আমাদের গোপিবাগের দাদার বাড়ীটা বেশ পুরানো। পঞ্চাশ দশকের শেষের দিকে তৈরী এই দ্বিতল বাড়ীর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল দোতালায় এক পাশে বিশাল খোলা ছাদ। আমরা দোতালায় থাকতাম। আমারা বাবার বিভিন্ন পশুপাখির বিষয়ক নানান শখ ছিল । যার ভিতর ছিল কবুতর ও একুরিয়ামের মাছ। বাবার কবুতরগুলো বাড়তে বাড়তে গোটা ৫০ সংখ্যাতে পৌঁছেছিল। বাবার রোজ গুনে গুনে সেগুলোকে ঘরে ঢুকাতেন উনি না থাকলে আমাদের বাসার কেয়ারটেকার আমীর ভাই সেগুলোর খেয়াল রাখতেন। আমাদের ছাদের পেছন দিকে থাকা কবুতরের ঘরগুলোকে ডাকতাম পায়রা মহল। হঠাৎ একদিন থেকে এই পায়রা মহল থেকে কবুতর কমতে লাগলো। প্রথম কয় দিন একটা করে কমতে লাগলো। চুরি যাওয়া নিঁখোজ কবুতর কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। এরকম করে চার পাঁচ দিন চললো এ কদিনে পনরোখানা কবুতর চুরি হয়ে গেল। অতঃপর আমাদের পারিবারিক মিটিং হলো, এর একটা সুরাহার জন্যে সবাই নানান বুদ্ধি দিলেন, শেষমেষ বাবার বুদ্ধিটাই সবার মনে ধরলো, কারেন্ট জাল দিয়ে চোর ধরা হবে। কারেন্টের শক খেয়ে চোর মরবে না চিৎপটাং হয়ে বেকুবের মতন পড়ে থাকবে। আমরা সবাই তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলবো তারপর পুলিশের কাছে দিব। এররকম একটা সিদ্ধান্ত হলো। বাবার তদারকিতে গুনা তার দিয়ে চোর ধরার কারেন্ট জাল বানানো হলো। আমরা সবাই খুব উত্তেজিত কেননা, আমরা কখনো চোর দেখি নি, চোর ধরি নি। প্রতিদিন রাত এগারোটার পর আমাদের ছাদে যাওয়া বারন ছিল। সেই সময় থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত এই কারেন্ট জাল কার্যকর ছিল। প্রথম দিন কোন চোর ধরা পড়ে নি। সেদিন চোর আসে নি। দ্বিতীয় দিন চোর এলো না । আমরা সবাই বিচলিত চোর কি তবে আমাদের গোপন পরিকল্পনার কথা জেনে গেল । তৃতীয় দিন আমরা সবাই গভীর ঘুমে। রাত তিনটার সময় শুনি ধুপধাপ শব্দ। বড় একটা কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ। আমরা সবাই ছুটে এলাম দেখি একটা গায়ে তেল কালি মাখা খালি গায়ে একটা লোক পড়ে আমার মা'র গোলাপ বাগানে টবের উপর শুয়ে আছে তার হাতে খালি বস্তা। আমরা সবাই হাতেনাতে চোর ধরে ফেললাম। পুলিশ এলো বাড়ীতে চোরকে বেঁধে নিয়ে গেল।
আমার এই ছোটবেলার গল্প মনে হওয়ার একটা বিশেষ কারন জড়িত। এখন আমরা প্রায়ই দেখছি, হরতালের আগের দিন আমাদের গাড়ীতে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এই গাড়ীগুলো আমরা মাসের পর মাস ব্যাংক লোন দিয়ে শোধ করে যাচ্ছি। আমাদের অক্ষত গাড়ী থাকুক আর না থাকুক ব্যাংককের লোন সুদসহ শোধ করতে হচ্ছে। একে ওকে বলে কয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমরা কাউকে ধরতে পারছি না। জানতেও পারছিনা কাজটা কে করছে। কারা ইন্ধনাকারী আমরা জানতেও পারছি না। আমরা অন্ধকারে হাতরাচ্ছি। সরকার ও বিরোধী দল আমাদের কোন ক্ষতিপূরন দিচ্ছে না। পুলিশকে অভিযোগ করতে গেলে তারা আমাদের বলছে জানেন তো হরতালের আগের দিন এসব হয় আমরা কি করতে পারি বলেন, একটা জিডি করে রাখেন দেখি কি হয় ! আমরা আশাহত হই। আমরা যদি সেই ছোটবেলাকার কারেন্ট জালে এদেরকে বেঁধে পুলিশকে দিতে পারতাম। তাহলে হয়ত কেউ এমনটি করার সুযোগ পেত না। এক্ষেত্রে কিন্তু দুঃখের কথা মাসিক মাসোহারা পাওয়া কোন একদল পুলিশ এসে আপনাকে আটক করতে পারে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন এই অভিযোগে।
২৩ই মার্চ, ২০১৩
--------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২৮৫/৩৬৫
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:২০