somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণব্লগঃ বন্যেরা বনে সুন্দর , আমরা বান্দরবানে B-))

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধ্যাত এই অফিস টু বাসা, বাসা টু অফিস করতে করতে লাইফটা ডাইল হয়া গেল, আর ভাল্লাগেনা।
কোথাও যাওয়া দরকার, একটু ঘুরাঘুরি না করলে আর চলছে না।
আরে ক্যাম্নে যাব? টাইম কই? ছুটি ম্যাচ করতেই তো জান বেরিয়ে যাবে।
আরে এইবারের বিজয়দিবস শুক্রবারে পড়সে , সাথে শনিরবির সাপ্তাহিক ছুটি মিলায় ৩ দিনের ছুটি হয়ে যাচ্ছে, এইটারে কাজে লাগান দরকার।

এইভাবেই অফিসের বন্ধুদের মাথায় ঢুকে গেল ১৬,১৭,১৮ তারিখ ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান। কিন্তু কই যাব? নানামুনির নানা মত। কেউ কয় সেন্টমার্টিন, কেউ কয় সুন্দরবন আবার কেউ বলে বান্দরবান। সেইন্টমার্টিন কেন জানি ভাত পাইল না(ভুইলা গেসি কারনটা), সুন্দরবনে দেখা গেল খরচ বেশি পড়বে তাই বান্দরবানকেই সিলেক্ট করল বান্দররা(আমি না কিন্তু, আমি সুন্দরবন্রে ভোট দিসি)
এখন তাইলে বান্দরবনে কই যাব? তেমন কোন ঝামেলা ছাড়াই সিলেক্ট হয়ে গেল বগালেক, কেওকাড়াডং আর নীলগিরি । ১মদিন বগালেক ২য়দিন কেওকারাডং আর ৩য়দিন নীলগিরি ঘুরে আসব(মামাবাড়ির আবদার আরকি) যাইহোক সাতজন মিলে গুরুগম্ভীর মিটিং করে খরচ কত হবে, কোনজায়গা থেকে কোথায় যেতে সময় কত লাগবে এইসব আব্জাব ডিটেইলস প্ল্যান করতে লাগ্লাম(যেন আমগ প্ল্যান অনুসারে চলার জন্য পাব্লিক বইসা আছে)

প্ল্যান শেষে ক্যাম্নে ক্যাম্নে দেখি আমারে সবাই বান্দরবানের টিকেট কিনার জন্য টাকা ধরায় দিসে। শুধু তাই না টাকা যখন নিচ্ছই তখন তুমিই ক্যাশিয়ার এই থিয়োরিতে সহজ-সরল আমারেই বলির পাঁঠা বানায় দিল

যাইহোক প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে গিয়া প্রথমেই খাইলাম ধাক্কা। ঢাকা টু বান্দরবান টিকেট পাইনা। অনেক ঘুরাঘুরি করে শেষে চট্রগ্রামের টিকেট কাটলাম আর আমাদের আরো ২ জন গেল ট্যুরের জন্য জিনিসপাতি কিনতে। কিছুক্ষন পরেই জিনিসপাতি দেইখা মোটামুটি টাশকি খাওয়ার অবস্থা, ট্যুরে যাবে নাকি নতুন সংসার পাতবে ২ জনে বুঝলাম্না। আস্তা মাল্টিপ্লাগ নিয়া আসছে, আসছে তো আসছে ট্যুরের পরে মাল্টিপ্লাগ কার বাসায় যাবে তা নিয়া মোটামুটি প্ল্যানপ্রোগ্রাম কইরা ফালাইতেসে:P। বাকি জিনিসপত্র নিয়াও হাল্কার উপর ঝাপ্সা প্ল্যানপ্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেল;)। প্ল্যানপ্রোগ্রামের সাথে চলতে থাকল আলাপ আর প্যাঁচাল । আমাদের অন্যতম টিম মেম্বার SKDরে নিয়া সবাই চিন্তায় ব্যাস্ত হয়া গেল। উনি পাহাড়ে উঠলে পাহাড় টিকবে কিনা এই নিয়া আর তার ফিটনেস নিয়া শুরু হয়া গেল ব্যাপক এনালাইসিস আর সাথে ফ্রি SKD'র কিছু গালিগালাজ।
অবশেষে রাতে রওনা দিয়ে আমরা সকালে পৌছালাম চিটাগাং। পৌছায়ই অস্থির হয়ে গেলাম, বাউরে বাউ কি ঠান্ডা।ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে সিএঞ্জিতে কইরা বাসস্ট্যান্ডে গিয়া দেখি আরেক বিপদ। আবারো বান্দরবানের টিকেট পাইনা(কাহিনী কি?সবাই লাগসে নাকি বান্দরবানের পিছে?) আরেক গ্রুপও টিকেট পাইতেসিলনা তারা কইল আসেন ২ গ্রুপ মিলে একটা মাইক্রো ভাড়া করি । তো রাহাত গেল গেল তাদের সাথে মাইক্রো ভাড়া করতে। মাইক্রোতে ঊঠতে গিয়া দেখি আরেক কাহিনী। এক মাইক্রোতে বলে ১৮ জন ঊঠবো। আরে শালা ঢাকার মিনিবাসগুলিও তো আমগ দেইখা লজ্জা পাইব। যাইহোক আমরা লজ্জা না পায়া উইঠা বসলাম। সিটের এক সাইডে পড়ায় আমার ১/৩ রইল সিটে বাকিটা ঝুলন্ত আর আমি পুরা ডেডলকড অবস্থায় /:) ।এই অবস্থায় শুরু হইল জার্নির সেকেন্ড ফেজ । চিটাগাং টু বান্দরবানের রাস্তা সিদ্ধান্ত নিল প্রধান আকর্ষন মাইক্রোরে হইতে দিবেনা, সে নিজেই হবে। তাই শুরু করল ঝাকি, আর সেইটারে আরো আকর্ষণীয় বানাইতে থাকল আমাদের ডেডলক সিচুয়েশন।

অতঃপর কোনো একসময় আমাদের মুড়িরটিন পৌছাইল। আমরা সবাই নানান জায়গায় ব্যাথা নিয়া ত্যাড়াব্যাকা অবস্থায় নামলাম। নামার সাথে সাথেই শুরু হল ক্যাইক্ষ্যংছড়ি যাওয়ার জন্য দৌড়। কোনমতে কাউন্টারে পৌছায় শুনলাম বাস একটা এখনি ছাড়বে কিন্তু কোন সিট ফাঁকা নাই । কিসের সিট? আমরা দুর্নিবার অভিযাত্রীদল, একেকটা আগুনের গোলা সিট ছাড়াই উঠে গেলাম এক মুড়ির টিন থেকে অন্য মুড়ির টিনে। আর ওঠার একটু পরেই শুরু হল SKD স্পেশাল, ক্ষুধার্ত SKD ক্ষিদায় কান্দে আর ত্যাঁদড় রবি তারে পচায় ক্ষুধা মিটায়। পাহাড়ি রাস্তায় আরো ২ ঘন্টা খাম্বার মত দাড়ায় থেকে আমরা যখন নড়বড়ে অবস্থায় পৌছায় গেছি তখন নাম্লাম ক্যাইক্ষ্যংছড়ি । এইবার আমাদের ঠিক করার দায়িত্ব নিল সাঙ্গু নদীর ট্রলার।মুরগির খোপেরমত এক ট্রলারে করে রানীক্ষেত মুরগির মত ঘাড় বাঁকা করে মাত্র দেড়ঘন্টার একটা জার্নি আমাদের পৌছায় দিল রুমা বাজার /:) আমরা তখন আর ত্যাড়াও না ব্যাকাও একটুও নড়বড়েও না। তখন যে আমরা কি আমরা নিজেরাও জানিনা :|



রুমাবাজার নেমে পেট ঠান্ডা করে আমরা উঠলাম বগালেকের উদ্দেশ্যে চান্দের গাড়িতে। সঙ্গীসাথীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কিছু মুর্গী। চান্দের গাড়ি চলার সাথে সাথে তারা শুরু করল খেলা। গাড়ি ঝাঁকায় আর মুর্গী লাফায়। লাফায় আর হাগে, হাগে আর লাফায়। পুরা মাখামাখি। উৎপলদার দিকে তাকায় দেখি বেচারার অবস্থা চ্রম। উপ্রে গাছের ডালের বাড়ি তো নিচে মুর্গীর মাখামাখি গু, একপাশ থেকে SKD ঝাপায় পড়ে তো অন্যপাশ থেকে সানিয়াত ভাই ঝাড়ি দেয়। আমরা চাইরপাশ দেখব না সাম্নের লাইভ কমেডি দেখব এই নিয়ে পড়লাম ব্যাপক ঝামেলায়। (মাঝে দিয়া একটা কথা বইলা রাখি চান্দের গাড়ির কাছে ফ্যান্টাসি কিংডমের রাইড তেমন কিছুইনা)।



চান্দের গাড়ি থেকে নেমে শুরু হল আমাদের আসল জার্নি, খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠা। SKD প্রথমেই ২টা ঢোঁক গিলে শুরু করল, আর আমি রবি রাহাত আগে বগায় একবার আসার কনফিডেন্সে ব্যাপক ভাবের সাথে শুরু করলাম হাঁটা। শুরু করার কিছুক্ষন পরেই বুঝা গেল এত ভাব নেয়া ঠিক হয়নাই আর SKD কিছুক্ষন পরপরই দেবাকে এই দেবা একটা ছবি তুল বলে বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করে আর বেচারা দেবা ছবি তুলতে তুলতে নিজেরে তোলার আর সময় পায়না। পাহাড় বেয়ে কিছুক্ষন ওঠার পরেই একেকজনের মুখের দিকে তাকায় দেখি বাঙলার ৫ হয়ে গেছে একেক্টা মুখ। আমি যখন হিসাব করতেসি ব্যাগটা হঠাত করে ভারি হইল ক্যাম্নে X(( তখন রবি এসে গম্ভীর মুখে বলে ‘না ভাই, বিড়িটা এইবার কমাইতেই হবে, স্ট্যমিনা কমে গেসে’। সবার যখন ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাচি অবস্থা তখন অবশেষে আমরা পৌছালাম বগালেকে। পৌছায় বুঝলাম নাহ কষ্ট স্বার্থক, এখানে আসার জন্য এটুকু কষ্ট কোন ব্যাপারই না।
বগায় পৌছায়ই সবার কি হইল বুঝলাম্না অভিযাত্রীরা আচানক সব মডেল হয়া গেল। একেক অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুলে আর হিসাব করে ফেসবুকে এইটা দিব নাকি আগেরটা? নাহ নতুন একটা তুলি। ছবি তোলার ভঙ্গিমায় ব্র্যাড পিট থেকে নায়ক জসিম কাউরেই ছাড় না দিয়ে আমরা শেষ করলাম আমাদের ফটোসেশন;)। বগালেকে গোসল সেরে আর রাতে খেয়ে দেয়ে আমরা ঠিক করলাম সারা রাস্তা পেইন দেয়ার জন্য মুর্গীগুলার উপর প্রতিশোধ নিব X( , তো শুরু হইল আমাদের মুর্গী পোড়ান থুক্কু বারবিকিউ মিশন। এই মিশনেও দেখি সবার আবার ব্র্যাড পিট কিংবা জসিম হওয়ার শখ মাথা চাড়া দিয়া উঠল। পুরষ্কার দেয়ার স্টাইলে আলগা কইরা মুর্গীর ঠ্যাং ধরে আর পাতিন্যাতার মত তেলতেলে হাসি দিয়া ছবি তুলে। ছবি তুলার ঠ্যালায় নাকি আগুনের তাপে কে জানে মুর্গীগুলা কুচকুচে কাল হয়া গেল কিছুক্ষনের মধ্যে। তয় খাইতে সিরাম হইল B-) । আর পরেরদিন সকালে...
নাহ পরের দিনের কাহিনী পরের দিনই বলি। আইজকা অনেক লিখসি। এখন কিছু ছবি দেখেন। সময় পাইলে পরের কাহিনী দিব(ব্যাপক ভাব B-)) B-)) B-)) )








সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৮
৪৫টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×