নিজাম সাহেব অত্যন্ত নির্ভেজাল একজন মানুষ। মনের মাঝে সুপ্ত বাসনা ছিলো বড় লেখক হবেন। একটা সময় টুকটাক যাও লিখেছেন, সেটাকে ঠিক সাহিত্য চর্চা বলা যাবেনা। মানুষের স্বপ্ন থাকে আয় রোজগার বৃদ্ধি করার কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে মাঝ বয়সে এসে এখন তার একটাই স্বপ্ন ভাল কিছু লেখালিখির মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়া; তাও আবার যেখানে লিখে কোন আর্থিক সন্মাননা পাওয়া যায় না। সকাল হলেই হাত মুখ না ধুয়েই ল্যাপটপ নিয়ে বসে যান সহব্লগারদের লেখা পড়তে। রান্না ঘর থেকে স্ত্রীর খিটমিট কানে এলেও সেদিকে কর্ণপাত করার যেন মোটেও তার সময় নেই। ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাবার পথে মাথায় লেখার নতুন প্লট আসে। তারপর অফিসে যেয়েই লিখতে বসেন। বাস্তব জগতে সবাই তাকে চেনে ছাপোশা একজন সাধারন চাকুরীজীবী হিসেবে কিন্তু বাংলা ব্লগ জগতে তিনি নিজেকে শ্রেষ্ঠ ব্লগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন নিজের লেখনী ও মেধা দিয়ে। যে মানুষটা নিজের ছোট ছেলের জন্মদিন ভুলে যান, অথচ আর কিছুদিন পরেই বাংলা ব্লগের জন্মদিন মনে রেখে; তিনি রীতিমত রাতের ঘুম হারাম করে ব্লগ দিবস পালন নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। বাজেট ঠিক করেছেন গতমাসে পাওয়া বোনাসের টাকা থেকে কিছু টাকা নিয়ে ব্লগ দিবসে খরচের জন্য।
শাহিন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। থাকে হলে। নেটের সহজলভ্যতার কারণে মোবাইলে কাব্য চর্চার সূত্রপাত। এই মোবাইল কাব্য চর্চাই তাকে বাংলা ব্লগ জগতে এনে দিয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষ পর্যায়। বাবার পাঠানো টাকায় পড়াশোনার খরচ চললেও মোবাইলে নেটের খরচ চালানোর জন্য টিউশনি করতে হয়। সেমিস্টার পরীক্ষার জন্যেও যতটা না প্রস্তুতী নেয়; তার চেয়ে বেশি টেনশন এখন তার এই বাংলা ব্লগ দিবস নিয়ে। টিউশনির বেতন পেয়ে পুরোটাই সে খরচ করবে ব্লগ দিবসে। যেই ব্লগের কারণে আজ তার এত পরিচিতি, সেই বাংলা ব্লগ দিবসের জন্য সকলের থেকে সেরা আকর্ষণীয় কিছু করার পরিকল্পনায় রীতিমত নাওয়া খাওয়া ভুলে বসে আছে শাহিন।
শফিক সাহেব অবশ্য লেখালিখির চেয়ে মানবিক কর্মেই নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। এইজন্য বাংলা ব্লগের ব্লগারদের অবদান নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য। খুব ছোটখাটো একটা চাকরী করেন। ব্লগে তার একটা পরিচিত বলয় গড়ে উঠেছে যাদের নিয়ে তিনি কাজ করতে পারেন। এমনও সময় গেছে যখন মানবিক কাজের জন্য তিনি পুরো মাসের বেতন দিয়ে দিয়েছেন। তার বুদ্ধি পরামর্শ নিয়ে অনেকেই নাম করেছেন আর এই জন্যই তিনি স্থান করে নিয়েছেন তার অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষীর হৃদয়ে। এমন একজন মানুষের কাছে বাংলা ব্লগ দিবস মানেই হলো যেন নিজের আত্মার একটা অংশ। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবার মতই তিনি ব্লগের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ।
সুদূর পরবাসের নিঃসঙ্গ জীবনে রফিকের একমাত্র বন্ধু মহল বাংলা ব্লগ। কখনও কবিতার ছলে কিংবা কখনও ঝগড়ার ছলে প্রবাস জীবনের সকল ক্লান্তি দূর করে নিতে পারে সে ব্লগের এই আনন্দ মেলায়। এখানে তার খুব বেশি পরিচিত কেউ নেই, যাদের নিয়ে ব্লগ দিবস পালন করতে পারবে সে। তাই একটা ছোট কেক কিনে নিজে নিজেই ব্লগ দিবস পালন করে তার একটা ছবি ব্লগ দেয়ার ইচ্ছা আছে তার। যদিও সে কখনই প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার ছিল না কিন্তু এই ব্লগের সাথে পরিচিত হবার পর থেকেই তার ভেতর শখের ফটোগ্রাফির নেশায় ধরেছে। নিজের অজান্তেই ফটোগ্রাফার হিসেবে বাংলা ব্লগ জগতে রফিক স্থান করে নিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের স্থান।
স্কুলের শিক্ষিকা শ্রাবনী, সকাল বেলাটায় বাচ্চাদের জন্য একদিকে চুলায় দুধ গরম করতে বসিয়েই ল্যাপটপ নিয়ে বসেন। স্বামীকে অফিসের জন্য বিদায় দিয়ে, বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে এসে; তারপর তিনি স্কুলে যান। সংসারের সব কাজ শেষে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার জন্য রাতে সিনেমা দেখেন। সেই সিনেমা নিয়ে রিভিউ লেখার অস্থিরতায় প্রায়ই রাতের ঘুম নষ্ট করেন। সিনেমার উন্নতির জন্য উদ্ভাবনী কিছু করার আপ্রাণ চেষ্টাই তাকে হাজারও মানুষের মাঝে তার প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়েছে। স্কুলের বাচ্চাদের কিছু বেশি পরীক্ষার খাতা দেখে যা আয় হবে তা দিয়ে খুব ভাল ভাবেই এবারের ব্লগ দিবসের জন্য তিনি খরচ করবেন বলে ভাবছেন।
বাংলা ব্লগের জন্য নিবেদিত প্রাণ এমন ব্লগারদের রয়েছে দ্বায়বদ্ধতা। নিজের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে সবাই পেয়েছে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। অচেনা অজানা শুভাকাঙ্ক্ষী যাদের ভালোবাসায় প্রতিটা মুহূর্ত আজ সিক্ত; নিজের বিপদে আপদে সবার প্রথম এখন এই সহব্লগারদের কথাই স্মরণে আসে। ওদের কাছে এখন ব্লগই হলো জীবনের যাপিত প্রবাহমান ধারা। তাইতো এই বাংলা ব্লগের জন্মদিন নিয়ে ওদের মনে এত স্বপ্ন, এত পরিকল্পনা। কিন্তু তবু কোথায় যেন হাহাকারময় আশঙ্কা কাজ করে। বাংলা ব্লগের পথ চলার গৌরব উজ্জ্বল মহিমা যেন কখনও মলিন হয়ে না যায় এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।
[খন্ড খন্ড কাহিনীগুলোর প্রতিটা চরিত্র এবং কাহিনী নিতান্তই কাল্পনিক। বাস্তবে কারও সাথে মিলে গেলে আমাকে কোনভাবেই দায়ী না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে। সকল সহব্লগারদের জন্য রইলো হৃদয় নিঙড়ানো ৬ষ্ঠ বাংলা ব্লগ দিবসের অগ্রীম শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। বাংলা ব্লগ দিবস সফল ও সুন্দর হোক এই কামনা করি নিরন্তর।]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০১