somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

JRA বিমান হাইজাক-বাংলাদেশ বিমান বাহীনি বিদ্রোহ ১৯৭৭

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ২৫ ফেব্রুয়ারী, বাংলাদেশের ইতিহাসের আরেকটি রক্তাক্ত দিন।বিনম্র শ্রদ্ধা বিডিআর বিদ্রোহের সকল শহীদ আত্ত্বার প্রতি। আধুনিক মিডিয়ার কল্যানে আমাদের জেনেরেশনের দেখা প্রত্যক্ষ এক রক্তাক্ত অধ্যায়।বাংলাদেশের ইতিহাসে বাঁকে বাঁকে এমন অসংখ্য অধ্যায়ের দেখা মিলে, যার কোনটিই ২৫ ফেব্রুয়ারীর মত জন সম্মুখে উন্মোচিত হয়নি। তেমনি একটি অধ্যায় ১৯৭৭ সালের জাপানিস রেড আর্মির বিমান হাইজাক ও বাংলাদেশ বিমান বাহীনির রক্তাক্ত অভুত্থান।

জাপানী রেড আর্মির বিমান হাইজাকঃ বাংলাদেশের ইতিহাসের একমাত্র বিমান হাইজাকের ঘটনা এটি। মুলত JRA ছিল কমুনিষ্ট মিলিটেন্ট গ্রুপ, ১৯৭৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তারা জাপানী এয়ার লাইন্সের ডি-৮ বহরের একটি বিমান হাইজাক করে, যেটি প্যারিস থেকে টোকিও যাবার পথে ছিল। ৫ সদস্যের হাইজাকার দলটি ১৫৬ জন যাত্রী ও ক্রু কে জিম্মি করে বিমানটিকে জোর করে অবতরন করায় ঢাকার পুরাতন তেজগাঁও এর বিমান বন্দরে।মুক্তিপন হিসাবে তারা জাপান সরকার কাছে ৬ মিলিয়ন ডলার ও তাদের আটক ৯ সদস্যদের মুক্তি দাবি করে।
টানা ৪ দিন তারা হাইজাক করা বিমান নিয়ে ঢাকা অবস্থান করে।বাংলাদেশ বিমান বাহীনি,সরকার এর মধ্যস্ততায় জাপান সরকারের বিমান মন্ত্রীর উপস্থিতিতে অবশেষে ২ অক্টোবর তাদের দাবি মেনে নেয়া সাপেক্ষে সেই হাইজাক নাটকের অবসান হয়। সকল যাত্রী মুক্তি পায়, আর বিমানটি আলজিরিয়ার পথ ধরে উড়ে যায়।
এখনকার মত মিডিয়া না থাকায় সেই দুর্লভ সময়ের তেমন কোন রেকর্ডই এখন সংরক্ষিত নেই। একমাত্র বিটিভিই সেটি আংশিক সমপ্রচার করে যার আর্কাইভ জানামতে এখন নেই।২০১২ সালের দিকে নাঈম মাহমুদ একটি সর্ট ফিল্ম করে রাডার ট্রান্সমিশন ও স্থির চিত্র দিয়ে। হাইজাক বিমানের একটি ছোট ক্লিপ আছে এই ইউটিব লিংকেঃ



বিমান বাহীনির বিদ্রোহঃ এই হাইজাক নাটকের সাথে সাথে চলতে থাকে বিমান বাহীনির বিদ্রোহের ডামাঢোল।২৮ সেপ্টেম্বর বিমান বাহীনি দিবসেই ছিল মুল বিদ্রোহের পরিকল্পনা, কিন্তু সেদিন বিচ্ছিন্ন ও ব্যার্থ একটি বিদ্রোহ হয় জিয়াউর রহমানের হোম টাউন বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে।
এদিকে হাইজাক নাটকের অবসানের কয়েক মুহুর্তের মাঝেই ২ অক্টোবর ঢাকায় শুরু হয় বিদ্রোহ, বিদ্রোহী বিমান বাহীনির জোয়ানরা রেডিও দখলে নেয়, হামলা চালায় জিয়াউর রহমানের বাসভবনে। এদিকে তেজগাও বিমান বন্দরে লাইন ধরে ব্রাশ ফাইয়ারে হত্যা করা হয় বিমান বাহীনির সিনিয়ন অফিসার দের।
এর মাঝে জিয়ার অনুগত একদল জোয়ান কাউন্টার অ্যাটাকে যায়, পুনঃ দখল করে বিমান বন্দরের টাওয়ার, আর বীমান বাহীনির প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ কোন ক্রমে প্রানে বাঁচেন। ব্যার্থ হয় অভুত্থ্যান। বিভিন্ন সুত্র মতে দু পক্ষে নিহত হয় কমকরে ২৩০ জন।

বিদ্রোহের প্রকৃত কারন ও নেত্রিত্ব আজো আস্পষ্ট। তবে এই বিদ্রোহের পর জিয়াউর রহমান জাসদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেন।
বিদ্রোহ ব্যার্থ হবার সাথে সাথে গঠিত হয় বিশেষ ট্রাইবুনাল।তাতে অসং্খ্য বিমান, সেনা সদস্য ও নন কমিশন্ড কর্মকর্তা,অফিসার ও সাধারন সৈনিকদের ফাঁসি ও ফায়ারিং স্কোয়াডে পাঠানোর আদেশ হয়। বিদ্রোহের ৭ দিনের মাথায় শুরু হয় ফাঁসির কার্য্যক্রম,যা চলে প্রায় ৩ মাস ধরে।জিয়া সে সময় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের অপসারন সহ ৩ চিফ অফ দ্যা জেনারেল স্টাফ কে বদলি করেন। ৮১ সালে জিয়া আরেকটি ব্যর্থ সেনা বিদ্রোহে নিহত হন।

৭৫ থেকে ৮১ পর্যন্ত এমন প্রায় ১৯ টি বিদ্রোহ হয় সামরীক বাহীনিতে, যার কোনটিই ২৫ ফেরব্রুয়ারীর বিডিআর বিদ্রোহের মত জনসম্মুখে আসেনি। মিডিয়ার কাভারেজ না থাকায় সেই সব ঘটনার তথ্য উপাত্ত্ব অনেকটাই দুর্লভ।কিছু ছবি লেখার সাথে সংযোজিত করলাম।
২০০৯ সালে ব্লগে ১৯৭৭ এর বিদ্রোহ নিয়ে প্রথম লিখি, আজকের দিনে কিছুটা প্রসঙ্গিক বলে শেয়ার করলাম।







সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৪
২০টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×