সম্প্রতি একটি লেখা পড়ে মনে হলো, অনেকেই যৌন স্বাধীনতা বলতে অবাধ যৌনতাকে বোঝেন, এবং এ নিয়ে বেশ ঘৃণামিশ্রিত লেখা এবং মন্তব্যও দিয়ে ফেলেন। সেই লেখাগুলোতে আবার শতাধিক সম্মতিসূচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তার মানে বোঝা যাচ্ছে বেশ বড় একটা অংশ যৌন স্বাধীনতা অথবা যৌন অধিকার বলতে অবাধ যৌনাচারকেই বোঝেন, অথবা অন্য কিছু বোঝেন। কি বোঝেন সেটা তারাই ভালো বোঝেন।অথচ যৌন স্বাধীনতার চিন্তা এসেছে একটি উন্নয়নমূলক সমাজব্যবস্থা গড়ার চিন্তা থেকে। এখানে সমতার কথা বলা হয়েছে, এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার মৌলিক বিষয় আনা হয়েছে , অর্থাৎ একটি বড় সামাজিক সমস্যাকে 'যৌন স্বাধীনতার' ব্যানারে তুলে আনা হয়েছে এবং তার সমাধানের কথা ভাবা হয়েছে।
যৌন স্বাধীনতা অথবা Sexual Freedom হচ্ছে নিজের শরীরের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ। অর্থাৎ আপনার শরীর শুধু আপনার, ওখানে অন্য কারোর অধিকার নেই আপনার সম্মতি ছাড়া। এটা সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রেই বেশী প্রযোজ্য, কারন- অতীতে এবং এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বামীরা ভাবেন স্ত্রীর শরীর তাদের সম্পত্তি।যার ফলে স্বামী চাহিবা মাত্রই স্ত্রীকে তৈরি থাকতে হবে। এখানে স্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই। যৌন স্বাধীনতা নারীকে যৌন দাসী হওয়া থেকে মুক্তি দেয়। এমনকি পয়সা দিয়ে ভাড়া করা দেহ ব্যবসায়ীর উপরও তার খরিদ্দারের অধিকার নেই যদি দেহ ব্যবসায়ীর সম্মতি না থাকে। যৌন স্বাধীনতা এভাবেই নারীকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেয়।তাই এটা কোন অন্যায়মূলক স্বাধীনতা নয়, এটা এক প্রকার ব্যক্তি স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা মৌলিক মানবাধিকারের একটি অংশ। যৌন স্বাধীনতা থাকলেই আপনি রাস্তায় অথবা যেকোন জায়গায় বাজে ভাবে আক্রমণ হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এই স্বাধীনতার মর্মার্থ বুঝলেই মানুষ পরস্পরকে সম্মান করতে শিখবে।
যৌন স্বাধীনতা খোলাখুলি যৌন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে। খোলাখুলি বলছি এই কারণে যে ছোট বেলা থেকেই যৌন শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে স্কুলে। আবারও ভুল করবেন না- যৌন শিক্ষা বলতে যৌনাচার শেখানো নয়। বরং নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন এবং নিজের শরীরের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ শেখানো। এতে করে মানুষ খুব ছোট বেলা থেকেই বিপরীত লিঙ্গ অথবা যেকোন লিঙ্গের প্রতিই সম্মান প্রদর্শন করে, এবং এভাবেই সমাজ থেকে ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ কমে যাবে, শিশু নির্যাতন কমে যাবে, জেন্ডার আইডেন্টিটি নিয়ে কেউ কাউকে হয়রানি করবে না তথা মানবাধিকার নিশ্চিত হবে। এতো গুলো সমস্যা দূরীকরণের চিন্তা যেখানে রয়েছে সেই যৌন স্বাধীনতাকে অন্যায়মূলক কিছু ভাবার কোনই কারন নেই।
আজকাল তথ্য দুষ্প্রাপ্য নয়। আপনার হাতের নাগালেই রয়েছে নানান তথ্য। যার ফলে মানুষ নিজেই নিজেকে নানান বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলতে সক্ষম হচ্ছে কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীত । এটা খুবই প্রগতিশীল একটি বিষয় যে সহজেই মানুষ জ্ঞান প্রাপ্ত হচ্ছে । আবার এই সহজলভ্য জ্ঞান মাঝে মাঝে মানুষকে ভুল দিক নির্দেশনাও দিচ্ছে। এই ভুল বোঝা এবং ভুল শোনার কারনেই মানুষ 'যৌন' শব্দটি শোনা মাত্রই আতংকিত হয়। আর যদি ঐ শব্দের সাথে স্বাধীনতা যুক্ত হয় তাহলে তো কথাই নেই, ঐ আতংকিত মানুষেরা ধরেই নেয় যে, এই স্বাধীনতা অন্যায়মূলক স্বাধীনতা।বেশী বেশী পড়লেই হবে না, সেই পড়াটা মাথায় গিয়ে সঠিক রূপ ধারন করেছে কিনা সেটার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
** যৌন শিক্ষা ৫ বছর বয়স থেকেই দেয়া উচিৎ। এতে চাইড এবিউজ কমে। এই লেখা সবার জন্য উপযোগী। শিশু কিশোরদের থেকেও ঝুঁকিপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক(vulnerable adult) রয়েছে বেশী যারা এই লেখার ভুল ব্যাখ্যা করার সম্ভাবনা রয়েছে।তাদেরকে আবারও বলছি যৌন স্বাধীনতা কোন অন্যায়মূলক স্বাধীনতা অথবা স্বেচ্ছাচারিতা নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১৬