somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মদিনের উপহার

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১০ জুলাই ২০১৪ বৃহস্পতিবার। রাত ১০টার কাছাকাছি। এখনো কমে নি শহরের ব্যস্ততা। চারদিকে জীবনের স্রোত অবিরাম বয়ে ছলছে তার আপন গতিতে। রাস্তাগুলোতে তখনো কমে নি পথচারী, যানবাহন আর হকারদের চাঞ্চল্য। সাধারণত এ সময়টায় শহর বেশ খানিকটা ঝিমিয়ে পড়ে। কিন্তু সামনে ঈদ। চলছে তার কেনাকাটা, বেচাবিক্রি। এ জন্য এখন আর রাত আটটায় দোকানপাট বন্ধ করার বাধ্যবাধকতা নেই। বিচ্ছিন্ন করা হয় না বিদ্যুৎ সংযোগও। ফলে বেশ রাত পর্যন্ত দোকানে দোকানে চলে ক্রেতা বিক্রেতার দর কষাকষি। অন্যান্য এলাকার তুলনায় নিউ মার্কেট এলাকায় এই প্রাণচাঞ্চল্য কিছুটা বেশিই লক্ষ্য করা যায়।
নিউ মার্কেটটের একটি দশ তলা বাড়ির পাঁচ তলার একটি বেলকনিতে রেলিংয়ের পাশে একটি হাতলবিহীন চেয়ারে বসে উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মৃদুলা। শুক্লা দ্বাদশীর ঝলমলে চাঁদের আলো তার চোখে মুখে পড়ে সৌন্দর্যের আভাটাকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। বর্ষাকাল। তবুও আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই।। কিন্তু মৃদুলার মনের আকাশটা বেদনার কালো মেঘে ঢাকা।
আজ ভোরে আর্জেন্টিনা ফুটবল দল বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেছে। সমর্থকরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে। মৃদুলা আর্জেন্টিনার পুরোদস্তুর সমর্থক। সে হিসেবে তার মন আনন্দে পূর্ণ থাকার কথা। কিন্তু তাতো নয়ই, সারাদিন কারো সাথে একটা কথাও বলেছে কিনা মনে পড়ে না। সেহ্রির পর যন্ত্রের মতো কিছুক্ষণ টিভি সেটের সামনে বসে ছিলো। অতিরিক্ত সময়ের খেলা যখন শুরু হলো, তখন আর ধৈর্য থাকে নি। রিমোটের বোতাম চেপে নীরবে টিভি বন্ধ করে উঠে গেছে। আজ তার জন্মদিন।
কারো মোবাইল থেকে শুভেচ্ছা বার্তা আসে নি। কোনো ফুল নয়, এমনকি কারো কারো কাছ থেকে ‘শুভ জন্মদিন’ বাক্যটাও শুনে নি। সে এসব প্রত্যাশাও করে নি। পৃথিবীতে সবার সবকিছু প্রত্যাশা করতে নেই।
সারাদিন তার শুধু শৈশব আর কৈশোরের কথাই মনে পড়েছে। জীবনের বাইশটা বছর কী করে পার করেছে, তার টুকরো টুকরো স্মৃতি মনের পর্দায় বারবার ফ্ল্যাশব্যাকের মতো ভেসে উঠছে। কেন তার জীবনটা এমন হলো- কার কাছে করবে সে এই প্রশ্ন! জীবনের ষোলোটি বছর কেটেছে গ্রামে। পরমানন্দে। বাবা মার একমাত্র সন্তান সে। তার জন্ম শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার কোনো এক গ্রামে। দাদা দাদী অনেক আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন।
পৃথিবতে সুখী হতে চাইলে রাজ্য, রাজত্ব, বাদশাহী প্রয়োজন হয় না; কুঁড়েঘরেও শান্তি মেলে। মা বাবার ছোট সংসারে অভাব অনটন ছিলো, কিন্তু শান্তির ঘাটতি ছিলো না। বাবা আবদুল করিম ভোরবেলা মাঠের কাজে বাইরে যেতো, মা সারাদিন ঘরের কাজ আর হাঁস-মুরগি-ছাগলগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। দিন শেষে বাবা যখন ঘরে ফিরতো, পাতে শাকান্ন সাজিয়ে দিয়ে মায়ের যারপরনাই আনন্দ হতো। যদিও মৃদুলা তখনো বেশ ছোটো, গ্রামের হাইস্কুলে সবে এক ক্লাশ ডিঙিয়েছে, তবুও সবই বুঝতো সে।
ছাত্রী হিসেবে সে যে খুব ভালো ছিলো, তা নয়। টেনেটুনে পাশ করতো। তার অশিক্ষিত বাবা বিষয়গুলো খুব ভালো বুঝে উঠতে পারতো না। স্কুল-শিক্ষকদের পথে প্রান্তরে, মাঠে ঘাটে যেখানেই দেখা পেতো, বারবার করে জিজ্ঞেস করতো, ‘মাশ্টর শাব, আমার মেয়াডা লেহাপরায় কিরূম, কী বুজুইন? পরাইয়াম, না বন্দ কইরা দিয়াম?’ পড়ালেখা বন্ধ করার কথা শুনলে কোনো শিক্ষক কোনোকালেই তা সমর্থন করেন না; করবেনও না কোনোদিন। তাই মিথ্যা করে হলেও শিক্ষকেরা বলতো, ‘না, বন্দ করবি ক্যা? তর মেয়ার মাতা বালা, পরা’। খুশিতে গদগদ হয়ে বাড়ি ফিরতো আবদুল করিম। স্ত্রীকে ডেকে একটু বাড়িয়েই বলতো, ‘হুনছ রহিমা, মাশ্টর শাব কইছে আংগর মিদু নাকি বর (বড়) অইয়া ম্যালা বর উকিল অইবো’। সে ভাবতো উকালতি হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু আর সম্মানের পেশা।
আবদুল করিম ‘মৃদুলা’র ঋ-কার উচ্চারণ করতে পারতো না। ডাকতো ‘মিদু’ বলে। নামটা যখন পাশের গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিপ্রার কাছ থেকে তার মা পছন্দ করে রেখেছিলো, তখনই আবদুল করিমের পছন্দ হয় নি। কিন্তু শিক্ষিত একজন মেয়ের দেয়া নাম সে পাল্টাবারও সাহস করে নি। নামটাকে তার কেমন যেন ‘হিন্দু হিন্দু’ মনে হতো। মনে মনে সে শিপ্রাকে গালি দিতো আর বলতো, ‘বদমাইশ ছেরি আমার মেয়ার নাম দিছে! নামের ছিরি দ্যাহ! যেরূম অর নিজের নাম, ওরূম নাম রাকছে আমার মেয়ার’। ২০০৭ সালে মৃদুলা যখন নবম শ্রেণিতে পড়ে, তার বাবা এমনই এক বর্ষাকালে মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যায়। তখন থেকেই পরিবারের বিপর্যয় শুরু হয়।
ভিটেমাটি ছাড়া কোনো জমি ছিলো না আবদুল করিমের। অভবের সংসারে ছিলো না কোনো সঞ্চয়ও। ধার দেনা করে আর অন্যের দানে সংসার কদিন চলে! আর পুরুষ শাসিত সমাজে মানুষ এমন যুবতী বিধবা ও তার সপ্তদশী মেয়েকে কেউ যখন নির্দ্বিধায় ধার দেয়, এবং মাসের পর মাস গেলেও তা ফেরত চাওয়োর নাম করে না, তখন বুঝতে হবে তার নিশ্চয়ই কোনো দূরভিসন্ধি আছে। পাশের বাড়ির প্রয়াত মনু মোল্লার ছেলে রহিম মোল্লাও তাদের ধার দেনা দিতে দ্বিধা করতো না। অবরে সবরে করতো অন্য রকম ইঙ্গিত। বলতো, ‘বুজলা রহিমা, ট্যাহা-পয়সা অইলো আতের ময়লা। আইজ আছে কাইল নাই। এইগুলা আমার টাইন (কাছে) কুন ব্যাপার না। যহন যা লাগবো, চাইবা, নিবা- শরম লয়জ্জা কইর না। আর তুমি আর আমিত, মন কর, পির্তক (পৃথক) না। দ্যাহ না তুমারে আমার লগে কী সুন্দর মানায়! তুমার নামডার লগেও আমার নামডার কী সুন্দর মিল’! বলে পান-খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসতো।
ওদিকে সপ্তদশী মেয়ের প্রতিও বখাটেরা কুদৃষ্টি দিতো। দিনে দিনে তাদের উৎপাত-অত্যাচার মাত্রা ছাড়াতে লাগলো। চেয়ারম্যান আর রহিম মোল্লার কাছে একাধিকবার বিচার দিয়েও তার সুরাহা হয় নি। সরিষার ভেতর ভূত থাকলে, ভূত তাড়াবে কিসে! অন্যের বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্টে সে সংসার আর মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতো।
এলাকাবাসীর মানসিক নির্যাতন, বখাটেদের উৎপাত, অত্যধিক শারীরিক শ্রম আর দুশ্চিন্তায় রহিমার শরীর ভেঙে যেতে লাগলো। অবশেষে তার এক দূর সম্পর্কের প্রবীণ আত্মীয়, আবদুল কদ্দুস, যাকে এলাকাবাসী কদু বলে ডাকে, বুদ্ধি দিলো, ‘রহিমা, মেয়াডারে লইয়া, এ্যামনে আর কয়দিন চলবি? অরে বিয়া-শাদী কিছু দে; দিয়া তুই ডাকা (ঢাকা) যাগা। এ্যাক প্যাট আল্লাই চালাইবো। মুক যহন আল্লায় দিছে, না খাওয়াইয়া মারতো না’।
কদুর দ্বিতীয় বুদ্ধিটা রহিমার ভালো লাগলো। কিন্তু মেয়েকে বিয়ে দিতে সে রাজি হলো না। সে ভাবলো পড়ালেখা না করতে পেরে সে তার নিজের জীবনটাকে নষ্ট করেছে। মেয়ের জীবনটা সে নষ্ট হতে দেবে না। একদিন মেয়েকে নিয়ে সে সম্পূর্ণ অচেনা শহর ঢাকার দিকে অনিশ্চিত গন্তব্যে পা বাড়ালো।


ইট-কাঠ-পাথরে গড়া ঢাকা নগরী ইট-কাঠের মতোই কর্কশ, কঠিন, নিষ্ঠুর নির্মম। এখানে হাত আছে আদর নেই, অন্তর আছে আন্তরিকতা নেই। এর বাইরে যতটাই সুন্দর, ভেতরে এর ততটাই কুৎসিত, আড়ালে ততটাই বিকৃত। বিচিত্রমুখি ব্যস্ততায় ব্যস্ত সবাই। কারো দিকে কারো তাকাবার, কারো জন্য কারো ভাববার কোনোই অবকাশ নেই। সবাই এখানে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
রহিমা যেখানেই ইচ্ছা থাকতে পারতো; কিন্তু সমস্যা হলো মৃদুলাকে নিয়ে। এই বয়সের একটা মেয়েকে নিয়ে এ শহরে ভদ্রভাবে থাকতে গেলে যে টাকায় বাসা ভাড়া নিতে হয় সেটা রহিমা কোনোদিন কল্পনাতেও আনতে পারে নি। অবশেষে তাদের ঠাঁই হলো মিরপুর ১৪ নম্বরের এক বস্তিতে। বস্তিরই এক লোকের মাধ্যমে রহিমা কাজ পেলো এক সাবান কারখানায়। সে মৃদুলাকে কাজ করতে দিতো না। বলতো, ‘তুই সারা বেইল গরও বইয়া বইয়া বই পরবি; পরীক্ষার সোম (সময়) তর ইস্কুলও লইয়া যাইয়া পরীক্ষা দেওয়াইয়া লইয়া আইয়াম’।
কর্মসূত্রে রহিমার পরিচয় ঘটেছে সাফু নামে যশোরের এক লোকের সাথে। সাফু কারখানার মালিকের কী যেন হয়, রহিমা বলতে পারে না। শুধু জানে সে অনেক টাকা বেতনের চাকরি করে। প্রচুর টাকা পয়সার মালিক। ঢাকায় কয়েকটা বহুতল বাড়ি আছে। অসাধারণ ভালো এই লোকটা। এত বড়লোক হওয়া সত্ত্বেও এক বিন্দু অহংকার নেই। কারো সাথে কোনো মন কষাকষি নেই। কারখানার ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে বস পর্যন্ত সবার সাথেই অমায়িক ব্যবহার তার। সব সময়ই হাসি মুখে কথা বলে। সবার সুখে দুঃখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে। কোনো বিষয়েই নেই উচ্চবাচ্য। সব সমস্যার সমাধান করে ঠাণ্ডা মাথায়। রহিমার মনে হয় এর চেয়ে ভালো মনের, জ্ঞানী, সুখী, পরোপকারী, বিচক্ষণ মানুষ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। রহিমাকে সে ‘বোন’ বলে ডাকে। রহিমা মনে মনে ভাবে, লোকটা হয়তো মানুষ না, আল্লাহ প্রেরিত দেবতা। মাঝে মাঝে সে মেয়েকে বলতো, ‘দ্যাকছছ্রে মা, এত বরলুক! এট্টুও অহংকার নাই। কী বালা মানুষটা! মনও অয় সাক্ষাত দেব্তা।
সাফু প্রায়ই তার ‘স্বর্গীয় রাজপ্রাসাদ’ ছেড়ে কারখানার কর্মীদের বস্তির নোংরা বাড়িতে খোঁজ খবর নিতে যেতো। তাদের অভাব অনটন, দুঃখ সুখের কথা মন দিয়ে শুনতো, এবং সাধ্যের মধ্যে যা কিছু, সেসবের সমাধান দিত। মৃদুলাকে সে স্কুলে ভর্তি করে দেবে বলে আশ্বাস দিলো। তখন অজান্তেই রহিমার চোখ লোনা জলে ভরে এলো। ভক্তি আর শ্রদ্ধায় লোকটাকে তার পূজা করতে ইচ্ছে করলো।


মৃদুলার জীবনের দ্বিতীয় ধাক্কা আসে তাদের ঢাকায় আসার দ্বিতীয় বছরের শেষ দিকে। কারখানার মেশিনে চাপা পড়ে মৃদুলার মায়ের মৃত্যু হয়। সাফু মৃদুলাকে নিয়ে আসে নিজ বাসায়। স্কুলে ভর্তি করতে একদিন তাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। নিয়ে আসে, আজকে মৃদুলা যে-বাসায় আছে, এই ঠিকানায়। এই দশতলা বাসার পঞ্চম তলা পুরোটাতেই মৃদুলারা থাকে। ‘মৃদুলারা’ শব্দটা ব্যবহার করলাম এই জন্য যে, এই তলায় মৃদুলা একা থাকে না। থাকে আরেক মহিলার সাথে। এই মহিলাকে সাফু নিজের ‘বোন’ বলে মৃদুলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সাফুর এই বোনেরও আছে এক মেয়ে। প্রায় মৃদুলারই সমবয়স্ক। হয়তোবা তার চেয়ে দুই এক বছরের ছোট হবে সে। নাম মিম। সে এবার নবম শ্রেণিতে পড়ে। সাফু মৃদুলাকে মিমের স্কুলেই ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। স্কুলে ভর্তির দিনটাও ছিলো ১০ জুলাই। ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়ে সাফু মৃদুলার জন্ম তারিখের মিল পেলো দিনটার সাথে। বাসায় ফিরে সে মহা ধুমধামে মৃদুলার জন্মদিন পালনের আয়োজন করলো। তাকে বাজারে নিয়ে গিয়ে পছন্দ মতো জামা কিনে দিলো, ঘর সাজানোর জন্য শাহবাগ থেকে কিনে আনলো ফুল। অর্ডার দিয়ে এলো মস্ত এক বার্থডে-কেক। চার জনের এই পরিবারেও আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে পার্টি, কেক কাটাকাটিসহ হাজার রকমের আয়োজন হয়ে গেলো। মৃদুলা কখনো ভাবতেও পারে নি যে, একদিন টেলিভিশনে-দেখা জন্মদিনের অনুষ্ঠানের মতো, জন্মদিন উদ্যাপন তার জীবনেও কোনোদিন আসবে। নিজেকে তার পৃথিবীর সবার চেয়ে সুখী মনে হলো। এমনকি মায়ের মৃত্যুশোক, যেটা তার মনে জগদ্দল পাথরের মতো বসে গিয়েছিলো, সেদিনের জন্য সেটাও সে ভুলে গেলো। সেটাই তার জীবনের প্রথম এবং হয়তো শেষ জন্মদিনের অনুষ্ঠান।
মিম আর মৃদুলা একটা কক্ষেই থাকতো। রাত জেগে পড়ার অভ্যাস ছিলো মিমের। স্কুল থেকে ফিরে সে সারাদিন ঘুমাতো আর গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশুনা করতো। মৃদুলার অভ্যাস ছিলো তার সম্পূর্ণ উল্টো। দিনের বেলা সে পড়ালেখা করতো, রাত খানিকটা হলেই ঘুমাতে যেতো। ফলে দরজার ছিটকিনি তাকে কখনোই আটকাতে হতো না। মিমই শোবার আগে বন্ধ করে দিতো।
একদিন মিমদের গ্রামের বাড়ি থেকে তার দাদার মৃত্যু-সংবাদ এলো। তড়িঘড়ি করে মিম আর তার মা বাড়ি চলে গেলো। মৃদুলাকে বাসায় একলা রেখে যাওয়া যায় না বলে যাবার আগে মিমের মা সাফুকে খবর দিয়ে গেলো। মৃদুলার একবারের জন্যও মনে কোনো সংশয়ও উপস্থিত হলো না যে, সে বাসায় একলা একটা মেয়ে। তার কোনো সমস্যা হতে পারে। বিশ্বাসের জল যেখানে এত গভীর, সেখানে সন্দেহের বালি চর জাগাবে কী করে? অধিকন্তু প্রতিদিনের অনভ্যাসবশতই সে দরজার ছিটকিনি না লাগিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।
রাত কতটুকু গভীর তা তার জানবার কথা নয়। শরীরে কারো হাতের স্পর্শে হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে গেলো। সহসা সে ছিু বুঝতে না পেরে বলে উঠলো, ‘মামা... মামা, এসব কী করছেন’! বিপরীত পক্ষে কোনো উত্তর নেই। ডিম লাইটের মৃদু আলোতে শুধু সে অনুভব করলো আজন্ম-ক্ষুধার্ত কোনো সিংহের মতো দুটো হাত যেন তাকে দলিত মথিত করে, দুমড়ে মুচড়ে গ্রাস করতে চাইছে। শরীরের সমস্ত শক্তি দুহাতে প্রয়োগ করেও মৃদুলা এই মহা শক্তিধর দেবতাকে তার বুকের ওপর থেকে সরাতে পারলো না।
যখন জ্ঞান ফিরলো, তখন সবশেষ। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ।
মিমরা বাড়ি থেকে ফিরলো ঠিক একচল্লিশ দিনের মাথায়। এর মধ্যে মৃদুলার ওপর দিয়ে অনেক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসই বয়ে গেছে।


এখন মৃদুলা সাফুর টাকা বানানোর মেশিন। এই কয়েক বছরে সাফুর মতো অনেক ‘দেবতা’কেই দেখেছে, চিনেছে সে। তারা হয়তো বাইরের সমাজে মানুষের চোখে দেবতাই।
আজকের এই রাতও উদ্ভাসিত চাঁদের আলোতে। আজো তার জন্মদিন। কোনো উৎসব-আয়োজন-অনুষ্ঠান নেই। তারপরও হয়তো এসে হাজির হবে কোনো ‘দেবতা’। দেবে তার জন্মদিনের উপহার। টাকা!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×