somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাদের কার্ণিশে কাক - ১৬

২৪ শে মে, ২০০৭ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাইট শিফটে কাজ করা ঝামেলা। দিনে না ঘুমালে রাত জাগা কষ্ট। বারবার কফি খেয়ে চোখ খোলা রাখতে হয়। ব্যস্ততা তেমন নেই। এর মাঝে সুপারভাইজর রায়হান ভাই চক্কর মেরে গেছে দু'বার। সরণ ভাবছে - ডিসেম্বরের মাঝে চাকরীটা পার্মানেন্ট হয়ে যাবে। রায়হান ভাই কয়দিন আগে হাল্কা পাতলা ইঙ্গিত দিয়েছে। সরণের ইচ্ছে ডিপার্টমেন্ট চেঞ্জ করবে। ইন্টারন্যাশনাল রোমিংয়ে কল করেছে। ওখানে হয়ে গেলে ভালো হয়। কল সেন্টারে আর ভালো লাগছে না। নানান লেভেলের লোক ফোন করে, কথা বুঝতে চায় না। তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে কথা বলতে হয়। একটেল কাস্টমার সার্ভিসের ভয়ানক মহিলার গালাগালির অডিও ফাইল কাহিনী এখনো মানুষের স্মৃতি থেকে মুছেনি---! এসব ভাবার সময় কল আসে-
- সিটিসেল কল সেন্টার, সরণ স্পীকিং। মে আই হেল্প ইউ প্লিজ!
অন্যপাশ চুপচাপ।
সরণ আবার বলে - 'হ্যালো, মে আই হেল্প ইউ প্লিজ!'
- কে বলছেন?
- সরণ বলছি। ম্যাম, হোয়াট ক্যান আই ডু ফর য়্যূ!
- আপনারা কী বাংলা বলেন না?
- জ্বী। বলি, অবশ্যই বলি। বলুন আপনার জন্য কী করতে পারি!
ওপাশের তরুণী/মহিলা খিটখিট করে হেসে উঠে। বলে
- আপনাদের নতুন প্যাকেজ কি?
- জ্বী, আমাদের 'সিটিসেল আলাপ' আছে।
- ওটা তো পুরনো, নতুন কী আছে?
- লেটেস্ট আছে, মাইসিটিসেল ১৫০০। এটায় আপনি একটি সিটিসেল নাম্বারে টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স ৭৯পয়সা মিনিট কথা বলতে পারবেন।
- আচ্ছা!
- জ্বী হ্যাঁ, অফপিকে আমাদের রেটই সবচে' কম।
- আপনাদের রেট কম?
- হ্যাঁ
- রেট কম কেনো?
- মানে?
- দাম কম হওয়া কী ভালো?
- কাস্টমারের জন্য তো ভালো। আচ্ছা ম্যাডাম, আপনি কী আর কোন স্পেসিফিক তথ্য জানতে চান?
- হুম, বলেন তো আপনাদের সীম অন্য সেটে ইউজ করা যায় না কেনো?
- ওকে, ম্যাডাম ব্যাপারটা আসলে টেকনিক্যাল। সিটিসেল চলে সিডিএমএ ট্যাকনোলজিতে, তাই জিএসএম সেট সাপোর্ট করে না।
- আপনাদের অফিসে ঘড়ি আছে?
- এক্সকিউজ মী!
- আপনার হাতে ঘড়ি আছে?
- অবশ্যই আছে! কেনো?
- সময় কতো এখন?
- ম্যাম, আপনি কী চাচ্ছিলেন ঠিক বুঝতে পারছি না।
- আপনার ঘড়িতে কটা বাজে?
- এখন, এখন ঠিক বারোটা বাজে।
- রাইট। হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ!
সরণ চমকে উঠে।
- হ্যালো, আপনি কে বলছিলেন, প্লিজ!
ততক্ষণে ওপাশের লাইন কেটে গেছে।
সরণ ক্যালেন্ডার দেখে। আজ সাত সেপ্টেম্বর।
কিন্তু এ কলার কে?
পরিচিত কেউ? ক্লাসের বন্ধুদের কেউ?
সরণ কল লিস্ট চেক করে কম্পিউটারে। জিপি নাম্বার। সরণ কল করে সাথে সাথে।
রিং হয়। কিন্তু, কেউ রিসিভ করে না, লাইন কেটে দেয়।
কয়েকবার ট্টাই করার পর - 'দু:খিত, আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারে এই মুহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না - - -'।
মোবাইল অফ।

আরো কিছুক্ষণ পর জিমেইল ওপেন করে দেখে বেশ কিছু মেইল এসে জমে আছে। কয়েকটি বার্থ ডে গ্রীটিংস! বেলার মেইল প্রথমে –

হ্যালো!
হ্যাপি বার্থ ডে!
কি খবর! আপনার জন্ম তারিখটা নোট করে রেখেছি, তাই মনে থাকলো এবারও।
নইলে আমার যে ভুলো মন! আমি মেইল না করলে আপনি রাগ করতেন নাকি? হি হি হি:।
আশা করছি - একটা ঝাক্কাস জন্মদিন পালন করবেন। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন? নাকি বার্থ ডে -তেও কাজ করবেন?
আপনার জন্মদিনে একটা জিনিস চাইবো, দিবেন? সরণ, আমাদের কী দেখা হলে খুব বেশী সমস্যা কিছু ক্ষতি হবে? অনেকদিন মেইলে যোগাযোগ করছি। দেখা হলে আর সমস্যা কী? একটা ব্যাপার ভেবে মজা পাচ্ছি, এসব ক্ষেত্রে মেয়েরা দেখা করতে চায় না। ছেলেরা দেখা করার জন্য মুখিয়ে থাকে। আর আপনি হলেন ব্যতিক্রম। আমি অবশ্য এটাকে আপনার 'অসামাজিক' আচরণ হিসেবেই দেখছি। হি হি:। গতবারও আপনার জন্মদিনে আপনাকে অসামাজিক বলেছিলাম। মনে আছে?
যাক, দেখা করার ইচ্ছে আছে কিনা জানাবেন। আপনার সাথে আমার বোধ হয় কোন একবার কথা হয়ে গেছে। লোল।
আবারও শুভ জন্মদিন!
< বেলা >
----------------------

বেলা:
বার্থ ডে উইশ করে মেইলের জন্য ধন্যবাদ।
ধরা বোধ হয় পড়েই গেলেন!
সাত সেপ্টেম্বরে রাত বারোটায় আপনি কল করেছিলেন?
অনেস্টলি বলুন, তবেই দেখা করবো!
ভালো থাকবেন।
- সরণ
----------------------

হাই,
প্লিজ, রাগ করবেন না, প্লিজ!
আমি স্রেফ মজা করার জন্য অমনটা করেছি। আপনার বার্থ ডে-তে খানিকটা সারপ্রাইজ দেয়ার ইচ্ছেও ছিল। এই যাহ! আমি অবশ্য আপনার 'ম্যাম/ম্যাডাম' শব্দগুলো শুনে খুব মজা পেয়েছি। ঐ মোবাইলটা আমার ছোট মামার। মামা দিনাজপুর থেকে ঢাকা বেড়াতে এসেছিলেন। আমার ফোন নম্বর আপনাকে দিবো না। লোল।
আমি সত্যি কথা বললাম, তবে এবার বলুন, কবে কোথায় দেখা হতে পারে! আমার বাসা বনানী। এ দিকটায় হলে ভালো হয়। সময় আর লোকেশন জানাবেন প্লিজ!
সি ইউ সুন!
< বেলা >
-------------------

বেলা:
নেক্সট শনিবার ফ্রি আছেন?
বিকেল চারটায় বুমার্সে চলে আসেন।
নিউ ইয়র্কার ক্যাফের অপোজিটে।
আপনার বাসা থেকে খুব দূরে হওয়ার কথা না।
আমি অফিস থেকে সরাসরি পৌঁছে যাবো।
আমার ফোন নাম্বারও আপনাকে দিবো না।
বুমার্সে আমাকে আপনি চিনে নিবেন, পারবেন না?
সিটিসেল অফিসে ফোন করে স্মার্টনেস দেখাতে পারেন, দেখি আমাকে চিনে নিতে পারেন কিনা!
- সরণ

(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০০৭ দুপুর ১:৫৯
২০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×