somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভেতর বাহির

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক
সন্ধ্যা সাতটা সোয়া সাতটা হবে হয়তো। বাসার মূল ফটকে কড়া নাড়ার শব্দ। শব্দটা শুনেই বুঝতে পারলাম অপরিচিত কেউ। কারণ, এ তল্লাটে পরিচিত এমন কেউ নেই যে এতো ভদ্রভাবে, মৃদু মৃদু কড়া নেড়ে গেট খুলতে বলবে। সবাই এসে এতো দ্রুত আর এতো জোরে কড়াঘাত করতে থাকে, মনে হয় বাংলা সিনেমার নায়িকাদের হয়তো খলনায়ক তাড়া করছে; মুহূর্তক্ষণ বিলম্ব হলেই যেনো তার ইজ্জত-সম্ভ্রম সব লুটে নিয়ে যাবে খলনায়কের দল। ঘর থেকে বের হয়ে, আধা মিনিট সময়ে কেউ যে দরোজাটা খুলে দেবে, এই দেরিটুকুও সয়না। বাসাওয়ালার মেয়েরা পর্যন্তও একই আচরণ করে। আসলে তাদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। এ শিক্ষাটুকুর জন্য শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়; এর বাইরেও আলাদা শিক্ষা ও নাগরিক জ্ঞান দরকার, যা বাড়ির বাইরে, শহুরে পরিবেশে না থাকলে হয়না।
দরোজার এ পাশ থেকে নাম জিজ্ঞেস করে জানলাম মাঈনুদ্দিন নামের এক ভদ্রলোক। এসেছেন বাসা ভাড়ার খোঁজে। জানি, আমাদের এখানটায় ভাড়া দেবার মতো কক্ষ বা ইউনিট খালি নেই, তবুও ভদ্রলোককে ‘না’ বললাম না। উল্টো ভেতরে আসতে বললাম। আমার স্ত্রী, কণা এবং আমার আপা, দুজনেই জানতে চাইলেন কক্ষ খালি না থাকাতেও কেনো ভদ্রলোককে ভেতরে আসতে বলছিলাম। আমি বললাম, ‘আসুক এমনিতেই; দেখে যাক। আমাদের ইউনিটটা যদি ভদ্রলোকের পছন্দ হয়, তাহলে এটা ছেড়ে দিয়ে আমি একটু কম খরচের মধ্যে বাসা নিতে চেষ্টা করবো’। যদিও কথাটা আমি মাসের প্রথম দিন থেকেই বলছিলাম, কেউ আমার কথাটা সেভাবে কানে তোলেনি। আবার আমিও যে খুব জোর দিয়ে কথাটা বলেছি, সেটাও নয়। তাই, বিষয়টাকে তারা এতো গুরুত্বসহকারে ভাবার কথাও নয়। কিন্তু আমিই মনে মনে এর গুরুত্ব অনুধাবন করছিলাম। হরিপদ কেরানির যে-পঁচিশ টাকা বেতন, তাতে বাসা ভাড়া, ইউটিলিটি বিল দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। এদিক থেকে বাসাটা পাল্টানো আমার জন্য অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, আমার বাচ্চাটার কথা যখন চিন্তা করি, মনে হয়, তার জন্য হলেও আমার এই বাসাটায় থাকা উচিৎ। এ বাসার পরিবেশ এক কথায় খুবই ভালো। ভালো পরিবেশ ভালো মানুষ সৃষ্টিতে সহায়ক। মানুষের সামাজিকীকরণে, পরিবেশের ভূমিকা, মানব শরীরে এনজাইমের মতো কাজ করে। বিপরীতে যখন, আর্থিক সংকটের কথা ভাবি, তখন সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় করে উঠতে পারিনা।
ইতিমধ্যে দ্বিতীয় তলা থেকে বাড়িওয়ালা গলা বাড়িয়ে জানতে চাচ্ছিলেন, কে এবং কেনো এসেছে। আমি সংক্ষেপে জানালাম, বাসা ভাড়া দেয়া হবে কি না, সে খোঁজ নিতে এক ভদ্রলোক এসেছেন। আমার কথা শুনে, বাড়িওয়ালা একটু ব্যস্তসম্মত হয়েই নিচে নেমে এলেন। মাঈনুদ্দিন সাহেবকে যখন আমার কক্ষে নিয়ে যাচ্ছিলাম, বাড়িওয়ালা এসে বললেন, ‘আমার ত ভাড়া দেওয়ার মত রুম নাই, তুমি উনারে ডাইকা আনলা কেন?’ আমি বললাম, ‘দেখি আমার ইউনিট যদি পছন্দ হয়, তাহলে দিয়ে দেবো’।
-আর তুমি? বাড়িওয়ালার প্রশ্ন। আমি আরেকটু কম খরচের মধ্যে বাসা খুঁজবো। আমার এক লাইনের উত্তর।
-কেন? তুমি বাসা ছারবা কেন? কোনো সমস্যা?
-না, এমনিতে কোনো সমস্যা নেই। এই দেখেন না–– টাকা পয়সার টানাটানি। আমি আপনাকে হয়তো কালকে বাসা ভাড়া দেবার সময়ই বিষয়টা আপনাকে বলতাম...
-শহরে তুমি এই কনফিগারেশানের বাসা এর চেয়ে কম দামে কই পাবা? অবশ্য জানুয়ারি থেকে এক হাজার টাকা ভাড়া বাড়াবো।
বাড়িওয়ালার কথায় সত্যতা আছে। উনার বাসার সুযোগ-সুবিধার তুলনায় ভাড়া কম। পাঁচটি বিশাল বিশাল কক্ষ, দুটো সুপরিসর বারান্দা, দুটো বাথরুম, একটি রান্নাঘরসহ একদম খোলামেলা প্রাকৃতিক আলো-বাতাস, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে, রাস্তার পাশে অবস্থিত বাড়ির ভাড়া এতো কম হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অন্যভাবে চিন্তা করলে বাসা ভাড়া মোটেও কম নয়। বাসায় গ্যাসের লাইন নেই। বাসা ভাড়া ছ’ হাজার টাকার সাথে দুটো গ্যাসের বোতলের দাম যোগ করলে হয় সাড়ে আট হাজার টাকা। তার সাথে পানি আর বিদ্যুৎ বিল মিলে আরো হাজার দেড়েক। এভাবে সেভাবে খরচ পড়ে যায় দশ হাজার টাকা। আবার মফস্বল শহর হওয়াতে এখানে এক জনে ছ’ হাজার পরের কথা, চার বা পাঁচ হাজার টাকার ভাড়াটিয়া পাওয়াই কঠিন। সুতরাং বাজার চাহিদার কথা চিন্ত করলে, বাড়ি ভাড়া কোনো অংশেই কমনা। বাকি টাকায় চার পাঁচজন মানুষের পরিবার চালানো আমার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে।

দুই
মাঈনুদ্দিন সাহেবের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদরে। এলজিইডিতে ইঞ্জিয়ার পদে চাকরি করেন। বদলি হওযার সুবাদে তিনি এখন শেরপুরে পোস্টেড। এখনো বিয়ে-শাদী করেননি। উনার আরেক সহকর্মী, প্রতাপ কুমারের সাথে থাকেন। তারা দুজনই শেরপুরে নতুন বদলী হয়ে এসেছেন। দুজনেই নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন নভেম্বরের প্রথমদিন। আপাতত তারা আছেন, শেরপুর ডাক বাংলোর ভিআইপি অডিটোরিয়ামে। সেখানে তো আর বেশিদিন থাকা যাবে না। এ জন্যই বাসা ভাড়া খোঁজার এতো তাড়া।
বাসা দেখে তার পছন্দ হবে–– এর ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছিলাম। হলোও তা-ই। ভাড়া নিয়েও তার আপত্তি নেই। কিন্তু তার সমস্যা হলো- এতো বড় বাসা তাদের তো প্রয়োজন নেই। আর রক্ষণাবেক্ষণই বা করবে কে? তিনি আমাকে বলেছিলেন যেনো তাদের দুজনকে একটা কক্ষ সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিয়ে দিই। আমি রাজিও ছিলাম- এ প্রস্তাবে। কিন্তু বাড়িওয়ালা, আমার সাবলেট রাখার পক্ষে সম্মতি দিলেন না।
আমি আর মাঈনুদ্দিন সাহেব বাসা থেকে একই সাথে বের হলাম। দুজনেই বের হলাম বাসা ভাড়া খোঁজার তাগিদে। দুটো বাসা দেখার পর তৃতীয় বাসায় কড়া নাড়তে এক ভদ্র মহিলা গেট খুলে দিলেন। দরোজা খোলার পর আমি ও ভদ্রমহিলা দুজনেই রীতিমত অবাক হলাম। একই সাথে বলে উঠলাম, ‘আরে তুমি এখানে!’
আমাদের এই প্রতিক্রিয়া দেখে মাঈনুদ্দিন বললেন, ‘টুটুল ভাই কি চেনেন নাকি, ম্যাডামকে?’
হ্যাঁ, আমি তাকে চিনি। চিনি সেই ছোটোবেলা থেকে। শাহানা। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একসাথে পড়াশুনা করেছি আমরা। ছাত্রী হিসেবে ভালো ছিলো। এরপর শাহানা কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো, আমরা, ক্লাসমেটরা, কেউ জানিনা। আমরা অনুমান করে নিয়েছিলাম যে হয়তো ওর বিয়ে হয়ে থাকবে। সে তো সেই ১৯৯৭-৯৮ সালের কথা। এতোদিন পরে দেখা হলো বলেই আবেগের উচ্ছ্বাসটা একটু বেশি ছিলো। এতো দীর্ঘ বিরতির পর দেখা হলেও দুজনের কেউই কাউকে চিনতে ভুল করিনি। সেই চিকনা-পাতলা, রোগা-পটকা চেহারাটা এখনো একই রকম আছে।
ফেসবুক আসার পর একদিন হঠাৎ শাহানার ফেন্ড রিকুয়েস্ট। এরপর থেকে ফেসবুকে শাহানার সাথে মাঝে মাঝে কথাবার্তা হতো- চ্যাট করে। এখনো অবরে সবরে কথা হয়- মেসেঞ্জারে। কিন্তু এতোদিন কেউ কারো মোবাইল নাম্বার নিইনি, কথাও হয়নি।

তিন
পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যাওয়ায়, যে-উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলাম, সেটা অনেকটা ভুলেই গেলাম। মাঈনুদ্দিন মাঝে মধ্যে এটা সেটা বলে কথায় তাল মিলিয়ে যেতে লাগলেন।
এক ছেলে এক মেয়ের সুখের সংসার শাহানার। দু’ সন্তানের মধ্যে মেয়েটা বড়। এবার সে এসএসসি দেবে। আর ছেলে পড়ে ক্লাস সেভেন এ। ছোট বয়সে বিয়ে হয়েছিলো শাহানার। কিন্তু সে একেবারে বেকার সময় কাটায়নি। ওর স্বামী একটা ছোটোখাটো ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। ভীষণ রকম সাপোর্ট করে সে শাহানাকে। খুবই ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ সে। বিয়ের পর সব মেয়ের মতোই, তাকেও, শ্বশুর বাড়ির পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বেগ পেতে হয়েছে। এ কাজে তাকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে ওর হাজেব্যান্ড। তারই উৎসাহ আর সহায়তায়, শাহানা ইন্টারমিডেয়েট পাশ করেছে। চাকরিও করছে একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর এসবের জন্য স্বামীর প্রতি তার কৃতজ্ঞতারও অন্ত নেই। প্রায় এক ঘণ্টার গল্পগুজবে আর চা-আড্ডায় সবই বললো শাহানা।
‘এক্সকিউজ মি, টুটুল ভাই। আমাকে প্রতাপ দা ফোন করেছে, উঠতে হবে। কিছু মনে করবেননা, প্লিজ’। মাঈনুদ্দিন তার বেজে ওঠা ফোনটা দেখিয়ে বললেন।
–একটু বসুন না, আমিও বের হবো।
-আরে তুই আবার বের হবি কেনো! কথা আছে তোর সাথে। আরেকটু বসো। তোমার ভাইয়াও আইসা পরবো। তুই-তুমিতে জগাখিঁচুড়ি পাকিয়ে বললো শাহানা। আসলে স্কুল জীবনে আমার একে অপরকে ‘তুই’ করেই বলতাম। আমি মাঈনুদ্দিন সাহেবের দোহাই দিয়ে বললাম, ‘উনাকে একসাথে নিয়ে এসেছি। এখন উনাকে একা একা ছেড়ে দেয়াটা ভালো দেখায় না রে...’।
-আরে নাহ! তুই বস। মাঈনুদ্দিন ভাই, কিছু মনে কইরেননা। আমি টুটুলকে একটু পরে ছাড়ছি।
-না, আপা, কী যে বলেন! স্বভাবজাত মিষ্টি হেসে বললেন মাঈনুদ্দিন। বলতে বলতেই আবার মাঈনুদ্দিনের ফোন। এবার আর উনি কথা বাড়ালেননা। আমার মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে দ্রুত বিদায় নিলেন।

চার
গতকাল ফেসবুকে তর গল্প পড়লাম। তুই যে ঝগড়ার চরে চাকরি করস, এইডাও জানলাম ওইখান থাইক্কাই। মাঈনুদ্দিন বিদায় নেবার পর, শাহানা অনেকটা স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে। সাধু-চলিত-আঞ্চলিক সব ভাষার মিশ্রণে। আড়ষ্ট ভাবটা আর নেই।
-শুন টুটুল, তুমাদের মত অত পরাশুনা করি নাই। অত বেশি বুজিও না। তবে তুমার গল্প পইরা আমার কইল, একটা বিষয় খটকা লাগছে। সে আবার ‘তুই’ থেকে ‘তুমি’তে তালগোল পাকাচ্ছে। এবার আমি হাসি চেপে রাখতে পারলামনা। বললাম, এই তুই আগে ঠিক করতো, আমাকে ‘তুই’ করে, না ‘তুমি’ করে ডাকবি। তারপর কথা বল’।
-আচ্ছা যা! তুই, তুই, তুই, তুই। কয়েকবার প্র্যাকটিস করে নিলো সে।
-ঔকে, ঔকে। হয়েছে। এবার বল- কী নিয়ে তোর খটকা লাগলো?
-তাহলে শেষ লাইন থেকেই শুরু করি।
-শুরু-শেষ-মধ্যে যেখান থেকে ইচ্ছে। শুরু কর।
-আচ্ছা, তুই গল্পটা শেষ করলি “কুতুব সাধ্যমত চেষ্টা করে স্ত্রী-কন্যার চাহিদা পূরণ করতে। কিন্তু মাঝে মাঝে, জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে দাঁড়ায়”––এই লাইনদ দুইটা দিয়া।
-হুঁম।
-আইচ্ছা, কয়েক লাইন আগেই লেকলি, “অকারণ বাড়তি কোনো দাবি দাওয়া নেই। পড়শির সাধ-আহ্লাদ দেখে মিলির মধ্যে অনুকরণজনিত অভাবের তাড়না নেই। যেটুকু টানাপোড়েন আছে, সেটুকু কুতুব উদ্দিনের নিজেরই। আর্থিক টানাপোড়েন”। তাইলে এই লাইনের লগে তর শেষ লাইনের মিল কই?
-কেনো? অমিলটা কোথায় দেখলি? আর... তুই দেখি একেবারে দাঁড়ি কমাসহ মুখস্থ করে রেখেছিস। মানে, যুদ্ধ করার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েই রেখিছিলি।
-তর লগে দেহা না অইলে, আইজই রাইতে তরে মেসেঞ্জার লেকতাম সব। আইচ্ছা এইডা কিরূম যুক্তি তর! এট্টু আগেই কইলি, মাইয়াডার কুন বারতি দাবি-দাওয়া নাই, এট্টু পরেই আবার কইতাছছ জীবন কঠিনতর অইয়া উডে। কুতুব উদ্দি’র বউ কি এতই খারাপ যে অর জীবন কঠিন কইরা ফালাইতাছে?
-এই, শাহানা! তুইতো দেখছি সাহিত্যে অনেক উঁচু ডিগ্রিধারী ছাত্র-ছাত্রীকেও হার মানাবি রে...
আমাকে থামিয়ে শাহানা বললো, ‘বুজ্জি! আমার প্রশংসা বাদ দিয়া, আমার কতার উত্তর দে। আর তুই যে, এই কতাগুলা লেকলি, কুতুব উদ্দি’র বউ যুদি পরে, অর কী মনে অইব, ক ত!’
-ঠিক আছে, বুঝেছি। তুই অনেক বেশি সিরিয়াস হয়ে গেছিস। শোন্‌, তোর বোঝার মধ্যে একটু ত্রুটি আছে।
-কী––রূম? ‘কী’ শব্দটার ওপর একটু জোর দিয়ে সন্দিহান চোখে তাকালো শাহানা।
-আমার কথাগুলো দু’ মিনিট ধৈর্য ধরে শোনার আগ্রহ আছে তোর?
-আইচ্ছা, ক। কী বুল আছে আমার বুজার মদ্যে। শাহানা আমার কথা শুনতে পুরোদমে ব্যগ্র হয়ে বললো।
-তোর আর মিলি, মানে, কুতুব উদ্দিনের স্ত্রীর ভুলটা একই রকম।
-কেমনে!
-কেমনে না? সেটা বল। মিলি যেমন বিষয়ের ওজন ঠিকমতো বুঝতে পারেনা, তুইও পারলিনা। হালকা জিনিসকে ভারি ভাবলি, ভারি জিনিসকে হালকা করে দেখলি।
-বুজাইয়া ক দেহি।
-আরে! কয় বুঝাইয়া ক দেহি! শেষ লাইনে আমি কি বলেছি যে, মিলির জন্য কুতুবের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে? জীবন কঠিন হয়ে ওঠে বাস্তবতার চাবুকের নির্মম আঘাতে। আর্থিক অনটন, নিজের ভবিষ্যৎ, স্ত্রী-সন্তানের ভবিষ্যৎ, তার নিজের ব্যর্থতা- সব মিলিয়ে জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে ওঠে। আরে তুই না ইংরেজিতে ভালো ছিলি! এটাও কি বুঝলিনা যে, বাক্যটা প্যাসিভ ভয়েসে আছে, অ্যাক্টিভ ভয়েসে না?
শাহানা একদম চুপচাপ। বসে বসে মাথা ঝাঁকাচ্ছে। তার ঠোঁটের কোণে মিটিমিটি হাসি।
-আসলে রে! তর মাতাত মাল আছে। কত সহজ কইরা বুজাইয়া দিলি। আমিত এমনে চিন্তাই করছিনা। তর যুক্তি মানলাম। তাও একটা কতা কইল, তর মানুন লাগবোই।
-কী সেটা?
-মিলি যুদি গল্পডা পইরা থাহে, উ কইল মন করবো- অরে ছুডু কইরা গল্পডা লেকছছ।

পাঁচ
যখন শাহানার বাসা থেকে বের হলাম, মোবাইলের ঘড়িতে রাত পৌনে নয়টা বাজে। বাসায় ফিরতে ফিরতে শুধু শাহানার শেষ কথাটাই আমার কানে বাজতে লাগলো। ‘মিলি কিন্তু মনে করবে গল্পটা তাকে ছোটো করার জন্য লেখা হয়েছে’। সত্যিইতো! ছোটো-বড় প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই একটা ব্যক্তিসত্তা, আত্মমর্যাদা, মানসম্মানবোধ নিবিড়ভাবে নিবিদ্ধ থাকে। একেকজনের দুঃখবোধ একেক রকম। দুর্বলতাগুলোও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। এসব নিয়ে তারা নিজে থেকেই হীনমন্যতায় ভোগে। তার বাইরেও তাদের মর্মবেদনা, আবগে, দুঃখবোধ ও দুর্বলতাগুলো নিয়ে, কটাক্ষ কিংবা উপহাস; অথবা সত্য কথনই করা হোক না কেনো, সেটা তাদের মর্মমূলে আঘাত করে। সে-আঘাতে তারা কতোটা কষ্ট পায় বা পেতে পারে, কখনো, কোনোদিন, ভেতর থেকে ভেবে দেখিনি। দেখার চেষ্টাও করিনি। শুধু বাইরের দিকটাই লক্ষ করেছি।

আজ শুধুই মনে হচ্ছে, যে-লেখক মানুষের মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো বুঝতে পারেনা, তার লেখালেখির অধিকার নেই। তাদের মধ্যে আমিও একজন।

ধন্যবাদ শাহানা–– আমার অন্তর্চক্ষু খুলে দেবার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৪০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×