আমরা বিস্মিত হয়ে যাই যখন দেখি, সে বাঁশিটি অতিধীরে ঠোঁটের কাছে তুলে আনে, ফুঁ দেয়। প্রথমে একটি ফুঁ - যেন একটি বুকভাঙ্গা শ্বাস বেরিয়ে আসে সকল বাস্তবতাকে ছিদ্র করে; তারপর নীরবতা; আবার, একটি ফুঁ - কিন্তু এবার আর দীর্ঘশ্বাস নয় এটি, এবার যেন অস্পষ্ট একটি সুর স্বচ্ছ পাখায় ছোট্ট প্রজাপতির মতো কোথা থেকে উড়ে এসে মিলিয়ে যায়; আমরা অপেক্ষা করি; সে তার গালে চেপে ধরে আড় করে ধরা বাঁশীটির ওপর; চোখ বুঁজে আসে তার; তারপর নড়ে ওঠে তর্জনী ও মধ্যমা; অনামিকা একটি ছিদ্রের ওপর চেপে বসে; আকস্মাৎ তীব্র চিকন একটি সুর বড় দীর্ঘ রেখার মতো বেরিয়ে আসে বাশীঁ থেকে।
সেই রেখাটি বাংলাঘরের দাওয়া থেকে নেমে, ধুলোরাঙা পথের ওপর দিয়ে তার যাত্রা শুরু করে; আমগাছের কাছে এসে রেখাটি উর্ধমূখী হয়, অচিরে গাছটিকে লংঘন করে আকাশের শূন্যতার ভেতরে কিছুক্ষন স্তম্ভিত হয়ে থাকে; কিন্তু তা মুহুর্তের জন্য; আবার তার অস্থির যাত্রা শুরু হয়; চোখের পলকে সেই রেখা সোজা উঠে যায় উর্ধ্বে একটি চাঁদ উঠে বসে আছে এখুনি - তার দিকে; ছেঁড়া চাঁদটির চারপাশে রেখাটি ঘুরে ঘুরে পাক খায়, যেনবা চাঁদটিকে বন্দী করবার জন্যে জাল ফেলে, কিন্তু না, চাঁদটিকে ক্ষমা করে সে, দ্রুত উলটো পাক দিয়ে জালের বুনোনগুলো খুলে দেয়, দিয়ে সে দিগন্তের সমান্তরালে ধাবিত হয় সবুজ শস্যের দিকে, দুরে, বহুদুরে, যেখানে সবুজ হয়ে আছে নীলাভ এবং কুয়াশাচ্ছন্ন, রেখাটি সেই দূর ঝালরের ভেতরে বিলীন হয়ে যায়; বিলীন হয়েও যেন তা যথেষ্টভাবে বিলুপ্ত নয়; শিশুর নিঃশ্বাস পতনের অনুরূপ একতাল একটি ধ্বনি হতে থাকে।......
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:১৯