somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবাকপুরের চিঠি

২৩ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কঙ্কাবতী,
পত্র যখন লিখিতে বসিয়াছি তখন তুমি নিদ্রাদেবীর কোলে ঝুমিতেছো। আর এদিকটায় বিপন্ন বৈরী হাওয়ার জলভরা রাত্তিরে আমি ভিজে চুলমাথা লইয়া তোমাকে লিখিতে বসিয়াছি। ‘নিদ্রা’ তোমার বরাবরই প্রিয়। মধ্যরাত্তিরে মেঘ বর্ষণে অতি অল্পবিস্তর মনুষ্য জাগিয়া থাকে। তাহার উপর আজি দিবসের দ্বিপ্রহরে তুমি নিজ গৃহ হইতে অতখানি পথ ভ্রমণ করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। নিয়মতান্ত্রিক জীবনে দীর্ঘ রাত্রি জাগরণের অভ্যেস তোমার নাই তথাপি এই মধ্যরাত্তিরে নিদ্রা যাইবার সম্ভাবনাই প্রবল।

আমি নিজেও সচরাচর মধ্যরাত্তিরে গৃহে আসি না। আজ “অনুরোধ অলংকরণ” কার্ডের কর্ম করিতে করিতে কখন যে রাত্রি দ্বিপ্রহর হইয়া গিয়াছে তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারি নাই। স্টুডিও হইতে বাহির হইবার তোড়জোড় করিবার আগ-মূহুর্তে হঠাৎ বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হইয়া গেলো। ভাবিয়া দেখলুম জ্যেষ্ঠের বৃষ্টি ক্ষণকালের জন্যই, এই বুঝি থামিয়া যায়!
কিন্তু প্রায় একশত কুড়ি মিনিট অতিক্রম করিবার পরও যখন থামিবার কোন রেশ মাত্র চোখে পড়িলো না। তখন নিতান্তই “অবাকপুরের যাত্রী” হইয়া বসিয়া রহিলাম। বসিবার এই অকস্মাৎ আয়োজনে হঠাৎ মনে পড়িল তোমার কথা। ভাবিলাম দিবসে তো সময় মেলে না এক্ষণে কিঞ্চিৎ কথা বলিয়া লই। পকেট হইতে সেলফোনখানা বাহির করিয়া তোমার সেল নম্বরের উদ্দেশ্যে সঞ্চিত নম্বরে ডায়াল করিলাম। তুমি ঘুমাঙ্ক নিরুত্তাপ কণ্ঠে আমার আহবানে সাড়া দিলে। তাহার পর কি হইয়াছে তাহা তো তুমি জানোই। তবে যা জান না আজ তাহা লিখিব বলিয়াই পত্র লিখিতে বসিয়াছি।

সেইক্ষণে বৃষ্টির তান্ডবে আমি তো বসিয়াই ছিলাম। রাত যখন বারোটার কাটা অতিক্রম করিয়া প্রায় এক ঘটিকা’র মতো বাজিয়া যাইতেছে তখনও বর্ষণ চলিতেছে। অগ্যতা বৃষ্টির সহিত বোঝাপড়া করা বাদ রাখিয়াই পথে নামিলাম।
প্রায় সাত বৎসর পর এই রুপে বৃষ্টিতে ভিজিতে ভিজিতে চলিলাম। স্টুডিও হইতে নিজ গৃহে ফিরিবার পথ সে-তো অনেকখানি। সমস্থ পথ একেবারে বৃক্ষের ন্যায় ভিজিয়া গৃহে প্রবেশ করিলাম। জননী উদ্বিগ্ন হইয়া বারান্দায় দাঁড়াইয়া আমার গৃহপ্রবেশ লক্ষ্য করিলেন।

তাহার পর আরও কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজিলাম। পুরোনো মন্দিরের ধারে খোলামাঠে একাকী নির্জলা ছুটাছুটি করিলাম। সেই কৈশরের দিনগুলোর মতো নিজেকে খুব হালকা ঘুড়ির মতোন মনে হইলো। সেই বৃষ্টির তান্ডব প্রান্তরে দাঁড়াইয়া দু’চক্ষু বন্ধ করিতেই পুনরায় তোমার কথা মনে পড়িয়া গেলো...
তোমাদের অট্টালিকা সে বড়ো ভারি মনোহর সেখানেই লতিকার ন্যায় তোমার বাড়ন্ত দিবসের শুরু। সে ক্ষেত্রটা ভাবিলে আমার এই কুঁড়েতে তোমায় ঠিক মানায় না। এই দূর্বাপাথর মাঠ, এই রুক্ষতা তোমার কোমলতার কাছে বড়ই বেমানান। পকেটে কড়ি না থাকিলে আর যাই হোক জীবনটা পরম ভাবে উপভোগ করা হইয়া উঠে না।
যে ‘দৈন্যের প্রজাপ্রতি’ কোনদিন তোমাকে স্পর্শ করিতে পারে নাই, সে দৈন্যের সাগরে তুমি সাঁতার কাটিতে পারিবে না। আবেগ এক আশ্চর্য ফুল, সে কখনো আপনার জন্য উদয় হয়না কিন্তু অপরকে ঠিক লোভাতুর করিয়া তোলে। আবেগের অরণ্যে সুখের পাতা ভর্তি বৃক্ষ থাকিলেও সেখানে মধুময় হাওয়া নাই।
সেই সব সিনেমার মতো মুখে তুমি যতই বলিয়া বেড়াও বৃক্ষের নিচে সংসার সাজাইয়া জীবন দিনাতিপাত করিয়া লইবে, বাস্তবের যাঁতাকলে তাহা কোনভাবেই সম্ভব নহে। তোমার ওই কোমল হাতে পাথর চালাইবার খঞ্জর তুলিয়া দিলেই কি তুমি তাহা চালাইতে পারিবে? জানি এ তোমার অসাধ্য!
এভাবেই ভাবনাগুলো বিশাল দিগন্ত পাড় করিয়া যাইতেছিলো। বেশ কিছুকাল পর বৃষ্টির ধার থিতু হইয়া গেলো বলিয়া আমিও ভাবনা হইতে প্রত্যাবর্তন করিলাম। নিজ কক্ষে যখন ফিরিলাম, তখন তুমি নিদ্রাদেবী’র কোলে দুলিতেছো অনেক কিছু বলিবার ইচ্ছে থাকিলেও সেলফোনের সুরেলা সুরে তোমাকে আর ডাকিলাম না। কঙ্কাবতী ’ঘুমনগর’ বা জাগ্রত প্রহরে ভালো থাকিও। এরপর আর কখনো যে তোমাকে পত্র লিখিব সে কথা ভাবিতে পারিতেছি না।

শেষান্তে-অরুদ্ধ
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×