সারা বিশ্বের সমগ্র মানবকুলের জন্য রহমতসরূপ প্রেরিত মহানবী হযরত মোহাম্মদের(সঃ) সুন্নাতসমুহ হলো আমাদের জন্য "গাইডিং প্রিন্সিপলস অফ লাইফ" বা জীবনাদর্শ। আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো, আমাদের শরীর। এই ব্যাপারেও যদি আমরা আল্লাহর রসুলকে(দঃ) অনুসরণ করি তবে সীমাহীন কল্যাণ লাভ করা যাবে, সন্দেহ নেই। সহীহ হাদিীস এবং সীরাত গ্রন্থ পাঠ করলেই আমরা জানতে পারি যে, আমাদের প্রিয় নবীর(দঃ) পেট ছিলো ভেতরের দিকে দাবানো, বাইরের দিকে বেরিয়ে আসা বা উপচে পড়া নয়। এটাকে যদি সুন্নত বিবেচনা করি তবে আমাদের, প্রতিটি মুসলমানের, উচিত হবে নিজেকে ভুঁড়িহীন রাখা এবং, অতিঅবশ্যই, ভুঁড়িহীন থাকা মানেই শরীরটাকে মেদহীন রাখা। একথা কে না বোঝে যে, এটি একটি কঠিন সুন্নত!
আমাদের শরীরের সুস্থতার ক্ষেত্রে এই হাদীসের গুরুত্ব বিবেচনা করেই আমি আমাদের পেটের উচ্চতা বা ভুঁড়ির আয়তনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। সত্যিকার অর্থে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে বা কোন দল বা সম্প্রদায়কে গোষ্ঠি হিসেবে কটাক্ষ করার জন্য নয়! প্রতিটি মানুষেরই দূর্বলতা আছে খাবারের বিষয়ে, আকর্ষণ আছে ভালো খাবারের প্রতি। দুর্বলতা আছে আমার নিজেরও! তাই, অনেকটা ‘আত্মশাসনে’র মত করে রাসুলের(দঃ) সুন্নাহকে সামনে এনে বলছিঃ আমাদের প্রিয় নবীর(দঃ) পেট ছিল ভেতরের দিকে দাবানো। অর্থাৎ ভুঁড়ি বলতে তাঁর কিছুই ছিলো না। নবীর(দঃ) উম্মাৎ হিসেবে আমরা কি চেষ্টা করতে পারি না নিজেদের সংযত করতে, প্রয়োজনে সংশোধন করতে?
মুখে যত কথাই বলি না কেন, আল্লাহর রসূলের(সঃ) আচরিত জীবন পদ্ধতি আমরা সাধারনত অনুসরণ করি না। বরং বলা ভালো, নানা বাহানায় এড়িয়ে যাই। তিনি যে বলেছেন, “পেটের শুধু মাত্র এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য দিয়ে পূর্ণ করতে”, সেকথার ধারে কাছেও আমরা যাই না। আমরা বরাবরই খাবার গ্রহণ করি আমাদের ভুঁড়ি পরিপূর্ণ করে, আর আয়োজন সুস্বাদু হলে বরং আরো একটু উপচে পড়া অবস্থায় খাবার শেষ করি! আমাদের অঞ্চলের মানুষের কাণ্ডকারখানা তো আরো চমকপ্রদ! আমরা ভাত খাই ২ অথবা ৩ বেলা। তা'ও আবার যে পদ্ধতিতে খাই সেটার লক্ষ্য হচ্ছে বেশি পরিমাণ ভাত পেটের ভিতর চালান করা। অর্থাৎ আমরা প্রথমে শাকসবজি এবং কম স্বাদের তরকারি দিয়ে ভাত খাই, তারপর সবচেয়ে উত্তম রান্না বা মাছ মাংস মুরগি ইত্যাদি দিয়ে ভাত খাই। মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাত খাওয়া! বাড়তি ভাত খাওয়া টাই আমাদের দৈনন্দিন চর্চা। কম খাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না!
আবার, আল্লাহর রসুল(দঃ) যে বলেছেন, “কেবল খিদে পেলেই খেতে বসতে এবং পেটে সামান্য ক্ষুধা থাকা অবস্থাতেই খাবার শেষ করতে”, আমরা তা কখনোই করি না। আমরা বরং রুটিন মোতাবেক খিদে ছাড়াই খাই! এমনকি, যেসব হালাল খাবার ডাক্তার না-খেতে পরামর্শ দিয়েছে তা’ও খাই ক্ষতিকর জেনেও, কেবলমাত্র রসনা তৃপ্তির জন্য লোভের বশবর্তী হয়ে। সুন্নাহর জন্য খাবারের লোভ বিসর্জন না দিয়ে, আমরা খাওয়ার লোভে সুন্নাহ বিসর্জন দিই! আমরা খাওয়া ছেড়ে উঠতে পারিনা; না পারতে খাওয়া ছাড়ি! হায়! আমার জীবনকে শাসন করার আসনে যদি রসুলের(দঃ) সুন্নাতকে বসাতে পারতাম! আমার পছন্দ-অপছন্দের মাপকাঠি যদি আমার প্রিয় নবীর(দঃ) সুন্নাত হতো!
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম প্রতি চান্দ্র মাসে আইয়ামে বীযের তিনটি রোজা রাখতেন (১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে) এবং প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতি ও সোমবারে দু’টি রোজা রাখতেন। এই সুন্নাতকেও আমরা আমাদের অভ্যাসে পরিণত করতে পারি। এই ক্ষেত্রেও আমরা আমাদের প্রিয় নবীকে(দঃ) অনুসরণ করি না। আবার সারাদিন রোজা রাখার পরও খাবারের বেলায় আমরা নবীর(দঃ) দেখানো সংযত আচরণ করিনা। আমরা যখন খেতে বসি, আমাদের দুপুরের আর রাতের খাবার, ইফতার সেহরিসহ, কোনটাই স্বল্প ভোজনের নমুনা হয় না। তাহলে আমাদের ভুঁড়ি দাবানো থাকবে কীভাবে? অথচ এই ষাটোর্ধ বয়সে এসে দেখতে পাচ্ছি, খাবার বেশি খাওয়ার জন্যই আমাদের যত রোগ-ব্যাধি আর শারীরিক দুর্বলতা! অন্যদিকে, বর্তমানকালের উন্নত জ্ঞান-গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে এইসত্য সকলের কাছে স্পষ্ট যে, সুস্থ থাকার জন্য কম খাওয়াটাই সবচেয়ে বেশি উত্তম।
এতকিছু বলার পরও যা মোদ্দাকথা তা হলোঃ যেহেতু খাওয়ার ব্যাপারটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত আচরণের বিষয় তাই এই ক্ষেত্রে কেউ কাউকে উপদেশ দিলে কোন কাজ হবে না। আমরা নিজেরা প্রত্যেকেই যদি বিষয়টাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ না করি, তাহলে কোন লাভ নেই। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন এই পৃথিবীতে যতদিন বাঁচি সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার।
আশরাফ আল দীন।।মিরপুর, ঢাকা।০৪.১১.২০১৮
[email protected]
#sunnah #সুন্নাহ #ভুঁড়ি
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫