somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাল্পনিক চরিত্র - ০০ : প্রারম্ভিক কথা

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে এক অনেক অনেক কাল পূর্ব এই কাহিনীর যাত্রা হয়তো শুরু !! হয়তো তারও আগে হইতে। তবে, ইতিহাস যাহা সাক্ষী দেয়, তাহা হইতে ইহাই প্রমাণ হয় যে তাহার পূর্বপুরুষ সম্ভবত গ্রীস দেশের "স্পার্টা" নগরীর স্পার্টান ছিলেন। স্পার্টা ছিল প্রাচীন গ্রিসের একটি সামরিক নগররাষ্ট্র, চারিদিকে পাহাড় ছিল- যা বর্হিশক্রর হাত হইতে নগরীটিকে রক্ষা করিত। খ্রিস্টপূর্ব ১১৫০ অব্দে উত্তর দিক হইতে ডোরিয়ান জাতি দক্ষিণে নামিয়ে আসিয়াছিল। এরাই ছিল স্পার্টার পূর্বপুরুষ। স্পার্টার নাগরিকরা অবশ্য মনে করত যে তারা হারকিউলিকসের বংশধর।
তাহার কন্ঠে সেই হুংকার লক্ষনীয়। সেই তেজ ! সেই গোফ ! চোখে সেই রক্ত-ক্ষুধা। হাসিতে সেই আত্ম-অহংকারের উচ্ছলতা।
যাহারে লইয়া আমি এতকিছু লিখিয়াতিছি, তিনি আর কেউ নন, আমার সহপাঠি জালালউদ্দিন খান জামিল !
হ্যা ! উনি আমার সহপাঠি। আমরা প্রায় সমবয়সী । তাহার সনে "তুই" "তুই" করিয়া ভাব আদান-প্রদান করা যুক্তি সঙ্গত হইলেও, তাহার বংশ পরিচয় পাইবার পর হইতে সম্মানে তাহাকে আপনা হইতেই "আপনি" করিয়া বলিতে যে কবে হইতে শুরু করিয়াছি, তাহা আমার স্মরণে আসিতেছে না। তবে, তাহার পর হইতে উনাকে "তুই" করিয়া কহিবার সাহস সঞ্চালন আজও করিবার পারি নাই। তাহাকে ডাকিবার ক্ষেত্রে "আপনি" কহিয়া সম্বোধন করিবার মাঝে ভয় এবং সম্মান উভয়ের মিশ্রণ রহিয়াছে।
তবে তিনি যদি আমাদের কাহারও মেজাজ একবার নষ্ট করেন, তখন আমরা কেহই "আপনি" সম্বোধন হইতে "তুই"তে পতিত হইবার জন্য দ্বিধা বা সংকোচ বোধ করি না বিন্দু মাত্র। তখন আমরা ভুলিয়া যাই তার বংশ গৌরব। ভুলিয়া যাই তিনি হয়তো হারকিউলিকসের বর্তমান বংশধর। তাহাকে সুস্বাদু বাঁশের সুপ খাওয়াতে কেহই পিছ পা হইনা। হারকিউলিকসের বর্তমান একমাত্র বংশধরকে বাঁশের সুপ খাওয়াইতে পারছি, এটা আমাদের ভাগ্য বলিয়া কথা, পিছ পা হইবার কোন প্রশ্নই এখানে আসে না। বরং এই সুযোগ সর্বদা আসেও না, আবার সবাই পায়ও না। তাহলে, কেউ পাহিলে কেনই বা তাহা হাত ছাড়া করিবে ? এযে পরম ভাগ্য !!
শুরু যেহেতু করিয়াছি, সেহেতু প্রথম হইতেই সবকিছু শুরু করা ভালো। পরিচয় পর্ব থেকেই শুরু করি।
জালালউদ্দিন খান জামিল ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় সেই ২০০৯ সালে! বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন প্রথম ক্লাস করতে যাই।
তাকে দেখে কিছুটা অবাই হয়েছিলাম ! এতটা পাতলা মানুষ হয় কি করে। আরও একটু যদি সে পাতলা হতো, তাহলে হয়তো তার অস্তিত্বই থাকতো না। টিংটিঙে লম্বা, অবশ্য পাতলা দৈহিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই তার দৈহিক উচ্চতা লক্ষনীয়। চুল নেমে এসেছে কান অবধী। গাত্র বর্ণ শ্যামল। চোখে সম্ভবত দু'বছর পুরাতন চশমা। হাতে রকমারি সুতা বাঁধা, সেই সুতো গুলোর কিছু কিছুতে আমার কাঠের পুঁতি লক্ষনীয়।
এসে বসলো আমার সামনের বেঞ্চিতে। শিক্ষিকার সকল প্রশ্নের উত্তর যেন তার মুখস্থ। সম্ভব হলে, সে নিজেই শিক্ষিকাকে তার জ্ঞান ভান্ডার থেকে জ্ঞান দান শুরু করে দেন। তার জ্ঞান দেখে আমি মুখরিত। মনে মনে ভাবি, কত কিছু জানে সে, আমি তো কিছুই জানি না, শূন্য থেকেও কম আমার বুদ্ধির লেভেল। তার সামনে কিভাবে কথা বলতে হবে, সেটাও আমার বোধ হচ্ছিল সেই দিনগুলোতে।
সেই সময়ে তার কিছু ভালো দিক ভালো লেগেছিল। যেমন, সে সহজেই সবার সাথে মিশতে পারতো, এখনও পারে। খোশ আমোদেদ গল্প জুড়ে বসতে পারে। সবচেয়ে বেশি যেটা পারে, তা হচ্ছে মন খুলে হাসতে। এই গুণ সবার থাকে না। উনার আছে। উনার হাসিরে শব্দের জন্য মাঝে মাঝে দরজা খূলে কেউ এসে বলে যেত, জামিল ভাই, একটু আস্তে হাসেন, ক্লাস করতেছি !!তারপর উনি একটু আস্তে হাসার চেষ্টা করতেন।
একদা, তাকে দেখে আমার সহ, ডিপার্টমেন্টের অধিকাংশের চোখ কপালে উঠে গেল।
কারণ, তার মাথার চুল সামনের অংশ তামাটে বর্ণের রং করা হয়েছিল। গলায় লোহ চেইন। চোখে কালো চশমা। হাতে রকমারি পুতির সুতা। পায়ে কের্স । পিঠে একটি দু'সুতার ব্যাগ। আর হাতে কয়েকটি পাথরের আংটি। যার গত বৃহস্পতিবারে কিছুই দেখিনি।
কিছুক্ষন সে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করলো। তারপর পিয়ন মামু এসে তাকে খবর দিলো, ফ্যাকাল্টি রুমে আপনেরে ডাকে। .. শুনে আমরা সবাই অবাক, হায় হায় কি হইলো। জামিল ভাইয়ের কোন ভয় নেই। বীর দর্পে হাত তুলে সবাইকে অভয় দিয়ে বলল, ভয় নাই, যামু, আর আমু !
সেই যে ঢুকলো জামিল ভাই। তারপর ৩০মিনিট পর্যন্ত ভিতর থেকে তার বাহির হওয়ার কোন খবর নেই। সবাই ভয় পাচ্ছি, কি হচ্ছে তার ? কেন ডেকেছে ? কাজ থাকলেও এতক্ষন ?
এরপর জামিল ভাই, বের হলেন। সবার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। তারপর চুপচাপ বেরিয়ে গেলেন রাস্তায়। কারও সাথে কোন কথা নেই। দু'দিন পর্যন্ত তার মোবাইল বন্ধ। কারও সাথে কোন যোগাযোগ নাই।
দু'দিন পর আমার ডিপার্টমেন্টে ফিরলেন। আমরা সবাই অবাক, তার মাথার চুল সব কালো। হাতে কোন সুতা নেই। একটি আংটি ছাড়া বাকি সব আংটি গায়েব। গলায় একটা কালো কায়তনে তাবিজ বাঁধা। পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল।
সেদিন জামিল ভাই মুখ খুললেন, দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে বললেন, সে দিন আমারে খালি পিটানো বাকি ছিল তাদের।
সেই দিন থেকে আজ অবধি, জামিল ভাইয়ের বেশ'ভুশার বিশেষ কোন পরিবর্তন দেখিনি


https://www.facebook.com/KalponekChoretro
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×