somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কষ্ট করে ধরা আসামী বিচারক ছাড়ে আইনজীবীরা ছাড়ায়!

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুলিশ কত কষ্ট করে মাকদ সেবী ও ব্যবসায়ী ধরে। আর আদালতে সোপর্দ করার পর বিচারক ছেড়ে দেয়, আইনজীবীরা ছাড়িয়ে আনে। পুলিশের এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের!! শুধু যে পুলিশের তা কিন্তু নয়! অনেক সময় সাধারণ মানুষেরও! আর বিচার বিভাগও মাঝেমাঝে মনে করে আইনজীবীরা ছাড়িয়ে নিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা কোথায় সেটা কেউ বিচার বিবেচনা করে না।
আমি একজন আইনজীবী। অনেকেই হয়তো ভাববেন আমিতো আইনজীবীদের পক্ষেই যুক্তি দেব। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা শরীয়তপুর জেলা শাখার একজন প্যানেল আইনজীবী হিসাবে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করার কারনে কয়েকটা মাদক মামলা পরিচালনা করেছি। সবগুলো মামলাই গরীব দুখীর মামলা। মামলা করতে যেয়ে মোয়াক্কেলের কাছ থেকে কোন টাকা পাইনি, উপরন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যে ফি দেয়া হয় তা তুলতেও চেষ্টা করিনি। তোলার ক্ষেত্রে মুলার চেয়ে ধেড়া বেশি মনে হয় তাই বিল করিনি। কয়েকটা কেস স্টাডি দেই। পড়ে বিবেচনা করবেন আসলে আইনজীবীদের দায় কতটুকু?
কেস স্টাডি-১॥ দুই মাদক সেবী কাম ব্যবসায়ী ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। একজন পুরুষ আরেকজন নারী। একে অপরের স্বামী-স্ত্রী তারা। এ দুজন থাকে সরকারের আনুকুল্যে গড়া গুচ্ছ গ্রামে। স্বামী-স্ত্রী একসাথে গাজা খায় এবং বিক্রি করে। হতদরিদ্র পরিবার। ধরা খাওয়ার পর নিজেদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করে জামিন চাওয়া সম্ভব হয়নি। জেল কর্তৃপক্ষ বসিয়ে খাওয়াতে খাওয়াতে ক্লান্ত। তার উপর জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি কারাগার পরিদর্শন করতে গেলে কান্নাকাটি করে। জেল কর্তৃপক্ষ মামলা লিগ্যাল এইডে পাঠালে মামলার আইনজীবী নিয়োগ করলো আমাকে। আমি জামিন চাইলাম। বিজ্ঞ বিচারক জামিন দিলেন। জামিন পাওয়ার পর হাজিরা দিতে আসলে বিজ্ঞ বিচারক জানতে চাইলেন, গাজা খান কেন? উত্তরে গাজাখোর দম্পতি জানালো, স্যার, ক্যানভাচারের কাম করি। খাইতে খাইতে নেশা হইয়া গেছে। এখন আর ছাড়তে পারি না। খাইতে খাইতে টুকটাক বিক্রিও করি। কথা শুনে বিজ্ঞ বিচারক শাষিয়ে দিলেন, আর খাবেন না এবং বিক্রির অপরাধও করবেন না। দম্পতি মাথা নেড়ে সায় জানালো। কিন্তু কে শোনে কার কথা? কদিন পরে আবার ধরা খেলো। কষ্টে ধরা আসামী গাজা খাওয়ার অপরাধে আর কদিনই বা জেলে রাখা যায়? ছেড়ে দিতে হলো!
কেস স্টাডি-২॥ গাজাখোর দম্পতির মতো আরেক গাজাখোরকে পুলিশ ধরে আনলো। একই পদ্ধতিতে মামলাটা আমার কাছে আসে। এবারের আসামীর বিশেষত্ব হলো সে কানা। একজন অন্ধ মানুষ গাজা খায় ভাবাযায়? তাকেও জামিনে মুক্ত করলাম। জামিন শুনানীর সময় বিজ্ঞ বিচারক জিজ্ঞেস করলেন, গাজা খান কেন? সহজ সরল উত্তর দিলো, স্যার, একটু গান বাজনা করিতো। গাজা না খাইলে গান গাইতে পারি না। অন্ধ গাজাখোর ছিলো বয়াতী টাইপের লোক। বিজ্ঞ বিচারক বললেন, গাজা খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে। উত্তরে আসামী বলে, স্যার তাইলে গান বাজনা ছাইড়া দিতে হইবো। অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু গানও ছাড়তে পারি না গাজাও ছাড়তে পারি না। সেই অন্ধ গাজাখোরও একাধিকবার ধরা খেয়েছে। হাজতে রেখে জেল কর্তৃপক্ষও বিরক্ত। এবারও পুলিশের কষ্টে ধরা আসামী ছাড়া পেয়ে গেলো।
কেস স্টাডি-৩॥ সরকারী চাকুরী করে এমন এক গাজাখোর ধরা পরলো। ছোট পদের চাকুরীজীবি। সারাদিন অফিসে কাজ কর্ম করে। বিকালে, ছুটির দিনে ছুটে যায় গাজার টানে। একা একা খায় না। তার গাজার সঙ্গী পুলিশের এক পুত্র। একদিন পুলিশ পুত্রের সাথে গাজা খেয়ে ফিরছিলো। মটর সাইকেল ড্রাইভ করছে পুলিশ পুত্র। পিছনে সঙ্গী গাজাখোর। টহল পুলিশ গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করলো। গাজা পাওয়া গেলো কয়েক পুড়িয়া। আর পুলিশ পুত্রকে বাদ দিয়ে সেই ছোট সরকারী কর্মচারীকে দিলো জেলে পুড়িয়া! কয়েকদিন জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে আবার সেই পুলিশ পুত্র বন্ধুটির সাথে গাজা খাওয়া। দুই গাজাখোরকে কষ্ট করে ধরে একজনকে দিলো জেলে!
কেস স্টাডি-৪॥ ছোট্র একটা ফটোকপির দোকান করে জীবীকা নির্বাহ করে এক যুবক। হঠাৎ এক দুপুরে ডিবি পুলিশের একটি টিম এসে দোকানের সামনের দিকে রাখা একটা নির্দিষ্ট ফাইল চাইলো। দোকানি বললো এই ফাইল বিক্রির জন্য নয়। একজন রেখে গেছে। ডিবির চৌকষ দল অন্য কোন ফাইল নয় ঐ ফাইলই চাইলো। এর পর ফাইল খুলে পাওয়া গেলো কয়েক পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। ধরে নিয়ে যাবে ছেলেটিকে। এমন সময় স্থানীয় লোকজন ডিবির টিমকে আটকালো। জানতে চাইলো ঘটনা। অবশেষে বেরিয়ে এলো প্রকৃত ঘটনা। ছেলেটির মামাতো ভাইর সাথে ফরায়েজের জমি নিয়ে বিরোধ। ত্রিশ হাজার টাকায় দফারফা করে ঘটনার নক্সা আকা হয়। যে ছেলে ফাইলটি রেখেছিলো সেই ছেলেটি বাইরে ডিবির এক কনস্টেবলের সাথে কথা বলছে দেখে স্থানীয় লোকজন তাকে ধরে আনলো। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায় ঘটনা বেরিয়ে এলে ডিবি পরিত্যাক্ত অবস্থায় ইয়াবাগুলো উদ্ধার দেখিয়ে ছেলেটিকে রেখে চলে যেতে বাধ্য হলো। কষ্ট করে ধরা আসামী আর নেয়া হলো না আদালত পর্যন্ত!
কেস স্টাডি-৫॥ এই মামলাটা আমার নয়। জজ কোর্টে এক আসামীর জামিন শুনানী চলছিলো। এক বৃদ্ধকে ডিবি পুলিশ ইয়াবা সহ আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করেছে। এমন বৃদ্ধ যে ঘটনা জানার জন্য বিজ্ঞ বিচারক তাকে নানাভাবে প্রশ্ন করে জানতে চাইলো প্রকৃত ঘটনা কি? বৃদ্ধের কথা শুনে বিজ্ঞ বিচারক সন্তুষ্ট হয়ে জামিন মঞ্জুর করে পুলিশকে ভৎসনা দিলো। আসামি এমনই বৃদ্ধ এবং সহজ সরল গ্রাম্য লোক যে কিনা মায়াবড়িও চিনে না, জীবনে একটা সিগারেটেও টান দেয়নি। অথচ এমন এক বৃদ্ধকে প্রতিপক্ষের দারা প্রভাবিত হয়ে ইয়াবা দিয়ে চালান দিয়েছে। এবারও পুলিশের কষ্টে ধরা আসামী ছাড়া পেয়ে গেলো!
একবার আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়ে সপথ নেয়ার জন্য অনুষ্ঠানে বসে আছি। নির্বাচন পরবর্তী নবগঠিত কমিটিকে শপথ পাঠ করার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন পান জেলার জজশীপের অন্য বিচারকগণ, জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, পুলিশ সুপার সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। উক্ত অনুষ্ঠানে স্বঘোষিত কবি এবং পুলিশ সুপার উপস্থিত হয়ে তার ভাষনে বিজ্ঞ বিচারকদের অনুরোধ করলেন মাদক ব্যবসায়ীদের জামিন না দিতে এবং আইনজীবীদের অনুরোধ করলেন মাদকের আসামি ধরা পরার পর অন্তত তিনমাস জামিন না চাওয়ার জন্য। তিনি বললেন, এত কষ্ট করে পুলিশ মাদকের আসামীদের ধরে আনে আর বিচারকরা যদি জামিন দিয়ে দেন এবং আইনজীবীরা যদি জামিন চান তবে তাদের কষ্ট বৃথা যায়!
তার কথামত যদি জামিন না চাই তবে যাদের সাথে অবিচারগুলো হয় তাদের কি অবস্থা হবে? পুলিশের ধারনা দেখে মনে হয় মাদক বিস্তারে যেন আইনজীবীরাই বড় নিয়ামক এবং মাদক বিস্তার রোধে আইনজীবীরাই বড় বাধা! অথচ কোথায় কোথায় মাদক বিক্রি হয়, কারা কারা মাদক সেবন ও বিক্রির সাথে জড়িত তা সমাজের সবাই জানে শুধু জানে না পুলিশ!
মাদক নির্মূলে পুলিশের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার কাছে মনে হয়। ক্রস ফায়ার দিয়ে বা জামিন না দিয়েই মাদক প্রতিরোধ করা যাবে না। আসুন মাদক প্রতিরোধে সচ্ছতার সাথে আন্তরিক হয়ে চেষ্টা করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১:৪১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×