somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুর পেটে বিষ ঢুকিয়ে বাংলাদেশটাই লুটেপুটে খাই

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আলোকচিত্র: জসীম অসীম।
================
আমার মা আমাকে বাংলা কিংবা ইংরেজি বর্ণ শেখাতে কী কষ্ট যে করেছিলেন, এখনো আবছা আবছা মনে পড়ে।

আজকাল শহরে বর্ণ পরিচয়ের উৎসব হয়। সেখানে ছোট্ট সোনামণিদের হাতেখড়ি দিতে উপস্থিত থাকেন দেশের সেরা লেখকগণও।
বাংলা বর্ণে হাতেখড়ি দিতে শহরের অনেক লোক একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে তাদের সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে চলে আসেন। সেই অনুষ্ঠান আবার বিভিন্ন টেলিভিশন সম্প্রচারও করে।
কিন্তু আমি এমন ‘‘বর্ণমালার বর্ণমেলা’’-র অনুষ্ঠান আমার শৈশবে পাইনি কিংবা যেতে পারিনি কোনো হাতেখড়ি উৎসবেও।
তবে আমার মা একটি কাজ করেছিলেন। আগের যুগের অনেক জমির দলিলে টিপসই বা ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট’ দেখিয়ে দেখিয়ে বলেছিলেন, যারা লেখাপড়া শিখে না কিংবা নাম লিখতে পারে না, তারা এভাবে ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট’ দেয়। আর আমাদের সমাজে এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। কেনো একজন মানবসন্তান নিজের নামটুকুও লিখতে পারবে না!
কিন্তু আজকাল তো মোবাইলের সিম রেজিস্ট্রেশনের জন্য ‘‘ফিঙ্গার প্রিন্ট’’ দিতেই হয়। এমনকি এখনও, এই ডিজিটাল যুগেও জমিজমার বায়নাদলিল বা মূল দলিলের ক্ষেত্রেও টিপসহি বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতেই হয়। মা বেঁচে থাকলে এটা মাকে আমি জিজ্ঞেস করতাম, এই ব্যবস্থাটা কোনো ক্ষেত্রে লজ্জার কী না।
আজকাল ‘শিশুবর্ধন’ও স্কুলের রীতিমত পাঠ্য বিষয়। এমনকি শিশুরা যেন অতিরিক্ত যত্ন পায়, সে জন্য 17 মার্চ তারিখটিকে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস বলে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবেও পালন করা হয়।
কিন্তু দেশে এখন যে পরিমাণ শিশু হত্যা ও শিশু অপহরণ বা শিশু নির্যাতন অথবা কন্যা শিশু ধর্ষণ বেড়েছে, তার সমাধান এ ‘জাতীয় শিশু দিবস’ পালনের মধ্য দিয়েও আসে কি! কারণ এতোকিছুর পরও আমাদের বোধের উন্নতি তো আর হয় না।
সব কথা বলা যাবে না।
স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে দেশের বিভিন্ন জায়গায়, কখনো বা প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কিছু হারবাল কোম্পানীর প্রচারকর্মী 12-16 বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের হাতে ‘হারানো যৌবন পুনরুদ্ধার’ বিষয়ক লিফলেট তুলে দেয়। আমরা এমনই সমাজে বাস করি আজ। ‘আশ্চর্য ক্ষমতাধর সেক্সুয়েল ট্রাইগন পাওয়ার অয়েলে’র লিফলেট এই সমাজের শিশু-কিশোররাও স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে অনায়াসেই পেয়ে যায়। এটা তো একটা অ্যানালগ সিস্টেমের কথা বললাম। ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল অনেক সিস্টেমের কথা তো আর বলাও যাবে না। এ নিয়ে আর কী ই বা বলবো।
অথচ আমাদের শৈশবে ঈদের নতুন টুপি ও পোশাক পরে যখন আনন্দে ভেসে বেড়াতাম, তখন এমন ‘মানবদেহের যৌন শক্তি’ বৃদ্ধির ‘পাওয়ার অব ফাইটার্স’ এর লিফলেট আমাদের হাতে পড়তো না কোনোভাবেই। কমপক্ষে আমাদের কারো হাতে পড়েনি। তখন আমরা দেশের অনেক চিড়িয়াখানায় বা পার্কে গিয়ে যৌনকর্মীদের বেলেল্লাপনা দেখতাম না। বরং আমাদের শৈশবে আমরা ‘কলিকাতা দেব সাহিত্য কুটীর’ কর্তৃক প্রকাশিত ‘ছোটদের বুক অব নলেজ’ পড়তাম। তাই আমরা আমাদের সন্তানদের আজ ‘শিশু’ বা ‘কিশোর আলো’ পত্রিকা কিনে দেই কিংবা ‘বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র’-এর ভ্রাম্যমান পাঠাগারের সদস্য করে বই পড়তে উৎসাহ দেই। দেখতে দেই ‘মিনা’ সহ অসংখ্য বিশুদ্ধ কার্টুন।
কিন্তু এই সমাজটায় নষ্টামীর বীজ ছড়াচ্ছে আসলে কারা? ঠিক তারা, যারা আমাদের শিশুদের শত্রু। আমাদের মানবসভ্যতারই শত্রু। এমনকি যারা আমাদের ভবিষ্যতেরও শত্রু।
অথচ গোটা বিশ্বজুড়েই ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার এখনো ৩০ শতাংশেরও বেশি নয়। বুকের দুধ ও সঠিক সম্পূরক খাবার খাওয়া নিশ্চিত করতে প্রতিটি দেশে বিকল্প শিশু খাদ্যের ব্যাপারে শক্তিশালী আইন এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রথম ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সম্মেলনে’ও এ বিষয়ে নীতি বাস্তবায়নের আহবান জানানো হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অনেক ‘বিকল্প শিশু খাদ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান’ অসংখ্য ‘শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার’দের মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে শিশুদের ‘বিষখাদ্য’ খাওয়াতে বাধ্য করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই ‘বিকল্প শিশু খাদ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান’ এবং ‘ঘুষখোর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ’ হলেন ‘হারে হারামজাদা’ কিংবা ‘হারে হারামজাদা’র বাচ্চাকাচ্চা। ‘বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনে’র অনেক উপদেষ্টাও এসব হারামজাদাদের হারামজাদি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু কোনোক্রমেই এই দেশ, এই বিশ্ব থেকে শিশুদের বিষ খাওয়ানো বন্ধ করা যাচ্ছে না।
এই হারামিদের সম্পর্কে শিশুদের সেই বিখ্যাত কবিতাটির প্যারোডি করে বলা যায়:
‘-হারামজাদা তুই খাস কি?
পানতা ভাত চাস কি?
:পানতা আমি খাই না
টাকার বস্তা পাই না
একটা যদি পাই,
অমনি সেই টাকা পেয়ে,
লক্ষ লক্ষ শিশুর পেটে বিষ ঢুকিয়ে, বাংলাদেশটাই লুটেপুটে খাই।’

শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। সকল বঞ্চনা ও প্রতারণা থেকে ওদের রক্ষা করতে হবে। কিন্তু দুঃখের কথা এই: সেই ভবিষ্যৎও ওই ‘হারে হারামজাদা’দের চাপে ও পাপে আজ কোনোভাবেই নিরাপদে নেই।
আমাদের অভিশাপে ও প্রতিবাদে যেনো একদিন না একদিন এসব অবিচার বন্ধ হয়ই হয় এবং এটা যেনো খুব দ্রুতই হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×