কাহিনী ও পরিচালনা: শম্ভু মিত্র, অমিত মিত্র
প্রকাশকাল: ১৯৫৯
শ্রেষ্ঠাংশে:
তৃপ্তি মিত্র................সন্ধ্যা
সুপ্রিয়া দেবী............গায়ত্রী
ছবি বিশ্বাস..............বড়দা(গায়ত্রীর বাবা)
ছায়া দেবী...............গায়ত্রীর মা
করুনা বন্দোপাধ্যায়.........মেজ বৌ
পাহাড়ী স্যান্নাল.............মেজদা
শম্ভু মিত্র..................নীরেন
মুভিটি দেখা শুরু করেছিলাম ট্রেডমিলে হাঁটার একঘেয়েমী কাটানোর জন্য। আমি সাধারণত বাধ্য না হলে মুভি দেখিনা। বরফের দেশে শীতকালে যখন বাইরে হাঁটতে যেতে পারিনা, তখন ট্রেডমিলে হাঁটতে হাঁটতে মুভি দেখি আর হিসাব করি মুভি, না ট্রেডমিলে হন্টন, কোনটা বেশী বোরিং? কোনোমতে আধা ঘন্টা কাটিয়ে নেমে যাই, পরদিন নতুন মুভি শুরু করি। সেই আমি যে কখন এক ঘন্টা কাটিয়ে দিয়েছি, ছেলে এসে ডিনারের তাগাদা না দিলে বুঝতেই পারতামনা।
শুভ বিবাহ। নাম শুনলেই মনের মধ্যে সানাই এর সুর বাজে। দেখতে পাই ব্যস্ত সমস্ত বিয়ে বাড়ির ছবি। বিয়েতে আগত আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী, বিয়ে বাড়ির কর্ম-চঞ্চলতা, সুপাত্রে কন্যাদানের সম্ভাবনায় মায়ের গৌরবোজ্জ্বল মুখ, এসব মিলিয়ে যে দৃশ্যটি চোখের সামনে ভেসে উঠে, তাই দিয়েই শুরু হয় ছবিটি। তার পরেই আসে ধাক্কা, যে ধাক্কার জেরে আমি মুভিটি শেষ পর্যন্ত না দেখে পারিনা।
ছবি দেখতে দেখতে অনুভব করি পাড়া প্রতিবেশীর গা টেপাটেপি, ফিসফাস, আর নিকটাত্মীয়দের ছোটাছুটি। একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেখি অন্যান্য চরিত্রের ছোট ছোট গল্প, তাদের টানাপোড়ন। ভালোবেসে বিয়ে করা দম্পতি ফিরে দেখে তাদের আঠারো বছরের পুরানো দাম্পত্য। পারিবারিক ভাবে বিয়ে হওয়া দম্পতি, তারাই কি পরস্পরকে খুব সম্মান দেয়? মেয়ের মা-বাবার কাছে মেয়ের সুখের চাইতে প্রধান হয়ে উঠে লৌকিক প্রতিষ্ঠা। পাত্রের পিতা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নির্দিষ্ট লগ্নেই বিয়ে দেওয়ার; কারন একটাই, লোকের কাছে মুখ দেখানো। একজন বিধবা তরুণী চিন্তা করে কি হতে পারতো তার জীবনে, যদি সে সবার কাছে লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে না থাকতো। ছবির শেষটা আসে খুবই প্রত্যাশিত, কিন্তু অভাবনীয় ভাবে।
১৯৫৯ সালে তৈরী এই ছবি তখনকার আচার আচরণ তুলে ধরলেও, মূল প্রশ্নটা সবসময়েরই। একটি বিবাহ কখন শুভবিবাহ হয়? পৌনে দুই ঘন্টার ছবিটা বেশীরভাগই টান টান, নির্মেদ, কোনো বাহুল্য নেই, আবার গল্প বলায় কোনো অস্পষ্টতাও নেই। বিয়েবাড়ির রান্নার আয়োজন যেমন আছে, তেমনি আছে কুটুম্বদের আদর-যত্ন নিয়ে রাগ অভিযোগ। শেষের মিনিট দশ অতিনাটকীয়তা নিয়ে ঝুলে পরে, যেমন বাংলা সামাজিক ছবিতে হয়। সন্ধ্যার চরিত্রটিকে গায়ত্রীর ছায়াচরিত্র বলা যায়। শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, এদের নাম শুনেছিলাম, অভিনয় প্রথম দেখলাম। একটু অতিনাটকীয়, তবে চরিত্রের সাথে মানিয়ে যায়। প্রধান ভুমিকায় সুপ্রিয়া দেবী থেকে শুরু করে নাম না জানা অতিথির ভুমিকায় অভিনয় করা অভিনেতা-অভিনেত্রী, সবাইকেই আপন মনে হয়। মনে হয় খুব চেনা মানুষ, যাদেরকে আমরা প্রতিদিন আশেপাশেই দেখি।
পুরানো ছবিতে অনেক সময়ই ভালো কোয়ালিটির ফিল্ম পাওয়া যায়না। ইউটিউবে দেখা এই ছবি কিছু জায়গায় কাঁপা কাঁপা হলেও খুব বিরক্তকর না। সাউন্ডের কোয়ালিটি ভালো।
এই রকম ছবি পেলে আমার ট্রেডমিল হন্টন আর বোরিং থাকেনা। সবাই ভালো থাকুন। অযথা দম্ভকে প্রাধান্য না দিয়ে পাশের মানুষকে গুরুত্ব দিন।
তথ্যসূত্র:
imbd
youtube
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৪৬