আজকের এই দিনটা জাতীয় বিপ্লব এবং সংহতি দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সংঘটিত সিপাহী ও জনতার বিপ্লব এর স্মরণে এই দিবসটি পালন করা হয়। কর্নেল (অবঃ) আবু তাহের এর নেতৃত্বে সংঘটিত এই বিপ্লব জেনারেল খালেদ মোশাররফ এর ৩ দিনের সরকারের পতন ঘটায়। এই বিপ্লবের ফলস্রুতিতে জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দীশালা থেকে মুক্তি পান এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসেন। কিছু সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নিহত হবার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। কিন্তু খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার নেপথ্যে ছিলেন ১৫ই অগাষ্টের ঘটনার মুল নায়কেরা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) এই ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি। তিনি তার অনুগত সৈন্য বাহিনী নিয়ে ৩রা নভেম্বর মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটান। অভ্যুত্থানটি প্রাথমিক ভাবে সফলও হয়। কিন্তু তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩ দিন।খালেদ মোশাররফ রক্তপাত এড়াতে চেষ্টা করেছিলেন যা পরবর্তীতে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
৩রা নভেম্বরের অভ্যুত্থানে জেনারেল খালেদ মোশাররফ রক্তপাতহীন ক্যু করতে গিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার নিজ বাসভবনে গৃহবন্দী করেন। কর্নেল (অবঃ) আবু তাহের সে সময় চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। কর্নেল তাহের ছিলেন জিয়াউর রহমানের একজন বিশেষ শুভাকাংখী। তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। সৈনিক অফিসার বৈষম্য তার পছন্দ ছিলনা। তার এই নীতির জন্য তাহের সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিকদের মাঝেও দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন। কর্নেল তাহের বিশ্বাস করতেন জিয়াও তারই আদর্শের লোক।জিয়া তার বাসভবনে বন্দী হয়ে থাকেন। খালেদ মোশারফের নির্দেশে তাকে বন্দী করে রাখেন তরুণ ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ। জিয়ার বাসার টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ একটি ভুল করেন। তিনি ভুলে যান বেডরুমেও একটি টেলিফোন আছে। জিয়া কৌশলে বেডরুম থেকে ফোন করেন তাহেরকে। খুব সংক্ষেপে বলেন সেভ মাই লাইফ।তাহের জিয়ার আহবানে সাড়া দেন। তিনি ঢাকাতে তার অনুগত ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহীদের পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা রওনা হন কর্নেল তাহেরের । এই পাল্টা অভ্যুত্থান সফল হয় ৭ই নভেম্বর। কর্নেল তাহের জিয়াউর রহমানকে বন্দীশালা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন।ওই দিনই পাল্টা অভ্যুত্থানে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জেনারেল খালেদ মোশাররফকে হত্যা করেন।
কথা ছিল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে আনা হবে। তারপর জাসদের অফিসে তাকে এনে তাহেরদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হবে। পরে সিপাহী জনতার এক সমাবেশ হবে। সেখানে বক্তব্য রাখবেন জিয়া আর তাহের। কিন্তু মুক্ত হওয়ার পরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। জিয়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হতে সম্মত হন না। উর্ধ্বতন সামরিক অফিসাররা তাকে পরামর্শ দিতে থাকেন। তাহের জিয়াকে ভাষণ দিতে বলেন। জিয়া ভাষণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।তাহের বুঝতে পারেন জিয়া তাদের সাথে আর থাকছেন না। তিনি পুনরায় সংগঠিত হতে থাকেন। কিন্তু জিয়া বুঝতে পারেন ক্ষমতায় টিকতে হলে তাহেরসহ জাসদকে সরাতে হবে। সেই অনুযায়ী গ্রেফতার হতে থাকেন জাসদের সব নেতারা। তাহেরও গ্রেফতার হন। শুরু হয় এক প্রহসনের এক বিচার। গোপন আদালতে চলতে থাকে সেই বিচার১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়। অন্যান্য নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদের জেল হয়। ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের কারিগর ছিলেন তাহের। আর তার ফলে ক্ষমতায় বসেন জিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৫৫