somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহরায়নে অভিবাসনের ভূমিকা এবং দূর্যোগ পূর্ব ও পরবর্তী সমস্যা (১ম পর্ব)

১০ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পেছনের কথা
প্রাকৃতিক দূর্যোগ বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য একটি আলোচিত বিষয়। যদিও এর ব্যাপ্তিকাল সেই অনাদিকাল থেকে এই দেশে বহমান। আমাদের দেশের মানুষ আজ প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে সংগ্রাম করতে করতে এই সমস্যার সাথে অভিযোজন করতে শুরু করেছে বেশ কয়েক যুগ ধরে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে রেশ ধরে এই প্রাকৃতিক দূর্যোগের মাত্রা আমাদের দেশে অতীতের তুলনায় কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও আমাদের ভৌগলিক অবস্থান এবং সমুদ্র উপকূলের কোনাকৃতি আকারের জন্য এই অন্চলে ঘন ঘন সাইক্লোন বা ঘূর্নিঝড় হয়ে থাকে । কিন্ত বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারনে এই ঘূর্নিঝড়ের সংখ্যা এবং তীব্রতা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে । কিন্ত বাইরের বিশ্বের তুলনায় আমাদের দেশে এই প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিষয়টি বেশ কম আলোচিত হয়ে আসছে । এমনকি অনেকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে তেমন একটা অভহিত নন। এর আগে এই বিষয়গুলো নিয়ে কিছু লেখা লিখেছিলাম । তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বটি একটু ভিন্ন ধারা নিয়ে লেখা হবে । সম্প্রতি হাইতি এবং চিলিতে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প এবং এর পরবর্তীতে যে বিষয়গুলো এই প্রাকৃতিক দূর্যোগকে কেন্দ্র করে উঠে এসেছে , সেই বিষয়গুলোকে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করা। এই আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সীমাবদ্ধতা এবং করনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে পাঠক কে সচেতন করাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য । আলোচনায় কোন তথ্য সংশোধনের প্রয়োজন পড়লে তার ভার পাঠকের উপর রইলো । এই লেখাটি মূলত শহরায়ন মুখী অভিবাসন এবং এর ফলে সৃষ্ট সমস্যা এবং এর ক্ষতিকারক দিকগুলো কিভাবে প্রাকৃতিক দূর্যোগের পরবর্তী সময়ে ত্রাণকার্যে নিয়োজিত মানবিক সংস্থার কাজকে প্রভাবিত করে ,সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে ।



ভূমিকা

উনিশ শতক এবং বিশ শতকের শুরুতে বিশ্বজুড়ে শিল্পায়নের বিপ্লবে মানুষের জোয়ারের ঢেউ একে একে আছড়ে পড়তে শুরু করলো গ্রাম থেকে নতুন নতুন শহরের দিকে । ঝড়ের গতিতে একে একে শহর গড়ে উঠতে লাগলো বিশ্বজুড়ে । শহরের নাগরিক সুবিধা, নতুন নতুন কাজের চাহিদা এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সম্ভবনা অন্যদিকে উচ্চশিক্ষা,পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা গ্রামের মানুষকে গ্রামীন জীবনের মায়া ভুলে বাধ্য করলো শহরে ঘর বাঁধার ।আর এই ঢেউ আজও অবিরত ভাবে একে একে আছড়ে পড়ছে শহরের বুকে । এক হিসাবে দেখা গেছে শহর অভিমুখী এই বিশাল গ্রামীন জনগোষ্ঠীর অভিবাসনের ফলে ২০০৮ এ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক জনসংখ্যা বাস করবে শহরে ।২০৩০ এ শহরে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫বিলিয়নের দাড়াবে । এই ব্যাপক জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশ বাস করবে মূলত এশিয়া এবং আফ্রিকার শহরগুলোকে কেন্দ্র করে । এবং জাতিসংঘের একটি গবেষনায় দেখা গেছে এই দুই মহাদেশে শহর অভিমূখী অভিবাসনের হার সবচাইতে বেশী।

এশিয়া এবং আফ্রিকার শহরের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও এই শহরগুলোর জনসংখ্যা অনেক বেশী । ফলে এই শহরগুলোর পক্ষে এখন আর সম্ভব হচ্ছেনা অভিবাসিত এই বিপুল গ্রামীন জনগোষ্ঠীর জন্য সকল নাগরিক সুবিধাদি সরবরাহ করা । এই অভিবাসনের ফলে একদিন এই শহররায়নের প্রক্রিয়া হয়েছে তরান্বিত কিন্ত আজ এই ব্যাপক অভিবাসিত জনগোষ্ঠীর ভারে শহররায়ন প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়ছে । এবং এর ফলে শহর গড়ে উঠছে অপরিকল্পিতভাবে এবং এর ফলে একদিন শহরগুলো মৃত শহরে পরিনত হওয়া এখন শুধু সময়ের বিষয়।

আমাদের ঢাকা শহর
এখন দৃষ্টি ফেরানো যাক আমাদের ঢাকা শহরের দিকে । বর্তমানে যেন এই শহরটি ধুঁকে ধুঁকে চলছে এক অসুস্থ্য রোগীর ন্যায়।পানি নেই,বিদূৎ নেই , গ্যাস নেই ।কিন্ত আছে অহরহ লোডশেডিং,রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম আর আছে মানুষের আহাকার । কিন্ত এরপরও কি থেমে আছে মানুষের শহরমুখী হবার তাড়না । একটি গবেষনায় উঠে এসেছে প্রতিবছর ঢাকা শহরে ৫ লাখ করে নতুন মুখ যোগ হচ্ছে পুরোনো মুখের সাথে । কিন্ত ঢাকা থেকে গ্রামমুখী জনগনের সংখ্যা নেহাতই অপ্রতুল।ফলে ঢাকা শহরে বেড়েই চলেছে মানুষের ভীড় আর ঢাকা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলেছে পরিকল্পনাহীন এক মৃতনগরীর ভাগ্যকে বরন করতে।প্রাকৃতিক দূর্যোগ আঘাত হানার আগেই আমরা যেন এক মানুষ্য দূর্যোগের সম্মুখীন এখন।

শহর থেকে আগত এই গ্রামের মানুষগুলোর ঠাঁই হয়েছে শহরের বস্তিগুলোতে ।অথচ তাদের এই শহরে আসার পেছনে ছিল স্বপ্ন এক স্বচ্ছল জীবনের । কিন্ত এই শহরের পক্ষে এখন আর সম্ভব নয় এই মানুষগুলোকে এক সুন্দর জীবন উপহার দেবার।এই পরিকল্পনা হীন শহরে আজ বস্তি থেকে সমাজের অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থানে যারা আছেন তারা কেউই নিরাপদ নন। কারন এই শহরটি দাড়িয়ে আছে এক নিঃশব্দ প্রাকৃতিক দূর্যোগ ভুমিকম্পের আশংকায়।ঢাকা শহরে বেশ কটি ভূমিকম্পের রেকর্ড থেকে গবেষকরা ধারনা করছেন একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ।কারন এই অন্চলে গ্রেট ইন্ডিয়ান নামে ভুমিকম্পটি রেকর্ড করা হয় ১৮৯৭ সালে এবং এই অন্চলে এই ধরনের বড়মাত্রার ভূমিকম্পগুলো সাধারনত ১০০ বছর পরপর আঘাত হেনে থাকে । সেদিক থেকে ইতিমধ্যে আমরা সেই সময় পার করে অতিরিক্ত সময়ের মধ্যে এগিয়ে চলেছি। আমরা আশংকামুক্ত নই এই কারনে এখন বেশকিছু দিন পরপর মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প আমাদের দেশে বিশেষ করে ঢাকায় রেকর্ড করা হচ্ছে।



দূর্যোগ এবং আমাদের পরিকল্পনা

অথচ আমাদের এই বিষয়ে নেই কোন মাথাব্যাথা । সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে খাদ্য ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়,এছাড়াও সরকার গঠন করেছে অতন্ত্য সময়োপযোগী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বা Disaster Management Plan যার মাধ্যমে দেশের সরকার প্রধান থেকে একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়া সরকার প্রতিটি পর্যায়ের কমিটির পূর্নাংগ বিবরন তৈরী করেছেন এবং দূর্যোগ পূর্ব এবং পরবর্তী দায়িত্ব কিভাবে পালন করা হবে তার উপর একটি Standing Order Procedure(SOP) তৈরী করেছেন। এমনকি আমাদের দেশের এই পরিকল্পনার মান এতটাই চমৎকার যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দূর্যোগ পরিকল্পনার মান অনেক উঁচুতে । বিশেষ করে আমাদের সাইক্লোন পুর্ব প্রস্ততি পরিকল্পনা একটি নিখুঁত এবং আন্তজার্তিক মানের একটি পরিকল্পনা যা ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার প্রধান বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশে চালু করেন । এটিকে ইংরেজীতে বলে CPP বা Cyclone Preparedness Programme।

উপরোক্ত আলোচনার ফলে একটি ছোট ধারনা পাওয়া যায় যে আমাদের দেশে সরকারী পর্যায়ে দূর্যোগ পরিকল্পনা কি পর্যায়ে আছে । সম্প্রতি সরকার ঢাকা শহরের জন্য ভূমিকম্পের উপর বিশেষ পরিকল্পনা তৈরী করার জন্য সরকারী ১৭টি সংস্থাকে নির্দেশ প্রদান করলেও ,জানা মতে শুধুমাত্র স্বশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে ঢাকা শহরের উপর ভুমিকম্প পরবর্তী পরিকল্পনার একটি পূর্নাংগ খসড়া Contingency Plan দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জমা দিয়েছে যাচাই বাছাইয়ের জন্য ।
( চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:৫৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×