somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাদের রূপালী ইলিশ......

০৮ ই জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের বাংলাদেশীদের রান্না-বান্না খাবার-দাবারের উপর এইরকম সাহিত্যিক বর্ণনা লেখা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব না। কিন্তু খেয়েও তো ঠিকই স্বাদ বুঝি। আর এই দূরদেশে এসে এদের ছাইপাশ খাবার দেখে আরো ভালভাবে বুঝি আমরা কত ভোজন রসিক।

সবচেয়ে ভালো লাগে যখন এই পরদেশে নিজেদের ইলিশ দেখি। বিভিন্ন সাইজের বা ওজনের (এক কেজি, দেড় কেজি, দুই কেজি বা আরো বড়) ইলিশ আমরা বাংলাদেশীরা বেশ আগ্রহের সাথেই কিনি, যদিও দাম অনেক (এক কেজি প্রায় হাজার টাকার উপরে)। আর আমরা খোঁজ-খবর রাখি কার কার বাসায় ইলিশ কেনা হলো, কবে কবে রান্না হবে, তখন নিজেরাই নিজেদের দাওয়াত দিয়ে সেসব বাসায় ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে চলে যাই ইলিশ খাবার জন্য।

এই কোরিয়ায় এলাকার বা রাস্তার নাম-ধাম মনে রাখা বেশ দুঃসাধ্য, অনেক সময় জানিও না। এই যেমন আমি শুধু আমার বাসার নাম্বার জানি, রাস্তা বা এলাকার নাম জানি না। বাসাভাড়ার চুক্তিতে লেখা আছে অবশ্য। আমরা শুধু এইভাবে চিনি, এরপর বাঁয়ে যেতে হবে, তারপর সোজা, তারপর ডানে মোড়............। [দূরের প্রধান ঠিকানাগুলো জানতে হয় অবশ্য ] কিন্তু তাতে কি? কোন বাংলাদেশীর বাসায় দাওয়াত থাকলে বাসার কাছাকাছি যদি একবার পৌঁছে যেতে পারেন, এরপর ঠিক কোন গলি দিয়ে ঢুকতে হবে বুঝতে না পারেন বা ডানে যাবেন নাকি বাঁয়ে যাবেন বুঝতে পারছেন না, কুচপরোয়া নেহি। চিনিগুঁড়া চালের পোলাও বা ইলিশ ভাজা বা গরু মাংসের গন্ধেই আপনি ঠিক চিনে ফেলবেন কোন বাসাটা আপনার গন্তব্য। :)

যাই হোক, খুব মজা মজা করে তো খাই, কিন্তু কিছু ব্যাপার আমাকে ভাবায়ও বটে। এতো বড় বড় ইলিশ বাংলাদেশের বাজারে সচরাচর পাওয়াই যায় না। এইতো ভরা বরষায় বাড়ি যাবার প্ল্যান করেছি, কিন্তু জানি খোদ চাঁদপুরেও এতো বড় ইলিশ মেলে না। সব পাইকারী বিক্রি হয়, লোকাল খুচরা ক্রেতাদের কোন পাত্তা নাই, বড় জোর জাটকা ইলিশ খাও, বা ভাগ্য ভাল হলে ৭০০/৮০০ গ্রামের ইলিশ.........ঐ পর্যন্তই। ঢাকাতে যদিও এক কেজি বা দেড় কেজির ইলিশ পাওয়া যায় কিছু, সেগুলো দাম যেমন আকাশছোঁয়া থাকে, স্বাদও তেমন থাকে না। শুটকি শুটকি লাগে।

অথচ এই কোরিয়ায় যেসব ইলিশ আসছে সবগুলোর স্বাদই অতুলনীয়, মনে হয় সেই শৈশবের ইলিশের স্বাদ। আর সবগুলোই ডিমওয়ালা ইলিশ। কি শীতকাল, কি বর্ষাকাল সবসময়ই ডিমওয়ালা ইলিশ খাচ্ছি। এটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়। নৈতিকভাবে আমি ডিমওয়ালা কোন মাছই খেতে চাই না। কারণ, এই ডিমগুলো ভবিষ্যতের মাছের প্রজন্মের জন্য খুবই দরকারী। যেভাবে মাছের আকাল পড়ছে বাংলাদেশে, এইসব ডিমভর্তি ইলিশগুলো দেখে আমি সত্যিই শিউরে উঠি। কি করে জেলেদের বা ব্যবসায়ীদের সচেতন করা যাবে এইসব ব্যাপারে?? তারা কি বোঝে না এতে করে কত ক্ষতি হচ্ছে আমাদের দেশের?? আমি ব্যক্তিগতভাবে যখন থেকে জেনেছি মাছের ডিমের গুরুত্ব ঠিক তখন থেকে সবসময় এড়িয়ে যাই এসব মাছ কিনতে বা খেতে, পরিবারের বাকীদেরকেও তাই করতে বলি। আমার বাচ্চাদেরও মাছের ডিম খাওয়ার অভ্যাস করাইনি। এখন কখনো যদি কোন মাছে ডিম থেকেও যায়, তবুও তারা খেতে চায় না। এভাবে আমরা ক্রেতারা এই ধরণের ডিমওয়ালা মাছ কেনা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারি। কিন্তু এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে যে মাছগুলো ইতিমধ্যে চলে এসেছে বা আসছে প্রতিনিয়ত সেগুলো তো আর নদীতে ফেরত দেবার উপায় নেই। তাই জেলেদের বা ব্যবসায়ীদের এ ব্যাপারে সচেতন হবার কোন বিকল্প নেই। সরকারেরও উচিত এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। তা না হলে অচিরেই আমরা 'মাছে-ভাতে বাঙ্গালী' এই পরিচয় হারাবো।


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:১১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×