somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনমোহনই কি একমাত্র পুতুল প্রধানমন্ত্রী?

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জি.নিউজের সূত্র ধরে কালের কণ্ঠে গত ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়, সাবেক মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয়া বারুর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ক্ষমতার দৌড় বিষয়ে এবার বোমা ফাটিয়েছেন সাবেক কয়লা সচিব পিসি পারেখ। কয়লা মন্ত্রণালয়ে থাকা সাবেক এই সচিবের লেখা ‘ক্রুসেডার অর কন্সপিরেটর : কোলগেট অ্যান্ড আদার ট্রুথস’ নামক বইয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি মনমোহন সিংকে কার্যত ‘পুতুল প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন। খবরে প্রকাশ, পর পর দু’জন সাবেক সহকর্মীর এমন নেতিবাচক মূল্যায়নে মনমোহনের ভাবমূর্তি যেমন সংকটে পড়েছে, তেমনি ক্ষমতায় না থেকেও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর আড়াল থেকে ‘কলকাঠি নাড়া’র বিষয়টি আলোচনার খোরাকে পরিণত হয়েছে। বইটিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন যখন যে দায়িত্বেই ছিলেন, তাতে তার নিয়ন্ত্রণ ছিল খুবই সামান্য অথবা একেবারেই ছিল না। পারেখ দাবি করেছেন, মুঠোফোনের জন্য দ্বিতীয় প্রজন্মের টুজি ¯েপ্রকট্রাম বরাদ্দ এবং কয়লার ব্লক ইজারা দেওয়া সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

এর আগে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বারুর লেখা ‘দ্য অ্যাকসিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ বইয়ের সারসংক্ষেপেও মনমোহনের প্রধানমন্ত্রিত্বের ব্যাপারে প্রায়ই একই ছবি ফুটে ওঠে। সঞ্জয়া তার বইয়ে দাবি করেন, কংগ্রেসে দ্বৈত ক্ষমতা-কেন্দ্রের বিষয়টি বাস্তব। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর কেবল নামেই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন। তার হাতে কোনো ক্ষমতাই ছিল না। মন্ত্রী-আমলা নিয়োগ থেকে শুরু করে সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন সোনিয়া। কংগ্রেস অবশ্য বাজারে আসা বারুর বইটিকে ‘সস্তা কাহিনী’ আখ্যায়িত করে পুরোপুরি খারিজ করে দিয়েছে। বারুকে ‘নাখোশ হয়ে দলত্যাগ করা ব্যক্তি’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলটির দাবি, লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন এ ধরনের বই প্রকাশ করা বিজেপির (ভারতীয় জনতা পার্টি) রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাড়া আর কিছুই নয়। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুর্যেওয়ালার ভাষ্য, ‘বারু যে এখন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদির কৌশল নির্ধারক হিসেবে কাজ করছেন, তা সবারই জানা।’

ব্যক্তিগতভাবে মনমোহন পুতুল কি না সে বিতর্কে গেলাম না। তবে তার ভূমিকা যে অনেকটাই ‘পুতুল প্রধানমন্ত্রী’র মত তা অনেকাংশেই সত্য। অন্ততপক্ষে ‘যতটা রটে তার কিছু না কিছু ঘটে’ তত্ত্বকে যদি আমরা মেনে নেই তবে তা বিশ্বাস করতেই হবে। তবে এখানে প্রশ্ন আসে সাবেক উপনিবেশিক শাসনাধীন দেশগুলোর কোন দেশটার শাসক পুতুল নন, কোন দেশটার শাসকগণ পুরোপুরি স্বাধীন? উপনিবেশিক আমল শেষ হওয়ার পরেও কি তারা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো কি কৌশলে বাকি দুনিয়াকে পদানত করে রাখেনি? আমাদের মোটা চোখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক দখলকৃত শুধু আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হামিদ কারজাই আর ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরে আল মালিকীকেই পুতুল সরকার বলে মনে করি। কিন্তু না, গরমযঃ রং জরমযঃ নীতির উপর ভিত্তি করে টিকে থাকা দুনিয়ার বুকে বড় বড় পরাশক্তি, বিভিন্ন আঞ্চলিক সামরিক জোট ও জাতিসংঘের মত সংস্থাগুলোর কাছে কার্যত বাকি দুনিয়া পরাধীন। শক্তিশালী এই পরাশক্তি ও সামরিক জোটগুলোর প্রভাবের বাইরে গিয়ে চলার মত স্বাধীনতা মোটেও অন্যদের নেই। এরা বেঁচে আছে তাদের দয়ার উপর, করুণার উপর এবং বিভিন্ন প্রকারের দাসখত চুক্তির বিনিময়ে। এ কথা মিথ্যা প্রমাণের জন্য যে কোন দেশ চেষ্টা করে দেখুক কিংবা তাদের প্রভাবকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে দেখুক তাদের পরিণতি কী হয়? তবে জ্ঞানী ও চোখ-কান খোলা লোকেদের জন্য চেষ্টা করে দেখার কোন প্রয়োজন নেই। চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে আফগানিস্তান ও ইরাকের মত দেশের উদাহরণ। জ্বল জ্বল করছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য আমীরাতগুলোর অবস্থাও। নিজেদের সকল স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য আমীর-ওমরাহ ও বাদশাহগণ সর্বস্ব ছাড় দিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। কারণ তারা জানেন ক্ষমতাবান ও সামরিক শক্তির অধিকারীদের মন যুগিয়েই তাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হবে। তার জন্য অন্যান্য সকল কিছু ত্যাগ করতে তাদের বাধছে না। স্বাধীন দাবি করা পাকিস্তানের পরমানু স্থাপনাগুলোও আজ মার্কিনিদের নিয়ন্ত্রণে। একই কাতারের অন্যান্য দেশের অবস্থাও একই। তাদেরকে বাধা দেয় এমন দুঃসাহস তাদের কারোরই নেই। আর আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে পদানত করে রাখতে তাদেরকে তেমন কোন কিছু করার দরকার হয় না। এদেশগুলোর শাসক শ্রেণি পাশ্চাত্য প্রভুদেরকে খুশি রাখতে সর্বদা তৎপর। ঔপনিবেশিক আমলে চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে আমাদের শিক্ষিত শ্রেণি এবং যাদেরকে শাসন করার যোগ্য বলে মনে করা হয়, শুধুমাত্র তাদের গায়ের রং ছাড়া আর সবদিক দিয়ে তারা পাশ্চাত্যের ন্যায়- শুধুমাত্র তাদের মত জাতি স্বার্থ সম্বন্ধে সচেতনতা ছাড়া, এব্যাপারে তাদের সততাটুকু ছাড়া। এরা নিজেদের অতীত সম্বন্ধে নিদারুণ অজ্ঞ, এমনকি নিজেদের অতীত সম্বন্ধে লজ্জিতও বটে। কারণ নিজেদের সত্যিকার ইতিহাস তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়নি। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই তারা পাশ্চাত্যের সকল কিছুকেই শ্রেষ্ঠজ্ঞান করা সদা গদগদ চিত্ত। পাশ্চাত্যের দেশগুলো কি চায় তা বাস্তবায়ন করতে তারা সদা একপায়ে খাড়া। পাশ্চাত্য প্রভুদের মনোভাব এবং ইচ্ছা পোষণই তাদের জন্য আদেশ হিসেবে কাজ করে। আর না করে যাবেই বা কোথায়? তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশ পাশ্চাত্যের দেশগুলোর কাছে ঋণে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। তাদের বার্ষিক দান-খয়রাত না এলে এসব দেশের বাজেট ঘোষণা করা যায় না, উন্নয়ন কাজ থেমে থাকে। সুদী কারবারী মহাজনের কাছে ঋণগ্রস্ত খাতকের যে অবস্থা, বাস্তবতায় আমাদের অবস্থাটা তাদের সামনে একেবারে তাই। এ জন্যই তাদের দেখানো প্রেসক্রাইব মেনে নিয়ে তার আদলেই আমাদেরকে পথ চলতে হয়। তাদের সৃষ্ট গণতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থা আমাদের অঞ্চলে বার বার ব্যর্থ প্রমাণিত হলেও তা দিয়েই আমাদের দেশ চালাতে হয়। তাদের তৈরি করা সিস্টেম বজায় রাখার তাগিদে আমাদের দেশীয় জনগণের প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের পেছনে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। কোথাও সামান্য কোন ব্যত্যয় ঘটানো সম্ভব হয় না। এসব দেশে তাদের দূতাবাসগুলোই রাষ্ট্রের প্রকৃত নিয়ন্তা। ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ এই নীতিকে মেনে নিয়েই এসব দেশের শাসক পরিবর্তন হয়, বৈদেশিক চুক্তি সম্পাদিত হয়, পররাষ্ট্রনীতি গৃহীত হয়।

সুতরাং এ ব্যাপারে শুধু একা মনমোহনকে দোষ দিয়ে লাভ কী? তাও তো তিনি একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির মহানুভবতায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তাকে সেই মহানুভবতার সামান্য হলেও মূল্যায়ন তো করতেই হয়। তাছাড়া তিনি তো আর বিদেশিদের পুতুল প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন না। কিন্তু বাকি শাসকগণতো কার্যত বিদেশিদের দাসানুদাস হয়ে আছেন। তাই তাদেরই এ ব্যাপারে অধিকতর লজ্জা পাওয়ার কথা নয়?
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×