-মা, আব্বু হাঁটতে যাচ্ছে । যাবা আব্বুর সাথে?
-উম্ম !
ফিরে কোলবালিশ টা জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়ল তমা । কিছুক্ষণ পরে নিলাপু ডাকতে আসল ,
-ও তমাঃ উঠ না । আজ না তোর ঈদ ?
তমা শুনল কি শুনলো না , তা কে জানে...
কিছুক্ষণ পরে আম্মু এসে ডাক দিল,
-পাখি, উঠবি না?
এক চোখ খুলে মা কে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল তমা।
কিন্তু আম্মু দেখে ফেলেছে!
-দুষ্ট মেয়ে ।।
আম্মু এসে উবু হয়ে তমার কপালে চুমু খেল ।
সঙ্গে সঙ্গে তমা দুই হাত দিয়ে আম্মুর গলা আর দুই পা দিয়ে আম্মুর কোমর
জড়িয়ে ধরে ফেলল । আম্মু কোলে নিল তমাকে , আর সুরে সুরে সেই গান-
- " ও পাখি তোর যন্ত্রনা ; আর তো জ্বালা সহে না ! "
তমা খুব কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
-আম্মু দেখ না আব্বু আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আজকেও নেয়নি,কথা নাই আব্বুর সাথে।
তমার চোখ কচলিয়ে কান্নার ঢং দেখে আম্মু হেসে দিল।
-আচ্ছা, আব্বু আসলে আব্বুর সাথে বাজারে যেও ।
-সত্যি?
-হুঁম।
আম্মু তমার ছোট ব্রাশটাতে মেরিল বেবি পেস্ট লাগিয়ে কাজে চলে গেল। তমা টুক করে ব্রাশ থেকে পেস্ট খেয়ে ফেলে নিলাপুর কাছে গিয়ে বলল,
-দেখো না আপু, আম্মু ব্রাশে পেস্ট দিতে ভুলে গেছে।
-ভুলে গেছে নাকি খেয়ে ফেলেছিস , হুম? দুষ্ট!
তমা ফিক করে হেসে দিল।
-ইইই করো ...
-ইইইইইই......
নিলা আপু, এইবার দাঁত মেজে দিল। পেস্ট খাওয়ার কোন সুযোগ নেই এইবার ।
তমা আয়নার সামনে গিয়ে নিজের কোকড়া চুল ধরে টেনে দেখল । নাক বরাবর এসেছে ।আবার চুল ছেড়ে দিতেই ট্যাঁও করে উপরে উঠে গিয়েছে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল।চুল বড় হয়নি , তাহলে পাশের বাসার ফাতেমা আপুর মতন বেশী করবে কি করে ...
-দেখো না নিলাপু, চুল বড় হয়নি ।
-আচ্ছা, এদিকে আয়, দেখি কি করা যায়।
নিলাপু কোকড়া চুল গুলো টেনে ঝুটি করে দিল দুইটা । বেঁধে দিয়েছে ফুলওয়ালা ব্যান্ড দিয়ে। তমার খুব প্রিয় ব্যান্ড যেগুলো জিদ করে কিনেছিল মাস খানেক আগে ।কিন্তু ছোট্ট চুল গুলোতে ঐ ব্যান্ড বাঁধাই যায় না । তাই এর মাঝে ছুলি কাটেনি । প্রতিদিন দেখে চুল মেপে, বড় হয়েছে কিনা। কিন্তু কষ্টের কথা,
টান দিলে চুল নাক অবদি আসে । তারপর ছেড়ে দিলে ট্যাঁও করে উপরে উঠে যায়। ঠিক মায়ের মতন কোঁকড়ানো ঘন কালো চুল টুকুই পেয়েছে।
নিলাপু কাজল দিয়ে কপালের কোনায় টিপ দিয়ে দিয়েছে । আর আঙ্গুল দিয়ে চোখে হালকা কাজল। ইশ! কি মায়াটাই না লাগছে!!
-নিলু , তমার কানের পিছে একটু কালি দিয়ে দে তো। নজর লেগে যাবে আমার সোনাটাকে।
নিলাপু কানের পিছে কাজল দিয়ে দিল ।
-আম্মু,আমি নিচে গিয়ে একটু দেখে আসি আমার গাছে ফুল ফুটেছে কি-না?
-যাও মা।
৯ টা বাজতে আর কিছুক্ষণ বাকি। তমা ঘড়ি দেখেছে। কিছুক্ষণ হল সে ঘড়ি চিনতে শিখেছে । এখন আর ফুল ফুটতে দেখতে সমস্যা হবে না ।
ফুল ফুটে গিয়েছে ।তমা অবাক হল, তার ঘড়িতে ০৯:০৫ বাজছে। ফুল ফুটতে দেখলো না কেন সে ? ফুল তো ঠিক ৯ টা বাজেই ফোটার কথা । যাক গে,তমা চেয়ে নিল-
- " আজকে যেন ছোটদা আসে, নাজিপুরা যেন আসে,আব্বু যেন তমাকে কোয়েল পাখির ডিম কিনে দেয়, তমার ছোট্ট চুড়ই পাখির ডানা যেন ভাল হয়ে যায় , সে যেন উড়তে পারে ... "
এই-ই যত চাওয়া তার ।ফুল নতুন ফুটলে বা ফুটতে দেখলে কিছু চাইলে নাকি তা পাওয়া যায় ।
শুক্রবার আজ। শুক্রবারে অনেক মজা হয় ।স্কুলে যেতে হয় না ।সারা দিন তমা খুব খেলে ।মাজে মাজে চাচ্চুরা আসে। ছোটদা আসে । তমা আব্বুর সাথে বাজারে যায়। অনেক অনেক মজা হয় । ঈদ মানে খুশি , শুক্রবার মানে খুশি । তাই শুক্রবারে তমার ঈদ ।
আব্বু চলে এসেছে আম্মু আব্বুকে বাজারের লিস্ট ধরিয়ে দিল । আব্বু যাচ্ছে বাজারে , তমাও যাচ্ছে বাজারে । আম্মুর কড়া বারন,
-তমাকে খবরদার ললিপপ কিনে দেবেন না । ললিপপ খেয়ে খেয়ে মুখের স্বাদ নষ্ট করে, সারাদিন আর কিছুই খেতে চায় না ।
-আরে, আমি কি আর দেই নাকি ?
বাজারের পথে কিছুদুর গিয়েই আব্বু তমাকে ললিপপ কিনে দিল।
-আম্মুকে বলিস না কিন্তু!
-আচ্ছা।
-স্বর্ণলতা, আমার স্বর্ণা মা ,কোয়েলের ডিম খাবি?
-হুঁম।
আব্বু তমাকে যে কত নামে ডাকে ... ২ ছেলের পরে শেষ বয়সের ছোট্ট একটা মাত্র মেয়ে । খুব শখের । মা তমাকে ডাকে পাখি । তাই কেউ ওকে পাখি ডাকলে ওর খুব রাগ হয় । আর বাবার তো তমার জন্য ডাক নামের অভাব –ই নাই ।
কোয়েলের ডিম কিনল বাবা ।
-ছোট্ট তমার জন্য ‘ছোট্ট ‘ছোট্ট ‘কোয়েলের ডিম।
তমা হেসে দিল।
বাসায় ফিরেই তমা আম্মুকে বলল,
-আম্মু, আব্বু আমার জন্য কোয়েল পাখির ডিম কিনেছে , আর কাউকে দিবা না কিন্তু।
-আর ললিপপ কিনে দেয়নি ?
-হুঁম ।
আব্বু চোখ টিপ দিতেই,
-না , না ;দেয়নি ।
আম্মুর তো সেই রাগ,
-মেয়েটাকে বিগড়াচ্ছ। এখন দাও ওকে খাইয়ে...
-আয় মা, খেতে আয়।
তমা হুম বলেই বড়দার কাছে চলে গেল।
-বড়দা, উঠবা না ?
-হুম,হুম।
-বড়দা...উঠ...
-হুম।
-উফফ! উঠ তো!
-আরেকটু ঘুমাই ! তুমিও আসো, ঘুমাও আমার সাথে__
বলেই বড়দা তমাকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুম । এই ফাঁকে তমা তার কাজ সারলো । বড়দার চোখে, মুখে , ঠোটে কাজল আর লিপস্টিক দিয়ে সেই এক কাণ্ড । আবার কপালে লিখেও দিয়েছে-
“সং”
“ সং " শব্দটা তমা তার বই থেকে শিখেছে । সঙের ছবি দেখেও খুব মজা পেয়েছে । বড়দা আয়নায় নিজেকে দেখে কি করবে তা ভেবেই তমা খুব হাসল ......
তারপর আব্বুর কাছে গিয়ে একটু পাউরুটি মুখে দিয়েই খেলতে দৌঁড় !!