somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্তহীন অপেক্ষা, মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ (ছোট গল্প)

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্তহীন অপেক্ষা
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
১।
মেয়েটি তৃতীয়বারের মত শাড়ি পরেছে। এত গুছিয়ে পরার পরও খুব অস্বস্তি লাগছে। মনে হচ্ছে, ‘উনার’ সামনে গেলেই খসে পড়বে। বেইজ্জতি কাণ্ড ঘটে যাবে তাহলে। ভাঁজে ভাঁজে আরও কয়েকটা সেফটিপিন লাগাল। ভীতি কিছুটা কমেছে কিন্তু দূর হয়নাই। এসএসসি পরীক্ষার আগে বিদায় অনুষ্ঠানের দিনে প্রথম শাড়ি পরেছিল রাত্রি। মা আলমারি থেকে নতুন শাড়ি বের করে পরিয়ে দিয়েছিলো। মায়ের ব্লাউজ সেফটিপিন দিয়ে টাইট করা হয়েছিলো। মেয়েদের শারীরিক কাঠামো পূর্ণতা না পেলে, শাড়ি পড়লে কঙ্কাল কঙ্কাল লাগে। রাত্রিকেও বায়োলজি ক্লাসের কঙ্কাল মনে হলেও টকটকে ফর্সা রাত্রির গায়ের সাথে কমলা কালারের শাড়ীতে দারুণ মানিয়েছিল। সমস্যা হল নতুন শাড়ি প্রথম বারের মত পরায় রাত্রির কেবলি মনে হচ্ছে যেন কিছুই গায়ে নেই। খালি গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরছে। কি লজ্জার কথা! শাড়ি পরে ঘর থেকে আর বের হতে পারেনাই সে যাত্রায়।
রাত্রি দ্বিতীয়বার শাড়ি পরেছিল মামার গায়ে হলুদে । কাজিনদের সাথে দলবেঁধে শাড়ি পরায় সেবার মটেও আন-ইজি লাগেনাই। আজ কেন এমন হচ্ছে ভেবে কুল হারা রাত্রি।
২।
কালো ব্লাউজ-কালো শাড়ি কবির অনেক প্রিয়। রাত্রি, কবির পছন্দের কালার পরেছে। কে জানে, তাকে দেখেই হয়তো দু লাইন আবৃতি করে বসবে।
কবির সাথে রাত্রির পরিচয় ‘বাংলা কবিতা উৎসব’ এ। বান্ধবীর বাবাকে কবিতা সম্মাননা দেওয়া হবে, তাই বান্ধবীর সাথে গিয়েছিলো। কবিতা উৎসবের এক পর্যায়ে সময়ের উদীয়মান এক কবির নাম ঘোষণা করা হল। অন্যদের নাম ঘোষণার সাথে সাথে পুরা হলে তুমুল করতালির জোয়ার বইলেও তরুণ কবির নাম ঘোষণায় থমকে গেলো জনাকীর্ণ হলরুম। যেন কোন প্রিয় মানুষের মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করা হয়েছে। বান্ধবীর থেকে জেনেছে, নতুন কবি বলেই এই অবজ্ঞা। যেন জিবনে লণ্ড্রী করা হয়নাই, এমন কুঁচকানো আর ময়লা পাঞ্জাবী পরা হাস্যজ্জল এক তরুণ ডায়াসের সামনে গেলেন। ভরাট গলায় একের পড় এক শব্দের ঝঙ্কার ঝড়তে লাগলো তার কণ্ঠ থেকে। ডানে বায়ে তাকিয়ে রাত্রি দেখল সবাই রসগোল্লার মত চোখ আর সুয়েজ খালের মত হা করে আবৃতি শুনছে। খুব অল্প সময়েই যেন শেষ হয়ে গেলো আবৃতি। এবার আর তালি থামেনা। রাত্রির পাশের জন তো সিটি বাজানোর ব্যার্থ চেষ্টাও করলেন।
কবিকে ভালো লেগেছিল রাত্রির। বান্ধবীকে দিয়ে তার বাবার ফোনবুক থেকে নাম্বার ‘চুরি’ করিয়েছে। অনেক ইতস্ত সত্ত্বেও একদিন কথা বলেছে। ‘লেখা ভালো লেগেছে, এগিয়ে যান, অনেক বড় হবেন, টাইপ কথা বার্তা। রাত্রির খুব ইচ্ছে একদিন কবির সাথে রিক্সা ঘুরবে। শরত কালে হলে ভালো হয়। কবি সাদা পরী আর সাদা মেঘ দেখে একের পড় এক লাইন বানাবে। রাত্রি মুগ্ধ হয়ে শুনবে। অসীম মুগ্ধতায় হায় ধরবে। এক সময় কবিকে থামিয়ে দিয়ে বলবে, ‘এই হাত ছাড়িয়ে নেবেন না প্লীজ, কোন দিন না’।
৩।
অনেক খুঁজে টুজে কালো পাঞ্জাবিটা বের করেছে ইয়াছিন। কবি ইয়াছিন মাহমুদ। দীর্ঘদিন লণ্ড্রী না করায় এটারও পেছনের অংশ ভাঁজ খেতে খেতে উপরে উঠে গেছে। এটা দূর করার পন্থা বেশ রপ্ত কবির। বিছানায় ফেলে টান করে বিছিয়ে ভেজ গামছা বা লুঙ্গী দিয়ে বার কয়েক ডলা দিতে হবে। অনেক সাবধানে। এর আগে হলুদ পাঞ্জাবিটা ডলতে গিয়ে ছিরে গিয়েছিলো। আয়নায় দাঁড়িয়ে এলোমেলো চুলগুলোকে ‘মানুষ’ করবার চেষ্টা করলেন কয়েকবার। ‘কবি কোথায় যাচ্ছ’? প্রশ্ন শুনে চমকে উঠলেন ইয়াছিন। উত্তর দিতে গিয়ে মনে হল, এই বন্ধ ঘরে কে তাকে প্রশ্ন করবে? নাহ, এটা তার অ্যাবসেন্ট মাইন্ড। উত্তর দেওয়া যাবেনা। ‘আমি উত্তর পাব সে আশায় আসিনি। তোমাকে কিছু কথা বলতে এসেছি। লজ্জা করেনা কবিতা বেচতে? লজ্জা করেনা কিশোরীর আবেগের কাছে নিজের সত্ত্বা বিকিয়ে দিতে? মেয়েটা তোমার কবিতার প্রেমে পরেছে। এমন অপদার্থের সাথে সংসার করতে পারবে সে? কি দেবে তাকে, কি খাওয়াবে? যখন তার জীবন থেকে কবিতার মোহ কেটে যাবে? পারবে জৈবিক চাহিদা পুরন করবে? কিংবা জিবিকার যোগান? কবিতাকে ভালোবেসেছে বাসতে দাও। লেখনী পছন্দ করেছে, করতে দাও। নিজেকে কেন এখানে হাজির করছো? মনে রেখ কবিতা ওমর, প্রেম নয়’।
থতমত খেয়ে যায় কবি। ড্রয়ার থেকে অনেক গুলো পাণ্ডুলিপি বের করে। যা টানা কয়েক রাত জেগে লিখেছিল রাত্রিকে শোনাবে বলে। টেনে ছিরে ছড়িয়ে দেয় মেঝেতে। হাওমাও করে কাঁদে অরাকরনে, কিচ্ছুক্ষণ। চিত হয়ে শুয়ে দেখে মাথার উপর নিদারুণ ঘুরছে সিলিং ফ্যানটা। ক্লান্ত কবি ঘুমিয়ে পড়ে।
৪।
সাহস করে কয়টা গোলাপ সাথে এনেছে রাত্রি। হাতে গোলাপ থাকলে অনেক কথাই সহজ হয়ে যায়। মুখে বলা লাগেনা। রাত্রি ঘড়ি দেখে। কবির আসার সময় পার হয়ে গেছে দুই ঘনটা আগে। জীবনের প্রথম সে অপেক্ষা করছে কারো জন্য। আধা ঘনটা হল ক্রমাগত চোখ মুছছে রাত্রি। তবে কি কবি আসবেনা? তার কবিতা হয়তো রাত্রির জন্য না। কোন গোধূলি বিকেলের জন্য, অথবা ভোরের। ক্লান্ত রাত্রি বসে পড়ে। দাঁড়াবার শক্তি অনেক আগেই হারিয়েছে। এখন হারিয়েছে কাঁদার শক্তিও। গলাটা শুকীয়ে কন্ডুলির মত পাকিয়ে যাচ্ছে। একেকটা ঢোক যেন একেকটা সাহারা। দৃষ্টি ঝাপসা হতে থাকে রাত্রির। মন বলে সে আসবে। এক ঝুরি কবিতা নিয়ে সে আসবেই...।

৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×