সকাল থেকেই মেজাজটা হালকা খারাপ আমার এক কাজিনের বাসায় দাওয়াত। যেতে হবে এটা ভেবেই বিরক্ত লাগছে। ছোটবেলাতে আমার চাচা ফুপুরা আসলেই ওই কাজিনের বাসায় আমরা যেতাম। উনার বাসাটা ছিল খালিশপুরের একটা জুট মিলের পাশে। তখন ক্লাস ফোর ফাইভে পড়ি আমি আর আমার বড়বোন তার থেকে ৩ ক্লাস উপরে। ওই কাজিনের ছেলেমেয়েরা ছিল আমাদের বয়সী। সেই সময় ওখানে গেলেই আশেপাশের কিছু বাজে ছেলে আজেবাজে কথা বলতো আমি ছোট ছিলাম অত বুঝতাম না তবে বুবু একটু একটু বুঝতো এরপর আমরা ওখানে যাওয়া ছেড়ে দিলাম। এখন বড় হয়েছি এসব ব্যাপার ঠিক আগের মত লাগে না। কেউ আর তেমন কিছুই বলে না তবুও ছোটবেলার ভীতি টা যেন ছাড়ে নি।
সাইকেল চালাতে খুবই ভালবাসতাম আমি। বাসার মধ্যে আর কত চালানো যায় তাই আমি আর বান্ধবী একসাথে রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালাতাম মাঝে মাঝে। তখন সিক্স সেভেনে পড়তাম। ২/৪ দিন চালানোর পর দেখলাম কিছু বাজে ছেলে আজেবাজে কথা বলছে। একবার এক রিক্সাওয়ালা আমার সাইকেলে ধাক্বা মেরেছিলো আমি ড্রেনে পড়ে গেছিলাম। এরপর আর রাস্তা দিয়ে সাইকেল দিয়ে আমার চালানো হয় নি।
একবার আমি আর আমার বান্ধবী সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে গেলাম সেখানে ৪/৫টা ছেলে উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করলো। আমরা উপরতলা থেকে নিচ তলায় ক্লাসের ছেলেদের পাশে যেয়ে বসলাম ওরা সেখানেও তারা এসে হাজির! আমরা নিচের তলায় আমার ডিসিপ্লিনে চলে আসলাম।
খেলার মাঠে এইবার জুনিয়র মেয়েরা এসে নালিশ করলো আপু মেয়েদের আনেক নোংরা কথা বলেছে। আমি ছেলেগুলোকে বললাম তোরা কি করিস! তারা বলে আপু মাইর দিতাম খালি স্যারদের জন্য পারি নাই।
জুনিয়রদের কথা মনে করে আরেকটা ঘটনা মনে পড়লো। এক জুনিয়র ছেলে তার মেয়ে ক্লাসমেটের সাথে ল্যাবে বাজে আচরণ করলে ওই মেয়ে হেডের কাছে নালিশ করতে গেলে তাকে উল্টা সকলের কাছে উল্টা কথা শুনতে হয়েছিলো। ওই ছেলে একসময় আমাকেও ফোন করতো যাতে ওই মেয়েকে আমি তার জন্য ফুসলাই! যাই হোক ওই ছেলে তার দোষ স্বীকার করে নিয়েছিল বলেই তার শাস্তি হয়েছিল! এক টার্ম সাসপেন্ড! ভাগ্যিস স্বীকার করেছিল! নয়তো কি হতো! ওই মেয়ে ১বছর মাকে সাথে নিয়ে ভার্সিটি করলো এই তার লাভ। আর ওই বেহায়া ইতরটা দিব্যি হেসেখেলে বেড়াচ্ছে। সেদিন গদগদ হয়ে আমাকে বলল, আপু আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ঘৃণা করো তাই তোমাকে কেমন আছ জিজ্ঞেস করবো না।
আমি যেখানে ইন্টার্নী করতাম ওখানে একদিন ২টা মেয়ে আসলো সাজপোশাক একটু উদ্ভট। তাদের দেখে এক লোক তাদের সামনেই কমেন্ট করলো, পপলু ভাই ২টা গরু কিনেছে কোরবানী দিবে ২লাখ টাকা দাম। এই কথা শুনে আরেক লোক বলল, অমুক তুমি যে কি বলো! (একটু উস্কানি দেয়া আরকি!) এইবার ২জন মিলে চরম হাসি তামাশা।
মাঝে আমাদের ইউনিভার্সিটিতে ইকোনোমিক্স ডিসিপ্লিনের একটা ঘটনা বেশ আলোচিত হয়েছিল। এক ছেলের সাথে এক মেয়ের প্রেম ছিল কোন কারণে ভেংগে গেছিলো ওই ছেলে ধানক্ষেতে বর্ষাকালে জমে থাকা পানিতে চুবিয়েছিলো ওই মেয়েকে। লোক জড়ো হয়ে যাবার পরও তার বিকার নেই।
নতুন একটা আইন নিয়ে আজকাল সবার মুখে মুখে আলোচনা চলছে। একটা পয়েন্ট আছে, রাস্তা দিয়ে অচেনা মেয়েদের দিকে তাকানো যাবে না সহ আরো বেশ কিছু হাস্যকর টাইপ পয়েন্ট দেখলাম। একটা সিরিয়াস বিষয়ের সাথে এ ধরনের পয়েন্ট যোগ করে গুরুতর অপরাধগুলোকে হালকা করে ফেলা হয়েছে বলেই আমার মনে হয়েছে। যদিও এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। আজকে স্টিকি হওয়া পোস্টটা পড়ে আজকে খুবই হতাশ হলাম। একটা ইউনিভার্সিটিতে মেয়েরা যদি এতই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তাহলে আর কিছু বলার থাকে না। রাস্তা দিয়ে যাবার সময় এমন কোন মেয়ে নেই যে কখনও বাজে উক্তি শোনেনি যেমন পাওয়া যাবে না ঠিক তেমনি ২/৪ ছেলের ডিস্টার্ব সহ্য করে নি এমন মেয়েও পাওয়া যাবে না। এমনও দেখেছি ল্যান্ডফোনে অনেক ডিস্টার্ব করার জন্য ফোনের লাইন খুলে মাসের পর মাস রেখেছে নয়তো ফোন করেই নোংরা গালিগালাজ শুরু করে........................এগুলো বলে আসলে কখনওই শেষ করা যাবে না।
এই বিষয় নিয়ে যখন কোন পোস্ট বা লেখা কেউ পড়ে তখন সবার বিবেক জেগে ওঠে। কিন্তু ব্যস ওই পর্যন্তই। এই অকাজ গুলো তো আমাদের সামনেই হয় আমরা কয়জন প্রতিবাদ করি! আমি এমন মেয়েদেরও দেখেছি তারা তাদের বন্ধুদের সাথে তাল দিতে অন্য মেয়েদের বাজে কথা বলতে বিরত থাকে না। আমরা নিজেই হয়তো এই কাজটা করি কিন্তু যখন করি নিজেদের জন্য যেহেতু ফান তাই খেয়ালই করি না এটা অন্যের জন্য পীড়াদায়ক (এক্সট্রিম ব্যাপারগুলো বাদে)। আমাদের সকলেরই উচিত একটু সচেতন হওয়া। তবু আমরা আশা করি একদিন এ সমস্ত বিব্রতিকর অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পাবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:১৮