আমরা বলি সময় বদলায়। আসলেই কি সময় বদলে যায়? পৃথিবীর সুচনালগ্ন থেকে কিংবা তারও বহুকাল আগে থেকে সময় তো তার আপন গতিতে স্রোতস্বীনি নদীর মত বয়েই চলেছে। বরং সে তার অবিরাম চলার পথে আমাদের চারপাশের এই চেনা পৃথিবীটাকে কি অদ্ভুতভাবে বদলে দিয়ে যায়! বদলে যাই আমি, বদলে যাও তুমি, বদলে যায় চেনা মুখের মানুষগুলো। বহুদিনের চেনা মুখগুলো হঠাৎ করেই কেমন মুখোশ হয়ে যায়, অচেনা লাগে সবকিছু। আবার শত অচেনার ভীড় ঠেলে উঠে আসো তুমি। এতোদিনের অচেনা তুমি সময়ের যাদু-স্পর্শে হয়ে যাও চিরচেনা আপনজন। এই চেনা-অচেনার দোলাচল থেকে বাইরে এসে গড়ে উঠে এক নতুন পৃথিবী। সেখানে প্রাণে প্রাণে স্পন্দন খেলে যায় প্রতিক্ষন। সৃষ্টি হয় নতুন প্রানের। সত্যিই কি অদ্ভুত এই সময়, না? কি অদ্ভুত সুন্দর তার বয়ে চলা!
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সময়ের স্রোতের উল্টো বেয়ে দেখে আসি ফেলে আসা ভুবনটাকে, ভুলে থাকা জীবনটাকে। অতীতের স্মৃতিরা ভীড় করে মনের বাতয়নে। মনের কোণে উঁকি দিয়ে যায় চেনা-অচেনা মুখগুলো। সময়ের ছুটে চলায় কত স্মৃতিতে ধুলো পড়ে ঝাপসা হয়ে যায়, কত স্মৃতি আবার জ্বল জ্বল করে জ্বলে উঠে উজ্বল দিনের মত।
স্মৃতির অ্যালবামে ফিরে তাকালে মনে হয় এই তো সেদিন আমাদের দুই ভাই-বোনের পরে শিলা আসল আমাদের পরিবারে। এখন আমরা তিন ভাই-বোন। কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি মজা করে বলি, আমার কোন ভাই নাই, তবে আমার দুই বোনের একটা ভাই আছে। কেউ কেউ না বুঝে হা করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, তখন খুব মজা লাগে। শিলা আসার আগেও আমি জানতাম না কিভাবে একটা বাচ্চাকে কোলে রাখতে হয়। আমিও তখন হয়ত ছোট ছিলাম, তাই মনে হত এতটুকু মানুষকে কোলে রাখে কিভাবে! শিলাই আমাকে প্রথম শেখালো কিভাবে ছোট বাচ্চাকে কোলে রাখতে হয়, আদর করতে হয়। ওকে দেখলেই মনের ভেতর কেমন মায়া জেগে ওঠে, কোলে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে।
স্মৃতিগুলো কেমন সুর্য্যের আলোর মতো জ্বল জ্বলে হয়ে আছে, আবার সুর্য্যের আলোর মত তাপদাহ নেই, আছে কোমলতা, স্নিগ্ধতা। যেমন স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে থাকত শিলার ওই ছোট্ট মুখটাতে। আমার সাথে ওর খুব ভাব। সবসময় দাদাভাই দাদাভাই বলে পেছন পেছন থাকবে। আমিও দুরে গেলে ওর জন্য মনটা কেমন করত। এতো খারাপ লাগত! সেই বোনটা আমার এখন অনেক বড় হয়ে গেছে, অথচ কখন কিভাবে বড় হলো টেরই পেলাম না।
দুবছর আগে হঠাৎ শুনলাম শিলা তার পছন্দের একটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছে। আমাদের সকলের আদরে ও কিছুটা জেদী হয়ে উঠেছিল জানতাম, কিন্তু এতোটা সাহসী তা জানতাম না। বরং কিছুটা ভিতু ছিল বলেই মনে হতো। ওর ছিল ভুতের ভয়। সন্ধ্যাবেলাতেও একা একা কোন রুমে যেতে পারতো না, ঘরে গিয়ে একা পড়তে বসত না। আমার মনে আছে, একদিন সন্ধ্যাবেলা ওকে ডেকে বললাম, আচ্ছা আপু ধরো এখন একটা ভুত ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, তাতে আমাদের ভয় পাওয়ার কি আছে, বলো। ও বলল, দাদাভাই, আম্মা ডাকছে, যাই - বলে চলে গেল। আমি কোথায় তাকে একটু সাহস দিতে চাইলাম, সে ভয় পেয়ে চলেই গেল।
আমার সেই ছোট্ট আদরের বোনটা কখন বড় হয়ে গেল টেরই পেলাম না। কখন বড় হয়ে সে মা ও হয়ে গেল। গতকাল রাতে সে একটা ফুটফুটে ছেলের মা হয়েছে। আমার কেমন লাগা উচিত, বলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১২ রাত ৩:৪৭