চিলে কান নিয়ে গেছে, এখন চিলের পেছনে ছুটছে সবাই। মানুষের এই সহজাত প্রবৃত্তি যে কোন ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ইংরেজরা আমাদেরকে চা খাওয়াতে শিখিয়ে গেছে; এখন আমরা চা খাই নেশার মতো। তবে এখন চায়ের সাথে চলছে কফির দৌড়। ব্যাঙের ছাতার মত চারদিকে শুধু কফি শপ আর কফি হাউস। এইসব কফির দোকানে ঠাণ্ডা কিংবা গরম কফির পাশাপাশি থাকছে বিভিন্ন রকম হিমশীতল শেক/ক্রাশার নামক পানীয়। এমনই জনপ্রিয় এক ক্রাশার হলো অরিও ক্রাশার। যেন অরিও ক্রাশার না থাকলে বা না খেলে কোন রকম স্ট্যাটাসই আর বজায় থাকেনা। আমি মাঝে মাঝে ফুটপাথের একটা স্ট্রীট কফি শপ থেকে কফি খাই। দোকানটাতে অবশ্য কোন ক্রাশার তৈরি করা হয়না। কফির পাশাপাশি দুই রকমের শেক এখানে পাওয়া যায়। স্ট্রবেরী শেক এবং অরিও শেক। অতএব বোঝাই যাচ্ছে অরিও শেক কতটা চাহিদাপূর্ণ পানীয়।
স্ট্রবেরী, ম্যাঙ্গো, বেনানা, আপেল আর লেমনের মতোই যেন অরিও গাছে ধরে। অরিও বিস্কুট আমেরিকার নাবিস্কো কোম্পানির একটি প্রোডাক্ট। যার এদেশের বাজার মূল্য ১৬০ টাকা। আর এই অরিও ক্রাশার প্রথম আনে কেএফসি। কেএফসির সাথে নাবিস্কোর ব্যবসায়িক চুক্তি আছে। যাতে তারা দুইয়েই লাভবান হচ্ছে। কিন্তু এই অরিও বিস্কুট যেভাবে বাজার দখল করে নিয়েছে তাতে করে কোন প্রকার ব্যবসায়িক চুক্তি ছাড়াই সামান্য ফুটপাথ কফি শপও নাবিস্কোকে করছে ব্যবসায়িক ভাবে লাভবান। তবে যাই হোক নাবিস্কো কিন্তু এইক্ষেত্রে ব্যবসায়িক ভাবে শতভাগ সফল।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে বাজারে অরিও বিস্কুটের অনুকরণে বের হয়েছে সস্তা মূল্যের ডরিও নামের এক বিস্কুট। যেহেতু ডরিও বিস্কুট দামে খুব সস্তা তাই এখন এই ডরিও বিস্কুট ব্যবহার করেই চালিয়ে দেয়া হচ্ছে অরিও ক্রাশার/শেক নামে। হায়রে ! অরিও বিস্কুট ধন্য করেছো এই জাতিরে, কেএফসির ক্রাশার খাইয়ে শীতল করছো কিন্তু শ্যাওলা জমছে বোধের দেয়ালে।
যাই হোক আজকের রেসিপি অরিও ক্রাশার। আসুন জেনে নেই এই মহা মূল্যবান অরিও ক্রাশার কীভাবে খুব সহজেই তৈরি করতে হয়। তবে আমি এখানে শুধুমাত্র উদাহরণ হিসেবে অরিও বিস্কুট এর কথা বলছি। যে কোন চকোলেট বিস্কুট দিয়েই চাইলে এই ক্রাশার/শেক তৈরি করা যাবে। কোন সমস্যা নেই। তবে রেসিপিতে দেয়া উপকরণের পরিমাণ নিজস্ব মিষ্টির চাহিদা এবং রুচি অনুযায়ী বদলে নিয়ে তৈরি করা যাবে সুস্বাদু চকোলেট বিস্কুট ক্রাশার/শেক। এখানে আমি দুইজনের পরিবেশনের জন্য উপযোগী প্রস্তুত প্রণালী দিয়ে দিচ্ছি। বাকিটা নিজের মতো করলেই চলবে।
উপকরণঃ
* ১/২ লিটার দুধ
* ১ কাপ চকোলেট পাউডার
* ৪/৫ টি চকোলেট বিস্কুট এবং আরও ২ টি অতিরিক্ত বিস্কুট উপরে ডেকোরেশন করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য
* ২ টেবিল চামচ পরিমাণ চিনি
* ২ কাপ ভ্যানিলা আইস ক্রীম
* ৪/৫ টি বরফ কুঁচি (ক্রাশার না করে মিল্কশেক করতে চাইলে বরফ আলাদা রাখতে হবে। যদি ঘন না করে অতিমাত্রায় তরল করার প্রয়োজন হয় তবে বরফ কুঁচির সংখ্যা এবং দুধের পরিমাণ বাড়িয়েও নেয়া যাবে প্রয়োজন অনুযায়ী।)
প্রস্তুত প্রণালীঃ
>> প্রথমে সবগুলো চকোলেট বিস্কুট (যেমনঃ অরিও) ব্লেন্ডারে নিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
>> এবার বরফ কুঁচিগুলো কিছু দিয়ে ভেঙে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
>> এবার ব্লেন্ডারে দুধ, চকোলেট পাউডার, গুঁড়াকৃত বিস্কুট এবং বরফ কুঁচি, চিনি ও ভ্যানিলা আইস ক্রীম সবকিছু একসাথে মিশিয়ে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
>> ২-৩ মিনিট ব্লেন্ড করার পর গ্লাসে ঢেলে ডেকোরেশনের জন্য মিশ্রণটির উপর দিয়ে কিছু বিস্কুটের গুঁড়া ছড়িয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে সুমিষ্ট চকোলেট বিস্কুট ক্রাশার/শেক।
যদিও আমি ক্রাশার এবং শেকের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনি তবু চেষ্টা করে দেখতে পারেন ক্রাশার কিংবা শেক আর অরিও কিংবা ডরিও যাই নাম দেয়া হোক না কেন পানীয় হিসেবে কিন্তু একদম খারাপ না জিনিসটা।
সিট্রাস আইসড সুইট টি
সিট্রাস শব্দের বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় লেবুবর্গ। আসুন রেসিপি থেকে জেনে নেয়া যাক কেন এর নাম সিট্রাস আইসড সুইট টি। রেসিপিতে দেয়া উপকরণের পরিমাণ নিজস্ব মিষ্টির চাহিদা এবং রুচি অনুযায়ী বদলে নিয়ে তৈরি করা যাবে সুস্বাদু সিট্রাস আইসড সুইট টি। এখানে আমি দুইজনের পরিবেশনের জন্য উপযোগী প্রস্তুত প্রণালী দিয়ে দিচ্ছি। বাকিটা নিজের মতো করলেই চলবে।
উপকরণঃ
* ২ টি লবঙ্গ
* ২ টি টি-ব্যাগ
* ১/২ কাপ পাইনাপেল (আনারসের রস) জুস
* ১/২ কাপ অরেঞ্জ (কমলার রস) জুস
* ১/৪ কাপ লেমন (লেবুর রস) জুস
* ২/৩ চামচ চিনি
* ৪/৫ টি বরফ কুঁচি
প্রস্তুত প্রণালীঃ
>> একটি পাত্রে ৩ কাপ পানির সাথে ২ টি-ব্যাগ পরিমাণ চা পাতা এবং লবঙ্গ নিয়ে নিভু নিভু আগুনে ১০ মিনিট ধরে ফুটাতে হবে।
>> তারপর গ্লাসে মিশ্রণটি ছেকে নিয়ে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিতে হবে।
>> তারপর মিশ্রণটির সাথে পাইনাপেল জুস, অরেঞ্জ জুস, লেমন জুস এবং চিনি আর বরফ কুঁচি নিয়ে ভাল মতো মেশালেই তৈরি হয়ে যাবে চমৎকার সুস্বাদু সিট্রাস আইসড সুইট টি।
আসুন চা এবং ক্রাশারের এই হিমশীতল অনুভূতি নেয়ার ফাঁকে ব্লগার নাসরিন চৌধুরী রচিত বোধের দেয়ালে কতটা শ্যাওলা জমেছে কবিতাটি পড়ে আমাদের বোধকে কিছুটা সজীব করে তোলা যাক।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩০