বেশ কিছুদিন আগে গল্প লিখেছিলাম আমার ছেলেকে নিয়ে। কেমন করে সে আমার ফাঁকিবাজি বুদ্ধিগুলো আপনাআপনিই রপ্ত করেছে নিজের মাঝে। আজ বলবো আমার মেয়ের কথা। নাহ্, ফাঁকি দেবার কথা নয়।
আমার মেয়েটির ভিতরে আমারই আরেকটা প্রতিরূপ তৈরী হচ্ছে ধীরে ধীরে, সেই গল্পই শোনাবো আপনাদের।
ছোটবেলা থেকেই আমি গণিত ভালোবাসি। খুব ক্রিটিক্যাল মেধার অধিকারী নই আমি, কিন্তু অন্যান্য সব বিষয়ের চেয়ে গণিত ভাল লাগতো বেশি। আব্বা করাতেন আমাকে গণিত। গণিত পরীক্ষার দিন আমি থাকতাম একেবারেই দুশ্চিন্তামুক্ত। সেদিন একটা রঙীন জামা পরে বেশ রিলাক্স মুডে পরীক্ষা দিতে যেতাম। আমার মেয়েরও দেখি একই অনুভূতি। গত মিড টার্ম পরীক্ষায় গণিত পরীক্ষাটাই তার সবচেয়ে ভাল হয়েছে। বেশ কনফিডেন্ট তার গণিতের ব্যাপারে। ক্লাসেও বরাবর শুদ্ধভাবে গণিত করে প্রশংসা পাচ্ছে স্যারের কাছ থেকে। এইতো, দুইদিন আগে, ক্লাসে সবাই একটি অংকের ফলাফল ভুল করলো, তারটাই ছিল ভিন্ন উত্তর, আর তাকে নিয়ে সবাই একচোট হাসলো। এরপর স্যার বললেন, তোমাদের মোটেই হাসাহাসি করা উচিত হয়নি, নাফিসার উত্তরটাই ঠিক ছিল। এরপর অবশ্য তার বান্ধবীরা তাকে স্যরি বলেছে। সেই গল্প বাসায় এসে আমাকে করলো, তার বাবাকে ফোনে শেয়ার করলো, বেশ খুশি সে। আমিও তার দিকে তৃপ্তির চোখে তাকাই। আমারই মেয়ে তো, আমার মতো।
ছোটবেলা থেকে আমি ভীষণ ধীরে স্বভাবের। খেতে বসলে অনেকক্ষণ লাগে, গোসল করতে গেলে অনেকক্ষণ লাগে, মানে কোন কাজই খুব দ্রুততার সাথে করতে পারি না। দেখি যে আমার মেয়েটারও সেই স্বভাব। একবার খাবার মুখে পুরলে আর গেলার নাম নেই। কত যে তাকে পানি খাইয়ে খাইয়ে খাবার গিলিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। মাঝে মাঝে বকা দিলেই বলে, তুমিও তো তাই ছিলে! আমি হাসি নিরবে।
ছুটির দিন পেলেই লম্বা ঘুমানোর অভ্যাস অনেকেরই, আমারও তাই। আমার মেয়েরও তাই! তবে আমার মনে হয় মামনিটার বুদ্ধিমত্তা বা সংবেদনশীলতা আমার চেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে বেশ কায়দা করে কথা বলে, প্রথমে ধরা যায় না কি উদ্দেশ্যে বলছে, একটু পরেই যখন খোলাসা করে, তখন আক্কেলগুড়ুম হতে হয় বৈকি!
নাফিসা মামনিটা আমার ড্রয়ং করতে ভালোবাসে, সিলেক্টিভ গল্পের বই পড়ে, প্রথম আলোর ‘কিশোর আলো’ তার অনেক প্রিয়! এরপর জাফর ইকবালের বইগুলো বেশ পছন্দ করছে। কার্টুনের মাঝে ডোরেমন।
মেয়েটা আমার অনেক ধৈর্যশীল, সহজে রাগে না, মায়ের সাথে সাথে সারাদিনের বাইরে থাকা, ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম, জার্নির কষ্ট নিরবেই সহ্য করে চলেছে।
আরবি চর্চা নিয়ে একটু আপত্তি ছিল, মাশাল্লাহ এখন ধীরে ধীরে সেটিও শিখছে আগ্রহভরে, প্রায়ই চার ওয়াক্ত নামাজই সে পড়ে, ফজর পড়তে একটু আলসেমি, সকালে ঘুম থেকে উঠতে চায় না সবসময়ে। মাঝে মাঝে পড়ে।
খুব অল্প স্বল্প লেখালেখি করে, তার একটি গল্প ছাপা হয়েছে অনলাইন পত্রিকায়। তার আঁকা ছবিগুলো দেখতে পাবেন এখানে,
Click This Link
Click This Link
আপনারা সবাই আমার মেয়ের জন্যে দোয়া করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:১১