ণির্মা তার সাথে আমার বিবাহিত জীবন প্রায় ১০ বছরের । টিউশন করতে গিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রেমের ফাদেঁ ফেলে ওকে বিয়ে করা কিন্তু আমার কোন কিছু নেই পর জেনেও ওর আক্ষেপ ছিল না । শুধু হেসে বলছিল, তুমি যে গুল মারবে আগেই জানতাম কারণ টিউশন পড়ানো ছেলেদের বাসার আর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকে না বেশির ভাগ সময় । পর আতস্ত হলুম , যাইহোক এই নিয়ে ও আর কোন ব্লেম দিবে না । কোন স্থায়ী জব না খুজেঁই টিউশনির ওপর জোর দিয়ে চলছিলাম, ণির্মা বলেছিল একটা স্থায়ী জবের খোজঁ করতে ! কিন্তু আমার যা হয় একটু ভালো মত চলে গেলেই আর অন্য কিছু চিন্তে করি না । হঠাৎ করে সিলেবাস এর পরিবর্তন এলো , এতদিনকার গতবাধা নিয়মগুলোর পরিবর্তন হল, প্রথমবার ছাত্ররা আমার দ্বারা ভালো রেজাল্ট না করাতে পেরে, গার্ডিয়ানরা অন্যথায় ব্যবস্থা নিল আর আমি পড়ে গেলাম অথৈজলে । কোন রকম ভাবেই , আর মাসিক খরচ বাসা ভাড়া দিতে পারছিলাম না । বলে নেয়া ভালো, এর মধ্য আমার দু'টো সন্তনের জন্ম হয়েছিল, রিহান ও শৈবালের একজনের ৮ বছর আরেকজনের ছয় ।
মাস দুয়েক পরের ণির্মা নিবন্ধন দিয়ে এক স্কুলে টিকে গেল । কিন্তু সেটা শহরতলী থেকে অনেক ভিতর, একদিনের ট্রেন পথ । আমার ওপর সমস্ত ভার দিয়ে ণির্মা চলে গেল গ্রামীণ জীবনে স্কুল মাষ্টারীনি করতে । পর নিজের রান্না করে, সন্তানদের খাওয়াতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম জীবন কত কঠিন । দু'একটা টিউশন করে , আমার আর কিছুই ছিল না , ণির্মার আয়েই প্রধান উৎস হলো । মাস দুই কেটে গেল, ণির্মা কিছুতেই ছুটি পাচ্ছিলো না , সপ্তাহিক একদিনের ছুটিতে তো আর আসতে পারে না । পর আমিই গেলাম ওর কাছে , ও যেন আরো সুন্দরী হয়ে উঠলো , কি জানি অনেকদিন পর থেকে কাছের মানুষরা কি সুন্দর হয়ে উঠে কিনা । ণির্মাকে বলেছিলাম দু'দিন থাকবো, কিন্তু পাচঁদিন হয়ে গেল আমার ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নাই যেন । ণির্মা স্কুল থেকে ফিরে আসলে, সারাক্ষন ওর ওপর পড়ে থাকতাম , অনেকদিনের জমে থাকা জৈবিকতার স্বাদ নিচ্ছিলাম, ণির্মাও যেন তাই চাছিলো । দ্রুত করে স্কুল থেকে ফিরে আসতো আর নিজেরা অন্তরঙ সময় পার করতাম । সপ্তম দিনের দিন, ণির্মা সকালে ককিয়ে উঠলো , হুহুকরে কেদেঁ উঠলো । ণির্মা বললো, আমরা কি পাগল হয়ে গেছি, তুমিও পারলে কি করে আমার সন্তান দু'টুকে রেখে আসতে ? আজ স্বপ্নে দেখলাম বড়ছেলে টা ভাত রান্না করতে যেয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলছে ! সত্যিই যদি এমন হয় ? আমি বললাম, পাশের বাসার মাসিকে তো বলে এসেছি একটু সাহায্য করতে । ণির্মা কিছুতেই মানছিল না , না তুমিই যাবে , আজই যাবে, কিছুক্ষনপরই যাবে । আমি বললা, আগামী কাল যাই? ণির্মা রক্তচোখ করে বললো, তুমি শুধু আমার শরীরটাই চিনলে ! যা স্বপ্ন দেখলাম তা যদি সত্য হয় কোনদিন ক্ষমা করবো না তোমায় মনে রেখো । ণির্মার এমন কথা শুনার পর , পাশে রাখা ফুলপেন্টটা পড়ে নিলাম । চিরুনি দিয়ে একটু চুল আচড়িয়েই বের হলাম , ণির্মা হাতমোট করে কিছু টাকা দিয়ে বললো, ওদের জন্য ফল নিয়ে যেয়ো । তুমি আর এসো না এর মধ্য , স্কুলে কথা বলছি দেখি সামনের মাসে চারদিনের ছুটি নিয়ে নিজেই যবো । আমি বের হয়ে গেলাম, কোন কথা আর বললাম না । রেলট্রেনে ফেরার পথে ভাবছিলাম যদি স্থায়ী কিছু পেয়েযেতাম ভালো হতো , সত্যিই ণির্মাকে ছেড়ে আসতে কষ্ট হচ্ছে । জানি আমাদের সন্তানগুলোর কিছু হয়নি, যেয়ে দেখবো আমার অনুপস্থিতে ওরা ভালোই আছে , ইচ্ছেমত খেলতে পাচ্ছে , স্কুল ফাকিঁ দিতে পাচ্ছে । কিন্তু একদিন ণির্মার স্পর্শ ছাড়া যে আমি পাগল হয়ে যাই ; কিভাবে বাচঁবো আমার সাধারণ জীবনে । শুধু যৌনর্তার ঐ মুহূর্তছাড়া যে আমাদের জীবনে আর প্রয়াস নেই , বাকি সবখানেই তো অর্থ, আর মোহ । জীবনটা আরো যদি সুন্দর হতো । যদি কোনদিন ব্যর্থতা ও অনন্ধকার না থাকতো । ণির্মাকে যদি লক্ষী স্ত্রীর মত যদি রাখতে পারতুম । এই সব মনে করতে করতেই ঝিমিয়ে গেলুম, ঘুমিয়ে গেলুম । রেলট্রেন আকাশমনী ষ্ট্রেশনে এসে থামলো , তখন বেলা পড়ে এলো , কত কত মানুষ উঠলো আবার নেমে গেল । একটা ছোট গরীব মেয়ে এসে বসলো , বার বার এদিক -ওদিক তাকাচ্ছিলো , ওর মুখটা ছোট্টবেলার আমার ছোট্টবোনের মত । অনেকক্ষন তাকিয়ে রইলেম ওর মুখের দিকে । ওর কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল । পরের ষ্টেশনে ও নেমে গেল । এর পর ষ্ট্রেশনে আমার গন্তব্য , বার বার মন চাচ্ছিলো পরবর্তি ট্রেন ধরে ণির্মার কাছে ফিরে যাই , ওকে যেয়ে মিথ্যা বলি হ্যা সন্তানদের দেখে আসছি ওরা ভালোই আছে, নিয়মিত স্কুলে যায় , ক্লাস পরীক্ষায় ভালো করছে ওরা ইত্যাদি ইত্যাদি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:০৬