somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এপটোপিক প্রেগনেন্সি উইথ নরমাল প্রেগনেন্সি =আমার সন্তান

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৬-০২-১৮ রোজ শুক্রবার। বরাবরের মতো বন্ধের দিন আলসেমী করে একটু দেরীতে ঘুম থেকে উঠি। আমার দূপুরে শেওড়া পাড়ায় একটা দাওয়াত ছিলো। ভাবছিলাম নামাজের আগে যাবো? নাকি পরে যাবো। একবার ভাবলাম জুমার নামাজটা মীরপুরে এসেই পড়বো। এর জন্য সেভ করে ড্রয়িং রুমে বসে ফেসবুক দেখছিলাম। গতকাল চ্যানেল আই পেজে আমার একটি নগণ্য লিখায় আট হাজার মানুষের রিএক্ট এবং ২৫০ শেয়ার দেয়া দেখে অবাক হয়ে সংসার সঙ্গীকে দেখাতে আসলাম। আমার সংসার সঙ্গী ছোলা সিদ্ধ করতে দিয়েছে প্রেসার কুকারে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মধ্যে একটু শুয়ে আবার কাজে যায়। তাহাকে শোয়া অবস্থায় দেখে আমার অবাক হওয়া থেমে যায়। আমার সংসার সঙ্গী বিছানায়। চেহারায় কেমন যেন একটা ভয়ের চাপ। জিজ্ঞাসা করলে জানালো পেট ব্যাথা। আমি খুটিয়ে খুটিয়ে আরো অনেক কিছু জানতে চাইলাম। তার ডেলিবারী ডেট ছিলো ২১-০২-১৮ থেকে ২৪-০২-১৮। আগেওতো হতে পারে। ফাইনালি ডিসিশন নিলাম হাসপাতালেই যাবো। পরিচিত এক টেক্সি ড্রাইবারকে ফোন দিলাম সে জানালো সে ফার্মগেটে এবং সে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসতে পারবে । রেডি হবার আগেই সে চলে আসলো বাসার নীচে। হাসপাতালে যাওয়ার পথে ঘটলো একটা দুর্ঘটনা। দুই মোটরসাইকেল আরোহীর সাথে মুখোমুখী সংঘর্ষ। ভাগ্য ভালো টেক্সিওয়ালা আস্তে চালাচ্ছিলো।
মোবাইলে কথা বলতে বলতে বাম পাশ থেকে স্ট্রেইট ডানপাশে এসে আমাদের টেক্সীর সাথে লেগে দুই জনই পড়ে যায় এবং মোটর সাইকেলের লুকিং স্ট্যান্ড ভেঙ্গে যায়। এদের ভুল হওয়ায় রক্ষা । না হলে টেক্সীওয়ালাকে মেরে ফেলতো। বেশির ভাগ মোটর সাইকেল মালিকেরা আবার একটু বেশি সহনশীল কিনা !! অল্পের ওপর দিয়ে প্রথম বিপদ কেটে সামনেই আরেকটা হালকা বিপদ। জুমার নামাজের নামাজীরা রাস্তায় এসে রাস্তা বন্ধ করে ফেললো। কোনমতে নয়টোলার র‌্যাব-৩ এর মসিজিদটা পার হলাম। এগিয়ে গিয়ে পড়লাম মগবাজার মোড়ের মসজিদের সামনে। সেখানে একামত শুরু হয়েছে এবং রাস্তা পুরাটাই বন্ধ। সেখানে কোনমতে পার হবার সুযোগ নেই।
টেক্সীওয়ালা একটু ঘুরিয়ে আরেকটা গলি দিয়ে বের হয়ে গেলো। এরই মাঝে সমতার মা এর ব্যাথা বেড়ে যাচ্ছিলো। ঘটনা অনেক লিখলেও সময় কিন্তু খুব একটা লাগেনি ১০ মিনটের একটু বেশি হতে পারে হাসপাতালে পৌঁছাতে। সমতার সময় পড়েছিলাম ডাবল ট্রেনের আনাগুনায়। আসবি আসবি ঐ সময়েই লেভেল ক্রসিংএ দুইটা ট্রেন আসার দীর্ঘ সিগন্যাল !!

আদ-দ্বীন হাসপাতাল
============
মধ্যবিত্তের জন্য চমৎকার একটা হাসপাতাল। বিশেষ করে প্রসব-প্ররসুতি এ বিষয়ে বেশ ভালো। আগে থেকেই এখানে রুটিন চেকআপে ছিলো। আমার আগের সন্তান সমতাও এখানে হয়েছিলো। টাকা পয়সা ফরমালিটি করতে করতে সময় যাবার আগেই তারা ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। যেহেতু শুক্রুবার এবং ডেটের আগেই তাই আমি কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। জুমার নামাজের টাইম, কাউকে ফোন দিবো সেটাও হলো না। সমতার মায়ের বড়বোনের একদিন আগে জটিল দাত অপরেশন হয় - তাই তিনিও অসুস্থ। আল্লাহকে সহায় মেনে এবং কাজ বালিকাকে সঙ্গী করে অপেক্ষা করা ছাড়া তখন আমার হাতে আর কিছু করার ছিলো না। একজন চাকমা নার্স ছিলো। অনেক হেল্পফুল ছিলো সে। অপেক্ষাও খুব বেশি করতে হয়নি। তিনটার দিকে কাজ বালিকা এসে জানালো তার একটা ভাই হয়েছে। আমাকে মামা ডাকেতো তাই ভাই বলে সম্বোধন করেছে। ভেতর থেকে এক খালা বারবার বলছিলো বয়স্ক কোন মহিলা নেই? আমি বলেছি খালা, ধরে নেন আমিও নাই। ( আমাদের দুজন বয়স্ক মহিলারা সে সময় সত্য সত্যই ছিলো না। একজন বন্দি কারাগারে আরেকজন ইতালিতে ছিলো।) :) সমতার মা মুখে না বললেও আমি আঁচ করতে পেরেছিলাম ছেলে হবে। আল্ট্রা রুম থেকে বের হবার পর জিজ্ঞাসা করেছিলাম কি সন্তান? কিছু জানতে পারলে? সে গম্ভীর মুখে বলেছিলো "জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেছি।" যদিও আমার কাছে সন্তান সন্তানই। মেয়ে হোক ছেলে হোক সেটা বিষয় না । সন্তান সুস্থ হোক, মা সুস্থ থাকুক এটাই ছিলো আমার কাছে জরুরী বিষয়। মেয়ে না হলে নাকি বাবার জীবন পুরা স্বার্থক না। মেয়ে সন্তানের স্বর্গীয় ফিলিংসটা আমি অলরেড়ি বুঝছি। যাই হোক আল্লাহ যা আমাকে দিয়েছে বা দিবে তাতেই আমাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে এর বাইরে আর কোন কথা নাই। শনিবার ১৭-০২-১৮ আমার অফিসের পিকনিক ছিলো। যা পেয়েছি তাতে এসব দাওয়াত পিকনিক ক্যানসেলে কিছুই যায় আসে না।

এপটোপিক প্রেগনেন্সি উইথ নরমাল প্রেগনেন্সি
===============
একটা কথা না বললেই নয় । আমি এসব ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস এবং গুছানো থাকি। এমনকি আমি তিনজন ডাক্তারকে দেখিয়ে তারপর সন্তুষ্ট হই। তারপরও এই সন্তানের সময় আমার একটা অবহেলা হয়েছিলো কনসিভের একদম প্রথম দিকে। একদম প্রথম আল্ট্রাসনোটা করতে হালকা দেরী করে ফেলি এবং এতেই ঘটে চরম বিপত্তী। ভাবছিলাম রোজার ঈদের পরে করবো। যেদিন করবো তার আগের দিনই ঘটে বিপদ। প্রচন্ড ব্যাথায় সমতার মা'কে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিলো এবং জরুরী অপারেশন করে চার ব্যাগ ইন্যাস্ট্যান্ট রক্ত দিতে হয়েছিলো। তার এপটোপিক প্রেগনেন্সি উইথ নরমাল প্রেগনেন্সি হয়েছিলো।(যেটা সচরাচর রেয়ার)। তাই যারা সন্তান নিবেন তাদের প্রতি অনুরোধ রইলো যেন একদম প্রথম মাসের পরেই আল্ট্রাসাউন্ড করে সেটা চেক করে নেন। আর একটা দিন পরেই আমি সেটা করাতাম কিন্তু একদিন আগেই বিপদটা ঘটে গেছিলো। অপারেশনের সময় সমতার মা'কে ১৫ মিনিটেরও বেশি সময় সেন্স লেস করা হয়েছিলো। তাই অনেক ঝুঁকি ছিলো । আমার আজকে জন্ম নেয়া সন্তানটি তার দেড় মাস বয়সে সে ঝুঁকি নিয়েছিলো।


বোনের মমতা
=====
যা হোক শেষ করবো আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করে। সব সময় আল্লাহর কাছে চাইতাম আল্লাহ যেন ব্যাপারটা আসানের সাথে হয়। যখন শুক্রবারে জুমার টাইমে আমাকে হাসপাতালে যাচ্ছিলাম তখন আমার মনের মধ্যে একটা খুঁতখুতানি ছিলো। আল্লাহ মনে হয় আমার দোয়া কবুল করেনি। কিন্তু শনিবার ১২ টায় যখন সন্তান সহ বাসার দিকে আসতেছিলাম তখন হাসপাতালের মধ্যে বাণিজ্যমেলার সমপরিমাণ ভীড় দেখে মনে হয়েছে গতকালের দিনটা কতনা আসানি ছিলো। শুক্রবার বলে সব জায়গায় ফ্রী ছিলো। পাঁচ তলা এক তলা নীচ তলা দূএক মিনিটের মধ্যেই আসা যাওয়া করেছি। আমার চপলা বড় মেয়ে গতকাল রাতে আমার সাথে আলাদা করে শোয়েছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে গলা জড়িয়ে বলেছে- "বাবা আমি কি আমার স্কুলের বন্ধুদেরকে (সে উচ্চারণ করে বন্ডু) :) বলবো আমার একটা ভাই হয়েছে?" আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছে, সে কি তার ভাইকে স্কুলে নিয়ে যেতে পারবে? আহা ! বোন - বোনের ফিলিংস !! এমন বোনদেরকেইতো ভাইয়েরা বড় হয়ে অবহেলা করে !!!

অমর সঙ্গী
======
আমার সংসার সঙ্গী সত্যই একজন ভালো মানুষ। গত ৯ টি মাস সে কখনো ডান পাশে শোয়নি। বাম পাশ হয়ে শুতে শুতে তার পা কোমর ব্যাথা হয়েছিলো। গত ৭ মাস প্রতি সপ্তাহে দুটি করে ইনজেকশন দিয়ে এসেছে। গত ৯টি মাস হাসপাতাল-বাস এর বাইরে যায়নি। ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে তার সমাজকর্ম শেষ বিভাগের ফিল্ড ওয়ার্ক ছিলো সেখানেও যেতে পারেনি। ইডেন কলেজের কোন টার্ম পরীক্ষাও দিতে পারেনি। কিন্তু ঠিকই মেয়েকে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি করে দিতো। আমার টিফিন বক্স রেডি করে দিতো। এমনকি বৃহস্পতিবারের সকালের নাস্তা টিফিন এবং আজ রোববারের নাস্তা টিফিন দূটাই সে নিজ হাতে দিতে পেরেছে। (আমার শুক্র শনি অফিস বন্ধ)। আমার সমতা হয়েছে তাও বুধবারে যখন আমার বৃহস্পতি-শুক্র সাপ্তাহিক বন্ধ ছিলো। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। এমন মানুষদেরকে আমরা মেয়ে মানুষ বলে তাচ্ছিল্য করি? !!!! দিন শেষে মনে হচ্ছে জার্নিটা লেটে শুরু করে ফেলেছি। বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তা আবার বেড়ে গেলো। আবার মনে হচ্ছে উপরের উনি যা চাইছেন তা থেকে আমি আর নতুন কিবা করতে পারতাম !!
=== #সমতার_ভাই ===
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০৯
১৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×