somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই ভারতবর্ষে ইসলাম যে ভাবে ছড়িয়েছে

২৮ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ, ভারতীয় উপমহাদেশ বলতে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ, জুড়ে প্রায় ৫৫০ মিলিয়নেরও বেশি মুসলমান রয়েছে, এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার কেন্দ্রগুলির একটি। যেহেতু ইসলাম প্রথমে ভারত প্রবেশ করায়, তাই এলাকা এবং ভারতের জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে অবদান রেখেছে ইসলাম। আজ, এমন একটি বড় ধরনের মুসলিম ভূখণ্ড হতে ভারত কিভাবে ইসলাম পিছিয়ে গেছে তা নিয়ে বহু তত্ত্ব রয়েছে। এর মধ্যে কিছু রাজনৈতিক কারন আছে,যেমন ভারতের হিন্দুস্তান আন্দোলন ইসলামকে ভারতকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করে, আরব এবং ফার্সী মুসলমানদের আক্রমণের কারণে এটি কেবলমাত্র বিদ্যমান বলে দাবি করা হয়। সত্য,মিথ্যে, যাইহোক, দূরে থেকে যে যেভাবে দেখেছে সে সে ভাবেই ইতিহাস উপস্থাপন করেছে।আসল সত্যটুকো আমরা
ব্লগাররা একটু খোঁজার চেষ্টা করি।
সবচেয়ে প্রাচীন মুসলিম ভারতীয়ঃ
তবে যতটুকো জানা যায় ৬০০ খ্রিস্টাব্দ অর্থাৎ মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনকালের আগেও আরব ব্যবসায়ীরা ভারতের সাথে যোগাযোগ করতেন। ব্যবসায়ীরা মশলাপাতি, স্বর্ণ এবং আফ্রিকান পণ্যের মতো পণ্য বাণিজ্য করতে নিয়মিত ভারতে পশ্চিম উপকূলে অসা-যাওয়া করতেন। স্বাভাবিকভাবেই, যখন আরবরা ইসলামে রূপান্তরিত হতে শুরু করেন তখন তারা তাদের নতুন ধর্মকে ভারতের উপকূলে নিয়ে যায়। ভারতের প্রথম মসজিদ চেরমন জুমা মসজিদ।মসজিদটি ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম মুসলিম কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল।আরব মুসলমান এবং ভারতীয়দের মধ্যে অব্যাহত বাণিজ্যের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন এবং রূপান্তর উভয়ের মাধ্যমে উভয় উপকূলীয় ভারতীয় শহর এবং অন্যান্য শহরগুলিতে একইভাবে ইসলাম অব্যাহত থাকে।
মুহাম্মদ বিন কাসিম
ভারতে ইসলামের প্রথম মহান সম্প্রসারণ খলিফার উমাইয়া রাজবংশের সময় এসেছিলেন, যারা দামাস্কাসের ভিত্তি ছিল। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়াদ একটি তৎক্ষনাত ১৭ বছর বয়সী পুরুষকে তায়ফ থেকে নিযুক্ত করে উমাইয়াদকে সিন্ধুতে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু প্রদেশটি উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সিন্ধু নদীটিরে চারপাশের জমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন ।মুহাম্মদ ইবনে কাসিম তার ৬০০০ সৈন্যের একটা সৈন্যবাহিনীকে পারস্যের পূর্ব দিকের পূর্বাঞ্চলে নিয়ে যান এখন সে স্থানের নাম মকরান।তিনি ভারতের মধ্যে তার পথ তৈরি করতে সে সময় সামান্য প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। তিনি সিন্ধু নদীর তীরে নেরুন শহরে যখন পৌঁছান তখন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের দ্বারা নগরীর মধ্যে তাকে স্বাগত জানানো হয়। সিন্ধু বরাবর বেশিরভাগ শহরই কোন যুদ্ধ না করেই স্বেচ্ছায় মুসলিম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন ।কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিন্দু গভর্নরদের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য বৌদ্ধ সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারিত মুসলিম বাহিনী মুসলিম সৈন্যদের কাছে যেতে হয়েছিল।জনসংখ্যার অধিকাংশ সমর্থন এবং অনুমোদন সত্ত্বেও, সিন্ধু, দাহির রাজা, মুসলিম সম্প্রসারণের বিরোধিতা করেছিলেন এবং মুহম্মদ বিন কাসিমের বিরুদ্ধে তার সেনাবাহিনী জোরদার করেছিলেন।কিন্তু দাহির রাজা আর বিন কাসিম এই দুইয়ের মধ্যে এক যুদ্ধে ৭১২ সালে মুসলমানদের জন্য একটা বড় বিজয় আসে,আর সে বিজয়ের মাধ্যমে সমস্ত সিন্ধু মুসলিম নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।তবে এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, সিন্ধু প্রদেশটি ইসলামে রূপান্তরিত হতে বাধ্য ছিল না। মুহম্মদ বিন কাসিম তার নিয়ন্ত্রণাধীন সকল হিন্দু এবং বৌদ্ধদের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় ট্যাক্স সংগ্রাহক হিসাবে তাদের কাজ অব্যাহত এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা তাদের monastaries বজায় রাখা অব্যাহত। তার ধর্মীয় সহনশীলতা ও ন্যায়বিচারের কারণে, অনেক শহর নিয়মিতভাবে তাকে এবং তার সৈন্যবাহিনীকে নাচ এবং সঙ্গীত দিয়ে স্বাগত জানান।
'অষ্টম শতাব্দীতে মুহাম্মদ বিন কাশিমের মাধ্যমে ইসলামের ভারত বিজয়ের পর ভারতে ইসলামি সাম্রাজ্য শুরু হয়। ইসলামি সভ্যতা ভারতীয় উপমহাদেশের বেলুচিস্তান এবং সিন্ধু অঞ্চলে উপস্থিত হয়। ইসলামি সভ্যতা আসার পর দশম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত দিল্লী সুলতান ও মুঘল সাম্রাজ্য উত্তর ভারতে শাসন করেন।
রূপান্তর এর প্যাটার্নস
ভারতবর্ষে প্রবেশ করে মুসলিম বাহিনীর ক্রমবর্ধমান ঢেউ একই ধরণ অনুসরণ করে। গজলীর মাহমুদ এবং মুহম্মদ তুঘলকের মতো নেতারা ভারতীয় সমাজের ধর্মীয় বা সামাজিক কাঠামোকে পরিবর্তন না করে মুসলিম রাজনৈতিক বিস্তৃত করেন।যেহেতু পূর্ব-ইসলামী ভারতে একটি গোষ্ঠী ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ভিত্তিক ছিল যার মধ্যে সমাজকে পৃথক অংশে বিভক্ত করা হয়েছিল তাই ইসলামে রূপান্তর একটি ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছিল।বৌদ্ধধর্ম, যা উপমহাদেশে একটাসময় খুব জনপ্রিয় ছিল তাও ধীরে ধীরে বিভিন্ন রাজ শাসনের অধীনে মারা যায়।যখন ইসলাম একটি বিকল্প হয়ে ওঠে, তখন মানুষ বৌদ্ধদের পরিবর্তে ইসলামে রূপান্তরিত হতে শুরু করেন।যদিও ভারতবর্ষের অনেকের মতে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করেছে মুসলিরা,কিন্তু এটা আসলে সত্য না সম্পূণ্য মিথ্যে ইসলামের নামে কেবল মিথ্যা গুজব ছড়ানো। মুসলিম শাসনের অধীনে বৌদ্ধদের জোর করা হয়েছিল,বা বৌদ্ধদের জর করে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল
তার কোন সত্যটা আজও প্রমানিত হয়নি বা ইসলামের বিরুদ্ধে সেরকম কোনও প্রমাণ পাওয়াও যায়নি ।
পীর গোরাচাঁদ
পীর গোরাচাঁদের আসল নাম হল পীর হজরত শাহ সৈয়দ আব্বাস আলী রাজী। তার পিতার নাম হজরত করিম উল্লাহ এবং মাতার নাম মায়মুনা সিদ্দিকা। আনুমানিক ১২৬৫ খ্রিস্টাব্দে আরবের মক্কা নগরে জমজম মহল্লায় বিখ্যাত কোরায়েশ বংশে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পীর হজরত শাহজালাল এঅমনির কাছে তরীকা সুফীমতে দীক্ষাগ্রহণের পর গুরুর নির্দেশে ভারতবর্ষে ধর্মপ্রচারে আসেন।
গোরাচাঁদ ছোটবেলা থেকে খুবই ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। আধ্যাত্মিক জীবনের উন্নতি সাধনের জন্য অতি অল্প বয়সেই তিনি গৃহত্যাগ করেন। এরপর হজরত শাহ জালালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে পীরভ্রাতাদের সঙ্গে ভারতে ইসলাম ধর্ম প্রচারে আসতে মনস্থ করেন। পিতা করিমউল্লাহ অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে সুদূর ভারতে ধর্মপ্রচারে যেতে দিতে রাজি হন; সঙ্গে নিজের পালকপুত্র মাহতাবউদ্দীনকে তার দেখাশুনার জন্য প্রেরণ করেন।
শাহ আবদুল্লাহ কিরমানী (রঃ)
১৩দশ শতকে শাহ আব্দুল্লাহ কিরমানী ছিলেন মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলা অঞ্চলের একজন প্রখ্যাত সুফী সাধক। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় খুস্তিগিরি নামক স্থানে তার সমাধি অবস্থিত।প্রচলিত কাহিনীমতে তিনি পারস্য দেশের কিরমান শহর থেকে বাংলায় আগমন করেন। ছোট অবস্থায় তিনি স্বদেশ ত্যাগ করে ভারতবর্ষে আসেন। এখানে বিভিন্ন জায়গা পরিভ্রমণ করে পরিশেষে তিনি পাটনায় শাহ আরজানীর শিষ্য হন। মুর্শিদ যিনি খুব সম্ভবত ১৬৩০ সালে মারা যান তাকে বাংলায় গমনের নির্দেশ দেন। শাহ আবদুল্লাহ কিরমানী বীরভূমে আসেন এবং খুস্তিগিরিতে বসবাস শুরু করেন।উর্দুতে লেখা তাজকিরা-ই-আওলিয়া-ই-হিন্দ গ্রন্থে শাহ আবদুল্লাহ কিরমানী সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ভিন্ন কাহিনী পরিবেশন করা হয়। এ কাহিনী মতে, তিনি জন্মসূত্রে বাঙালি এবং আজমীরের শেখ মঈনউদ্দীন চিশতীর শিষ্য ছিলেন। উল্লিখিত এ দুটি বিবরণের কোনটি সত্য তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন, কেননা উভয় সূত্রই পরবর্তী সময়ের। তিনি যদি বাঙালিই হবেন তবে কিরমানী উপাধি কেন নিলেন তাও বোধগম্য নয়। বিপুল সংখ্যক লোক খুস্তিগিরিতে অবস্থিত শাহ আবদুল্লাহ কিরমানীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। সরিসৃপের ওপর বিশেষ ক্ষমতা ও প্রভাবের জন্য তিনি বিখ্যাত। অধুনা বীরভূম অঞ্চলে সাপ তাড়ানো ও সাপে কাটলে বিষ নামানোর জন্য শাহ আবদুল্লাহ কিরমানীর নাম মন্ত্রের সঙ্গে উচ্চারিত হয়।

http://lostislamichistory.com/how-islam-spread-in-india/


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:০০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×