বিষয়টি নিয়ে ভাবলে এখনও আমার হাসি পায়। কারণ বিভিন্ন পাঠাগারের অনেক অনেক বইপত্র পড়ে সেই শৈশবেই আমার মনের ভিতর এক ধরনের অহংকারবোধ তৈরি হয়েছিল,ঐ যে বলে ‘অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী’।
আমার বাবা তখন চট্টগ্রামে চাকুরি করতেন। বাবাকে বললাম, আমি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেবো। আমি বাবাকে এই বলেও নিশ্চিত করতে চাইলাম যে, ভর্তি পরীক্ষা দিলেই আমি টিকে যাবো। বাবা হাসলেন এবং বললেন, আমরা অল্প আয়ের মানুষ। এত বড় স্বপ্ন আমাদের পূরণ হবে না। বাবার কথায় আমি খুব রাগ করলাম। গেলাম আমারই এক গণিত শিক্ষকের কাছে। তাকে বললাম, আপনি আমাকে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ করে দিন। কিন্তু সেই শিক্ষকও বললেন, দুনিয়া সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনাই নেই। ওই চিন্তা বাদ দাও। স্কুলের পড়াই পড়ো। তার এ কথা শুনে মনে আরও কষ্ট পেলাম। সেটা ১৯৮৫ সালের কথা। আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।
এই ঘটনার ৩ বছর পর চট্টগ্রামেই ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের নবম শে্িরণর এক ছাত্রের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তার সঙ্গে আলাপ করে ক্যাডেট কলেজের বিভিন্ন পাঠ্যক্রম বিষয়ে জানি। তখন আমার কাছে এসব পাঠ্যক্রম অধ্যয়ন অসম্ভব ছিল না। ক্যাডেট কলেজ কিংবা শিক্ষাবোর্ড প্রবর্তিত সিলেবাসের আলোকে আমি দিব্যি লেখাপড়া চালাতে পারতাম। তাই আমি তখন বাবাকে বললাম, ওই ছেলে যদি ক্যাডেট কলেজে পড়তে পাওে, আমি কেন পারবো না। বাবা আমার কথায় মনে খুব কষ্ট পেলেন। বললেন, বড় হলে সব বুঝবে, এখন তুমি বুঝবে না। ক্যাডেট কলেজে পড়তে হলে শুধু মেধা নয়, অর্থবিত্তও থাকতে হয় এবং লেখাপড়ার বিষয়ে থাকতে হয় সদূরপ্রসারী পরিকল্পনা । হুট করে কেউ ওখানে পড়তে পারে না...ইত্যাদি।
বাবার কথায় আমি খুব রাগ করে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের তখনকার অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল নুরুননবীকে একটি চিঠি লিখলাম। চিঠিতে আমি লিখলাম: ‘যদিও এখন আর আমি সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নই, যদিও সার্টিফিকেট মোতাবেক এখন আমার বয়স-১৫, তবু অনুরোধ করছি, আপনি আমার ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দেখুন ক্যাডেট কলেজে ভর্তির বিষয়ে আমার যোগ্যতা রয়েছে কী না...।’
হায়! আমার এমন চিঠি পড়ে তিনি হয়তো অনেকই হেসেছিলেন। আজ আমার এমনটিই মনে হয়। কিন্তু তিনি ঠিক আমার মতো এক শিশু-কিশোরের চিঠির উত্তরও দেবেন, সেটা আমি ভাবতেও পারিনি তখন। ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি আমাকে লিখলেন:
‘প্রিয় জসীম অসীম, তোমার ২৪/১২/৮৮ ইংরেজী তারিখের পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, ক্যাডেট কলেজে শুধুমাত্র এগারো থেকে সাড়ে বারো বছরের ছেলেদেরই সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করার বিধান রয়েছে। এ ব্যাপারে আমি তোমাকে কোন প্রকারের সাহায্য করতে পারছিনা বলে দুঃখিত।
তোমার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।
নূরুন্নবী
(লেঃ কর্নেল) ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ।
পুুরনো কাগজপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে আজও যখন সেই চিঠিটি কখনো কখনো আমার হাতে পড়ে, তখন বিষয়টি নিয়ে আমার খুবই হাসি পায়। কারণ শৈশবে আমি নিজেরে কতো পন্ডিতই না ভাবতাম।
সেই কিশোর বয়সেই একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেলকে লিখলাম ‘বয়স নয়,আপনি আমার যোগ্যতা যাচাই করুন’
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হার জিত চ্যাপ্টার ৩০
তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবনাস্ত
ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে
প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দাদার দাদা।
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।
আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?
আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন