somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নালন্দার পতন বা ধ্বংসের ইতিহাস মূল কারন কি ছিল ? (পার্ট ২) এবং শেষ

২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নালন্দার পতন বা ধ্বংসের ইতিহাস মূল কারন কি ছিল ? (পার্ট ১)
বৌদ্ধধর্মের উপর প্রভাব
তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের মহাযান এবং বজ্রযান উভয় ধারার একটি বৃহৎ অংশ নালন্দার শিক্ষক ও প্রথা রীতিনীতির থেকে উৎসারিত। ৮ম শতাব্দীতে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের প্রচারে প্রধান ভূমিকা নেন শান্তরক্ষিত। তিনি ছিলেন নালন্দার এক পণ্ডিত। তিব্বতি রাজা খ্রি-স্রোং-দেউ-ৎসাং তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং সাম্যেতে একটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শান্তরক্ষিত ছিলেন সেই মঠের প্রথম অধ্যক্ষ। তিনি এবং তার শিষ্য কমলশীল দর্শনের মৌলিক শিক্ষা দান করেন।৭৪৭ সালে তিব্বতের রাজা নালন্দা মহাবিহার থেকে পদ্মসম্ভবকে আমন্ত্রণ জানান। তাকে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়।পণ্ডিত ধর্মকীর্তি ছিলেন ভারতীয় দার্শনিক ন্যায়শাস্ত্রের অন্যতম বৌদ্ধ প্রবর্তক। নালন্দায় যে বৌদ্ধ পরমাণুবাদ শিক্ষা দেয়া হত তিনি তারও অন্যতম আদি তত্ত্ববিদ ছিলেন।ভিয়েতনাম, চীন, কোরিয়া এবং জাপানে অনুসৃত মহাযান বৌদ্ধধর্ম সহ বৌদ্ধধর্মের অন্যান্য শাখাগুলিও নালন্দা মহাবিহারের প্রাচীরের অভ্যন্তরেই বিকাশ লাভ করেছিল। একাধিক গবেষক সুরঙ্গমা সূত্র সহ কয়েকটি মহাযান ধর্মগ্রন্থকে নালন্দার ধারার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।রন এপস্টেইন আরও বলেছেন যে এই সূত্রের সাধারণত মতবাদ সংক্রান্ত অবস্থানটি অবশ্যই নালন্দায় গুপ্ত যুগের শেষভাগে যে বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা দেয়া হত তার অনুগামী। সেই সময়েই সূত্রটি অনূদিত হয়েছিল।


নালন্দার সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ববর্গরা হলেনঃ
প্রথাগত সূত্র থেকে জানা যায় যে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫ম এবং ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে মহাবীর এবং গৌতম বুদ্ধ দুজনেই নালন্দায় এসেছিলেন। তাছাড়াও নালন্দা হল বুদ্ধের অন্যতম বিখ্যাত শিষ্য সারিপুত্রের জন্ম ও নির্বাণলাভের স্থান।

আর্যভট্ট
নাগার্জুন, শূন্যতা ধারণার সূত্রায়নকারী
আর্যদেব, নাগার্জুনের ছাত্র
অতীশ, মহাযান ও বজ্রযান পণ্ডিত
চন্দ্রকীর্তি, নাগার্জুনের ছাত্র
ধর্মকীর্তি, নৈয়ায়িক
ধর্মপাল
দিগ্‌নাগ, বৌদ্ধ ন্যায়শাস্ত্রের প্রবর্তক
নারোপা, তিলোপার ছাত্র তথা মারপার শিক্ষক
শীলভদ্র, হিউয়েন সাংয়ের শিক্ষক
হিউয়েন সাং, চীনা বৌদ্ধ তীর্থযাত্রী
ই ৎসিং, চীনা বৌদ্ধ পর্যটক ।

দ্য এন্ড অফ দ্য বুদ্ধিস্ট মঙ্কস, এ. ডি. ১১৯৩। হাচিনসনের স্টোরি অফ দ্য নেশনস থেকে। এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে খিলজি পুথিগুলির বিষয়বস্তু বোঝার চেষ্টা করছেন।
পতন এবং পরিসমাপ্তি
নালন্দার পতন ভারত থেকে বৌদ্ধধর্মের অন্তর্ধানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ৭ম শতাব্দীতে হিউয়েন সাং যখন ভারতের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন ঠিক তখনই তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে তার ধর্ম ধীরে ধীরে পতনের দিকে এগিয়ে চলেছে। শুধু তাই না তিনি নালন্দার পরিসমাপ্তির দুঃখজনক পূর্বাভাসও পেয়েছিলেন। বৌদ্ধধর্ম দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিল। কেবলমাত্র বিহার এবং বাংলা অঞ্চলের রাজবংশগুলিই এই ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পাল শাসনকালে বৌদ্ধধর্মের প্রথাগত মহাযান ও হীনযান শাখায় গোপন অনুষ্ঠান এবং জাদুবিদ্যাকেন্দ্রিক তান্ত্রিক রীতিনীতিগুলি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু দার্শনিকদের উত্থান এবং ১১শ শতাব্দীতে বৌদ্ধ পাল রাজবংশের অবনমন থেকে বোঝা যায় যে বৌদ্ধধর্ম রাজনৈতিক, দার্শনিক এবং নৈতিক ক্ষেত্রে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। তখনও ভারতে বৌদ্ধধর্মের অস্তিত্বের দৃশ্য প্রতীকস্বরূপ যে বৌদ্ধ মঠগুলির উত্থান ঘটছিল । মুহাম্মদ-ই-বখত-ইয়ার সাহসের সঙ্গে খিড়কি দরজা দিয়ে সেই স্থানে প্রবেশ করেন দূর্গটি দখল করেন । সেই স্থানের অধিকাংশ বাসিন্দাই ছিলেন ব্রাহ্মণ এবং এই সকল ব্রাহ্মণদের সকলেরই মস্তক ছিল মুণ্ডিত। সেখানে প্রচুর বই ছিল। মুসলমানেরা যখন সেই বইগুলি দেখতে পান তারা বেশ কয়েকজন হিন্দুকে নির্দেশ দেন তারা যাতে সেই বইগুলির তথ্য তাদের জানায়। কিন্তু সকল হিন্দুকেই হত্যা করা হয়েছিল। অবহিত হওয়ার পর জানা যায় সেই দূর্গ এবং শহরটি ছিল একটি মহাবিদ্যালয়। হিন্দুদের ভাষায় তারা সেটিকে বলতেন একটি মহাবিদ্যালয় ।
উপরিউক্ত উদ্ধৃতিতে একটি বৌদ্ধ মঠ ও তার ভিক্ষুদের উপর আক্রমণের কথা বলা হয়েছে। সেই ঘটনার সঠিক তারিখটি জানা যায় না। গবেষকদের মতে সেই ঘটনাটি ঘটেছিল ১১৯৭ থেকে ১২০৬ সালেরর মধ্যবর্তী কোনও এক সময়ে। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন যে মঠটিকে দূর্গ বলে ভুল করা হয় সেটি ছিল ওদন্তপুরা। তবে কয়েকজনের মতে সেই মঠটি ছিল নালন্দাই।তবে মনে করা হয় যেহেতু দুটি মহাবিহারই কয়েক মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত ছিল সেহেতু উভয়ের ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটে। সেই সময়কার ঘটনাবলির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ হল তিব্বতি ভিক্ষু তীর্থযাত্রী ধর্মস্বামীর জীবনী। তিনি ১২৩৪ থেকে ১২৩৬ সালের মধ্যে ভারতে আসেন। ১২৩৫ সালে তিনি যখন নালন্দা দর্শন করেন তখনও এই মহাবিহারটি চালু ছিল। তবে অতীতের ভীতিপ্রদ চিত্র তখনও এই মহাবিহারকে ঘিরে ছিল। নালন্দার অধিকাংশ ভবনেরই ক্ষতিসাধন করা হয়েছিল এবং সেগুলি ভগ্নপ্রায় অবস্থায় পড়ে ছিল। দুটি বিহার তখনও ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় ছিল। তিনি এই দুটি বিহারের নাম ধনব ও ঘুনব হিসেবে উল্লেখ করেন। সেখানে রাহুল শ্রীভদ্র নামে এক নবতিপর শিক্ষক ৭০ জন ছাত্রকে শিক্ষাদান করতেন। ধর্মস্বামী মনে করতেন কুসংস্কারগত কারণে মহাবিহারটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়নি। কারণ, নালন্দা চত্বরের জ্ঞাননাথ মন্দিরটি অপবিত্র করে এক মুসলমান সেনা তৎক্ষণাত অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।
ধর্মস্বামী ছয় মাস রাহুল শ্রীভদ্রের অধীনে নালন্দায় অধ্যয়ন করেন। কিন্তু তিনি নালন্দার ঐতিহাসিক গ্রন্থাগারটির কথা উল্লেখ করেননি। সম্ভবত তুর্কি আক্রমণের ফলে সেটি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। তবে তিনি নালন্দার উপর আরেকটি আক্রমণের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। নিকটবর্তী ওদন্তপুরা তখন একটি সামরিক প্রধান কার্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছিল। সেখানকার সৈন্যেরা নালন্দা আক্রমণ করেন। কেবলমাত্র ধর্মস্বামী এবং তার শিক্ষকই রয়ে যান এবং তারা লুকিয়ে পড়েন। অন্য ভিক্ষুরা নালন্দা ছেড়ে পালিয়ে যান।সমসাময়িক তথ্যসূত্রের সমাপ্তি এখানেই ঘটেছে। তবে প্রথাগত তিব্বিগি গ্রন্থ যেগুলি অনেক পরবর্তীকালে রচিত হয় সেগুলিতে বলা হয়েছে যে নালন্দা আরও কিছুকাল চালু ছিল। যদিও এই মহাবিহার তখন তার পূর্বের গরিমা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছিল। লামা তারানাথ বলেছেন যে চগলরাজা নামে বাংলার এক রাজা এবং তার রানি পরবর্তীকালে ১৪শ ও ১৫শ শতাব্দীতে নালন্দার পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তবে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেখানে হয়নি।১৮শ শতাব্দীতে লিখিত পাগ সাম জোন জাং নামক গ্রন্থে আরেকটি তিব্বতি কিংবদন্তির কথা জানা যায়। এই কিংবদন্তি অনুসারে মুদিত ভদ্র নামে এক বৌদ্ধ সাধু নালন্দার চৈত্য এবং বিহারগুলি মেরামত করেন এবং তৎকালীন রাজার এক মন্ত্রী কুকুটসিদ্ধ সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। আরেকটি গল্প অনুসারে ভবনটির যখন উদ্বোধন করা হচ্ছিল তখন দুই জন ক্রুদ্ধ তীর্থিক ভিক্ষুক সেখানে উপস্থিত হন। কয়েকজন তরুণ শিক্ষানবিশ ভিক্ষু তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং তাদের গায়ে কাপড় কাচার জল ছিটিয়ে দেন। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সেই ভিক্ষুকেরা সূর্যকে প্রসন্ন করার জন্য বারো বছর তপস্যা করেন এবং তপস্যার শেষে একটি যজ্ঞ অনুষ্ঠান করেন। যজ্ঞকুণ্ডের জাগ্রত ভষ্ম তারা বৌদ্ধ মন্দিরগুলির উপর ছিটিয়ে দেন। আর তাতে নালন্দার গ্রন্থাগারে আগুন লেগে যায়। কিন্তু রত্নোদধির পবিত্র পুথিগুলির থেকে অলৌকিক উপায়ে জল নির্গত হয় এবং বহু পুথি রক্ষা পায়। সেই ভিক্ষুকেরা তাদের নিজেদের জ্বালা আগুনেই ভষ্ম হয়ে যান।এই ঘটনাটি কবে ঘটেছিল তা সঠিক জানা যায় না। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ যার মধ্যে পোড়া চালের একটি ছোটো ঢিপিও রয়েছে জানা যায় একাধিকবার নালন্দা চত্বরের কয়েকটি ভবনে বড়োসড়ো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। একটি শিলালিপি থেকে মহীপালের রাজত্বকাল ছিল ৯৮৮ থেকে ১০৩৮ সাল আর সে শাসনকালে নালন্দা মহাবিহারে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে ।
নালন্দা ধ্বংসের আসল ঘটনা
রাজা শশাঙ্ক (সম্ভাব্য রাজত্ব ৫৯০-৬২৫ খ্রি.) এবং হর্ষবর্ধনের (৫৯০–৬৫৭) মধ্যকার দন্ধ এতটাই তিক্ত হয়ে উঠেছিল।ব্রাহ্মণরা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আসলে তাঁদের মধ্যকার ঐ দন্ধ নির্দেশ করে ঐ সময়কাঁর বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ক্ষমতার লড়াই এবং এর ফলাফল হচ্ছে উত্তর ভারত থেকে বৌদ্ধদের গন বিতারন ও গনহত্যা।যাই হোক, হর্ষবর্ধন একবার এই হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেলেও পরবর্তিতে এক ব্রাহ্মণ গুপ্ত ঘাতকের হাতে তাঁর মৃত্যু হয়।এরপর তীরহুতের রাজা অর্জুন (চীনা সোর্সে তাকে A-lo-na-shun নামেও দেখা যায়)সিংহাসান দখল করে যে কিনা হর্ষবর্ধনের সাথে নিরাপত্তা চুক্তিতে ছিল বা বলা হয়ে থাকে সে তাঁর প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিল।হেন্স বাকের তাকে চিত্রিত করেছেন হর্ষবর্ধনে অধিনস্ত হিসেবে(Hans Bakker, The World of the Skandapurāṇa, BRILL, 2014, P,128)।অর্জুন সিংহাসনে আরোহন করার পর একদল ব্রাহ্মণ দুর্বিত্তের নেতৃত্বে নালন্দায় আক্রমণ হয় এবং সেটা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়।(D.D. Kosambi, The Culture and Civilisation of Ancient India in Historical Outline, Lahore 1991:180)। এটা হচ্ছে নালন্দা ধ্বংসের মূল ঘটনা।তবে এটি সে সময় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়নি।অর্জুন কর্তৃক চীনা প্রতিনিধি ওয়াং হিউয়েন টিসি (Wang Hiuen Tsee)কে আক্রমণ করা হলে তিনি নেপালে পালিয়ে যান (S.N. Sen, Ancient Indian History and Civilization, New Age International, 1999:261)।এরপর নেপালের রাজা অর্জুনকে আক্রমণ করে গ্রেফতার করে চীনে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তিতে নেপালের রাজার সহযোগিতায় নালন্দা মেরামত করা হয় এবং প্রায় ১৩০০ সাল পর্যন্ত চালু থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে ১৩০০ সালের পর কিভাবে চালু থাকা নালন্দা ধ্বংস হয়ে গেল? অবশ্য এর কনক্রিট উত্তর দিয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর DN JHA। তিনি লিখেন যে ব্রাহ্মন্যবাদ এবং বৌদ্ধদের মধ্যকার চলতে থাকা আঘাত-প্রতিঘাতে নালন্দা ধ্বংস হয়।এই ক্ষেত্রে প্রফেসর অনেকগুলো তিব্বতি রেফারেন্সও দিয়েছেন।আগ্রহী পাঠকেরা চাইলে লেখাটি পড়ে নিতে পারেন ( আরো দেখুন বিস্তারিত, কিভাবে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে নালন্দাকে নিয়ে How History Was Unmade At Nalanda, D N Jha, JULY 9, 2014, kafila.org, Click This Link

এখানে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে ! তাহলে বখতিয়ার খলজি যে অভিযান চালান সেটা কোথায় এবং এর ফলাফল কি ঘটেছিল? ১১৯৯ সালে বখতিয়ার খলজি দক্ষিন বিহার অভিযান চালান এবং রাজা গোবিন্দপাল দেব কে পরাজিত করেন।(M. Habib in I. Habib, Medieval India 1, Delhi, 1992)।একই সময়ে বখতিয়ার খলজি উদন্তপুরে অভিযান চালান যেটি ছিল একটি বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইরানি ঐতিহাসিক মিনহাজ আদ দিন সিরাজী ঐ ঘটনার প্রায় ৪১ বছর পর বিহারে গিয়ে লোক মুখে শুনে সেই ঘটনা বর্নণা করেন তাঁর বিখ্যাত বই ‘তাবাকত-ই-নাসিরি’ তে।তার বর্ননা মতে বুঝা যায় যে,বখতিয়ার খলজি সেই অপারেশনে ভুল করে ঐ প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করেন (কেননা বিহারটি বাহির থেকে দেখতে সামরিক দুর্গের মত দেখাচ্ছিল।পরে তিনি বুঝতে পারেন আসলে এটি ছিল একটি কলেজ] এবং প্রতিষ্ঠানের অধিবাসী সবাই (সবাই ছিল মাথা কামানো ব্রাহ্মণ) সেসময় নিহত হয়।[Tabaqat-i-Nasiri in Elliot and Dowson 1861 ii:306 ]।

রাজেশ এবং শামস তাঁদের লেখায় মিনহাজকে কোট করে লিখলেন প্রতিষ্ঠানের অধিবাসী সবাই ছিল বৌদ্ধ! তাহলে ঘটনাটা দুই রকম হয়ে গেলনা? একই সোর্স, একই বই, একই লেখক অথচ ভিন্ন বয়ান? এখানেই লুকিয়ে আছে মূল সমস্যা।তাহলে দেখা দরকার মিনহাজের আসল বক্তব্যটা। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, প্রফেসর DN JHA মিনহাজের পুরো বক্তব্যটি তুলে ধরেছেন;

“He [ Bakhtiyar Khalji] used to carry his depredations into those parts and that country until he organized an attack upon the fortified city of Bihar. Trustworthy persons have related on this wise, that he advanced to the gateway of the fortress of Bihar with two hundred horsemen in defensive armour, and suddenly attacked the place. There were two brothers of Farghanah, men of learning, one Nizamu-ud-Din, the other Samsam-ud-Din (by name) in the service of Muhammad-i-Bakht-yar ; and the author of this book [ Minhaj] met with at Lakhnawati in the year 641 H., and this account is from him.

These two wise brothers were soldiers among that band of holy warriors when they reached the gateway of the fortress and began the attack, at which time Muhammad-i-Bakhtiyar, by the force of his intrepidity, threw himself into the postern of the gateway of the place, and they captured the fortress and acquired great booty. The greater number of inhabitants of that place were Brahmans, and the whole of those Brahmans had their heads shaven; and they were all slain. There were a great number of books there; and, when all these books came under the observation of the Musalmans, they summoned a number of Hindus that they might give them information respecting the import of those books; but the whole of the Hindus were killed. On becoming acquainted (with the contents of the books), it was found that the whole of that fortress and city was a college, and in the Hindui tongue, they call a college Bihar” (Tabaqat-i-Nasiri, English tr. H G Raverty, pp.551-52) [How History Was Unmade At Nalanda, D N Jha, JULY 9, 2014, kafila.org ]। প্রফেসর DN JHA এরপর মন্তব্য করেন;

The above account mentions the fortress of Bihar as the target of Bakhtiyar’s attack. The fortified monastery which Bakhtiyar captured was, “known as Audand-Bihar or Odandapura-vihara” (Odantapuri in Biharsharif then known simply as Bihar). This is the view of many historians but, most importantly, of Jadunath Sarkar, the high priest of communal historiography in India (History of Begal, vol. 2, pp.3-4). Minhaj does not refer to Nalanda at all: he merely speaks of the ransacking of the “fortress of Bihar” (hisar-i-Bihar).

বস্তুত বখতিয়ার নালন্দাতে জাননি।তিনি অভিযান চালিয়েছেন উদন্তপুরে,কেননা এটাই ছিল সেসময়ের রাজধানী।নালন্দার পরিচিতি ছিল কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারনে,এরকম মহাবিহার (বিশ্ববিদ্যালয়) তখন আরো ছিল। বখতিয়ার খলজি সহ মুসলিম শাসকদেরকে যে ঢালাওভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের অপবাদ দেয়া হয় তাঁর কারণ উপরে উল্লেখ করেছি। সেগুলো যে ঢাহা মিথ্যা তাঁর আরো কয়েকটি প্রমাণ দিচ্ছি।

তিব্বতি স্কলার-মঙক ধর্মস্বামী ১২৩৪ থেকে ১২৩৬ সালে বিক্রমশীলা মহাবিহার (ভারতে ‘বিহার’ মানে ‘কলেজ’)এর প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করেন,যেটি কিনা বখতিয়ার খলজি তাঁর উদন্তপুর অভিযানের সময় ধ্বংস করার কথা (যেমনটা ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগন অভিযোগ করেন)।অথচ ধর্মস্বামী ব্যক্তিগতভাবে সে সময়কার অবস্থান থেকে দেখতে পান যে প্রায় ৮০ টি বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তখনো যথাযথভাবে নালন্দা ও তাঁর আশেপাশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে [G. Roerick, Biography of Dharmasvamin (Chag lo-tsa-ba Chos-rje-dpal) a Tibetan Monk Pilgrim, Patna, 1959:64-65]।

সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনই চিত্র তুলে ধরেছেন Altshuler University এর রিলিজিয়াস স্টাডিসের প্রফেসর Johan Elverskog তাঁর Buddhism and Islam on the Silk Road বইয়ে (বইয়ের রিভিউ দেখুন)।তিনি বৌদ্ধদের সাথে মুসলমানদের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলেন; “not only did local Buddhist rulers make deals with the new Muslim overlords and thus stay in power, but Nalanda also continued as a functioning institution of buddhist education well into the thirteenth century. One Indian master, for example, was trained and ordained at Nalanda before he travelled to the court of Khubilai Khan. We also know that Chinease monks continued to travel to India and obtain Buddhist texts in the late fourteenth century” (Johan Elverskog, Buddhism and Islam on the Silk Road, Philadelphia: University of Pennsylvania Press, 2010. pp. 1-3). তাঁর মানে হচ্ছে, বখতিয়ার খলজির অভিজানের প্রায় ১০০ বছর পরও নালন্দা সচল ছিল।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, বখতিয়ার খলজি কেন ভুলে উদন্তপুর বিহার আক্রমণ করলেন?
তিব্বতি এক সন্ন্যাসী (ভিক্ষু) পণ্ডিত কুলাচার্য জ্ঞানানশ্রী (Kulacharya Yanansri) তার ‘ভাদ্র কল্পদ্রুম’ (Bhadra Kalpadrum) –এ বলেন যে সে সময় বৌদ্ধদের নিজেদের মধ্যেও ভিন্ন মত, ধারা বিরাজ করছিল। ‘সেদিন বৌদ্ধভিক্ষু ও পণ্ডিতগণের মধ্যে কলহ ও বিবাদ এতই উত্তেজনার শিখরে ওঠে যে তাদের এক পক্ষ [ব্রাহ্মণ রাজা লক্ষণ সেনের রাজত্বকালে] তুর্কীর মুসলিম আক্রমণকারীদেরকে তাদের ওখানে আক্রমণ চালাতে প্রতিনিধি পাঠায়। লক্ষণ সেনের রাজত্ব কালে এই প্রেরিত প্রতিনিধিত্ব লক্ষণ সেনের ইচ্ছার প্রকাশ ঘটায়। তিনি চেয়েছিলেন, বুদ্ধদের ক্ষমতা সেখানে ভেঙ্গে পড়ুক। এই উদ্দেশ্যে তিনি ভিক্ষুদের মধ্যে বিবাদের সূত্র লালন করেন ও দুই বিবাদীর এক পক্ষকে বিদেশিদের সাহায্য নিতে উৎসাহ দান করেন। এতে তিনি তাঁদের দুর্বল করে ফায়দা নিতে চেয়েছিলেন ।ফলাফল যেটা হল, বখতিয়ার খলজিকে যেভাবে গাইড করা হয়েছে সম্ভবত সেভাবেই তিনি অভিযান পরিচালনা করেন। বিহার আক্রমণ প্রতিহত করতে যারাই বাঁধা দিয়েছে সৈন্যরা তাদেরকে হত্যা করেছে। মিনহাজের বিবরণে স্পষ্ট হয় বখতিয়ার জানতেন না যে উদন্তপুর ছিল বুদ্ধদের একটি শিক্ষাপীঠ। কিন্তু সেখানে সারিবদ্ধ পুস্তক দেখে অনুসন্ধান করে জানেন যে সেটি কোন সৈন্যদূর্গ ছিলনা (Journal of Varendra Research Society, 1940 cited in A. Mu’min Chowdhury, The Rise and Fall of Buddhism in South Asia, London: London Institute of South Asia, 2008)।এই বক্তব্য প্রায় সবগুলো সোর্সই নিশ্চিত করছে।

তাহলে কি মুসলিম সৈন্যবাহিনীকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল পথে চালিয়ে সেখানে নেয়া হয়? এটা ব্রাহ্মণ্যবাদের অতিপুরাতন ও বহুল ব্যবহৃত কুটনীতি ও কৌশল যে,তারা স্থানীয় শক্তির মধ্যকার আভ্যন্তরীন বিরোধকে কাজে লাগিয়ে শত্রু’র শত্রুকে দিয়ে নিজের শত্রুকে শায়েস্তা করে।এ দৃষ্টিতে কুলাচার্য জ্ঞানানশ্রীর বর্ণনাকে অগ্রাহ্য করা যায় না।এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় ডক্টর Mu’min Chowdhury এর লেখা The Rise and Fall of Buddhism in South Asia,London: London Institute of South Asia, 2008 বই থেকে
শেষের কিছু লাইন তথ্য হিসেবে অন্য ওয়েব সাইট থেকে কপি পোস্ট দেয়া হয়েছে ।
উক্ত লিং

"তথ্যসূত্র" ইন্টারনেট ।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×