somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাদের কার্ণিশে কাক - ১৭

২৭ শে মে, ২০০৭ সকাল ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে মাঝে এরকম অযথা টেনশন ভর করে। মনে হচ্ছে - চাকরীর ইন্টারভিউ হবে একটু পর। সরণ বারবার ঘড়ি দেখে। চেয়ার থেকে উঠে বুমার্সের পেছনে কাঁচের জানালায় বাইরে তাকায়। ডাচ বাংলা ব্যাংকের অফিস দেখে মনে হচ্ছে গুছানো কোনো ডুপ্লেক্স বাড়ী। শনিবারে অনেক অফিস বন্ধ থাকে তাই রাস্তায় ভীড় নেই তেমন। গুলশান-মীরপুর রুটের রাইডার ছুটে যাচ্ছে, পেছনে ফুকফুক করে কালো ধোঁয়া বেরুচ্ছে। সরণ ক'দিন আগে বিবিসি-তে দেখছিল, বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ নিয়ে বিশেষ রিপোর্ট। সম্ভবত: নারায়ণগঞ্জ কিংবা গাজীপুরের ইটের ভাটার ভিডিও দেখাচ্ছিল। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হয় পেছনে কে যেন দাড়িয়ে আছে। সরণ পাশ ফিরতেই
- এক্সকিউজ মী! আপনি সরণ?
- হ্যাঁ, আপনি - - -
- আমি বেলা।
- কেমন আছেন?
- এই তো ভালো। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন?
- না, খুব বেশী না। চলুন বসি ওখানে।
সরণ এগিয়ে যায়। ফুড কাউন্টারের দিকে মুখ করে বসে। মুখোমুখি বেলা।
দুজন কিছুক্ষণ চুপচাপ।
সরণ জিজ্ঞেস করে - 'তারপর'?
- 'তারপর মানে কী'? বেলা হেসে উঠে।
- তারপর মানে, তারপরের খবরাখবর কী?
- 'এই তো চলছে'। কপাল পেরিয়ে চোখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে নেয় বেলা।
- আচ্ছা।
- আপনার কথা বলেন, কেমন যাচ্ছে সব কিছু - - -
- মেইলে যেমন লিখেছি, সেরকম। একটুও এদিক ওদিক নেই।
বেলা মুচকি হাসে।
- আচ্ছা, বেলা আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?
- উঁহু, ওটা বলা যাবে না। সিক্রেট!
- আগে কোথাও দেখেছেন?
- নো! নেভার!!
- আপনি যেভাবে কনফিডেন্স নিয়ে কথা শুরু করলেন, আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম।
- হি হি। আচ্ছা, আপনার চশমা কোথায়?
- চশমা?
- হুম, চশমা কোথায় আজ?
- আমি চশমা পরি আপনাকে কে বললো?
- ওহ! আপনি চশমা পরেন না?
- না। কখনোই পরিনি।
- স্যরি, আমার মনে আপনার যে ইমেজ ছিল, ওখানে ভেবেছিলাম - আপনি চশমা পরেন।
- ইন্টারেস্টিং!
- আমি কেমন? আপনার ভাবনার সাথে মিলে?
- আমি তো ভাবিনি কিছু!
- হোয়াট! অসামাজিক - - -
- পারফেক্ট! হা হা হা। কি খাবেন বলেন।
- না কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।
- একটা কিছু খাই। প্রথম দেখা হলো আজ! আইসক্রিম চলবে?
- ওকে।
- কোন ফ্লেভার লাইক করেন? স্ট্রবেরী নাকি ভ্যানিলা?
- ভ্যানিলা।
- ওকে, আপনি বসেন। আমি নিয়ে আসছি।

সরণ উঠে গিয়ে আইসক্রীম নিয়ে আসে।
তারপর এটা-ওটা কথা হয়। সরণের কেনো জানি তৃষ্ণা পেয়েছিল খুব। বেলার চেয়ে দ্রুতই আইসক্রীম খাওয়া শেষ। বেলা তখনো চামচ দিয়ে আইসক্রীমের কাপে খোঁচাখুচি করছে। সরণ জিজ্ঞেস করে- 'কী ! খেতে ভালো লাগছে না? '
বেলা হাত নাড়ে - 'না - না। আমি এমনিতেই কম খাই'।
সরণ হাসে - 'প্রাচীন শাস্ত্র কিন্তু অন্য কথা বলে'।
- 'কি বলে'? বেলার উৎসুক প্রশ্ন।
- প্রাচীন শাস্ত্র বলে - মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় আহারে চার গুণ, কলহে ছয় গুণ আর কামনায় আট গুণ বেশী?
- 'কী'? বেলা আঁতকে উঠে।
- হুমম।
- ধ্যুত! ওসব ফালতু কথা। তো, আপনি কী ইদানিং শাস্ত্র পড়া শুরু করেছেন?
- না না, ওটা একটা বইয়ে পড়লাম।
- কার? বুদ্ধদেব গুহের?
- হা হা। বুদ্ধদেবের না। আমাদের দেশেরই একজনের।
- ওহ! আমি তো ভাবলাম, বুদ্ধ বাবুব শিষ্য আবার ইদানিং নারী-পুরুষ তত্ত্ব শিখছে কিনা!
- আপনার মনে আতংক ঢুকে গেছে!
- আপনিই তো কাজটা সেরেছেন। এনিওয়ে, সিটিসেলে থাকবেন? নাকি কোথাও মুভ করবেন?
- দেখি, কী হয়। আপনার তো ফাইনাল সেমিস্টার চলছে?
- হুমম।
- 'আমার কাছে ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে'। সরণ প্রসংগ পাল্টায়।
- কোন ব্যাপার?
- এই যেমন, নেটে চ্যাট করে, মেইল করে আপনার সাথে দেখা হলো।
- হি হি, এটা কী জটিল কোন কিছু? এখন তো অনেকেই এরকম দেখা করে।
- আপনিও করেন নাকি?
- হোয়াট?
- না, মানে - আমিসহ কতো জনের সাথে এরকম দেখা করলেন?
- সরণ! আমি কিন্তু এক্ষুণি উঠে চলে যাবো। সিরিয়াসলি বলছি।
- আরেরে, আপনি দেখই ক্ষেপে গেছেন।
- গা জ্বালা কথা বললে ক্ষেপবো না?
- ওকে স্যরি! আর কী খাবেন বলেন।
- নাহ, আর কিছু খাবো না।
- 'আপনার বান্ধবীরা কিন্তু না খেয়ে বসে আছে।' সরণের ঠোঁটের কোণায় লুকানো হাসি।
- আমার বান্ধবী? কে? কোথায়?
- ‘কে’ না। বলেন কারা?
- মানে?
- ঐ যে আপনার পেছনে, দেখেন। বিলিয়ার্ড টেবিলের পাশে দুজন।
- হুমম, দেখছি। কিন্তু ওরা আমার বান্ধবী আপনাকে কে বললো?
- হা হা, আমাকে কেউ বলেনি। ব্যাপারটা ডিপেন্ড করবে আপনার উপর। আপনি স্বীকার করলে ওরা আপনার বান্ধবী, নয়তো না।
বেলা খানিকটা থতমত খায়। সরণের মুখে তখনো হাসিটা ঝুলে আছে।
বেলা হাত দিয়ে চোখ ঢাকে - 'আপনি দেখছি সাংঘাতিক স্মার্ট! কীভাবে বুঝলেন, ওরা আমার ফ্রেন্ড'।
- এটাও না হয় একটা সিক্রেট হয়ে থাক।
- অদ্ভুত!!!
- হা হা। আমি ভাবছি অন্য কথা।
- কী?
- আপনার মেইল পড়ে কিংবা চ্যাট করে আপনাকে বেশ সাহসী মেয়ে মনে হয়েছিল। এখন দেখছি - ধারণাটা মিথ্যে। আপনি আমার সাথে একা দেখা করতে সাহস পাননি। সাথে বান্ধবী এনেছেন দু'জন!
- 'প্লিজ! আপনি ব্যাপারটা ওভাবে নিবেন না। আমি ঠিক আপনাকে বুঝাতে পারবো না এ মুহুর্তে।' বেলার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে আসে।
- ওকে, ওকে। আপনি নিজেই বেশী সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছেন। আই ডোন্ট মাইন্ড।
- আমার নিজেকে ভীষণ ছোট মনে হচ্ছে, সরণ!
- হা হা। টেক ইট ইজি।
- কিন্তু আপনি বুঝলেন কীভাবে, ওরা আমার ফ্রেন্ড?
- আপনি যেভাবে প্রথম দেখাতেই বুঝেছেন - আমি সরণ। সেভাবে---
- ওকে, আমি বলি, বেলা হাসে খানিকটা, আপনি এখনো গলা থেকে সিটিসেলের আইডি ঝুলানোর ফিতাটা খুলেননি। আমি ওটা দেখেই বুঝেছি, আপনি সরণ। তাছাড়া ওসময় আর তেমন কেউ ছিলো না।
সরণ চমকে উঠে।
- আসলেই তো! অফিস থেকে বেরুবার সময় খেয়াল করিনি! তাড়াহুড়ায় ছিলাম।
- হি হি হি। এবার বলেন, ওরা আমার ফ্রেন্ড সেটা আপনি কীভাবে বুঝলেন?
- হা হা। শুনেন, আপনি এসে দেখেছেন আমি ঐ কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। আমি দেখেছি - আপনারা তিনজন একসাথে গাড়ী থেকে নামলেন। পরে দেখলাম আপনি বেলা, আর বাকী দু'জন দূরে টেবিলে বসলো। ওরা আমাদের ফলো করছিল।
- আপনার মাথা তো সাংঘাতিক শার্প!
- হা হা হা। এরমাঝে আপনাকে ওরা এসএমএস ও দিয়েছে বেশ কয়েকটা, রাইট?
- আপনি আমাকে একদম বোকা বানিয়ে ছাড়লেন! আমার ভীষণ লজ্জা করছে এখন!!
- অস্থির হওয়ার কিছু নেই, প্লিজ বেলা! আই ডোন্ট মাইন্ড!!!
তারপর দু'জন নীরব থাকে কিছুক্ষণ।

বাসায় ফিরে রাতে মেইল পায় সরণ -
হ্যালো:
আপনার সাথে দেখা হয়ে ভীষণ ভালো লাগলো! আই অ্যাম ইমপ্রেসড! সময়টা খুব ভালো কেটেছে। আপনারও নিশ্চয় ভালো লেগেছে। মেইলে জানাবেন, প্লিজ!
আরেকটা কথা - সব ঋতু রায় একা একা রাজর্ষি বসুর কাছে যায় না। হোক তা বনে জঙ্গলে অথবা ইট-পাথরের শহরে! টেক কেয়ার!!!!
< বেলা >


(চলবে...)
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×