somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খ্রিস্টপূর্ব ২৬১ সালে সংগঠিত কলিঙ্গের যুদ্ধ ও তার পেক্ষাপট !

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি খ্রিস্টপূর্ব ২৬১ সালে সংগঠিত হয়েছিল এই কলিঙ্গ যুদ্ধ । বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে যখন সম্রাট অশোক কলিঙ্গ আক্রমণ করেন তখন একটা যুদ্ধ হয় আর সেই যুদ্ধটিই হল কলিঙ্গের যুদ্ধ। অশোক সিংহাসনে আরহনের বারো বছর পরে সেই অভিযান পরিচালনা করেন।কলিঙ্গ যুদ্ধে অসংখ্য জীবনহানির ঘটনায় অশোক মর্মাহত হন এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে অহিংস নীতি প্রচারে মনোনিবেশ করেন।তবে কলিঙ্গের যুদ্ধের সঠিক ঘটনা আজো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় মৌর্য্য সম্রাট অশোকের কোন এক ভাই কলিঙ্গ রাজ্যে আশ্রয় নেন। তার প্রতিশোধ নেবার জন্য অশোক কলিঙ্গ আক্রমণ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৫ অব্দে দয়া নদীর নিকটবর্তী ধৌলি পাহাড়ের কাছে মৌর্য্য এবং কলিঙ্গ বাহিনীর মধ্যে ভীষণ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। দুইদলের প্রচুর হতাহতের মাধ্যমে অশোক কলিঙ্গ জয় করতে সক্ষম হন। সেই যুদ্ধে কলিঙ্গ বাহিনীর ১,০০,০০০ সেনা এবং মৌর্য বাহিনীর ১০,০০০ সেনা নিহত হয় ও অসংখ্য নর-নারী আহত হয়। যুদ্ধের বীভত্সতা সম্রাট অশোককে বিষাদগ্রস্থ করে তোলে এবং তিনি যুদ্ধের পথত্যাগ করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে অহিংসার পথে সাম্রাজ্য পরিচালনের নীতি গ্রহণ করেন।ইতিহাসবিধদের ধারনা মতে সম্রাট অশোকের দ্বারা কলিঙ্গ আক্রমণের কারণগুলি রাজনৈতিক ঋবং অর্থনৈতিক এই দুই ছিল। কলিঙ্গ একটি সমৃদ্ধ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল যা শান্তিপূর্ণ এবং দক্ষ শিল্পী ব্যক্তিদের স্থান ছিল। উৎকল নামে পরিচিত সেই অঞ্চলের জনগন ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম বাণিজ্যের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলবর্তী অঞ্চলের দেশগুলিতে ভ্রমণ করতেন। আর সেই কারণেই কলিঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী ছিল। তাদের একটি উন্মুক্ত সংস্কৃতি ছিল এবং তার অভিন্ন নাগরিক কোর্ড ব্যবহার করত ।


৩২১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সাম্রাজ্যের পতন না হওয়া পর্যন্ত কলিঙ্গ নন্দ সাম্রাজ্যের শাসন অধীন ছিল।অশোকের পিতামহ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য পূর্বে কলিঙ্গ জয় করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনি সেক্ষেত্র ব্যর্থ হয়েছিলেন। অশোক স্বাধীন সাম্রাজ্য জয় করার জন্য নিজেই নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন বলে অনুমান করেছিলেন যে তিনি সিংহাসনে সুরক্ষিতভাবে প্রতিষ্ঠিত আছেন।অশোকের কলিঙ্গ যুদ্ধ তীব্রতার জন্য বা এর ফলাফলের হিসাবে ভারতের ইতিহাসে কোন যুদ্ধই কলিঙ্গ যুদ্ধে থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানব ইতিহাসে কোন যুদ্ধে বিজয়ী ব্যক্তির হৃদয়কে এক নির্মম নিষ্ঠুরতা এবং অহংকারী মনভাব থেকে দৃষ্টান্তমূলক ধার্মিকতায় পরিবর্তিত করেছে। বিশ্বের ইতিহাসে শুধুমাত্র কয়েকটি যুদ্ধে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে যা এই যুদ্ধের সমতুল্য হতে পারে। তবে সেই যুদ্ধ গুলি কক্ষনই কলিঙ্গ যুদ্ধের থেকে বড় বা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। মানবজাতির রাজনৈতিক ইতিহাস সত্যিই যুদ্ধের একটি ইতিহাস এবং যুদ্ধ শেষে মানবতার ও শান্তি রক্ষার জন্য কলিংয়ের যুদ্ধের মত অন্য কোন যুদ্ধ সফল হতে পাড়েনি।


২৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অশোকের রাজত্বের নবম বছরে কলিঙ্গ যুদ্ধ সম্ভবত শুরু হয়। তার পিতার মৃত্যুর পর সিংহাসনের জন্য রক্তাক্ত যুদ্ধের পর, অশোক কলিঙ্গ জয় লাভে সফল হন - কিন্তু যুদ্ধের বর্বরতার পরিণতিটি অশোকের যুদ্ধ সম্পর্কিত মতামত পাল্টে দেয় যুদ্ধের পর এবং কলিঙ্গ যুদ্ধে জয় লাভ করেও সম্রাট আশোক এতটাই মর্মহিত ছিলেন যে কারনে তিনি কোন নতুন যুদ্ধে সম্মতি দেননি।


অশোক যুদ্ধে রক্তপাত দেখেছেন এবং অনুভব করেছেন যে তিনি ধ্বংসের কারন। কলিঙ্গের সমগ্র এলাকা লুঠ করা হয় এবং কলিঙ্গ ধ্বংস হয়ে যায়। অশোকের পরবর্তী কতিপয় শাস্ত্র বলে যে কলিঙ্গের যুদ্ধে প্রায় ১০০,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল এবং প্রায় সমান সংখ্যক অশোকের সেনাবাহিনী ছিল যদিও ওড়িয়া জনগণের মধ্যে পৌরাণি কাহিনী অনুযায়ী এবং কলিঙ্গের বংশধরদের দাবি অনুযায়ী এই সংখ্যাগুলি অশোকের দ্বারা অত্যন্ত বেশি অতিরঞ্জিত করা হয়ে ছিল। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, কলিঙ্গ সৈন্যবাহিনী দুইবার ধ্বংস হয়েছিল। হাজার হাজার পুরুষ ও নারীকে নির্বাসিত করা হয়।


ঈশ্বরের প্রিয়তম রাজা, রাজা প্রিয়ারদর্শি, তাঁর রাজত্বের আট বছর পর কলিঙ্গ জয় করেছিলেন। একশত পঞ্চাশ হাজার জনকে নির্বাসিত করা হয়েছিল, এক লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল এবং আরো অনেকের মৃত্যু হয়েছিল অন্য কারনে ।। কলিঙ্গ জয় করার পর, দয়াময়-দীন-দেবীদের ধর্মের প্রতি একটি দৃঢ় ঝোঁক, ধর্মের প্রতি ভালবাসা এবং ধর্মের শিক্ষার অনুভূতি অনুভব করলো। এখন কলিঙ্গ জয়লাভ করার জন্য ঈশ্বরের প্রিয় রাজা গভীরভাবে অনুতাপ করে।অশোকের কলিঙ্গ যুদ্ধের প্রতিক্রিয়াটি অশোকের শিলা লিপিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কলিঙ্গের যুদ্ধ অশোককে বৌদ্ধ ধর্মবিরোধী থেকে অহিংস এবং ধার্মিক-বিজয় দ্বারা বাকি জীবনকে উৎসর্গ করতে অনুপ্রানিত করে। কলিঙ্গ বিজয়ী হওয়ার পর অশোক সাম্রাজ্যের সামরিক সম্প্রসারণ শেষ করেন এবং ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শান্তি, সাদৃশ্য এবং সমৃদ্ধির যুগ শুরু করেন। অঞ্চলের মৌখিক ইতিহাস থেকে জানা যায় যুদ্ধের পর বৌদ্ধের প্রতি তার নিষ্ঠা তৈরি করেছে একজন নারী ।

তথ্যসূত্র ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×