদা নেতা খালেদ শেখ অন্যতম। তথাপি এ সমস্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এলাকায় এখন তালেবান নেতা হাজি ওমরের তত্ত্বাবধানে তালেবানরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মধ্য প্রাচ্যের সন্ত্রাসবাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিন। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের পরষ্পর বিরোধী কর্মকান্ড আন্তর্জাতিক সন্ত্রাবাদ বিশ্বে আলোচ্য বিষয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কেননা ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হলে তারা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেছে নেয়। এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনীদের এই স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলন দমন করার পক্ষে ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে একচ্ছত্র ভাবে সমর্থন দান করে এবং ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী হামাসকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করে। এর প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-আরব পরষ্পর মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল।

২০০৭ সালের মে মাসে উত্তর লেবাননে ফাতাহ্-আল-ইসলাম নামক একটি সশস্ত্র ইসলামিক সংগঠন এবং লেবানিজ সৈন্য দলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের ক্ষেত্রে লেবানন সরকারকে সামরিক সহযোগিতা প্রদান করে এবং ২০০৭ সালে লেবানন সরকার যুদ্ধে বিজয়ী হয়।

ইয়েমেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আল-কায়েদা বিরোধী লড়াইয়ের আর একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিনত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে আবস্থিত আল-কায়েদা ঘাটিতে ১৭ ডিসেম্বর ২০০৯ প্রথমবার, ২৪ ডিসম্বের দ্বিতীয়বার এবং ২৫ ডিসেম্বর ২০০৯ তৃতীয়বার ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো বাহিনীর সামরিক অপারেশন:
যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের ভূমিকায় অবতীর্ন হতে গিয়ে ন্যাটো বাহিনীর সহায়তায় বিভিন্ন দেশে সামরিক অপারেশন চালানো শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে- ১. অপারেশন নোবেল এগল ২. অপারেশন এগল এ্যসিস্ট ৩. অপারেশন একটিভ এনডেভার ৪. অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম ৫. অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম আফগানিস্তান ৬. অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম ফিলিপাইনস ৭. অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম হর্ন অফ আফ্রিকা ৮. অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম ট্রান্স সাহারা ৯. অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম।

আন্তর্জাতিক সামরিক সহায়তা:
৯/১১ ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন একত্রে সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রম শুরু করে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে সহ বিভিন্ন দেশ এই সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে অংশ নেয়। এক্ষেত্রে ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে ন্যাটো দি ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এ্যাসিস্টেন্স ফোর্স (আই এস এ এফ) নামে একটি সংগঠন গঠন করে যার নের্তৃত্বে আফগানিস্তানে সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রম গ্রহন করা হয় এবং বিভিন্ন দেশ থেকে সৈন্য প্রেরন করা হয়। যা নিুে দেয়া হলঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫৮,৭৮০, যুক্তরাজ্য ১০,০০০, জামার্নী ৪,২৮০, ইটালী ৩,২৩০, ফ্রান্স ৩,৭৫০, কানাডা ২,৮৩০, নেদারল্যান্ড ১,৯৫০, পোল্যান্ড ১,৯৫৫, অস্ট্রেলিয়া ১,৫৫০, রোমানিয়া ৯০০, তুরস্ক ১,৭৫০, সুইডেন ৫০০, স্পেন ১,০৬৫, ডেনমার্ক৭৪০, বুলগেরিয়া ৪৬০, নরওয়ে ৫০০, চেক রিপাবলিক৩৭০, মোট৯৭,৭৩০। তবে ২০০২ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমনের ঘোষণা দিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সাহায্যকারী রাষ্ট্রাসমূহের আগহে কিছুটা ভাটা পরে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে নিহতের সংখ্যাঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৮ সালের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তিন বছরে মার্কিন হামলায় ১ লাখ ৫১ হাজার ইরাকি মারা গেছে। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এভাবে হামলা অব্যাহত থাকলে এই সংখ্যা ২ লাখ ৯৪ হাজারে পৌছাবে।(প্রথম আলো-১১.০১.২০০৮) পারিবারিক স্বাস্থ্য জরিপ পর্যবেক্ষণ দলের এক জরিপ মতে, ইরাকেক সহিংসতায় ২০০৩-০৬ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১ লাখ ৫১ হাজার। (সমকাল ০১.১১.২০০৯)। ইউ এন এ্যাসিটেন্স মিশন ইন আফগানিস্তান ২০০৮ সালের এক রিপোর্টে বলা হয় যেখানে ন্যাটো ও তালেবাদের মৃতের সংখ্যা মাত্র ২৫০ জন। দি গার্ডিয়ান পত্রিকার ভাষ্য মতে, শুধু ২০০২ সালের জানুয়ারীতেই মারা যায় ৪৯ হাজার ৬০০ জন মানুষ। অন্যদিকে ইরাক, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর সৈন্য বাহিনীর খুব কমই মারা গেছে। যা একটি তালিকার মাধ্যমে দেখনো হলো- যুক্তরাষ্ট্র -৫১৬১, যুক্তরাজ্য-৩৯৫, কানাডা-১৩১, স্পেন-১০২, হাঙ্গেরী-৩, নেদারল্যান্ড-২৩, লাটভিয়া-৬, ফিনল্যান্ড-১, আজারবাইজান-১, ইটালি-৫৪, পোল্যান্ড-৩৬, এলসালভেদর-৫, ফ্রান্স-৩৫, ইউক্রেন-১৮, বুলগেরিয়া-১৩, পর্তুগাল-২, তুরস্ক-২, ফিজি-১, লিথুনিয়া-১, জর্জিয়া-৫, চেক রিপাবলিক-৪, স্লোভাকিয়া-৪, দক্ষিণ কোরিয়া ৩, ডেনমার্ক-৩৪, রোমানিয়া-১৪, এস্তোনিয়া-৮, থাইল্যান্ড-২, বেলজিয়াম-১, কাজাকিস্তান-১, জার্মানী-৩৯। মোট-৬,১২৫ জন। এটি অনেক আগের পরিসংখ্যান। বর্তমানে এই সংখ্যা যে অনেক অনেক গুণ বেড়েছে এটা স্পষ্টতই বলা যায়।

ইসলাম ও সন্ত্রাসের মধ্যকার দ্বন্দ্ব:
৯/১১ এর ঘটনা কি বিশ্বে কি ধর্ম যুদ্ধের সূত্রপাত করছে ? কেননা ১৯৯৩ সালে হাভর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্যামুয়েল পি হান্টিংটন তার ‘ দি ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন থিওরি ’ প্রদান করেন যেখানে তিনি বলেছেন- কোন আদর্শিক দ্বন্দ্ব বা অর্থনীতি আগামী দিনে নতুন করে সংকটের জন্ম দেবে না বরং সংস্কৃতি এবং ধর্মকে কেন্দ্র করেই নতুন করে সভ্যতার সংকটে জন্ম দেবে। আর হান্টিংটনের এই তত্ত্বেরই প্রতিফলন বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ ৯/১১ এর ঘটনার পর থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কোথাও কোন সন্ত্রাসী হামলা হলে সেটাকে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দেড় বিলিয়ন মুসলিমদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনকি ৯/১১এর টুইন টাওয়ার সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকেও যুুক্তরাষ্ট্র সরকার কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও মুসলমান অর্থাৎ ওসামা বিন লাদেন ও তার সংগঠন আল- কায়েদাকে দায়ী করে। এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সন্ত্রাসবাদের অজুহাত তুলে যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম রাষ্ট্র আফগানিস্তান ও ইরাকে হামলা, ইরানকে বিপদজনক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা, মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনীদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। যা এক প্রকার ধর্ম যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। নিম্নে একটি ছকের মাধ্যমে ৯/১১ এর পরে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলো কর্তৃক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট যে সকল দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমনের নামে যুদ্ধ ও অভিযান চালিয়েছে -২০০১ সালে আফগানিস্তানে আল- কায়েদা ও তালেবান বিরুদ্ধে , ২০০২ সালে ফিলিপাইনে আবু সায়াফ,জামা-ই-ইসলামিয়া বিরুদ্ধে, ২০০৩ সালে সন্ত্রাসী আল- কায়েদার মদদ দাতা হিসেবে ইরাকের বিরুদ্ধে, ২০০৬ সালে লেবাননে হিজবুল্লা,আল-কায়েদার বিরুদ্ধে, ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনে হামাসের বিরুদ্ধে, ২০০৪ সালে পাকিস্তান লস্কর-ই তইয়্যিবা, আল-কায়েদার বিরুদ্ধে,২০০৯ ইয়েমেনে আল-কায়েদার বিরুদ্ধে। এভাবে মুসলিম দেশগুলোকে একতরফাভাবে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়ে খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমনের নামে মুসলিম দেশগুলোতে যুদ্ধ চালাচ্ছে। অথচ ইসলাম শান্তিও ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে তোমরা শৃংঙ্খলাপূর্ণ পৃথিবীতে বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি করো না। মূলত ইসলামের শক্রুরা ইসলামকে বিপদগামী করার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে তা ইসলামের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন এর তত্ত্ব অনুযায়ী ইসলামের উদীয়মান শক্তিকে দাবিয়ে রাখার জন্য এটা ইসলামের সাথে পাশ্চাত্যের যুদ্ধ।

সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে মিডিয়া
২০০১ সালের ১১ সেপটেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলা এবং এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র কতৃক সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের অভিযান পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত ভূমিকা কি ছিল তা প্রচারের ক্ষেত্রে মিডায়া নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি। যেমন- দেখা যায় যে, সি বি এস, এবি সি,এন বি সি, ইউ এস এ টুডে, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট প্রভূতি সংবাদ মাধ্যম সমূহ প্রকৃত সত্য ঘটনা তুলে না ধরে নিজেদের মত সংবাদ প্রচার করে। যেমন- মার্কিন টেলিভিশন সি এন এন এর এক তথ্য অনুযায়ী ইরাকে নিহত যৌথ বাহিনীর সেনাদের মধ্যে ৪৩৫৬ জনই যুক্তরাষ্ট্রের। এক্ষেত্রে নিহত মার্কিন সেনা সংখ্যার গ্রহণযোগ্যতার হিসাব পাওয়া গেলেও আগ্রাসনের বলি ইরাকিদের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। কেননা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলো মিডয়ায় যুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করতে দেয়নি এবং যুদ্ধে কি রকম ক্ষতি তার সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে দেয়না। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে তাদের একক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এবং যেসব রাষ্ট্রকে তার নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ মনে করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার জন্য সেসব রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত বলে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে সন্ত্রাস দমনের নামে যুদ্ধ করছে। এ ধরনের প্রপাগান্ডার অফিসের নাম হচ্ছে সাই-অফস। সামরিক পরিভাষায় যেটিকে বলা হয় সাইকোজিক্যাল অপারেশন্স।লন্ডন প্রবাসী অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা জন পিলজারের ইরান সম্পর্কিত লেখায় বলেছেন যে, ইরানকে অবরুদ্ধ,বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল করে ফেলার কূটনৈতিক ও সামরিক প্রচারনায় পেন্টাগন ও হোয়াইট হলে পরিণত হয়েছে। কারণ আমেরিকা কোন ক্রমেই চাচ্ছে না ইরান পরমানু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে স্বয়ং সম্পূর্ণ হোক। কারণ ইরান যদি সত্যি সত্যি কার্যক্রম বন্ধ না করে তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্যের সম্ভাবনা হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়বে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু কর্মসূচি প্রশ্নে বাধ্যবাধকতা মানতে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

কনস্পিরেসি থিওরি ও সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ
কনস্পিরেসি থিওরি বলতে এমন একটি তত্ত্বকে বোঝানো হয় যেখানে যেকোন জিনিসকে সন্দেহজনক হিসেবে দেখা হয়। উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে- জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক উহষ্ণতা বৃদ্ধি রোধ করার জন্য কোপেনহেগেন সম্মেলন সহ অন্যান্য যেসব সম্মেলন ও চুক্তি হয়েছে তা মূলত উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে শোষণ করার জন্য একটি কৌশল বা ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করছে বলে বলা হচ্ছে। মূলত টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে কনস্পিরেসি থিওরির উদ্ভব ঘটে। টুইন টাওয়ার হামলা সম্পর্কে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ই-মেইলের মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালানো হয় যেখানে বলা হয়, টুইন টাওয়ার হামলাতে কোন ইহুদি মারা যায়নি। এই সমস্ত কারনে ধীরে ধীরে কনস্পিরেসি থিওরির সূচনা ঘটে মূলত ইউরোপে। কিছু জামার্ন এবং ফরাসি সংবাদপত্র এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ৯/১১ এর ঘটনার প্রেক্ষিতে কনস্পিরেসি থিওরিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় । কেননা এখানে তাত্ত্বিকদের মধ্যে মতের অমিল রয়েছে। যেমন- একদল তাত্ত্বিক মনে করেন যে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটবে এটা আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানত কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে তা অগ্রাহ্য করে এই ঘটনা ঘটতে সাহায্য করে। এই তত্ত্বে আরেক দল তাত্ত্বিক মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারেরই একটি অংশ হামলাকারী সংস্থার সাথে হাত মিলিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এক্ষেত্রে কনস্পিরেসি তাত্ত্বিকেরা যে সমস্ত যুক্তি দেখান তা হল- ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার যে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তা বিমান হামলার কারণে ঘটেনি। এখানে আগে থেকেই বিস্ফোরক বোমা রাখা ছিল যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানত এবং এই বিস্ফোরক বোমার কারণে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কারণ হিসেবে তারা বলেন আগুনের উত্তপে স্টীল গলে না। আর স্টীল না গললে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভেঙ্গে পড়ত না। জেড বিমান হামলার কারনেই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিযোগ করার প্রেক্ষিতে তারা এ যুক্তি দেয়। পেন্টাগনে যে হামলা হয়েছে এর পুরোটাই সাজানো বা এ ধরনের হামলা মূলত ঘটেনি। কারন পেন্টাগনের দেয়ালে যে ছিদ্র পাওয়া গেছে তা একটি জেড বিমান ঢুকলে যে ছিদ্র হবে তার চেয়ে বেশ ছোট। যে কারনে কনস্পিরেসি তাত্ত্বিকেরা বলেন- যুক্তরাষ্ট্র নিজেই কোন বিমান থেকে মিসাইল ছোঁড়ার মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ইউনাইটেড এয়ারলাইনস, ফ্লইট-৯৩ যেটা ছিনতাই করে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভিয়ায় বিধ্বস্ত করা হয় সেটাও যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইচ্ছা করেই গুলি করে বিধ্বস্ত করেছে। এর করণ হিসেবে তারা বলেন যে, বিমান নরমালভাবে ক্র্যাশ করলে বিমানের যন্ত্রপাতি যেসব জায়গায় পড়ে থাকার কথা এই বিমানের যন্ত্রপাতি আরোও দূরে পড়া ছিল।

কনস্পিরেসি তাত্ত্বিকদের বিপক্ষে যুক্তি
তবে কনস্পিরেসি তাত্ত্বিকদেও মতামতের বিপক্ষেও বিভিন্ন যুক্তি রয়েছে। যেমন- ওয়াল্ড ট্রেড সেন্টার ভেঙ্গে পড়ার পেছনে কনস্পিরেসি তাত্ত্বিকেরা যে যুক্তি দিয়েছেন তার প্রেক্ষিতে বলা হয় যে, হিটে স্টীল গলে না। কিন্তু স্টীলের জোড়া হিটে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । যে কারণে ওয়াল্ড ট্রেড সেন্টার ভবন ভেঙ্গে পড়ে। পেন্টাগন সম্পর্কে কনস্পিরেসি তাত্ত্বিকেরা যে যুক্তি দেখিয়েছেন তার প্রেক্ষিতে বলা হয় যে ,পুরো বিমান পেন্টগনের ভিতরে ঢোকেনি। এজন্য ছিদ্র ছোট বড় হতে পারে। এছাড়া বিমানের ব্ল্যাক বক্স এবং অন্যান্য বিভিন্নর ভগ্নাংশের মাধ্যামে দেখা যায় যে, এখানে হামলা হয়েছিল। পেনসিলভিয়ায় বিমান ক্র্যাশ হওয়ার ব্যাপারে কনস্পিরেসি তাত্ত্বিকেরা যে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন তার প্রক্ষিতে বলা হয় যে, বিমান যখন ক্র্যাশ হয় তখন সেখানে অনেক বাতাস ছিল। যে কারণে বিমানের অনেক হালকা যন্ত্রপাতি দূরে চলে গিয়ে ছিল। এভাবে বিভিন্ন যুক্তি প্রদানের মাধ্যমে কনস্পিরেসি তাত্ত্বিকদের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
কনস্পিরেসি থিওরির যৌক্তিকতা কতটুকু?
কনস্পিরেসি তাত্ত্বিকেরা নাইন-ইলেভেনের ঘটনাকে সাজানো বলে মনে করলেও আসলে তা কতখানি সত্য বা মিথ্যা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলা যে সাজানো তা পুরোপরি সত্য প্রমাণিত হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র যে উদ্দেশেকে সামনে রেখে হামলা চালায় তাতে দেখা যায় যে, বুশ প্রশাসন তথা যুক্তরাষ্ট্র তাতে সফল হতে পারেনি। কারণ বুশ প্রশাসন তথা যুক্তরাষ্ট্র টুইন টাওয়াওে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পেছনে এর মূল হোতা হিসেবে ওসামা বিন লাদেন এবং আল- কায়েদাকে দায়ী করে এর প্রেক্ষিতে লাদেনকে গ্রেফতার এবং আল- কায়েদা সংগঠনকে নির্মূল করার জন্য তথা সন্ত্রাস দমনের জন্য যুদ্ধ শুরু করলেও তাতে সফল হতে পারেনি। কারন কনস্পেরেসি তাত্ত্বিকেরা মনে করেন যে, ওসামা বিন লাদেনকে ইচ্ছা করেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ধরেনি এবং টুইন টাওয়ারের হামলা ওসামা বিন লাদেন এবং বুশ প্রশাসনের যোগ সাজশেই হয়েছে। এক্ষেত্রে কনস্পিরেসি তাত্ত্বিকদের মতামত সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মতামত যদি দেখা যায় তা হল- ৬৩.৬% মানুষ বিশ্বাস করে আরব মুসলিম সংগঠনগুলোর দ্বারা টুইন টাওয়ারে হামলা হয়েছে। অন্যদিকে ২৬.৪% মানুষ মনে করে যে , এই ঘটনার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অর্থাৎ হামলা সংগঠনকারীদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল। আর ৪.৮% মানুষ মনে করে এই ঘটনার পেছনে খোদ যুক্তরাষ্ট্রই মূলত দায়ী। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র নিজ থেকেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের যৌক্তিকতা কতটুকু?
৯/১১ এর ঘটনার পর বুশ প্রশাসন যে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের কার্যকক্রম শুরু করে তা বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে। কারণ বর্তমান বিশ্বে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের যৌক্তিকতা প্রশ্নে অনেকেই মনে করেন যে, এ যুদ্ধের কোন যৌক্তিকতা নেই। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও আন্তজাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক তারিক আলীর মতে, সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার একটি কৌশল, যা ব্যবহার করে তারা বিশ্বে আধিপত্য বজায় রাখতে চায় এবং মার্কিন আধিপত্য বা শোষণ বিরোধী ইসলামী রাষ্ট্র বা সংগঠনগুলোকে দমিয়ে রাখতে চায়। তার মতো আরো অনেকেই এ যুদ্ধের সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন, যুদ্ধ দিয়ে কখনোই একটি যুদ্ধবাদী সংগঠনকে দমন করা যায় না,যুদ্ধ শুধু মানুষের ক্ষতিই করে, শান্তি আনয়ন করে না। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে নিজেই একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছে। কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো, ফিলিস্তিনের হামাস নেতা খালেদ মিশেল এক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, ইসরাইল বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ রাষ্ট্রীয়ভাবে কায়েম করলেও যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধের অবতারণা করছে না বরং ফিলিস্থিনে,লেবাননে হামলার ক্ষেত্রে তাদেরকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে , বুশ প্রশাসন সন্ত্রাস দমনের নামে যে যুদ্ধ কর্মকান্ড শুরু করেছে তাকে যৌক্তিক বলা যায় না। কারণ এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরোধী রাষ্ট্রগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে একতরফভাবে যুদ্ধকে সমর্থন করেছে, মনবাধিকার লঙ্ঘন করছে এবং অন্যান্য আন্তজাতিক আইন লঙ্ঘন করছে।

উপসংহার:
যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ মূলত মার্কিন স্বার্থবিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ। কেননা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজকে যাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারাই একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুগ্রহে এরা বেড়ে উঠেছে। এমনকি আজকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শত্রু যে লাদেন তিনিও আফগান যুদ্ধের সময় সি আই এ কে সহযোগিতা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র যে তালেবানদের বিরুদ্ধে এতবড় যুদ্ধের মহড়া দিল এ তালেবানরা মূলত যুক্তরাষ্ট্রে অনুগ্রহ নিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। অন্যদিকে সাদ্দামও ইরাক-ইরান যুদ্ধ কালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে কাউকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যাদিলেই সেই রাষ্ট্র বা সংগঠনটি যে সন্ত্রাসী তা কিন্তু নয়। কারন একদেশে যারা সন্ত্রাসী নামে পরিচিত হচ্ছে তারাই আবার আরেক দেশে স্বাধীনতার মহান যুদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উদাহরনের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করা যায়। যেমনঃ পি এল ও স্বাধীনতা আন্দোলনকারী সংগঠন হলেও তাকে ইসরাইল ও তার মিত্ররা সন্ত্রাসী হিসেবে দেখে থাকে। কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী সংগঠন যখন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন বা লড়াই করে তখন ভারতীয়দের দৃষ্টিকোন থেকে তারা হয় সন্ত্রাসী আর কাশ্মিরী মুসলমানদের কাছে সেটা হল স্বাধীনতা আন্দোলন। এক্ষেত্রে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অনেক ক্ষেত্রেই দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিনত হচ্ছে, যা বিশ্ববাসী সমর্থন করে না। কারন যুক্তরাষ্ট্র যে উদ্দেশ্যে বিশ্ববাসীর মাঝে প্রচার করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সূচনা করেছিল তা এখন বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট। তারা যুক্তরাষ্ট্রর সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে সমর্থন করে না, বিশ্ববাসী চায় শান্তি। আর যুদ্ধ কখনই শান্তি বয়ে আনে না। এক্ষেত্রে ২০০৪ সালের জুন মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল বলেছেন, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস নির্মূল করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসের আরও বিস্তার ঘাটাচ্ছে।

তথ্যসূত্রঃ
বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অবঃ), আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের ইতিকথাঃ আফগানিস্তান হতে আমেরিকা।
দৈনিক প্রথম আলো ১১.০১.২০০৮
দৈনিক সমকাল ০১.১১.২০০৯
মোহিনীলোক- একটি বিশ্বসাময়িকী, জুলাই ২০০৯
http://www.wikipedia.com.war on terrorism
http://www.wikipedia.com.9/11conspiracy theories
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:১৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×