মানুষ কতই না মিথ্যে অহঙ্কারে পূর্ণ এক সত্তা! কতই না মূর্খ সে! কার গর্ভে সে জন্ম নেবে তাও সে জানত না। এমনকি সে নিজে কোন ধর্ম ধারণ করবে, পৃথিবীর কোন অংশে তার জন্ম হবে, কোন ভাষায় কথা বলবে, তার গায়ের রঙ সাদা হবে না কালো হবে তা নির্ধারণের দায়িত্বও তার হাতে ছিল না। অথচ সে পৃথিবীতে এসে হয়ে গেছে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী। ক’দিন আগেও সেই কিছুই ছিল না। তার না থাকাতে পৃথিবী নূন্যতম কোন অভাব বোধ করেনি। অথচ মাটিতে পা রেখে, দু’দিনের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে সে পৃথিবীর আদি থেকে চলে আসা নিয়মকে সে মুহূর্তেই চ্যালেঞ্জ করে বসে। সে সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টাকেও অস্বীকার করে। সে তার সেই সামান্য অস্তিত্ব দিয়ে বুঝতে চায় আদি-অনাদির স্রষ্টাকে। অথচ এই মানুষতো সময়ের বুদবুদমাত্র। সে সময় দ্বারা আবদ্ধ। এই সময়েরই কোন বুদবুদ যা কিছু সে দেখেনি, দেখার সুযোগও পায়নি সে সে সমস্ত কিছুকে অস্বীকার করে বসে।
হে মানুষ, তুমিতো তাঁর সৃষ্টির বিশালতার তুলনায় কীটের চেয়েও ক্ষুদ্র। তোমার স্বীকার-অস্বীকারে তাঁর কিছুই যায় আসে না- এটা কি ভেবে দেখেছ? তোমার কাছে তাঁর কোন প্রয়োজন নেই। বরং তাঁর দান গ্রহণ করে তোমাকে প্রতিনিয়ত তোমার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হয়। আর তাকেই তুমি চ্যালেঞ্জ করো?
কি গুণ আছে তোমার? তুমিতো অল্প কয়েকদিনের সময়কে অনন্ত মনে করে মূর্খতায় ডুবে আছ! তোমার জ্ঞানই তোমাকে আজ তোমার ক্ষুদ্রতার কথা জানিয়ে দিচ্ছে। কোটি কোটি আলোকবর্ষের দূরের নক্ষত্রের আলো এখন পর্যন্ত তুমি দেখই নি। অথচ সেই দূরত্ব স্রষ্টার করায়ত্ব, হাতের মুঠোয়।
তুমিতো হিংসা, ক্রোধ, কাম, লোভ ও লালসায় ডুবন্ত এক জীবমাত্র। তুমি অপরের সাফল্যে ঈর্ষা করো। সামান্য আঘাতে তুমি আগুনের মত জ্বলে ওঠ। তুমি কামনা-বাসনায় নিত্য রোজ ডুবে যাও, ভেসে ওঠ। লোভ তোমাকে ন্যায়-অন্যায় বিচারে অন্ধ করে দেয়। তুমি আগামী জাননা। অতীতের জ্ঞানও তোমার অতি সামান্য। তোমার বর্তমান বলে কিছু নেই। তাহলে তুমি কিসের জোরে মানুষের জন্য নিয়ম তৈরি করো যা দিয়ে তারা আগামীতে চলতে পারে? কোটি মানুষের মনের কত অংশ তুমি বুঝতে পার? মানুষ কেন, কোন কারণে কি আচরণ করে তা কি তুমি বোঝ? তোমার নিজেরটাই কতটা বোঝ? তুমি কি তোমার স্বার্থের প্রশ্নে তার উর্ধ্বে ওঠতে পার? তুমি কি অপরের জন্য নিজের মত উত্তমটাই বাছাই করতে পার?
তোমার কাছে সোনা খুবই দামি বস্তু, তাই না? কিন্তু একটুকরো সোনা আর এক টুকরো মাটিতে কি পার্থক্য? কোনই পার্থক্য নেই। একটা কঠিন পদার্থ আরেকটা ঝুরঝুরে। সোনায় কি হয়? সে কি তোমাকে খাদ্য দেয়? কিন্তু মাটি তা দেয়, তোমাকে বেঁচে থাকার আহার যোগায়। সোনার ভূমিতে তুমি কলা উৎপাদন করতে পারবে না। ধানও না, খেঁজুরও না। অথচ তুমি সেই সোনার জন্য লালায়িত। আগে সোনা আর মাটিকে একই জ্ঞান করতে শিখ- তারপর তুমি মানুষের জন্য জীবনব্যবস্থা দেওয়ার, তাদের নিয়ম তৈরি করে দেওয়ার কথা কল্পনা করো। তুমি ক্রোধের উর্ধ্বে উঠতে শেখ, সমালোচনা সহ্য করার শক্তি করায়ত্ব করো, অপরের ধন কুক্ষিগত করার মানসিকতা ত্যাগ করো। সাদায় কালোতে, ভৌগোলিক পার্থক্যের ব্যবধান ইত্যাদি ভুলতে শেখ। সকল মানুষই তোমারই মত অনুভূতিপ্রবণ এটা মানতে শেখ। দুটো চোখ দিয়ে সমানভাবে দেখতে শেখ। নিজের জিনিস আর পরের জিনিস এই ভাবনা ঘোঁচাও। এরপরে তুমি মানুষের জন্য নিয়ম তৈরির করার কথা ভাবতে এসো। সামান্য এই গুণগুলো অর্জন করার আগে তোমার কোন কথাই বলা উচিত নয়। তারপরেও যদি তাই করো তবে তা তোমার ধৃষ্টতা, মূর্খতা। তুমি অযোগ্য, ব্যর্থ।