আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। হাজার হাজার বছর আগে না, সম্রাট আকবরের আমল থেকে।
মুসলিম বনাম বাঙ্গাল সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের পাদ্রা সামাজিক মানুষের মধ্য একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মুসলিম না বাঙ্গালি সেই ডিসিশান নিচ্ছে অনেকে। বিষিষ্ঠ ভাই সাহেবেরা। আসুন গল্প করি একটু।
আমরা বাংলাদেশে থাকি, বাংলায় কথা বলি তাই আমরা বাঙ্গালি। যে মুসলিম তার ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। আমি যেহেতু মুসলমান সেহেতু মুসলিম বাঙ্গালি হিসেবে আমি এই ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি। আমি মনে হয় বুঝাতে পেরেছি যে আমার জাত হচ্ছে বাঙ্গাল। আমি বাংলাদেশে থাকি বাংলায় কথা বলি।
পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতি শোভাযাত্রা আমাদের সংস্কৃতি।
আমার সংস্কৃতি আমি জানি।
আমি মুসলিম আমি ইসলামের বিরুদ্ধে কোন কাজ জেনেশুনে করতে পারিনা।
- আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তখন সবাইকে "চৈত্রের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো" এবং পহেলা বৈশাখ থেকে নতুন হালখাতা শুরু হতো আর এলাকাবাসীকে মিষ্টি বিতরণ করা হতো। সাথে বিভিন্ন আয়োজন হতো। এখান থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয় সামাজিকভাবে। এইটা হচ্ছে আমাদের প্রাচীন পহেলা বৈশাখ পালন।
এইবার বলি আধুনিক পহেলা বৈশাখের কথা।
- সাল তখন ১৯১৭ এবং তখন চলছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়।
- ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা। সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বছরের সূর্যকে আহ্বান।
এইবার বলি সংস্কৃতিতে হুট করে চলে আসা মঙ্গল শোভাযাত্রা।
- ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ। শোভাযাত্রার জন্য বানানো হয় বিভিন্ন রঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি।
এই হচ্ছে পহেলা বৈশাখ, বাঙ্গালির সংস্কৃতি।
আর উদাযপন কিভাবে করি আমরা ? বৈশাখী মেলা, যাত্রা, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গম্ভীরা গান, বিভিন্ন লোকসঙ্গীতের ব্যবস্থা, প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানো, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নতুন সূর্যকে প্রত্যক্ষকরণ, নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে শিল্পীদের সংগীত, পান্তা-ইলিশ ভোজ, চারুশিল্পীদের শোভাযাত্রা এসব আয়োজনের মাধ্যমে।
বাংলা নতুন বছর উদযাপন হয় খুব ধুমধাম এবং আনন্দের মাধ্যমে। এই ব্যাপারটা নিয়েই আমাদের মানে মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে।
কেউ বলছে এসব হারাম কেউ বলছে জায়েজ আবার কেউ বলছে অন্য সব আরাম শুধু এইটা হারাম।
আমার জীবন ব্যাবস্থা হচ্ছে আল কোরআন এবং হাদিস। আল্লাহ এখানে বলে দিয়েছেন এসব করো এসব করবেনা। আমাদের রাসুল
বলেদিয়েছেন কিভাবে কি করতে হবে কি না করতে হবে। এসব আমার জন্য বিধান।
- না কুরআনে এর কোন নির্দেশ এসেছে,
- না হাদীসে এর প্রতি কোন উৎসাহ দেয়া হয়েছে,
- না সাহাবীগণ এরূপ কোন উপলক্ষ পালন করেছেন। এমনকি পয়লা মুহাররামকে নববর্ষের সূচনা হিসেবে গণনা করা শুরুই হয় দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) এর শাসন আমলে।
এ থেকে বোঝা যায় যে, নববর্ষ উদযাপন ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুত্ব পূর্ণ নয়। এই হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টি।
এখন কথা হচ্ছে আমরা যদি পহেলা বৈশাখকে বাঙ্গালির জন্য নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে ধরে উদযাপন করি তাহলে কি সমস্যা। যদিও কোন গুরুত্ব বা আদেশ নেই সেহেতু আমাদের দেখা উচিত as a Muslim আমাদের উদযাপন কতটুকু ইসলাম সম্মত।
রাসুল (সা.) বলেন প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব রয়েছে আর এটা আমাদের ঈদ’ (বুখারী: ৯৫২ মুসলিম: ৮৯২)
মুসলমানদের দুই উৎসব তাদের দুই ঈদ। এ ছাড়া তাদের জন্য আর কোন উৎসব দেয়া হয়নি। অন্যান্য ধর্ম অনুযায়ী ও তাদের উৎসব রয়েছে। খৃষ্টানদের বড়দিন, হিন্দুদের বিভিন্ন উৎসব ইত্যাদি। মোট কথা প্রত্যেক ধর্মেই তাদের উৎসব রয়েছে।
মুসলিমদের জন্য নিজের উৎসব পালন করা তাদের ইবাদাতের অংশ। ধর্মীয় উৎসব।
প্রতিটি ধর্মের ই উৎসব রয়েছে। অন্য ধর্মের উৎসব পালন করা মানে তাদের ধর্ম পালন করা।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেছেন , “যারা বিধর্মীদের মত উৎসব করবে, কিয়ামত দিবসে তাদের হাশর ঐ লোকদের সাথেই হবে।” আস্সুনানুল কুবরা, হাদীস ১৫৫৬৩
পহেলা বৈশাখ পালন মুসলিমের জন্য কাজের কথা না। কারন সেখানে রয়েছে ইসলাম বহির্ভুত সব কর্মকান্ড। অন্য ধর্মের সাথে সাদৃশ্য।
যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত”।
[আবু দাউদ: (৩৫১৪)]
পহেলা বৈশাখে ব্যাবসায়িক নতুন হালখাতা শুরু করা যেতে পারে।
কিন্তু সংস্কৃতি হিসেবে আমরা বাকি যা সব করছি তার সবকিছুই ইসলামের বহিরাগত এবং যেসব নিষেধ করা হয়েছে করতে। যা যা করা হয়। মঙ্গলযাত্রা বটমুলে তমুক সমুক সব ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। কেন হারাম সবাই ই জানেন।
“কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে [জীবন্ত বস্তুর] ছবি তৈরীকারীরা।” [বুখারী: ৫৯৫০; মুসলিম: ২১০৯]
মঙ্গলশোভা যাত্রাতে জীবজন্তু ও রাক্ষস-খোক্কসের প্রতিকৃতি নিয়ে গণমিছিল হয়।
আর যেখানে নারী পুরুষ একসাথে মিলেমিশে যেই অশ্লীলতা করছে তা হারাম তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নববর্ষ সংক্রান্ত অধিকাংশ অনুষ্ঠান ইসলামী নির্দেশনা বহির্ভূত। কারন এতে রয়েছে ইসলামবিরোধী বিষয়। .
শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি ও চেতনা, সংগীত, মূর্তি বহন, নগ্নতা, অশ্লীলতা, গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান, সময় অপচয়কারী অনর্থক ও বাজে কথা
এবং কাজ। হারাম হারাম হারাম।
আমাদের রাসুল মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেছেন। ওনার জন্মস্থান মক্কা। রাসুলের জন্ম এবং কোরআন নাযিক হওয়ার পূর্বে মক্কায় অনেক সংস্কৃতি
ছিল। তিনিকি আল্লাহর বিরুদ্ধে গিয়ে ওসব সংস্কৃতি পালন করেছিলেন ?
তাই মুসলিম পন্ডিত ভায়েরা যারা বলছেন আমাদের সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতি তারা লাইনে আসুন।
... এখন একজন মুসলিম বাঙ্গালি ইসলাম সম্মতভাবে অনুষ্ঠান পালন করতে পারে। এমনভাবে করতে হবে যেন তা অন্যধর্মের উৎসবের সাথে না মিলে। এই কাজ যে অনেক কঠিন তা কিন্তু নয়।
আমরা পুরাতন বছরের সহ অতীতের গুনাহ এর জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি। সে সাথে নতুন বছরসহ ভবিষ্যতে গুনাহ না করা ও দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ব হয়ে দেশের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করা, আল্লাহর আনুগত্যের তৌফিক কামনা করা, দেশ ও সমগ্র মুসলিম
জাতির সুখ সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনায় আল্লাহর নিকট বিশেষ প্রার্থনা করতে পারি।
এখন আসি ভিন্ন কথায়। আমার জন্য হারাম এই কাজ অন্যরাও করতে পারবেনা এমন কিন্তু না। সবাই সবার ধর্মীয় উৎসব পালন করবে। এতে বাধা দেয়ার কিছু নেই। আপনি আপনার ধর্ম পালন করুন, তারা তাদেরটা করুক। আপনি বাধা দেয়ার ও কিছু নেই তাদের সাথে একত্রিত হয়ে উদযাপন করার ও কিছু নেই। ব্যাস, আলাপ শেষ। আর আপনি আপনার অধীনস্ত মুসলিমদের সতর্ক করবেন। এর বেশি কিছুনা। কারন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘‘যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা তাই করতে পার।’’(বুখারী, কিতাবু আহাদীসিল আম্বিয়া, হাদিস নং ৩২২৫)
সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে অশ্লীলতা, নগ্নতা আর মদ্যপান না করে আসেন ঢেঁকি, কুলা, হস্তশিল্প তথা গ্রামীণ ব্যবহৃত ঐতিহ্যগুলোর প্রদর্শনের ব্যবস্থা করি। সংস্কৃতির ও অনেক গুরুত্ব রয়েছে ইসলামে। কিন্তু তা হতে হবে শরীয়ত সম্মত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৫৮