somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

উড়োজাহাজ
আতাহার হোসাইন

প্রতিটি গুম-খুনে কেন আমরা ‘সিরিয়াস’ হইনা?

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা দেখি যখনই কোন হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিগণ গুম-খুনের শিকার হোন তখন তা নিয়ে সারা দেশে এমনকি দেশের বাইরেও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। খবরের কাগজ ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এনিয়ে শিরোনাম হয়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় খবর আপডেট হয়। প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরা হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ঘটা এমন সব দুঃখজনক ঘটনা খুব কমই আলোচিত হয়। ক্ষেত্র বিশেষে এসব খবর সংবাদপত্রের কোন এক কোণের সামান্য একটি কলামেও স্থান পায় না। তাদের নিয়ে টকশো মাতাতেও কোন সুশীল কিংবা বুদ্ধিজীবীদের আগমন ঘটে না। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও তা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় না। তাই সব ধরনের হাইপ্রোফাইল ব্যক্তি- রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইলিয়াস আলী, শ্রমিক নেতা আমিনুল, ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমদের মত দুঃখজনক গুম ও খুনের ঘটনার প্রতি গভীর দুঃখবোধ, সমবেদনা ও সম্মান রেখেই প্রশ্ন রাখছি, তাহলে কি হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিত্বদের হারিয়ে যাওয়ার পর স্বজনদের মধ্যে সৃষ্টি করা দুঃখ, বেদনা আর সাধারণ মানুষদের মধ্যে যারা প্রতিনিয়ত গুম ও খুনের শিকার হচ্ছেন তাদের স্বজনদের দুঃখ বেদনায় কোন পার্থক্য আছে, তাদের ক্ষেত্রে বেশি বেদনার সৃষ্টি করে আর সাধারণদের মধ্যে কম বেদনার সৃষ্টি করে- বিষয়টা কি এমন? আশা করি কোন বিবেকবান মানুষই এই প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বোধক উত্তর দিতে পারবেন না।
তবে হ্যাঁ, হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিত্বদেরকে অনেক মানুষ চেনে। সুতরাং তাদের নিয়ে বেশি মানুষ আলোচনা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিটি গুম, প্রতিটি খুনই তাদের স্বজনদের মধ্যে সমান ব্যথার উদ্রেক করে, সমান কষ্টের জন্ম দেয়। ক্ষেত্র বিশেষে গুরুত্বহীন স্বজনদের ভোগান্তিটা আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করে। কেননা দেখা যায় যে- গুম হওয়া কিংবা খুন হওয়া ঐ ব্যক্তিটিই ছিলো ঐ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। তার উপার্জনের উপরই নির্ভর করতো একটি পরিবারের বেঁচে থাকা। তার দিকেই চেয়ে থাকতো তার স্ত্রী-সন্তান ও বৃদ্ধ পিতা-মাতা। তার হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে পুরো পরিবারটির সম্মুখ নেমে আসে অন্ধকার। অন্যদিকে একটি হাইপ্রোফাইল ব্যক্তির ক্ষেত্রে অনুরূপ দুঃখজনক ঘটনা ঘটলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তাদের খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয় না। নানা সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও রাজনৈতিক দল তাদের দিকে এগিয়ে আসে। তাদের খোঁজ-খবর নেয়। তাদেরকে সমবেদনা জ্ঞাপন করে। কিন্তু একটি সাধারণ পরিবারে সেই সমবেদনাটুকু জানানোর জন্যও কাউকে পাওয়া যায় না।
অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ এই যে, গত বুধবার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের দেলপাড়া ভূইয়া পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ধারী দুর্বৃত্ত কর্তৃক অপহরণ হওয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে ফিরে পাওয়া গেছে। অপরহরণকারীরা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাকে মিরপুরের একটি রাস্তায় চোখ বাধা অবস্থায় ছেড়ে যায়। পরে তিনি অটোরিক্সায় করে বাসায় ফেরার পথে কলাবাগানে টহল পুলিশের মুখোমুখি হোন এবং তাদের সহায়তায় বাসায় ফিরে আসেন। এর আগে এবি সিদ্দিককে অপরহরণের ঘটনায় সারা দেশের সংবাদ মাধ্যম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয় তাকে শশরীরে উদ্ধার করার জন্য। স্বয়ং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার পুলিশের আইজিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, এবি সিদ্দিককে উদ্ধারের জন্য তাৎক্ষণিক যা যা করা প্রয়োজন তা করা হয়েছে। পুলিশের আইজিপিকে বলা হয়েছে সমন্বয় করে উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নিজেও খোঁজ-খবর রাখছেন এবং নির্দেশনাও দিচ্ছেন।’ প্রতিমন্ত্রী ঐ সময় আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘তাকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ-র‌্যাব সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী অপারেশন করছে।’ তিনি আশাপ্রকাশ করে বলেন, ‘দ্রুতই আমরা তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ব্যাপারটি সিরিয়াসলি নিয়েছি।’
ফলশ্র“তিতে দেখা গেছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অপহৃত এবি সিদ্দিক সব শঙ্কা দূর করে সকলের মাঝে আবার ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এতে অনেকেই ধারণা করছেন যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষই এহেন গর্হিত কাজের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে বলেই বাধ্য হয়ে অপহরণকারীরা অপহৃতকে ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য, সেই সাথে সৌভাগ্য সেই পরিবারটিরও। কিন্তু এমনি নাম না জানা কিংবা স্মৃতি থেকে মুছে যাওয়া অনেক মানুষই আর ফিরে আসছেন না। তাদের নামও আমরা মনে করতে পারছি না। কারণ মিডিয়া সেসব খবর নিয়ে বার বার আমাদের চোখের সামনে হাজির হয় না। কিন্তু যাদের নিয়ে বার বার খবর আসে তাদের মধ্যেও ফিরে আসেন নি ইলিয়াস আলী, ফিরে আসেন নি চৌধুরী আলম। এমনকি বৈদেশিক চাপ থাকা সত্ত্বেও ফিরে আসেননি শ্রমিক নেতা আমিনুল। যারা ফিরে আসেননি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের প্রত্যেকেরই একটা রাজনৈতিক বা অন্যকোন ব্যাকগ্রাউন্ড স্পষ্ট ছিলো। তাই তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে জোরালো চাপ ছিল শুধুমাত্র তাদের স্বগোত্রীয়দের পক্ষ থেকেই। অপরদিকে এবি সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং সবশ্রেণির মানুষ সমানভাবে সোচ্চার ছিল। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ভাষায় এ বিষয়টিকে ‘সিরিয়াসলি’ নেওয়া হয়েছিল। আমরাও মনে করি ‘সিরিয়াসলি’ নেওয়া হয়েছিলো বলেই অপহরণকারীরা তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তাই প্রশাসন, মিডিয়া এবং সব ধরনের শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি একটি অনুযোগ; আমরা কেন প্রতিটি খুন, প্রতিটি গুম, প্রতিটি অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে সিরিয়াস হইনা? কেন আমরা এমন প্রতিটি দুঃখজনক ঘটনার বিরুদ্ধে একযোগে প্রতিবাদ করিনা? কেন আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রতিটি খবরকে এবি সিদ্দিকীর অপহরণ ঘটনার ন্যায় শিরোনাম করেনা? কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে না? কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা প্রতিটি ঘটনাকে ‘সিরিয়াসলি’ গ্রহণ করেন না? যদি আমরা প্রতিটি অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে ‘সিরিয়াস’ হতাম, প্রতিবাদ করতাম তাহলে অপরাধীরা সাহস পেতনা দিনে দুপুরে কাউকে অপরহরণ করে নিয়ে যেতে, গুম করতে কিংবা বস্তাবন্দী লাশ ফেলে যেতে। সৃষ্টি হোত না স্বজন হারানোর দীর্ঘ দহন।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×