যারা নাচে গানে ভরপুর , বাস্তবিক অ্যাকশন দৃশ্য ভালবাসেন তবে তাদের দেহরক্ষী মুভি দেখতে সাদর আমন্ত্রন । তথাকথিত ভালো মুভি বা সামাজিক মুভির নামে যারা আর্ট ফিল্ম দেখতে ইচ্ছুক তাদের এই মুভি না দেখতে যাওয়াই ভালো । পরিপূর্ণ বানিজ্যিক মুভির সব উপাদান এই মুভিতে বিদ্যমান । ইতিমধ্যে দেহরক্ষীর আইটেম গান দিয়ে নায়িকা ববি মাতিয়েছেন । মুভিতে তার অভিনয় যথেষ্ট ভালো । চরিত্রের সাথে তার লাস্যময়ী অ্যাপরোচ দর্শকদের মুগ্ধ করবে । ববির কণ্ঠে যেন মাখন মিশে আছে । যা সাধারন দর্শকদের আকর্ষিত করবে । তার ও এটা ২ য় মুভি । উন্নতির আরও অনেক জায়গা আছে , তবে চেষ্টা করছেন নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে ।
মুভির ভিলেন বা এন্টি হিরো আনিসুর রহমান মিলন এর অভিনয় দেখে অনেকেই সেই প্রথম দিক কার হুমায়ুন ফরিদির ছায়া দেখতে পাবেন । পরিপূর্ণ কমার্শিয়াল মুভিতে মিলনের অভিষেক বর্তমান সিনেমার বাজারে বলতে হবে রাজকীয় । নিজেকে নিজেই ভাঙতে চেয়েছেন প্রতিটি দৃশ্যে । একটু খেয়াল করলেই দেখবেন মুভির সময় যতই গড়াবে , তিনি যেন আরও স্ব মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছেন ।
এবার আসি এই মুভির সম্ভবত সবচেয়ে বড় চমক কাজী মারুফ কে নিয়ে । আমার দেখা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয় দেখিয়েছেন এই মুভিতে । ব্যাপক পরিবর্তন দেখলাম মারুফের । চরিত্রের সাথে একদম মানানসই অভিনয় । পরিমিতি র ছাপ লক্ষণীয় । একবারের জন্য ও মনে হয়নি তিনি অতি অভিনয় কিছু করছেন । কিছু দৃশ্যে তার অভিনয় মুগ্ধ করবে সবাইকে , এটা নিশ্চিত । অ্যাকশন শট গুলো তে ভালো কাজ করেছেন । ববির সাথে কেমিস্ট্রি মন্দ না । ববির সাথে তার রোমান্টিক কমেডি সমৃদ্ধ দৃশ্য গুলো দর্শকদের বিনোদিত করবে , এটা নিশ্চিত । তিনি পর্দায় আসার পড়ে যেন মুভিটি নতুন করে গতি পায় । সব মিলিয়ে বলতেই হবে একটা এন্টারটেইনিং মুভি । প্রথম দিকে একটু স্লো থাকলেও পরে সময়ের সাথে খাপ খেয়ে গেছে ।
আমি যে কয়জন বন্ধু নিয়ে গিয়েছিলাম তাদের সবার কথা - আসলেই আমাদের বাংলা মুভিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে । এমন কিছু মুভি আরও বেশি করে তৈরি হলে আমাদের মুভি নিয়ে হাসাহাসির দিন অচিরেই ফুরাবে । আশা করি যারা হলে যাবেন , কেউ হতাশ হবেন না । গান গুলো সবার , সব শ্রেণীর মানুষের ভালো লাগার মত । আর দৃশ্যায়ন ছিল চমৎকার । হ্যাঁ , এটা ঠিক যে আহামরি কোন মুভির কাতারে দেহরক্ষী কে রাখা যাবেনা । কিন্তু আপনি যখন আমাদের বাংলা মুভির বাজার , বর্তমান অবস্থা , বাজেট , ভালো মেকারের অভাব , অভিনেতা - অভিনেত্রীর সঙ্কট সব কিছু মিলিয়ে বড় ক্যানভাসে ভাবতে যাবেন , তখন আপনার কাছে ও মনে হবে দেহরক্ষী মুভিটি অনেক আশা জাগানিয়া । স্টোরি লাইন , সিকোয়েন্স , মেক আপ - গেট আপ , গান এবং লোকেশন , কালার কারেকশন , ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক সহ আনুসঙ্গিক বিষয়ে অনেক ভালো কিছু উপহার দিয়েছেন পরিচালক । তার চেষ্টার প্রশংসা করতেই হবে ।
মুভির ভালো দিক ঃ
১. চরিত্র কাস্টিং এবং অভিনেতা অভিনেত্রীর কাছ থেকে ভালো কাজ বের করে আনা।
২. গানগুলো বেশ ভালো এবং চিত্রায়ন সুন্দর । আর হ্যাঁ ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক মন্দ না , তবে আরও যত্ন করে ভালো করা যেত ।
৩. গাঁজাখুরি অ্যাকশন নেই বললেই চলে । সাধ এবং সাধ্যের ভেতর বাস্তবিক এবং ভালো কিছু দেয়ার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে ।
৪. কিছু লোকেশনের সিলেকশন ভালো ছিল , হয়তো বাজেট আরও বেশি থাকলে আরও কিছু ভালো লোকেশন উপহার দেয়া যেত ।
৫. ক্যামেরার কাজে আগের চেয়ে অনেক উন্নতি ।
মুভির দুর্বলতা ঃ
১. টিপিক্যাল বাংলা মুভির মত কিছু শট , যেমন নায়ক মারুফের অনেক গুলি লাগার পরেও সতেজ থাকা এবং তাই নিয়েই কঠিন সব ধুন্ধুমার অ্যাকশন দৃশ্যে কাজ করা ।
২. কিছু কমেডি সিকয়েন্স গুলো তে যত্নের ছাপ নেই । একটু দায়সারা ভাব দেখা যায় । তাই বেশি হাসতে পারিনি ।
৩. পরিচালকের ছোটখাটো কিছু ভুল , যেমন নায়িকার বাবার আত্মহত্যার পরে তার লাশ থেকে পড়ে যাওয়া চিঠি বাস্তবিক মনে হয়নি । ব্যাপারটা অন্য ভাবেও দেখানো যেত । অভিনেতা প্রবির মিত্রের মৃত্যুর পড়ে সে সময় গুরুত্ব পূর্ণ মারুফ কে রেখে মিলনের প্রবির মিত্র কে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়া । কারণ মিলনের কাছে তিনি কোন গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় ছিলেন না ।
৪. এই মুভির কাহিনীকার এবং সংলাপ রচয়িতা আব্দুল্লাহ আবু জহির । মারুফের মুখে তার দেহরক্ষী হয়ে ওঠার গল্প টুকু দর্শকদের না শোনালেও পারতেন ।
তবে এসব ছোট খাট বিষয় বাদ দিলে দেহরক্ষী মুভি টি কমার্শিয়াল মুভি হিসেবে আমাদের বাজারে ভালো রেটিং পাবে বলে আমার বিশ্বাস । আশা করছি পরিচালক সামনের মুভিতে তার এইসব ভুল গুলো শুধরে নেবেন । সবাইকে অনুরোধ করবো হলে গিয়ে মুভিটি দেখেন । তারপর সমালোচনা করেন । নির্মাতাদের উৎসাহ দেন । বাসায় বসে বসে কলকাতা বা হিন্দি মুভির গুনগান তো অনেক হল । আমাদের মুভি নিয়ে নাক না সিটকিয়ে একবার হলে গিয়ে দেখুন কি পরিবর্তন আসছে আমাদের মুভিতেও । সবাইকে ধন্যবাদ ।
এক নজরে দেহরক্ষী মুভিটি ঃ
- প্রযোজনা ঃ ফ্যাট ম্যান ফিল্মস ( গায়ক ও সুরকার অদিত)
- অভিনয় ঃ কাজী মারুফ , ববি , আনিসুর রহমান মিলন , কাজী হায়াত , প্রবির মিত্র সহ আরও অনেকে ।
- সঙ্গীত পরিচালক ঃ অদিত
- গান গুলোতে দিয়েছেন ঃ অদিত , কনা , নেন্সি , দোলা , পারভেজ , শোয়েব ,
-কাহিনীকার এবং সংলাপ রচয়িতা আব্দুল্লাহ আবু জহির
- রিলিজ ঃ ১৪ এপ্রিল , ২০১৩ ( বাংলা নববর্ষ ১৪২০ )
ঢাকার বলাকা সহ অধিকাংশ হলে এবং সারাদেশের ৯০ টি হলে একসাথে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬