রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ১৯৫৬ সালের ১৬ই অক্টোবর তার পিতার কর্মস্থল সূত্রে বরিশাল জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন।
তিনি একজন প্রয়াত বাংলাদেশী কবি এবং গীতিকার যিনি প্রতিবাদী রোমান্টিক হিসাবেও বেশ খ্যাত ছিলেন। আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি বাংলাদেশী শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেছিলেনন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ । তার জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম একটি হল বাতাসে লাশের গন্ধ। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর স্মরণে বাংলাদেশের বাগের হাট জেলর মোংলার মিঠেখালিতে গড়ে উঠেছে রুদ্র স্মৃতি সংসদ ।
বাতাসে লাশের গন্ধ
আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর,
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা – একি হবে নষ্ট জন্ম ?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ?
জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।
বাতাশে লাশের গন্ধ
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ –
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়
এ চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
ঘুমুতে পারিনা…
রক্তের কাফনে মোড়া – কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা, সে আমার – স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন –
স্বাধীনতা – আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এবং জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম একজন উদ্যোক্তা।এবং জাতীয় কবিতা পরিষদেরও প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। তিনি ১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী এবং স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন । প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাতি ছিল তার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, এবং অসাম্প্রদায়িকতা তার কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। তাছাড়াও স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। কবিকন্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি কবিতাকে শ্রোতৃপ্রিয় করে তোলেন তিনি তাদের মধ্যেও অন্যতম।তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়া ও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেন।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর প্রকাশিত গ্রন্থ হলঃ
১৯৭৬ সালে প্রকাশিত কবিতা উপদ্রুত উপকূল ।
১৯৮২ সালে প্রকাশিত কবিতা ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম ।
১৯৮৪ সালে মানুষের মানচিত্র ।
১৯৮৬ সালে ছোবল ।
১৯৮৮সালে দিয়েছিলে সকল আকাশ ।
১৯৯০ সালে মৌলিক মুখোশ ।
তাছাড়াও তার ছোট গল্প সোনালি শিশির।এবং নাট্যকাব্য বিষ বিরিক্ষের বীজ ও বড়গল্প মনুষ্য জীবন।তিনি ১৯৮১সালের ২৯শে জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তাসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। ১৯৯১ সালের ২১শে জুন রুদ্র ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
তথসূত্রঃ
বাংলা পিডিয়া। এবং ২০১১ সালে প্রথম আলো প্রকাশিত রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৩