somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিভিউ ।। মনপুরা ২০০৯ ।। গিয়াস উদ্দীন সেলিম

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘বাঙ্গালীর এ্যাপ্রিসিয়েশন বড়ই অদ্ভুত’- কথাটি আমাকে বলেছিলেন একজন সিনিয়র লেখক এবং বিগত কয়েক বছরে এই রূঢ় বাস্তবতার সাথে পরিচয় ঘটল বারবার। কেন জানি মনপুরা সিনেমাটির রিভিউ করতে বসে কথাটি মনে পড়ে গেল। হয়ত সাম্প্রতিক সময়ে আয়নাবাজি নিয়ে লিখতে বসে বিষয়টি মাথায় এসেছিল আর সিনেমাটি নিয়ে দর্শকের উচ্চ প্রশংসা ও ভুরি ভুরি রিভিউ এর বিপরীতে দীর্ঘ সাত বছর অতিবাহিত হবার পরও মনপুরার একটি ভাল রিভিউ তন্ন তন্ন করে খুঁজে না পাবার কারণেই বোধ করি বাক্যটি আমার মাথার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। বস্তুত, মনপুরা সিনেমাটি আমার কাছে অনবদ্য এক অভিজ্ঞতার মতো, যার সাথে তুলনা করা যায় বেশ কিছু বছর আগে নীলক্ষেতে হঠাৎ করে পাওয়া সম্পূর্ণ অপরিচিত এক লেখকের বই কিনে পড়ার পর যে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা ও ভাললাগার সঞ্চারণ হয়েছিল, তার সাথে এবং এতগুলো বছর যেমন আমি ওয়াংকার ওয়াই এর ‘ইন দ্য মুড ফর লাভ’ সিনেমার ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারিনি, তেমন এও বলতে পারি, মনপুরার ঘোর থেকেও বেরুতে পারব না বেশ কিছু বছর। নীলক্ষেতে কেনা বইটির নাম ছিল ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’, শওকত আলীর লেখা।

নিতান্তই ভাল লাগা থেকে যে মনপুরার রিভিউ লিখতে বসেছি তা নয়, বরং এমন একটি সিনেমার ভাল রিভিউ না থাকার যে দায়বদ্ধতা সেটা অনেক বেশি কাজ করেছে আমার মধ্যে, যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু ঠিক কোথা থেকে শুরু করব, বুঝতে পারছি না, কারণ কাহিনী, পরিচালনা, সম্পাদনা, সংগীত, সংলাপ, চিত্রায়ণ যে কোনো বিষয় থেকেই এই সিনেমার রিভিউ শুরু করা যেতে পারে,আর একদম শুরুর দৃশ্য থেকে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত মনপুরা একটি সার্থক সিনেমার সবগুলো এলিমেন্টসহ এতটাই বলিষ্ঠভাবে বর্তমান যে, পরিচালক গিয়াস উদ্দীন সেলিমের সিনেমা জ্ঞানের তারিফ না করে পারা যায় না, যেখানে তিনি আমাকে কেবল আমাদের মুগ্ধতার সীমার মধ্যেই আবদ্ধ রাখে নি, বরং বিস্মিতও করেছেন। ‘একজন পরিচালক প্রথম সিনেমাতেই এতটা পারফেক্ট হয় কীভাবে’?-এই প্রশ্ন বারবার আমার কাছে ঘুরে ফিরে এসেছে, কারণ গত এক দুই দশকে আমাদের সিনেমা শিল্প লাগাতারভাবে এমন কোনো উল্লেখযোগ্য সিনেমা আমাদের দেয় নি যে, যাতে করে ভাবা যেতে পারে, বাংলাদেশে মনপুরার মতো একটি কমপ্লিট সিনেমা তৈরীর পরম্পরা তৈরী হয়েছে, অথচ হঠাৎ করেই জনাব সেলিম তার প্রথম প্রয়াসেই আমাদের উপহার দিলেন মনপুরার মতো একটি কমপ্লিট সিনেমা, যা কেবল দেশিয় পরিমন্ডলেই নয় বরং আন্তর্জাতিকভাবেও আমাদের সিনেমা শিল্পকে নেতৃত্ব দিতে পারে, দৃঢ়ভাবে।

একদম শুরুর দৃশ্য থেকেই মনপুরা তার চিত্রায়ণে মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছে এবং সমগ্র সিনেমা জুড়েই তা ক্রমশঃ ব্যপ্ত ও বিস্তৃত হতে হতে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে, একটি সিনেমার চিত্রায়ণ কোন পর্যায়ে উন্নীত হলে তা বিশ্বমানের হয়ে উঠে। নিতান্তই গতানুগতিক কিংবা সাধারণ মানের একটি গল্পের পরও মনপুরা দর্শকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবার ক্ষেত্রে এর শুরুর দুটি অধ্যায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে এবং দর্শককে কাহিনীর সাথে একাত্ম হতে সহায়তা করেছে। কাহিনীর নাটকীয় শুরু ও সোনাইয়ের (নায়ক) মনপুরায় নির্বাসন, এই দুটো অধ্যায় দর্শক মনে সমূহ প্রতিক্রিয়া তৈরী করে আর সোনাইয়ের মনপুরায় আগমণের সাথে সাথে আমরা নিজেরাও কাহিনীর বিকাশে এগিয়ে যাবার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠি। দর্শক মনে সিনেমার কাহিনীর এমন প্রয়াস বা ক্রিয়া একটি সার্থক সিনেমার জন্য অনেক বেশি জরুরী আর পরিচালকের জন্য তখন গল্প বলার বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে উঠে, যা এই সিনেমার ক্ষেত্রে একদম শুরুর দৃশ্য থেকেই ঘটেছে, বা বলা চলে, পরিচালক তা ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। শুরুর দৃশ্যর কথাই ধরা যাক, বিজলি চমকানো বর্ষণমুখর রাত, ফ্লোরের কাছাকাছি থেকে শ্যুট করা দৃশ্য, যেখানে একটি লোহার শিকল পড়ে আছে, সামনে চাদরে আবৃত ঘুমন্ত মানুষ ও তার হঠাৎ ঘুম থেকে হন্তদন্ত হয়ে জেগে ওঠার পর অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে ক্যামেরার অন্য দৃশ্যে সরে যাওয়া ও বিজলির আলোয় মুহূর্তের জন্য হা করা সিংহমূর্তির মুখ থেকে বৃষ্টির মধ্যে অনড় দাঁড়িয়ে থাকা একটি পুরুষে স্থির হবার পরপরই নতুন বিস্ময়ের মতো আমরা যখন পুরুষটির সামনে নিথর পড়ে থাকা একটি নারীদেহ আবিস্কার করি, তখন এই সিনেমা বা এর কাহিনীর সাথে আমাদের একাত্মতা জরুরী নয় বরং অনিবার্য হয়ে পড়ে, কেন না যে দৃশ্যগুলো আমাদের দেখানো হয়েছে বা বলা চলে, যেভাবে দেখানো হয়েছে, তাতে আমাদের বুদ্ধিমত্তা আপনা-আপনি ক্রিয়া শুরু করে, যেখানে একদম শুরুতে মেঝেয় পড়ে থাকা লোহার শিকল যেমন মাথার মধ্যে রয়ে, তেমন বৃষ্টির মধ্যে একটি পুরুষের সামনে নিথর পড়ে থাকা নারী শরীরের ভেজার দৃশ্য আমাদের মধ্যে অনেকগুলো সিদ্ধান্তের জন্ম দেয়, যার মধ্যে এই সিদ্ধান্তটি প্রথমেই নিয়ে ফেলি যে সেটি একটি খুন, আর তার পরপরই ক্রিয়াশীল মস্তিষ্কে নতুন প্রশ্ন জাগে, নারীটি কে?

বস্তুত, কাহিনী শুরুর এই প্রয়াসটুকু মনপুরার জন্য ছিল অনেক বেশি জরুরী, যা হয়ত পরিচালক অনুধাবণ করেছিলেন আর নিজ দক্ষতার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস থেকেই বোধ করি তিনি তার সৃষ্টিশীলতা থেকে সরে না এসে প্রশ্নটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন রহিমা নামের সেই মৃত নারীটির পরিচয় উল্লেখ না করে। আমরা তখন নিজেরাই আপাতভাবে সিদ্ধান্ত নিই নারীটি কে, আর এই সিদ্ধান্ত নেবার সময় গাজী সাহেব (গ্রামের জমিদার) ও তার স্ত্রীর শলা-পরামর্শ ও মৃত নারীটির মুখের এক ঝলক থেকে নিজেদের আবিস্কার করি নদী বিস্তৃত নৈসর্গিক পটভূমিতে, যেখানে পূর্বের ঘটনার কোনো প্রকার সমাপ্তি বা সিদ্ধান্ত না টেনেই আমাদের নিয়ে আসা হয় ভিন্ন পটভূমিতে। আমাদের মধ্যে তখনও পূর্ববর্তী ভাবনা-চিন্তার রেশ রয়ে যায়, আর গাজী সাহেব ও সোনাইয়ের কথপোকথন থেকে জানতে পারি যে, পূর্বের রাতে শেষ পর্যন্ত কি ঘটেছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পরিচালক তখনও আমাদের জানান নি মৃত নারীটি কে, এমন কি গাজী সাহেব ও তার স্ত্রীর মধ্যে যে শলা-পরামর্শ হয়েছিল এবং সেখানে যে সোনাইকে খুনের দায়ে ফাঁসানো হবে, তার সম্পর্কেও আভাস দেন না, বরং আবারও আমরা নিজেরাই আন্দাজ বা উপলব্ধি করে নিই ঘটনার বৃত্তান্ত। এই যে দর্শকের কাহিনীর সাথে এভাবে একাত্ন করার প্রয়াস বা কাহিনীর বিকাশে নিজেদের অংশগ্রহণ নিতান্তই কাকতালীয় নয়, বরং পরিচালকের মুন্সিয়ানারই প্রকাশ বটে, ফলে একদম শুরু থেকেই মনপুরা আমাদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয় সোনাইয়ের সাথে সাথে মনপুরায় গমন করতে ও কাহিনীর গতির সাথে সাবলীল হয়ে উঠতে।

মনপুরার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর আরেকটি হলো এর লোকেশন নির্বাচন। লোকেশন হিসেবে এই সিনেমা ও কাহিনীর জন্য মনপুরা কেবল অসাধারণ নয়, বরং এর চেয়ে ভাল লোকেশন বোধ করি এই সিনেমার জন্য খুঁজে পাওয়া দুরুহের। আর এখানেও প্রশংসা পরিচালকের জন্যই বরাদ্দ, কেন না তিনি মনপুরার জন্য সত্যিকারের এক নৈসর্গিক লোকেশন নির্ধারণ করেছেন, যা একদিকে যেমন কাহিনীর দাবী পূরণ করেছে, তেমন আবহমান গ্রাম-বাংলার চিরাচরিত রূপকে অনেক বেশি বিস্তৃত করে তুলেছে সিনেমার পটভূমিতে, যার জন্য মুগ্ধতাই বরাদ্দ কেবল। এক কথায় মনপুরার সামগ্রিক যে চিত্রায়ণ অথবা যেভাবে মনপুরার দৃশ্যাবলী আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে, তেমনটা খুব বেশি দেখেছি বলে মনে পড়ে না, সে জন্য পরিচালকের সাথে সাথে সিনেমাটোগ্রাফার কামরুল হাসান খসরুকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে হয় বিশেষভাবে।

গত দুই তিন দশকে বাংলাদেশে যতগুলো সিনেমা নির্মিত হয়েছে, তাদের মধ্যে যে কয়েকটি সিনেমা আমাদের বিশেষ মনোযোগ দাবী করেছে, মনপুরা সেগুলোর অন্যতম। ‘কেন মনপুরার এই দাবী’-এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন না মনপুরা ছাড়াও অন্যান্য ভাল সিনেমা রয়েছে, তবে কেন শুধু মনপুরার জন্যই এই বিশেষ মনোযোগ? সত্যি বলতে মনপুরা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের কোনো সিনেমা নয়, বরং বলা যায় আমাদের দেশিয় সিনেমার যে চিরকালীন প্রেক্ষাপট, মনপুরা তার বলিষ্ঠ রিপ্রেজেন্টেশন মাত্র। তারপরও মনপুরা বিশেষ মনোযোগ দাবী করে এর পরিচালনার জন্য। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের পরিচালকরা মেধাবী, কিন্তু যথেষ্ট মনোযোগি নয়, আর অধিকাংশ সময়ই তাদের সিনেমা দেখার পর মনে হয়, কোথাও যেন খেই হারিয়ে ফেলেছেন। সেখানে মনপুরা একটি কমপ্লিট নির্মাণ, সবগুলো দিক থেকেই, আর এ জন্যই মনপুরা বিশেষ মনোযোগ দাবী করে। যদি এর চিত্রায়ণের কথা বলি, তবে মনপুরার নৈসর্গিক যে দৃশ্যাবলী তা এমনিতেও মনোহর, তবে তাকে অনবদ্য করে তোলার দায়িত্ব ছিল চিত্রগ্রাহকের, যা তারা সফলভাবেই করতে সক্ষম হয়েছেন। এরপর কাহিনী বিন্যাস বা এর গতি, নাটকীয়তার সমাবেশ, চরিত্রের জন্য কলাকুশলী নির্ধারণ ও অভিনয়, সংগীত সংযোজন, আবহ সংগীত (যদিও দুএকটি দৃশ্যে আবহ সংগীত অস্বস্তিকর, দীর্ঘ ও ভারী মনে হয়েছে) ও বাস্তব শব্দের অপূর্ব সমাবেশ, পরিমিত সংলাপ ও সবশেষে সম্পাদনা, সবগুলো বিষয়ই তো মনপুরাতে অপরাপর সিনেমার চেয়ে পারফেক্টলি করা হয়েছে আর সে জন্যই এমন প্রয়াস আপনা-আপনিই বিশেষ মনোযোগের দাবীদার হয়ে উঠে, সমসাময়িক তো বটেই, এমন কি পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও।

প্রায়শই আমার এ কথা মনে হয় যে, আমাদের দেশের সিনেমা পরিচালকদের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বিষয় ‘সম্পাদনা’, কারণ যখন তারা সিনেমা বানান তখন তাদের মাথায় ভিন্ন কোনো চিন্তা না থাকলেও, সম্পাদনার সময় এ চিন্তা অবশ্যই মাথায় থাকে যে, সিনেমাটি বাংলাদেশে নির্মিত এবং তা বাংলাদেশি দর্শক দেখবে। বিষয়টি ভয়াবহ নিঃসন্দেহে আর আমার এমন কথা মনে হবার কারণ, মনপুরা সিনেমার রোমান্টিক দৃশ্যগুলো খুব মোলায়েম ও সাবধানতার সাথে শ্যুট করা হয়েছে, যেখানে রোমান্টিক আবেগের বাড়াবাড়ি নেই বললেই চলে, যেন সবকিছুই সেখানে স্বার্গীয় সুন্দর, নির্মল ও বিশুদ্ধ, এমন কি নায়ক যখন নায়িকাকে প্রচন্ড আবেগে নিজের দিকে টেনে নেয়, আলিঙ্গন করে, তখনও সেখানে রয়ে গেছে আবেগহীনতার লক্ষণ আর দুটো শরীর গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হবার পরিবর্তে, সাবধানী দূরত্ব থেকেই যেন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, একজন পরিচালক কোনো আবেগঘন আলিঙ্গন দৃশ্য এভাবে শ্যুট করতে পারে, কারণ প্রেমের আবেগঘন বাস্তব আলিঙ্গন তা গ্রাম হোক অথবা শহর, সবখানেই আবেগের প্রাবল্যতায় জর্জরিত, অথচ মনপুরার আলিঙ্গন বা প্রেমের আবেগঘন দৃশ্যগুলো যে কেবলমাত্র বাংলাদেশের, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। যদিও বিষয়টি দুঃখজনক, তারপরও মনপুরাই শেষ পর্যন্ত জিতে গেছে, কারণ শুরু থেকেই এটি একটি কমপ্লিট সিনেমা অভিজ্ঞতার দিকে আামদের নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে, ফলে সেখানে যাই ঘুটক না কেন তা আমাদের জন্য অবাস্তব, অস্বস্তিকর কিংবা অসামঞ্জস্যমূলক ছিল না, মোটেও। মনপুরা নিয়ে আমার প্রশংসা এ জন্যই আরও অধিক যে, সিনেমাটিকে দর্শক গ্রহণ করে নি, বরং সিনেমাটিই দর্শককে বাধ্য করেছে তা গ্রহণ করতে এবং শুধুমাত্র তা করেই সিনেমাটি ক্ষান্ত থাকে নি, দর্শককে অবলীলায় এর বাতাবরণে টেনে এনেছে মন্ত্রমুগ্ধের মতো। মনপুরার সুন্দর হয়ে উঠার পরিসর ছিল ব্যাপক আর সেই বিশাল পরিসরের দিকে পরিচালক আমাদের টেনে নিয়ে গেছেন সুষম গতিতে। আহা, আমরা কেউ-ই আসলে টের পাই নি মনপুরার নদীটি কোন সে মাদকতায় সাঁতরে পার হয়ে এসেছি সোনাইয়ের সাথে সাথে।

মনপুরা নিয়ে একজন লিখেছেন যে, ‘সিনেমা মুক্তির আগেই এর গানগুলো লোকজনের মুখে মুখে ফিরছিল এবং মুক্তির পর এই গানগুলোই হয়ে উঠে সিনেমাটির অন্যতম বিজ্ঞাপন’- মন্দ বলেন নি, কারণ মনপুরা ট্রাজিক লাভ স্টোরি হিসেবে যত না বেশি হিট করেছে, তার চেয়ে অধিক মিউজিক্যাল লাভ স্টোরি হিসেবে হিট করেছে। সংগীত মনপুরার সফলতম দিক ও মিউজিক্যাল এ্যালবাম হিসেবেও দারুণ সফল। বাংলাদেশি সিনেমার ক্ষেত্রে এমনটি সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না। এছাড়া এর আবহ সংগীতও বিশেষ প্রশংসার দাবী রাখে। আমার তো এখনও মস্তিষ্কের মধ্যে সোনাইকে মনপুরায় নামিয়ে দেবার জন্য লঞ্চের তীরে ভেড়ার সময় আবহ সংগীতে হারমোনিকার ব্যবহার ক্রিয়াশীল রয়েছে, কান করলেই যেন শুনতে পাই। যদিও এই পার্টিকুলার মিউজিকটি আমার কাছে অনেক বেশি পরিচিত ও জীবনে সবচেয়ে বেশি বার দেখা সিনেমা ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড এ্যান্ড দ্য আগলি’র আবহ সংগীত থেকে নেওয়া মনে হয়েছে, তারপরও খারাপ লাগেনি, কারণ ঠিক যথার্থ দৃশ্যেই মিউজিকটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা কাহিনীর বাতাবরণ আরও করুণ ও গ্রহণীয় করে তুলেছে। সিনেমায় সংযোজিত সবগুলো গানই অসাধারণ, বিশেষ করে রফিকুল ইসলাম বাবুর গাওয়া ‘নিথুয়া পাথারে’ গানটি আমি একটানা অনেক দিন শুনেছি। ‘যাও পাখি বলো তারে, সে যেন ভোলে না মোরে’ গানটিও অসাধারণ তবে এতে দিলারা জামানের ঠোঁট মেলানো নিতান্তই বেমানান লেগেছে। আমার একটা বিষয় মাথায় ঢোকে না কিছুতেই, সিনেমাতে পরিচালক যদি নিতান্তই গান সংযুক্ত করতে চান, তবে করুক, কিন্তু সেই গানের সাথে চরিত্রের ঠোঁট মেলানোর বিষয়টি দেখাতে হবে কেন? আবহ সংগীত যদি ব্যকগ্রাউন্ডে সফলভাবে সংযুক্ত হতে পারে, তবে গান কেন পারবে না?

মনপুরার অভিনয় নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই, কেন না মামুনর রশিদ কিংবা ফজলুর রহমান বাবু শক্তিশালী অভিনেতা হিসেবে নিজেদের অনেক পূর্বেই প্রমাণ করছেন। তবে পাগল চরিত্রে মনির খান শিমুলের অভিনয় নিয়ে আমার অভিযোগ আছে। এখানে তার পাগলামো পাগলের হয়নি বরং অভিনেতা শিমুলের হয়েছে আর তিনি যে চরিত্রটির সাথে সফলভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছেন, তা মানতে নারাজ। পরিচালকের এই একটি ব্যাপারে আমি সত্যিকার অর্থেই হতাশ হয়েছি। এই পাগল চরিত্রটি নিয়ে কি আরেকটু ভাবা উচিত ছিল না? এমন কোনো চরিত্র, যা অন্তত উচ্চতায় আরেকটু খাটো হলে মন্দ হতো কি? আজীবন ধরে যত পাগল আমরা দেখেছি, তারা এত সুদর্শন ও লম্বা কখনোই ছিল না। চরিত্র গ্রহণের বিষয় না হলেও, চরিত্রের করা অভিনয়ের সাথে একাত্ম হতে হলে আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই যেতে হয় বৈকি। বিষয়টি তো আর এমন নয়, আপনি শব্দের চেয়ে দ্রুত গতির জাপানিজ ট্রেনে চড়ে বেমালুম বাংলাদেশি ধীর গতির ট্রেনে চড়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা ভূলে গেলেন। এটা ঠিক যে দ্রুত গতির ট্রেন আপনাকে নতুন অভিজ্ঞতা দেবে, তাই বলে আপনার অতীত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই তো আপনাকে সেই নতুন অভিজ্ঞতার দিকে যেতে হবে, সেখানে আপনি যদি আপনি আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতাকে ইগনোর করে বসেন কিংবা নতুন অভিজ্ঞতা যদি আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতার সত্যতার প্রতি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, তখন অস্বস্তি বোধ করবেন, নিঃসন্দেহে, যা আপনাকে সাবলীল ও সহজ হতে দেবে না কিছুতেই। তাই মনপুরার পাগল চরিত্রে আমি যেমন শিমুলের অভিনয় পছন্দ করি নি, তেমন তাকে সেই চরিত্রে গ্রহণ করতেও সম্পূর্ণরূপে নারাজ।

আরও একটি বিষয় আমাকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে। যদিও তা পরিচালকের মুন্সিয়ানার ছাপই বহন করে, তারপরও বিষয়টি নিতান্তই সিনেমার কাহিনী, প্রেক্ষাপট, বাতাবরণ ও আমাদের অভিজ্ঞতার সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়ায় আর এখানেও পরিচালক সেই পূর্বের দোষেই আরোপিত, যদিও তা উৎকর্ষতার দিক থেকে মোটেও নেগেটিভ নয়, তারপরও বিষ খাবার পূর্বে পরীর (নায়িকা) দুঃস্বপ্নের যে চিত্রায়ণ, তা আমাকে চমকে দিলেও আমি তাকে মনপুরার দৃশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে নারাজ, ফলে ঐ বিশেষ দৃশ্যায়নটি অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। এখানেও পরিচালক মনোযোগি হতে পারতেন এবং যেভাবে তিনি দৃশ্যটি চিত্রায়ণ করেছেন, সেখানে বিষয়টি আমার কাছে গ্রাম বাংলার রাক্ষস-খোক্কস কিংবা জিন-ভূতের প্রচলিত চিন্তার পরিবর্তে হুট করে দুমাথাওয়ালা ড্রাগন কিংবা এ্যালিয়েনের চিন্তার মতো আবির্ভূত হয়েছে, ফলে আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢাকা ঐ মানুষগুলো সিনেমার পরিমন্ডলে খাপ না খেয়ে নিতান্তই এ্যলিয়েন হিসেবে ধারা দিয়েছে, যা সরল, সাধারণ একটি গ্রামের মেয়ের মৃত্যুপূর্ব দুঃস্বপ্ন বা হ্যালুসিলেশন হিসেবে আবির্ভূত হওয়া অসম্ভব এবং মনপুরার সামগ্রিক বাতাবরণে নিতান্তই বেমানান। আশা করি পরিচালক তার সামনের সিনেমায় এই বিষয়গুলোর প্রতি আরও বেশি মনোযোগি হবেন।

এবার আসি চঞ্চল চৌধুরী প্রসঙ্গে। শুরুতেই বলেছি গিয়াস উদ্দীন সেলিম নিঃসন্দেহে একজন গুণী পরিচালক এবং তার সিনেমা জ্ঞান অবশ্যই গভীর আর সে জন্যই বলা যায়, মনপুরার চঞ্চলকে হয়ত খুঁজে বের করা কোনো পরিচালকের জন্যই কষ্টকর ছিল না, কিন্তু মনপুরার জন্য চঞ্চলকে সোনাই করে তোলা পরিচালক ও অভিনেতা, কারোর জন্যই সহজ ছিল না, অথচ কাজটি জনাব চঞ্চল করতে সক্ষম হয়েছেন দারুণভাবে। এ কথা অনায়াসেই বলা যায়, মনপুরার সোনাই এখন পর্যন্ত চঞ্চল চৌধুরীর সেরা অভিনয়, যদিও এই অভিনেতা এখনও তার ক্ষমতার প্রতি সুবিচার করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তবে একদিন তিনি সমর্থ হবেন বলেই আমি বিশ্বাস করি।

নায়িকা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও পরিচালক যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন এবং ফারহানা মিলি পরী চরিত্রটির জন্য আমার কাছে যথাযথ নির্বাচন মনে হয়েছে। যদিওই এ কথাটি না বললে নয়, মিলি আমার দেখা সবচেয়ে অসুন্দরী নায়িকা, যার মোহনীয় ঘোর থেকে বের হওয়া সত্যিকার অর্থেই অসম্ভব। এর মানে এও নয় যে, তিনি কুশ্রী বা অসুন্দরী, বরং সরাসরি বলতে গেলে, আমরা সাধারণত যে সমস্ত নায়িকার দ্বারা সচরাচর ঘোরগ্রস্থ হয়েছি, সেখানে তিনি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তার সুগোল, শান্ত মুখটি মনপুরার বাতাবরণের সাথে মিলেমিশে গেছে। যদিও তার উপিস্থতি থেকে শহুরে গন্ধ একদম উবে যায় নি, তারপরও তাকে গ্রহণ করে নিতে বেগ পেতে হয় নি, তাই মনপুরা আমাদের মনে হয়ত তার কারনেও দীর্ঘদিন এক সুগভীর ক্ষত তৈরী করে রাখবে, কেন না মনপুরার সোনাই চরিত্র থেকে আমরা নিজেদের ততদিন ভিন্ন করতে পারব না, যতদিন আমাদের মধ্যে শ্বাশ্বত প্রেমের আবেগ বর্তমান থাকবে আর সেখানে এমন একটি প্রেমিকার বিয়োগ, আমাদের ব্যথিত না করে পারে না।

নায়িকা বা নায়কের মৃত্যু, অর্থাৎ মৃত্যু ট্রাজেডি দিয়ে শেষ করা সিনেমাগুলো সবসময়-ই চ্যালেঞ্জের মতো হয়ে উঠে ব্যবসায়িক সাফল্যের ক্ষেত্রে, কেন না দর্শক দুই তিন ঘন্টা ধরে একটা কাহিনী দেখার পর হল থেকে করুণ বা অশ্রুসিক্ত হয়ে বের হয়ে আসবে,এটা বোধ করি কখনোই কাম্য নয়, ফলে সুখোকর সমাপ্তি সিনেমার জন্য এক ধরনের অলিখিত নিয়ম হিসেবেই উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, সেখানে মনপুরার এমন সমাপ্তি, পরিচালকের সাহসিকতারই পরিচয় বহন করে, যেখানে তিনি আমাদের মতো আবেগী জাতীর সামনে এমন বিয়োগান্তকভাবে শেষ করা একটি সিনেমা তুলে ধরেছেন, আর তিনি কেবল তা করেই ক্ষান্ত থাকেন নি, দারুন মুন্সিয়ানার সাথেই শেষ দৃশ্যটির চিত্রায়ণ করেছেন, যেখানে এ্যারিয়েল শটে দেখানো বিস্তৃত জলরাশির মধ্যে ভাসতে থাকা দুঃখ বিহ্বল সোনাইয়ের অসহায় অস্তিত্ব, যার সাথে আমরাও একাত্ম বোধ করি ও কষ্টবোধে জর্জরিত হয়ে উঠি আর বিশাল জলরাশির মধ্যে ভাসমান দিকভ্রান্ত মানুষের মতো সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে এসে দীর্ঘক্ষণ বা দীর্ঘদীন ধরে যেমন ব্যথিত বোধ করি, তেমন আনমনে মনের মধ্যে ভেসে ওঠা পরীর নির্মল মুখখানা ভেবে দারুণ প্রেম বোধে সুখি হয়ে উঠি, ফলে সোনাই ও আমাদের মধ্যে কিংবা তার সীমাহীন দুঃখ বোধের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারি না, তাই মনপুরা বরং হয়ে উঠে আমাদেরই কাহিনী কিংবা নিজস্ব দুঃখবোধ, যার ফলে দারুণ বিয়োগান্তক এই কাহিনীকে গ্রহণ করার জন্য আমাদের নতুন কোনো প্রস্তুতির দরকার পড়ে না কিংবা তার জন্য আমাদের ভাললাগার জায়গাটুকু আলাদাভাবে বরাদ্দ করতে হয় না।

পরিশেষে পরিচালক গিয়াস উদ্দীন সেলিমের সিনেমা জ্ঞানের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রেখেই বলতে পারি, এই পরিচালক সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরও ভাল কিছু সিনেমা উপহার দেবেন এবং তার আগামী সিনেমা ‘স্বপ্নজাল’ মনপুরার মতো সাফল্য পাক বা না পাক, অন্তত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র প্রেমিদের ভাল চলচ্চিত্রের প্রতি যে তীব্র ক্ষুধা, তা কিছুটা হলেও মেটাবে।

আন্তরিক শুভকামনা রইল জনাব সেলিম আপনার জন্য এবং স্বপ্নজাল দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×