আমাদের পাড়াতে এক চায়না মত এক মধ্যবয়স্ক নারী থাকতো( জমি কিনে বাড়ি করেছিল) আমরা তাকে ডাকতাম চায়না মাসী বলে। নামটা আমার দেয়া ছিল । তার আসল নাম আমার জানা ছিল না । এবং পাড়াতে সবাই ছোট বড়রাও তাকে চায়না মাসী বলে ডাকতো । এই নামটি নিয়ে খুবই বিরক্তবোধ করতো , বিশেষ করে তার আত্মীয় যখন তার বাসায় বেড়াতে এসে শুনে সে এই পাড়াতে এসে মাসী হয়ে গেছে বিষয়টা তার কাছে খুবই দু:খ জনক ছিল । কিভাবে জানি সে জেনে গেছিল তার এই নামটা আমি রটিয়েছি , পর সে একটি পথে আমাকে দাড়িয়েঁ দেখতে পেয়ে এসে ঝগড়াঁ করে দেয় তার এই নামটা কেন আমি রটিয়েছি । আমি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ছুটে যেতে চাইলেও কাজ হয় না , সত্যিই কোন বিশেষ সোর্চ থেকে সে জেনেছিল আমিই এটা রটানোর মুল ! তাই বার বার সে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছিলো । এরপর সত্যিই তার ও নামে ডাকিনি আর কিন্তু একবার যেটা রটে যায় তা তো আর থামে না !
একবার এক দুপুরে সদাই কিনতে দোকানে গেলে পর দেখি কিছুক্ষন পর ঐ চায়না মাসী আর একটি সুন্দরী/লাবন্য এক মেয়ে আসে । আমাকে দেখে চায়না মাসী ঐ মেয়েকে দেখিয়ে বলে এই ছেলেটা্ই ঐ নামটা রটিয়েছে ! আমি চুপ করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলুম ও দাত কামড়ে ,রাগচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকালো । মেয়েটা উত্তেজিত হয়ে আমার সামনে আসছিলো, ওর মা থামিয়ে বললো, এখন কিছু বলিস না ! যা করার পর করতে হবে । আমি আর কিছু বললাম না , তাদের কথায় গুরুত্ব দিলাম না । পর জানলাম ঐ মেয়েটা চায়না মাসীর মেয়ে , রাজশাহী মেডিক্যালে পড়ে বেকেসনে বাড়ি এসেছে ।
চায়না মাসির বাড়ির পাশ দিয়ে বিকেলে খালপাড় যেতাম একটু ফ্রেশ হওয়ার জন্য । সাইক্যাল চালিয়ে যাচ্ছিলাম , ওদের ছাদ থেকে মাটির চাকা দিয়ে আমাকে এলোপাথারি ঢিল মারছিল । পর বুঝলুম তার ঐ মেয়ের কাজ এটা । খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম । মনে মনে ভাবছিলাম , চায়না মাসির কাছে যেয়ে সরি বলবো, ভুল শিকার করে পর যদি এমন করে তাদেরও ধরে ডেঙ্গাবো !
পরদিন নিশ্চুপ দুপুরবেলা , ওদের বাড়ি গেলাম । কড়াঁ নারলাম , তার মেয়ে ভেতর থেকে জানালা থেকে দেখে বললো , আপনি কেন ? কেন এসেছেন ? মা বাড়ি নেই । আমি তাকে বললাম, আসলে আমি সরি , মজা করে তাকে ঐ ডেকে যে পুরো এলাকা ছড়িয়ে যাবে ভাবতে পারিনি । এজন্য ভুল শিকার করতে এলুম । এরপর মেয়েটা আবারও উত্তেজিত হয়ে আমাকে নানা অভিশাপ দিচ্ছিলো, আল্লা আপনার বিচার করবে ? আপনি কেন এমন করলেন ! জানেন মাসী বলে ডাকেন এই জন্য অনেকে মনে করে আমরা অন্য ধর্মের , পারবেন ফিরিয়ে দিতে আগের নাম ? পারবেন নাতো , তো এসেছেন কেন ? চলে যান আপনি । খুব খারাপ আপনি । আমরা কোনদিন আপনাকে ক্ষমা করবো না । এরপর মেয়েটি আরো অভিশাপ দিচ্ছিলো, বিরক্ত হচ্ছিলাম । বিতৃঞ্চা হয়ে মনে মনে বললাম, আরো অপপ্রচার চালাবো এমন করলে ! এমন আচরন মানুষ করে ।
আগেই বলেছিলুম মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী ছিল । তার রুপের গুনেই এলাকার ইউপি চেয়্যারম্যানের ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয় । এরপর ইউপি চেয়্যারম্যানের ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে আমাকে একদিন বলে ও আমার পা ভেঙ্গে দিবে । আমিও লাগামছাড়া ঐদিন বললাম, আমি ওমন ইউপিচেয়্যাম্যানের ওপরে মুতি । এরপর মেয়েটা কান্নাকাটি শুরে করেদিল , এবং লোক জরো করে বলতে লাগলো আমি নাকি ওকে মেরেছি ! ওকে ,ওর মাকে --চুদি ! বলে গাল দিয়েছি । ওর স্বামী, ওর শশুরকে কুকুরের বাচ্ছা বলিছি । এই নিয়ে পাড়াতে এক হট্টগোল পেকে গেল , ওর স্বামী লোক জরো করছিল আমাকে পেটাবে বলে , পর আমার নামে নানা অপবাদের/নারী নির্যাতনের মামলাও ঢুকিয়ে দিল । আমি তখন পলাতক । পুলিশ কিছুদিন পর পর বাসায় আসছিল , আমার খোজেঁ ! বাসার সবাইকে হুমকি দিচ্ছিলো আমাকে না পেলে তাদের ধরে নিয়ে যাবে । পর পারিবারিক চাপেই পুলিশের কাছে ধরা দিলাম , এবং বাসা থেকে অনেকে টাকা জলের মত বের হয়ে গেল ! আগে দাদুরা বলতে মামলাতে যেয়ো না , কোটের মাটিও টাকা খায় । মনে মনে নিজেকেই গাল দিলাম , সামন্য একটা বিষয় নিয়ে এত কিছু ! আমিই বা করবো কি ওদের কাছে গিয়েছিলাম তো সরি বলতে , যেমন আচরন ওদের ! পশুর মত আচরন । যাইহোক দু'মাস পর হাইকোড করে ছাড়া পেলাম ।
জেল থেকে বের হয়ে দেখি সবাই যেন পরিবর্তন হয়ে গেছে । কাছের বন্ধুরা আর কাছে ভিড়ে না , জেল ফেরত আসামী সুতরাং আমি আমি ভালো না । বার বার বাবা আমাকে দুষারুপ করছিল , কত কত টাকা জলের মত বের হয়ে গেল , মাও যেন দেখতে পাচ্ছিলো না । নানা ভাবে আর টিকতে পারছিলাম না । হয়তো পরিবার থেকে একটু শান্তনা পেলে , ভালো লাগতো । অপরদিকে মনে মনে প্রতিশোধ নেবার বাসনা জেগেছিল , জেলে দু:খের কথাগুলো ভাবলে ভুলে যাই ! না আর না , কেউ জোর করে গায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করলেও না ।
একটা যব খোজঁছিলাম , কোন কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকলে হয়তো ভালো লাগবে । সারাদিন এরপর বাসায় শুয়ে থাকতাম খুব একা । যেন পৃথিবীটাই নিষ্টুর ! মানুষতো আরো । একবার বিকেলে আমার প্রিয় খালপাড়ে গেলাম , একাই খালের পাড় ব্রিজে বসে রইলাম ! জলের দিকে তাকিয়ে জল এবং পৃথিবীর গভীরতা ভাবছিলাম ! হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন থাক্কা দিল আমি নিচে পড়ে গেলাম , পর দেখলাম ইউপি চেয়্যারম্যানের ছেলেটা । কেউ তো দেখিনি তেমন চলে এলাম বাসায় । মনে মনে জিদ চাপলো ওদের কিছু শাস্তি দিতে হবে , কিন্তু বাসার মেমবারদের ওপর আবার চাপ পড়বে কিছু হলে । দুপুরবেলা তালপুকুরে স্নান করছিলাম , চায়নামাসী ও তার মেয়ে আসলো , দেখি তাদের দেমাগ আরো বেড়েছে ! কমেনি । এমন এমন বাজে গাল দিচ্ছিলো মন চেয়েছিল মা ও মেয়েকে জলে ঢুবিয়ে মারি । যাইহোক মধ্যবিত্তদের রক্তের জেদের কোন মুল্য নেই , শুধু মাটির নিচে চেয়ে চলে আসলাম । কেউ মিশতো না , সবাই ভয় পেত, একা একা কান্নাপেত খুব, একা থাকা যায় না , বেকার তার মধ্য । ঠিক করলাম পড়াশুনা শুরু করবো , পাশাপাশি চাকুরীর ট্রাই । আমাদের এলাকা থেকে মহানগর খুব কাছে , বিসিএস কোচিং এ ভর্তিও হলাম । ভালোই লাগছিল, দুরের মানুষ তো আমার বাড়ির খবর জানে না , আলাদা একটা সার্কেল তৈরী হয়েছিল ।
বাসায় ফিরতে ফিরতে আমার সন্ধ্যা হতো , আর সকালে বের হতাম । যখন বাসা থেকে বের হতাম কোথাও বসতাম না, চলে আসতাম , কেউ আর ডাকতোও না । ইচ্ছে করেই সন্ধে করে বাড়ি ফিরতাম । এলাকাতে কোথাও বসতাম না । একদিন সন্ধেয় অন্যমনস্ক হয়ে সাইক্যাল চালিয়ে ফিরছিলাম , হঠাৎ করে অন্ধকারে ব্রেক না ধরতে পেরে এক মেয়ের গায়ে লাগিয়ে দিলাম তাও আবার চায়না মাসির মেয়ে ! সেবার আরো উত্তেজিত হয়ে উঠলো মেয়েটি , পায়ের স্যান্ডেল নিয়ে আসলো আমাকে মারতে ! কেন যে বার বার চায়না চলে আসে ! যতবার ভুলতে চাই । পৃথিবীতে এত মানুষ থাকতেই কেন বেছে বেছে এর গায়ে লাগবে ! এত দু:ভাগা কেন আমি ! আর কেন এত অপমান সইতে হবে ! মেয়েটা উত্তেজিত এত চিৎকার করে লোক জরো করলো , সবাই বিশ্বাস করলো ওকে আমি প্রতিশোধ নেবার জন্যই ওর গায়ে সাইক্যাল তুলে দিয়েছি । আমার বাবাও আসলো , আমি কিছু বললেও আর বিশ্বাস করলো না । আমাকেই গাল দিচ্ছিলো সে , ঐ মেয়েরা কাছে বাবা হাত জোর করে ক্ষমা চাইলো ! সত্যিই খারাপ লাগলো আমার । চায়না মাসী ও তার মেয়ে বাবাকেও গাল দিল, ওরা বললো, কিভাবে সন্তান জন্ম দিয়েছেন আপনি ? চায়না মাসীর মেয়ের বাজে মুখে বললো - চুদে জন্ম দিয়েছেন তো ? আমি এক মুর্হুতেই উত্তেজিত হয়ে গেলাম , ওদের দিকে মারতে গেলাম ! ওর মেয়ে দুরে সরে গেছিলো আমার উত্তেজনা দেখে, সবাই ধরে রাখছিল আমায় দু, একটা শূর্ন্যতে ঘুসি ছুরলাম ! ওদের কারো গায়ে লাগলো না । বাবা আমাকে জোর করে নিয়ে এলো, সেদিন বাবা পিঠে ঘুসি দিতে দিতে আমাকে বাসায় নিয়ে এলো । বাবা কখনো মারেনি আমাকে সেদিন ইচ্ছেমত আমাকে মারলো । চুপ হয়েছিলাম শুধু । শরীরের উত্তেজনা কমেনি তখনো ! পরদিন চিন্তে করলাম, ওদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিব , মা মেয়েকে যদি এক সাথে পাই রেপ করে দিব । এবং এই চিন্তে নিয়ে চাকু, ছুরি,কনডম আর কেরোসিন নিয়ে বের হয়ে গেলাম মাঝ রাত্রিরে । পর ওদের বাসায় ছুরি দিয়ে বাড়ি দিতে লাগলাম , আর বললাম :- মাগী তুই একবার বের হো ! ওর মেয়ে , তোকে চুদে তোদের গায়ে আগুন ধরাবো । পর বুঝলাম ও বাড়িতে কেউ নেই , মনের জিদেই ওদের ফাকাঁ বাড়িতে আগুন ধরালাম । পর ওরা আর মামলা করলো না , আমাকে এই বাজে পশুত্ব রাগটাকে হয়তো ভয় পেয়ে ধমে গেছে । বাবা তবুও ওদের বাসার আগুনের পুড়ার ক্ষতিপুরন দিল আর আমাকে মহানগর পাঠিয়ে দিয়ে বললো, কখনো যদি মানুষ হতে পারিস আসিস না হয় আর আসিস না । দু 'বছর এক মেসে থেকে বিসিএসের পড়াশুনা করলাম, ৬ ঘন্টা পরিমান ঘুম আর সারাদিন পড়াশুনা । কেন জানি মনে হচ্ছিলো , বিসিএস ক্যার্ডার হতেই হবে আমাকে , একটা রাগ চেপে বসেছিল । দু'বছর পর দায়রা ম্যাজিস্টেটে টিকে গেলাম ।
দু'বছর ঈদ পাবন কোথাও যায়নি । দু' বছর পর বাবা-মার জন্য মিষ্টি আর তাদের জন্য একসিট করে কাপর নিয়ে গেলাম । তখনও বলিনি , আমি বিসিএস এ ক্যার্ডার । বাবা আমাকে দেখে হাসলো, কিরে এতদিন পর এলি ? পর বাসায় সবাই একত্রিত হলো । বিকেলে বের হলাম , পুরনো বন্ধুদের খোজঁলাম ওরা কেউ বিয়ে করেছে , পরিবারের ব্যবস্যা গুচ্ছাচ্ছে , কেই এখনো কিছু করছে না । দু'বছর পরও কেউ তবুও মিশতে চায়না । কতটা খারাপ বলে প্রতিয়মান হয়েছিলাম ওদের কাছে । আমাকে নিয়ে একটা উদাহরন ছিল নাকি , কেউ ওর মত খারাপ হইয়ো না । পর বাসায় বললাম আমার সাফল্যর কথা সবাই খুশি হলো , অনেক আত্মীয়স্বজন আসলো , আমার দীর্ঘজীবন কামনা করলো ।
এক চায়না মাসী নিয়ে কত কিছু । সত্যিই এই ছোট্ট জীবনে মানুষ চেনা গেল । মানুষ কতরকম । বাসার মধ্য সবাই মিলে গল্প করছিলো , হঠাৎ বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম ! ও বাবা চায়না মাসীরা কেমন আছে গো ? বাবা -এবং সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেল । কোন কথা বললো না । সবার মুখ দেখে বুঝলাম হয়তো ওরা সামাজিক ভালো আছে , ঐ চ্যাপ্টার আর ওঠাতে চায় না । পরদিন সকালে উঠে মনিং ওয়ার্ক করছিলাম , কে জানি মনে হলো আমাকে দেখে রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে আছে ! চোখের আলোতে ধরতে পারিনি বুঝি ওটা চায়না মাসী । দু'দিন থাকলাম বাসায় । পুরনো বন্ধুরা আসলো, সবাই কত গল্প পুরনো দিনের । কারো ভালো কিছু হলে বুঝি বন্ধুত্ব বাড়ে । মানুষ সত্যিই আজব এক । কি যে চায় । ক্ষতটা আজীবন মনে থাকবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০৪