হারানো প্রেম খুঁজে ফেরা মানুষ রা কেমন হয় ? যে প্রেম হৃদয়ে বার বার দোল দেয় । একদিন না পেলে তাকে, শূন্য মনে হয় চারপাশ। মনে হয় পৃথিবী মোহ যেন ফুরিয়ে গেছে । যার চোখের চাহনী শতাব্দীর ক্ষয় হয়ে যাওয়া সভ্যতা ফিরে পায় সে যদি বেঁচে থেকেও পরবাসী হয়? সে যদি কখনো না ফিরে হৃদয় নীড়ে? কি করবে তুমি ? তার প্রতি রাগ করবে? তাকে ভাঙবে কাচের মত ? তার অমঙ্গল কামনা করবে?। সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো ফুরায় না। প্রেমিকা কে না পেলেও তার অমঙ্গল কামনা করেনা। হৃদয় হারানো প্রেমিকটি
যাকে পাওয়া অসম্ভব জেনেও ভালোবেসে যায় তার ঘ্রাণ আঁচল মায়া অবিরাম বেচেঁ থাকার ছন্দ তুলে। হারানো প্রেম কোন কোন সময় আত্মরোগ ধারণ করে যেমনটা চিহ্ন পাই শরৎচন্দ্রের 'দেবদাসে'।
বাংলা সাজহিত্যর কালজয়ী উপন্যাস 'দেবদাস' প্রকাশিত হয় ১৯১৭ সালের ৩০ই জুন।বাংলা সাহিত্যর সব চেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাসের নাম 'দেবদাস'। উপন্যাসিককে চিনে না অথচ তার সৃষ্ট চরিত্রের গল্প জানে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক আছে। এখানেই লেখকের সফলতা। যখন চরিত্রগুলো শুধু উপন্যাসিকের থাকে না এর ভেতর মানুষের মমতা ,ভালোবাসা,স্নেহশীলতা কাজ করে একশত বছর পরও যে চরিত্রের ভেতর মানুষের প্রেম খুঁজে পায় যে চরিত্র অমর হয়ে আছে, ভোরের আলোর মত উচ্ছ্বাস ছড়ায় চারপাশ।
মুখরিত করে প্রেরণার মুর্হুতগুলোকে। বাংলা সাহিত্য দেবদাসের মত অন্য কোন উপন্যাস এত জনপ্রিয় তা পায়নি কখনো।
'দেবদাস' প্রকাশের পর শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয় তা ছড়িয়া যায় আকাশচুম্বী। এক নিটোল প্রেমের উপাখ্যান আজও মানুষের প্রাণে বেচেঁ আছে। 'দেবদাস' উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্যর অন্য সব জনপ্রিয় প্রেম উপন্যাসের মত মানব মানবীর চাওয়া পাওয়া-নাপাওয়ার প্রতিছবি প্রকাশিত হয় উপন্যাসে। 'রোমিও- জুলিয়েট’,যেমন ইংরেজি সাহিত্যর রোমান্টিক জনপ্রিয়তার শীর্ষ আছে তেমন 'দেবদাস'। একশত বছর পার করলেও দেবদাসের উপন্যাসের চরিত্রগুলো যেন মানুষের ভেতর স্পর্শ-ময় হয়ে আছে। মহানগরের শিক্ষিত শ্রেণী নয় শুধু,দেবদাসের গল্প গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে আছে গ্রামের মানুষ প্রেমের রোমান্টিক বই মানে 'দেবদাস' কেই জানে। শরৎচন্দ্রের 'দেবদাস' মাঠে-ঘাঁটে ছড়িয়ে গেছে। গ্রামে শীতের সময় নানা নাটকের আয়োজন করা হয় যেখানে দেবদাস পার্বতীকে নিয়ে নাটক পর্যন্ত হয়। গৃহস্থালী নারীরা সাংসারিক কাজ শেষ করে পাড়াগাঁ তে গল্প -গুজব কর, যেখানে উঠে আস তো দেবদাস পার্বতীর প্রেমের গল্প।
'দেবদাস' হৃদয়স্পর্শি উপন্যাস শরৎচন্দ্রের মত যদি বলি, 'গভীর ভালোবাসা শুধু কাছে টানে না দুরেও ঢেলে দেয়'। যেমনটা ঘটে 'দেবদাস' উপন্যাসে দেবদাসের ভাগ্যে-তে। শরৎচন্দ্রে তার উপন্যাস বাঙালী নর-নারীর প্রেমের গল্পই জানান দিয়েছেন তার উপন্যাসে। দেবদাস-পার্বতী ছোটবেলায় ছিল খেলার সাথী, এক সাথে স্কুল যাওয়া, বন-বা-ধরে ঘুরে বেড়ানো দেবদাস কখনো রাগ করে,পাবর্তীকে শারীরিক আঘাত করতো, পার্বতী সব সময় সয়ে যেত পার্বতী দেবদাস কে সব সময় দাদা ডাকতো। দেবদাসের ডাকনাম ছিল, দেব, আর পার্বতীর ডাকনাম, পারু। দেবদাস-পার্বতী দু'জন খেলার ভেতর দিয়েই একদিন বড় হয়ে উঠে। পার্বতী পরবিবার থেকে দেবদাসকে পছন্দ করে পার্বতীর সাথে দেবদাসের বিয়ে দিতে।
দেবদাসের বাবা ছিল জমিদার বংশের আর পার্বতীর বাবা সাধারণ বেচা কেনা করা ব্যবসায়ী। পাবর্তীর পরিবার থেকে দেবদাসের পরিবার কে দেবদাস-পার্বতীর বিয়ের প্রস্তাব দিল। পার্বতীর পরিববার কে হেয় করা হলো। পার্বতীর পরিবার জেদ করলো অন্য জায়গায় পার্বতীর বিয়ে দিবে। দেবদাস-পার্বতী কেউ পরিবারের বিপক্ষে যেতে পারেনি। পার্বতী বরের বাড়ি চলে গেল অন্যদিকে দেবদাস কলকাতায় মদের আড্ডায় নিজেকে বিলিয়ে দিল। পার্বতীর শূন্যতা দেবদাসকে পেয়ে বসলো। একদিন মদের আড্ডার আসরে পরিচয় হলো, চন্দ্রমুখির সাথে। চন্দ্রমুখী ওকে ভালোবাসা দিতে চায় কিন্তু দেবদাস পার্বতীর প্রেমে আসক্ত এক মাতাল, এক সময় দেবদাসের জীবন থেকে চন্দ্রমুখিও চলে যায়। পার্বতীও সাংসারিক হয় আর অন্য দিকে দেবদাস নিজেকে মদের কাছে সমর্পণ করে। পার্বতীর বরের বাড়ির পাশে দেবদাস মারা যায়,পার্বতী কাজের লোকের মাধ্যমে খোঁজ পায় দেবদাস মারা গেছে। পার্বতী পাগলের মত ছুটে থাকে মৃত দেবদাসের কাছে, পার্বতীকে বাসার সবাই আটকানোর জন্য দৌড়ে যায়। পার্বতী আর কখনো দেবদাসের দর্শন পায় না।
প্রেম হলো মানুষের সাধারণ প্রয়োজন প্রতিটি মানুষের ভেতর নায়ক হবার ইচ্ছা জাগে। ইচ্ছা জাগে কোন নারী কে আপন করে পাবার আর ইচ্ছা থেকেই স্থাপন হয় প্রেম। প্রেমের উদাহরণ সৌরুপ যেমন, লায়লি-মজনু,শিরি-ফরহাদ, আসে তেমনি আসে 'দেবদাস পার্বতী'। শহরতলীর ফেরি ঘাট থেকে শুরু করে মহানগরের ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাত বট তলার বইয়ের পাশে পাওয়া যায় বাংলার প্রেম উপাখ্যান খ্যাত 'দেবদাস' উপন্যাস।
শহরতলীতে তরুণ-তরুণীর প্রেম পড়ার আগে দেবদাস পড়াটা যেন বাধ্যতা মুলকছিল। প্রেমের স্মৃতি সৌরুপ প্রেমিক -প্রেমিকা কে বা প্রেমিকা -প্রেমিক কে 'দেবদাস' বই উপহার দিত। বাঙালীর রক্তের ভিতর দেবদাস পার্বতীর গল্প বহমান। 'দেবদাস' শব্দটার সাথে প্রেমে ছ্যাঁকা খাবার বিষয় যেন কাজ করে, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি,মুখে সিগারেট,হাতে মদের বোতল। প্রেমে ছ্যাকাঁ খাওয়া মানুষরা হঠাৎ করে উদাস হয়ে যায় তার আর ইচ্ছে জাগে না জীবনের প্রতি। পার্বতীর মত কেউ যেন জীবন থেকে প্রেম নিয়ে গেছে, মোহ,কল্পনা আচঁলের ঘ্রাণ বার বার ভিতর আন্দোলিত প্রেমিককে। সত্যিকার অর্থেই দেবদাসের মত উদাস করা মানুষ দেখা যায়, যারা নারীর প্রেমের জন্য তিলে তিলে শেষ করে দেয় নিজেকে। আমাদের সমাজে হঠাৎ কেউ ছ্যাঁকা খেলে বলি, কিরে দেবদাস হয়ে গেলি প্রতি-টা বাঙালী প্রেমিকের সত্যিকারের প্রেম চলে গেলে সে কিছু সময়ের জন্য দেবদাস হয়ে যায়,যদিও এমনটা দেখা যায় বাচ্ছা তরুণ বয়সেই।
‘দেবদাস' উপন্যাসের একশত বছর পার করলেও জনপ্রিয়তার শীর্ষ থাকা চরিত্রগুলো আজও মহীয়ান্। মাত্র ১৭ বছর বয়সে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 'দেবদাস' উপন্যাস লেখেন। অনেকে বলে থাকেন, শরৎচন্দ্রের নিজের জীবনের গল্পই উঠে এসেছে 'দেবদাস' উপন্যাসে। শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর ভেতর মানব-মানবীর প্রেম কেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন উপন্যাসিক। দেবদাস-পার্বতীর পর তার আরেকটি সৃষ্টজুটি প্রশংসা কুড়িয়েছেন পাঠক মহলে তা হলো, শ্রীকান্ত ও রাজলক্ষ্মী।
'দেবদাস' জনপ্রিয় হওয়া আরো একট কারণ হলো ছবি। বই প্রকাশিত হওয়া পর আজ অব্দি দেবদাস উপন্যাস কে কেন্দ্র করে ১৬টি ছবি র্নিমান হয়েছে দেবদাস ছবি দেবদাস চরিত্র কে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। টালিগঞ্জের পরিচালক নরেন মিত্র প্রথম ১৯২৭ সালে 'দেবদাস' নির্বাক়্ ছবি করেন। ছবিতে দেবদাস, পার্বতী ও চন্দ্রমুখীর ভূমিকায় ছিলেন ফণী শর্মা, তারকবালা ও নিহার বালা। এরপর থেকে উদূ,বাংলা,হিন্দি,তামিল,তেলিগু ভাষায় বহুসিনেমা হয়। এপার-ওপার মিলিয়ে বাংলা ভাষায় দেবদাস কে নিয়ে চারটি সিনেমা হয়। হিন্দি ভাষায় হয় তিনটি ছবি। ২০০০ সালের শারুখ খান, ঐশ্বরিয়া রায়,মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত ছবি প্রচুর জনপ্রিয় তা পায় এবং সেই সময়কার সর্বোচ্চ বাজেট ৫০ কোটি রুপি ব্যায়ে নির্মিত হয়েছিল ছবিটি। ছবিটিতে শাহরুখ খান ছিলেন- দেবদাস, ঐশ্বরিয়া রায়, পার্বতী এবং মাধুরী দীক্ষিত ছিলেন চন্দ্রমুখী। সর্বশেষ চাষী নজরুল ইসলাম ২০১৩ সালে 'দেবদাস' বাংলা সিনেমা নির্মাণ করেন, সিনেমায় দেবদাস ছিলেন শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ছিলেন পার্বতী এবং চন্দ্রমুখী ছিলেন মৌসুমী।
‘দেবদাস' উপন্যাস বাংলা সাহিত্যর মাইল ফলক। একশত বছর ধরে মানুষের মনে প্রেম শিহরণ জাগানো অনুভূতির প্রকাশ। একশত বছর নয় শুধু যতদিন বাংলা সাহিত্য বেঁচে থাকবে ততদিন 'দেবদাস' বেঁচে থাকবে প্রেমের আলো হয়ে।
হারানো প্রেম খুঁজে ফেরা মানুষ রা কেমন হয় ? যে প্রেম হৃদয়ে বার বার দোল দেয় । একদিন না পেলে তাকে, শূন্য মনে হয় চারপাশ। মনে হয় পৃথিবী মোহ যেন ফুরিয়ে গেছে । যার চোখের চাহনী শতাব্দীর ক্ষয় হয়ে যাওয়া সভ্যতা ফিরে পায় সে যদি বেঁচে থেকেও পরবাসী হয়? সে যদি কখনো না ফিরে হৃদয় নীড়ে? কি করবে তুমি ? তার প্রতি রাগ করবে? তাকে ভাঙবে কাচের মত ? তার অমঙ্গল কামনা করবে?। সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো ফুরায় না। প্রেমিকা কে না পেলেও তার অমঙ্গল কামনা করেনা। হৃদয় হারানো প্রেমিকটি
যাকে পাওয়া অসম্ভব জেনেও ভালোবেসে যায় তার ঘ্রাণ আঁচল মায়া অবিরাম বেচেঁ থাকার ছন্দ তুলে। হারানো প্রেম কোন কোন সময় আত্মরোগ ধারণ করে যেমনটা চিহ্ন পাই শরৎচন্দ্রের 'দেবদাসে'।
বাংলা সাজহিত্যর কালজয়ী উপন্যাস 'দেবদাস' প্রকাশিত হয় ১৯১৭ সালের ৩০ই জুন।বাংলা সাহিত্যর সব চেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাসের নাম 'দেবদাস'। উপন্যাসিককে চিনে না অথচ তার সৃষ্ট চরিত্রের গল্প জানে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক আছে। এখানেই লেখকের সফলতা। যখন চরিত্রগুলো শুধু উপন্যাসিকের থাকে না এর ভেতর মানুষের মমতা ,ভালোবাসা,স্নেহশীলতা কাজ করে একশত বছর পরও যে চরিত্রের ভেতর মানুষের প্রেম খুঁজে পায় যে চরিত্র অমর হয়ে আছে, ভোরের আলোর মত উচ্ছ্বাস ছড়ায় চারপাশ।
মুখরিত করে প্রেরণার মুর্হুতগুলোকে। বাংলা সাহিত্য দেবদাসের মত অন্য কোন উপন্যাস এত জনপ্রিয় তা পায়নি কখনো।
'দেবদাস' প্রকাশের পর শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয় তা ছড়িয়া যায় আকাশচুম্বী। এক নিটোল প্রেমের উপাখ্যান আজও মানুষের প্রাণে বেচেঁ আছে। 'দেবদাস' উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্যর অন্য সব জনপ্রিয় প্রেম উপন্যাসের মত মানব মানবীর চাওয়া পাওয়া-নাপাওয়ার প্রতিছবি প্রকাশিত হয় উপন্যাসে। 'রোমিও- জুলিয়েট’,যেমন ইংরেজি সাহিত্যর রোমান্টিক জনপ্রিয়তার শীর্ষ আছে তেমন 'দেবদাস'। একশত বছর পার করলেও দেবদাসের উপন্যাসের চরিত্রগুলো যেন মানুষের ভেতর স্পর্শ-ময় হয়ে আছে। মহানগরের শিক্ষিত শ্রেণী নয় শুধু,দেবদাসের গল্প গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে আছে গ্রামের মানুষ প্রেমের রোমান্টিক বই মানে 'দেবদাস' কেই জানে। শরৎচন্দ্রের 'দেবদাস' মাঠে-ঘাঁটে ছড়িয়ে গেছে। গ্রামে শীতের সময় নানা নাটকের আয়োজন করা হয় যেখানে দেবদাস পার্বতীকে নিয়ে নাটক পর্যন্ত হয়। গৃহস্থালী নারীরা সাংসারিক কাজ শেষ করে পাড়াগাঁ তে গল্প -গুজব কর, যেখানে উঠে আস তো দেবদাস পার্বতীর প্রেমের গল্প।
'দেবদাস' হৃদয়স্পর্শি উপন্যাস শরৎচন্দ্রের মত যদি বলি, 'গভীর ভালোবাসা শুধু কাছে টানে না দুরেও ঢেলে দেয়'। যেমনটা ঘটে 'দেবদাস' উপন্যাসে দেবদাসের ভাগ্যে-তে। শরৎচন্দ্রে তার উপন্যাস বাঙালী নর-নারীর প্রেমের গল্পই জানান দিয়েছেন তার উপন্যাসে। দেবদাস-পার্বতী ছোটবেলায় ছিল খেলার সাথী, এক সাথে স্কুল যাওয়া, বন-বা-ধরে ঘুরে বেড়ানো দেবদাস কখনো রাগ করে,পাবর্তীকে শারীরিক আঘাত করতো, পার্বতী সব সময় সয়ে যেত পার্বতী দেবদাস কে সব সময় দাদা ডাকতো। দেবদাসের ডাকনাম ছিল, দেব, আর পার্বতীর ডাকনাম, পারু। দেবদাস-পার্বতী দু'জন খেলার ভেতর দিয়েই একদিন বড় হয়ে উঠে। পার্বতী পরবিবার থেকে দেবদাসকে পছন্দ করে পার্বতীর সাথে দেবদাসের বিয়ে দিতে।
দেবদাসের বাবা ছিল জমিদার বংশের আর পার্বতীর বাবা সাধারণ বেচা কেনা করা ব্যবসায়ী। পাবর্তীর পরিবার থেকে দেবদাসের পরিবার কে দেবদাস-পার্বতীর বিয়ের প্রস্তাব দিল। পার্বতীর পরিববার কে হেয় করা হলো। পার্বতীর পরিবার জেদ করলো অন্য জায়গায় পার্বতীর বিয়ে দিবে। দেবদাস-পার্বতী কেউ পরিবারের বিপক্ষে যেতে পারেনি। পার্বতী বরের বাড়ি চলে গেল অন্যদিকে দেবদাস কলকাতায় মদের আড্ডায় নিজেকে বিলিয়ে দিল। পার্বতীর শূন্যতা দেবদাসকে পেয়ে বসলো। একদিন মদের আড্ডার আসরে পরিচয় হলো, চন্দ্রমুখির সাথে। চন্দ্রমুখী ওকে ভালোবাসা দিতে চায় কিন্তু দেবদাস পার্বতীর প্রেমে আসক্ত এক মাতাল, এক সময় দেবদাসের জীবন থেকে চন্দ্রমুখিও চলে যায়। পার্বতীও সাংসারিক হয় আর অন্য দিকে দেবদাস নিজেকে মদের কাছে সমর্পণ করে। পার্বতীর বরের বাড়ির পাশে দেবদাস মারা যায়,পার্বতী কাজের লোকের মাধ্যমে খোঁজ পায় দেবদাস মারা গেছে। পার্বতী পাগলের মত ছুটে থাকে মৃত দেবদাসের কাছে, পার্বতীকে বাসার সবাই আটকানোর জন্য দৌড়ে যায়। পার্বতী আর কখনো দেবদাসের দর্শন পায় না।
প্রেম হলো মানুষের সাধারণ প্রয়োজন প্রতিটি মানুষের ভেতর নায়ক হবার ইচ্ছা জাগে। ইচ্ছা জাগে কোন নারী কে আপন করে পাবার আর ইচ্ছা থেকেই স্থাপন হয় প্রেম। প্রেমের উদাহরণ সৌরুপ যেমন, লায়লি-মজনু,শিরি-ফরহাদ, আসে তেমনি আসে 'দেবদাস পার্বতী'। শহরতলীর ফেরি ঘাট থেকে শুরু করে মহানগরের ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাত বট তলার বইয়ের পাশে পাওয়া যায় বাংলার প্রেম উপাখ্যান খ্যাত 'দেবদাস' উপন্যাস।
শহরতলীতে তরুণ-তরুণীর প্রেম পড়ার আগে দেবদাস পড়াটা যেন বাধ্যতা মুলকছিল। প্রেমের স্মৃতি সৌরুপ প্রেমিক -প্রেমিকা কে বা প্রেমিকা -প্রেমিক কে 'দেবদাস' বই উপহার দিত। বাঙালীর রক্তের ভিতর দেবদাস পার্বতীর গল্প বহমান। 'দেবদাস' শব্দটার সাথে প্রেমে ছ্যাঁকা খাবার বিষয় যেন কাজ করে, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি,মুখে সিগারেট,হাতে মদের বোতল। প্রেমে ছ্যাকাঁ খাওয়া মানুষরা হঠাৎ করে উদাস হয়ে যায় তার আর ইচ্ছে জাগে না জীবনের প্রতি। পার্বতীর মত কেউ যেন জীবন থেকে প্রেম নিয়ে গেছে, মোহ,কল্পনা আচঁলের ঘ্রাণ বার বার ভিতর আন্দোলিত প্রেমিককে। সত্যিকার অর্থেই দেবদাসের মত উদাস করা মানুষ দেখা যায়, যারা নারীর প্রেমের জন্য তিলে তিলে শেষ করে দেয় নিজেকে। আমাদের সমাজে হঠাৎ কেউ ছ্যাঁকা খেলে বলি, কিরে দেবদাস হয়ে গেলি প্রতি-টা বাঙালী প্রেমিকের সত্যিকারের প্রেম চলে গেলে সে কিছু সময়ের জন্য দেবদাস হয়ে যায়,যদিও এমনটা দেখা যায় বাচ্ছা তরুণ বয়সেই।
‘দেবদাস' উপন্যাসের একশত বছর পার করলেও জনপ্রিয়তার শীর্ষ থাকা চরিত্রগুলো আজও মহীয়ান্। মাত্র ১৭ বছর বয়সে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 'দেবদাস' উপন্যাস লেখেন। অনেকে বলে থাকেন, শরৎচন্দ্রের নিজের জীবনের গল্পই উঠে এসেছে 'দেবদাস' উপন্যাসে। শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর ভেতর মানব-মানবীর প্রেম কেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন উপন্যাসিক। দেবদাস-পার্বতীর পর তার আরেকটি সৃষ্টজুটি প্রশংসা কুড়িয়েছেন পাঠক মহলে তা হলো, শ্রীকান্ত ও রাজলক্ষ্মী।
'দেবদাস' জনপ্রিয় হওয়া আরো একট কারণ হলো ছবি। বই প্রকাশিত হওয়া পর আজ অব্দি দেবদাস উপন্যাস কে কেন্দ্র করে ১৬টি ছবি র্নিমান হয়েছে দেবদাস ছবি দেবদাস চরিত্র কে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। টালিগঞ্জের পরিচালক নরেন মিত্র প্রথম ১৯২৭ সালে 'দেবদাস' নির্বাক়্ ছবি করেন। ছবিতে দেবদাস, পার্বতী ও চন্দ্রমুখীর ভূমিকায় ছিলেন ফণী শর্মা, তারকবালা ও নিহার বালা। এরপর থেকে উদূ,বাংলা,হিন্দি,তামিল,তেলিগু ভাষায় বহুসিনেমা হয়। এপার-ওপার মিলিয়ে বাংলা ভাষায় দেবদাস কে নিয়ে চারটি সিনেমা হয়। হিন্দি ভাষায় হয় তিনটি ছবি। ২০০০ সালের শারুখ খান, ঐশ্বরিয়া রায়,মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত ছবি প্রচুর জনপ্রিয় তা পায় এবং সেই সময়কার সর্বোচ্চ বাজেট ৫০ কোটি রুপি ব্যায়ে নির্মিত হয়েছিল ছবিটি। ছবিটিতে শাহরুখ খান ছিলেন- দেবদাস, ঐশ্বরিয়া রায়, পার্বতী এবং মাধুরী দীক্ষিত ছিলেন চন্দ্রমুখী। সর্বশেষ চাষী নজরুল ইসলাম ২০১৩ সালে 'দেবদাস' বাংলা সিনেমা নির্মাণ করেন, সিনেমায় দেবদাস ছিলেন শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ছিলেন পার্বতী এবং চন্দ্রমুখী ছিলেন মৌসুমী।
‘দেবদাস' উপন্যাস বাংলা সাহিত্যর মাইল ফলক। একশত বছর ধরে মানুষের মনে প্রেম শিহরণ জাগানো অনুভূতির প্রকাশ। একশত বছর নয় শুধু যতদিন বাংলা সাহিত্য বেঁচে থাকবে ততদিন 'দেবদাস' বেঁচে থাকবে প্রেমের আলো হয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৪