গতকল্য ৩০ শে সেপ্টেম্বর দুর্গাপূজার মহা নবমী পালিত হইয়াছে। আজ ১লা অক্টোবর দুর্গাপূজার দশমী এবং আজই দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের দিন।
এইবারের ভয়াবহ বন্যার কারণে দুর্গাপূজা আড়ম্বরহীন পরিবেশে পালিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন বন্যার পানি কমিতে থাকে, তখন দুর্গাপূজার আড়ম্বরও একটু একটু বৃদ্ধি পায়। ফলে শেষ পর্যন্ত এইবারের দুর্গোৎসব অনেকটা সাড়ম্বরেই উদযাপিত হইয়াছে।
গত শনিবার দুর্গা দেবীর বোধনের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গাপূজার শুরু হয়। আর আজ দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমেই পূজার সমাপ্তি ঘটিবে।
গত সোমবার মহা সপ্তমীর দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার্তদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ হইতে শাড়ী, ধুতি, লুঙ্গি, চাল ও ঔষধপত্র বিতরণ করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায় মনে করে দুর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গার আগমনে দেশের বন্যা দুর্গত লক্ষ কোটি মানুষ বন্যা-সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবিলায়ও শক্তি লাভ করিবে। ভয়াবহ বন্যার কারণে এই বৎসর দেশের অনেক পূজামন্ডপেই প্রতিমা নির্মাণ করা যায় নাই। ইহা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক।
==========================
এ লেখাটি ১৬ আশ্বিন, ১৪০৫ বঙ্গাব্দ তারিখে
একটি পত্রিকায় প্রকাশিত
আমারই লেখা সম্পাদকীয়।
===========================
হিন্দু সম্প্রদায় ঈশ্বরকে পুরুষরূপে যেমন পূজা করেন, ঠিক তেমনি নারীরূপেও। এই নারীরূপ ঈশ্বরেরই মাতৃরূপ। মাতৃরূপে তাহার নাম কখনো দুর্গা, কালী, সরস্বতী... ইত্যাদি।
দুর্গা হিন্দু সম্প্রদায়ের শক্তির দেবী। দুর্গম দুর্গার বাহন সিংহ। তাহার রহিয়াছে দশটি হাত। আছে দশটি অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়া তিনি যুদ্ধ করেন, শত্রু নাশ করেন এবং ধার্মিককে রক্ষা করেন।
দুর্গাপূজা বিশেষভাবে শরৎকালেই হয়। এই জন্যই দুর্গাপূজাকে শারদীয় পূজাও বলা হয়। বসন্তকালেও কোথাও কোথাও দুর্গাপূজা পালন করা হয়। তখন ইহাকে বাসন্তি পূজা বলে। তবে শারদীয় পূজাই দুর্গাপূজা নামে অধিক প্রসিদ্ধ।
কখন ও কিভাবে দুর্গোৎসবের প্রথম শুরু হইয়াছিলো, তাহা নির্ভুলভাবে বলা কঠিন। তবে দুর্গা যে আগে পারিবারিক পূজাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো, তাহার অনেক প্রমান রহিয়াছে।
পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজ- উ- দ্দৌলা’র পরাজয়ের পর এই দেশে ইংরেজদের প্রভাবে দুর্গোৎসবে বাঈনাচ, মদ্যপান এবং বিভিন্ন ধরনের কোলাহলপূর্ণ আমোদ- প্রমোদ যুক্ত হইয়াছে বলিয়া অনেক ঐতিহাসিক মতামত ব্যক্ত করেন। ইহাতে অনেক পন্ডিতের আবার দ্বিমতও রহিয়াছে।
দুর্গাপূজা পালন এখন আর বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নাই। উপমহাদেশের বাহিরে লন্ডন, লিভারপুল, বার্মিংহাম, গ্লাসগো-রমতো পৃথিবী বিখ্যাত শহরগুলিতেও দুর্গাপূজা এখন ছড়াইয়া পড়িয়াছে এবং সেইখানেও প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে অনেক অনেক পূজাবাড়ি। এমনকি বৃটেনের অনেক টিভি চ্যানেলেও স্থান পায় এই দুর্গাপূজা। তবে দিন যত অতিবাহিত হইতেছে, ততই দুর্গাপূজা ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে আরও অধিক পরিমাণে সামাজিক উৎসব হিসাবেও পালিত হইতেছে।
... ... ...
এই ধর্মীয় এবং সামাজিক উৎসব দুর্গোৎসব উপলক্ষে আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই এবং তাহাদের সার্বিক সুখ, সমৃদ্ধি ও নিরাপদ জীবন কামনা করি।
===============
নোট: এ লেখাটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম সংবাদপত্র কুমিল্লার ‘সাপ্তাহিক আমোদ’ পত্রিকায় ১৬ আশ্বিন, ১৪০৫ বঙ্গাব্দ তারিখে প্রকাশিত আমারই লেখা একটি সম্পাদকীয়। ওই পত্রিকায় তখনও ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ এর মতো লেখালেখিতে সাধু ভাষার প্রচলন ছিলো। এই সম্পাদকীয়টিতেও তারই সাক্ষ্য বহমান।
1996-2000 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে প্রকাশিত চাকুরিসূত্রে এ পত্রিকার অধিকাংশ সম্পাদকীয়ই ছিলো আমার লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:২০