somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ডাক্তার সমাজ

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার কাছে ডাক্তারের কথা জিজ্ঞেস করলেই গম্ভীর, মাথায় চুল কম চশমা পড়া একজন মানুষের চেহারা ভেসে উঠে। অবধারিত ভাবে উনার ভুঁড়ি থাকা আবশ্যক। কিন্তু তার চশমার পিছনে তার চোখ জোড়া সবসময় হাসছে। ( এই ভূমিকার জন্য আমাকে হয়ত অনেকেই ভ্রু কুঁচকে তাকাবেন। কিন্তু কি করব? আমার কাছে ডাক্তার আসলেই এরকম)

আমার জীবনে ডাক্তার সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে দাঁতের ডাক্তারের কথা। এই ডাক্তার আঙ্কেল আমাকে তার চেম্বারে গেলেই মজার মজার সব কথা বলতেন। ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার দাঁত উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা। একসময় বুঝতামনা। কৌশলেই তিনি আমার দাঁত উঠিয়ে নিতেন। আমাকে অন্য কাজে ব্যস্ত রেখে। পরে বুঝে গেলাম। আমি তার মনভোলানো কথায় না ভুললেও শান্ত হয়ে থাকতাম। তাঁকে তাঁর কাজ করার সুযোগ দিতাম। এই আন্তরিকতাটা আমার ভাল লাগত। এটার জন্য আলাদা কোন ফিস নিতেননা তিনি।

দ্বিতীয়জন আমাদের পারিবারিক ডাক্তার। আমার ক্লাস ফাইভে থাকতে প্রচন্ড পেট ব্যাথা হতে লাগলো। ( ক্লাসে, পড়ার সময়, কিংবা স্যার পড়া ধরলে কিন্তু টিভি, খেলা কিংবা গল্প বই পড়ার সময়ে না) আম্মু তো মহা টেনশানে। ডাক্তার বাবু ( মৃণাল কান্তি বাবু! সবাই ডাক্তার বাবু বলে ডাকত) আমাকে হাসি মুখে ওষুধ লিখে দেন। টেষ্ট করান। আমার ব্যাথা আর কমেনা। কি হয়েছিল আমার! তিনি আমাকে একটা কথায় বলেছিলেন, " তুমি যদি মনে কর! তোমার কোন পেট ব্যাথা নেই! তাহলেই দেখবে পেট ব্যাথা নেই। যখন পেট ব্যাথা করবে! অন্য কিছু ভাববে।" অদ্ভুত হলেও সত্য। আমার মনে নেই কি কারণে পেট ব্যাথা করত। পানি কম খাবার জন্য হয়ত! আর কখনোই আমাকে পেট ব্যাথা কাবু করতে পারেনি।

আমার কাছে ডাক্তার বলতে এরকম একজন মানুষ সামনে এসে দাঁড়ায়। যাকে দেখলে শ্রদ্ধা আসে। যে হঠাৎ হঠাৎ মোটা একটা বই বের করে চশমা বের করে কি যেন পড়ে। সবসময় পড়ালেখার উপর থাকতে হয় তাঁদের। নিত্যনতুন ওষুধ, রোগ আরো কত কি! আমি তাঁদের প্রতি রাগ করতে পারিনা, অভিযোগ করতে পারিনা। একধরণের কৌতূহল বোধ করি। ওষুধ না শুধুমাত্র হাসিমুখ কিংবা কথা দিয়ে অর্ধেক রোগীকে সুস্থ করে তোলা, এটা নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের কাজ না। এটা আসলেই অসাধারণ কিছু। আসলেই।

দীর্ঘ ভূমিকা! এখন বলি কেন? ডাক্তার বিষয়ে লেখার কারণটা সমসাময়িক! আর বেশি লেখার কারণটা আমার প্রোফাইলের অনেক ফলোয়ার, ফ্রেন্ড এবং শুভাকাঙ্ক্ষী ডাক্তার এই জন্য। ছোট কাল থেকে আমি ডাক্তার পেশাটাকে খুব ভয় পাই। ( একিসাথে ভয় এবং শ্রদ্ধা! ) কারণ হচ্ছে অতিমাত্রায় পড়াশোনা। অমানুষিক পরিশ্রম! আমরা সবাই পড়াশোনা করছি। কিন্তু তারপরও শুধু মাত্র ডাক্তারি এমন একটা পেশা হয়ত সরাসরি মানুষকে বাঁচাতে কিছু মানুষের অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। ডাক্তারি পেশা না! সেবা! এই কথা অনেকেই বলে। আমি বলিনা। খেয়ে পড়ে যদি বাঁচতে না পারে। তাহলে সেবা কিভাবে আসবে? এখানে কিছুটা ভ্রু কুঁচকানো স্বাভাবিক। এমন অনেক ডাক্তার আছে যাদের মাসিক ইনকাম লাখের উপরে। পার ভিজিট হাজার টাকা। কিন্তু তারপরেও আমি বলি, সবাইকে এক কাঠিতে বিচার করা ঠিক না। স্বল্প সিটে সরকারিতে চান্স না পাওয়া ছেলেমেয়েগুলোর বাবা মা কতটুকু দেশ সেবা থেকে ডাক্তারি পড়ান জানিনা। এটা অবশ্যই একপ্রকার ইনভেষ্টমেন্ট। এখানে টাকা দিয়ে টাকা উঠিয়ে আনার ব্যাপার যেমন আছে। তেমনি ভবিষ্যৎ জীবনের নিশ্চয়তার জন্যও ভাবেন বাবা মারা। ভাবাটাই কি স্বাভাবিক না! পুঁজিবাদী সমাজে এটা হতেই পারে। হচ্ছে।

তারপরেও আমি ডাক্তারকে শ্রদ্ধা করি। হাসপাতালে কাউকে এপ্রোণ পড়া দেখলে স্যার/ ম্যাডাম বলে সম্বোধণ করি। ভাল ব্যবহারের বিপরীতে ভাল ব্যবহার পাই। হয়ত মেডিকেলে তারা পেশা হিসেবে আসলেও খুব দ্রুতই ডাক্তারিকে সেবা হিসেবে নিয়ে নেয়। একসময় টাকা অনেক তুচ্ছ হয়ে যায়। মানুষের জীবনের কাছে টাকা অনেক তুচ্ছ।

এবার আসি সময় ও সুযোগ। দেশে এত এত প্রাইভেট মেডিকেল কেন খোলা হচ্ছে বলে কিছু লেখালেখি
পড়ি। এটা নাকি ব্যবসার ক্ষেত্র। মেডিকেলের নাম করে নাকি কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে একদল জনগোষ্ঠী! কিন্তু তারপরেও দেশে ডাক্তার সংখ্যা অপ্রতুল। প্রয়োজনের সময় ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছেনা। সর্বোচ্চ পরিমাণ চেষ্টা করেও হয় ডাক্তাররা তাঁদের সেবাটা দিতে পারছেনা।

আমার কাছে মনে হত ডাক্তার শুধু মুখে মাস্ক আর এপ্রোন পড়ে চিকিৎসা করে যাবে। খসখস করে আঁকাবাঁকা হাতে প্রেসক্রিপশন লিখে যেতে পারে। কিন্তু তাদেরও তো নিজস্ব মান, অভিমান, ক্ষোভ কিংবা আবেগ আছে। বেশীরভাগ ভাল কাজ কিংবা উদ্যেগগুলোতে আমি মেডিকেল কলেজের ছেলেমেয়েদের বা ডাক্তারদের দেখি। তারাও চেম্বার শেষে ছেলেমেয়ে নিয়ে বেড়াতে যেতে চায়। প্রচন্ড চাপের মধ্যেও সামান্য অবসরে প্রেমের উপন্যাস পড়ে হয়ত চোখের পানি ফেলে। তারা সবসময় এটা পারেনা। আমার প্রোফাইলে অনেকেই আছে অনেকদিন পর পর একবার অনলাইন হয়ে বলে, " একটু নিঃশ্বাস নিতে আসলাম!"

আমরা তাদেরকে শ্বাস নেবার সুযোগ করে দিতে পারি। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই। কারণ ডাক্তারের রোগীর দরকার নেই। কিন্তু রোগীর দরকার ডাক্তারের। এখানেও কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলবেন, ডাক্তারি কি সেবা না!! নিজে থেকে দায়িত্ব পালন করবেনা কেন? সরকার কত শত কোটি টাকা ঢালছে তাঁদের পেছনে। তাঁদের কি উচিৎ না! সরকার বিভিন্ন খাতেই অনেক টাকা ঢালে। কোথা থেকে কতটুকু পাওয়া যায় দেখেছি আমরা।

এখানে এভাবে বললে হবেনা। মানবিকতার সাথে আসতে হবে। তাদেরকে প্রয়োজনে শান্ত মুখে বোঝাতে হবে। তাঁদের গুরুত্বটা চোখে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিতে হবে। তারা আমাদের জন্য করবে। কারণ আমরা তাঁদের জন্য কিছু করছি। সেটা সুন্দর করে কথা বলা কিংবা হাসিও হতে পারে।

ডাক্তাররা সাংবাদিক পিটিয়েছে। খুব ভাল। সাংবাদিকরা ডাক্তার পিটিয়েছে! ফাটাফাটি। লেখালেখি হচ্ছে। টি আর পি বাড়ছে। সবাই লোলুপে পড়ছে। সত্যি অসাধারণ। কিন্তু সেবাটা বন্ধ হয়ে গেছে। আন্দোলন, রেষারেষির পেছনে নিরীহ কিছু মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেনা। ক্ষতি কার! সেটা সবাই জানে! কিন্তু বলা হচ্ছেনা।

ডাক্তারদের প্রতি অনুরোধ! আপনাদের হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা। স্রষ্টা মানুষ বানিয়ে পাঠিয়েছেন এই পৃথিবীতে। কিন্তু তাঁদের সকল রোগে, অসুখে আপনাদের লাগবে, লাগছেও। রোগীদেরকে জিম্মি করবেননা। আপনাদের যে ব্যাপারগুলো নিয়ে অভিযোগ! সেগুলো ঠিক করতে হলে আসলেই কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। দেখলাম কিছু আইন সংশোধন করা হচ্ছে। নতুন করে প্রণয়ন করা হচ্ছে। হবে হয়ত। আপনাদের কাজ নির্বিঘ্নে যাতে করতে পারেন এই ব্যবস্থা সবাই মিলেই করবে। কারণ এটা আপনাদের চাইতেও দেশের মানুষের বেশি দরকার।

শুধু একটা অনুরোধ! আমাদের সাথে একটু চেষ্টা করবেন হাসিমুখে কথা বলতে। আপনাদের উপর দিয়ে ধকল যায়। মানছি রোগীর কাছের মানুষকে রোগ অনেকসময় হিংস্র করে ফেলে। কিন্তু আপনাদের দায়িত্ব, আপনাদের সেবা আপনাদেরকে নিজের জায়গায় অটল রাখবে এই আশা করছি।

কিছু না! শুধুমাত্র মুখের কথা দিয়ে দেশের সব মানুষকে দুশ্চিন্তা মুক্ত করার মত ক্ষমতা আর কয়জনেরই বা আছে। :)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×