বুঝতে পারিনি প্রেসার বেড়েছে। তাই দুপুর ৩ টার কিছুটা পর দুর্দান্ত রোদেলা গরমে দোকানে নিজের চেয়ারটি থেকে যখন মাথা ঘুড়ে পড়ে যাচ্ছিলাম তখনও কিংকর্তব্যবিমুঢ় আমি। দোকানের ছেলেটা আমাকে ধরতে ছুটে এলো। আমি তখন প্রচন্ড গরম আর মাথা ব্যাথায় অস্থির, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।
ওরা ধরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে প্রেসার মাপালো।
প্রেসার ৯০/১৮০
তখন বুঝলাম আমি শারিরিক ভাবে অসুস্থ্য, এবং খুবই অসুস্থ্য। তাপমাত্রা, প্রেসার, আর বয়স পুরোটাই স্ট্রোকের অনুকুলে। ভয় পেলাম।
অনেকটা নেশাগ্রস্থ্যের মত বাসায় ফিরলাম। মনে পড়লো আমার এক পরিচিত বন্ধুর কথা। কয়েক বছর আগে ষ্ট্রোক করে পুরো মুখটা এক পাশে বাকা করে ফেলেছে।
আয়নায় বার বার নিজেকে দেখে নিশ্চিত হলাম, বাকা হইনি।
কিন্তু বুকের ভিতরের হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি উত্তরোত্তর বাড়ছে, বুঝতে পারছি।
যথা সময়ে পরিবারের সবাই আমার সেবায় নিয়োজিত হলো।
মাথায় পানি ঢালা, তেল দেয়া, তেতুল গুলে খাওয়ানো, ইত্যাদি।
তাদের প্রান ঢালা আন্তরিকতায় আমি কিছু সময়ের মধ্যে অতিষ্ট এবং ধাতস্থ হলাম।
বোকাসোকা বড় ছেলেটা আমার পাশে বসে আমার মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালায় তার মাকে সাহায্য করতে লাগলো।
ছোট ছেলেটা আবার শরবত বানাতে উস্তাদ। লেবু চিপে পানি আর চিনি দিয়ে কি করে মজাদার জিনিশটা বানাতে হয় সে কি করে যেনো এ অল্প বয়সেই রপ্ত করে ফেলেছে।
……………………
পাঠক সম্ভোবত এ পর্যন্ত পড়ে বিরক্ত হয়ে ভাবছেন এটা আমার নিতান্তই একটি তুচ্ছ পারিবারিক পোষ্ট।
……………………
চেয়ার থেকে যখন আমি কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছি ঠিক তখন আমার অনুভুতিটা কেমন ছিল-
*সম্ভোবত আমি মারা যাচ্ছি। সেহেতু আমার প্রান প্রিয় বন্ধু সামুর কাছে আমার ৩৫ তম কথাটি (পোষ্টটি) আর বলা হলোনা।
প্রেসার মেপে ডাক্তার যখন জানালো আমার প্রেসার অত্যাধিক বেশি তখন-
*সামুর সাথে হয়তো আর সুস্থ্য প্রীতম’র দেখা হবে না।
যখন দুর্বল শরীরটা টেনে হিচড়ে বাসায় আনছি তখন-
*প্রিয় সামু, তোমাকে আমার অনেক কিছুইতো বলার বাকী রয়ে গেলো। সেগুলোকি বাকীই থেকে যাবে?
বাসায় যখন ঠান্ডা পানিতে মাথাটা কিছুটা ঠান্ডা তখন-
* চোখে চিক চিক করছে অস্ত্রু। প্রিয় বিজন রয়, চাদগাজী, রোষানল, গুলশান কিবরীয়া, শায়মা, প্রামানিক, জীইবনের গল্প, সেলিনা জাহান প্রিয়া, রাবেয়া রাহীম, চন্দ্ররথা রাজশ্রী, বনমহুয়া, সাঈদ নিজামী, নীলপরি, মনিরা সুলতানা, সানবীর খাঁন, অরন্য রাইডার, বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় আরো অনেকে যাদের নাম এই মুহুর্তে খুজে বের করতে পারছিনা। আপনাদের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক কতটা নিবিড় তা আগে বুঝতে পারিনি।
গত বেশ কিছু মাস আমার আত্মীয় আর বন্ধুদের সামুতে একাত্ব করার যে মহান ব্রত হাতে নিয়েছিলাম তার ফল পাচ্ছি এখন হাতেনাতে।
এখন ওরা ক্লাশ অব ক্লান ছেড়ে সামুনে সময় দেয়।
ফেইজবুকের সস্তা অথচ লম্বা সময় নষ্ট না করে সামুর জ্ঞানের ভান্ডারে জ্ঞান অন্বেষন করে।
আর আমি?
যদি এ যাত্রায় বেচেঁ যাই তবে সামুর সাথে আজিবন একসাথে পথচলার সংকল্প রইল।
আর যদি না বাচিঁ?
তবে আমার এ ৩৫ তম পোষ্টটি রইল সামু তোমার প্রতি। এটাকে চিঠি ভেবে পৌছে দিও আমার হৃদয় বিধৌত তোমার অসংখ্য ব্লগারদের কাছে। তারা যেনো প্রতিটি ব্লাগারকে আপন করে নিয়ে সামুর সম্মানকে উন্নত করে রাখে সব সময়।
শেষ খবর: আজ রাত ৯:২৩।
প্রেসার- ৮০/১৫০।
জর এখনো ছেড়ে যাচ্ছেনা। গত একটানা ৪ দিন ধরে রেখেছে।
সবাইকে আমার জন্য দোওয়া করার আকুতি জানিয়ে শেষ করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:২৭