somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুশদেশের সত্যিকথা ১৩

২৬ শে জুলাই, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাকুনিন সমস্ত কর্তৃত্বকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো পক্ষপাতী ছিলেন । তিনি অভিজাততন্ত্র বিলোপ করে 'প্রোলেতারিয়েতের একনায়কতন্ত্র' কায়েমেরও ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন এই বলে 'যে লংকায় যায় সেই রাক্ষস হবে । তার চেয়ে গদীশুন্য মানব সমাজ গঠনের খোয়াব দেখতে হবে আমাদের ।'

কখন বলেছেন? ১৮৭০ এর দশকে যখন কোনো মার্ক্সিস্ট রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা একেবারেই একাডেমিক বা বিপ্লবী স্বপ্ন । এই ভবিষ্যতবাণী বলা যায় খানিকটা ফলে গিয়েছিল, কিন্তু প্রস্তাবের দ্বিতীয় অংশ বাড়াবাড়ি রকমের ইউটোপিয়ান । এখনো, এই একুশ শতকে এসেও আমরা 'রাষ্ট্রযন্ত্র' বা 'রাষ্ট্র কাঠামো দুটিকেই বহাল তবিয়তে থাকতে দেখি ।

তবু সেইন্ট পিটার্সবুর্গে প্রবল নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে কতিপয় বুদ্ধিজীবি, (সংখ্যায় তাঁরা পনেরোর বেশী হবেন না। 'শ্রমজীবি মানুষের মুক্তির জন্য কমিটি,' (মোটামুটি ওইরকমই হবে এর অনুবাদ) নামে এক জনহৈতিষী সংস্থার পত্তন করেন ১৮৮৩ সালে । বিপ্লবী মার্ক্সবাদকে এঁরা আদর্শ হিসেবে গ্রহন করেন । এদের মধ্যে থাকবেন পাভেল আক্সেলরোদ, গেওর্গি প্লেখানভ আর একজন বিশেষ নাম করবার মতো মহিলা ভেরা সাসুলিচ । বলা যায় এই কমিটিই সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বা পরবর্তী কালের কমিউনিস্ট পার্টির শিকড় বিশেষ ।

১৮৮০ এর দশকে তাঁরা কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ গুপ্ত পুলিশ (ওখ্রানকা, জার তৃতীয় আলেকজান্ডারের আমলে এই বাহিনীটি বিশেষ স্ফীত হয়েছিল ) তাড়া খেয়ে প্রায় সকলেই দেশান্তরী বা আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে বাধ্য হন । এঁদের সকলেই যে প্রাথমিক উৎসাহ ধরে রাখতে পারবেন তা নয় । অনেকে শোনা যায় টিকটিকি হিসেবে কমরেডদের সাথে বেঈমানী করেছেন, এবং ব্যাক্তিত্বের সংঘাত যেটা যে কোনো প্তিষ্ঠানের জন্যই অবশ্যাম্ভাবী তা তাঁদের পিছু ছাড়েনি । কোন্দল ও তৎসৃষ্ট দল-উপদল সৃষ্টি এঁদের হাত দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে ।

১৮৯৭ তে বেলারুসের প্রাদেশিক রাজধানী মিন্সকে তাঁরা জমায়েত হয়ে (অবশ্যই গোপনে!) রুশ রুশ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভিত্তি আনুষ্ঠানিক ভাবে পত্তন করেন । মার্ক্স আর এঙ্গেলসের কথাই তাঁরা মুল মন্ত্র ভেবে এগিয়ে যাবেন স্থির করেন । যদিও মার্ক্সবাদে রাশিয়ার মতো এরকম কৃষিভিত্তিক দেশে বিপ্লবের রাস্তা খুব ভাল করে বাতলানো হয় নি । তাতে তাঁরা চিন্তিত হলেন না । রোমানভ বংশ আর অভিজাততন্ত্র এই দুই জগদ্দল পাথর ওল্টাতে হবে । কোনো রকম 'গ্র্যাজুয়ালিজম' বা অন্তবর্তীকালীণ পন্থার মধ্যে দিয়ে তাঁরা যাবেন না, তবে বাকুনিনপন্থী (নিহিলিস্ট/সোশ্যাল রেভোল্যুশনারি) দের মতো বোম মেরে কাজ হাসিলের রাস্তায়ও তাঁরা হাঁটবেন না ।

এ রকম চিন্তাভাবনা করার আসলে বেশি না হোক কিছু বাস্তব ভিত্তি অবশ্যই ছিল । ১৮৯০ এর দশকে, সত্যি বলতে কী ১৮৮০ এর দশকেই রাশিয়া শিল্পায়নের দিকে পা বাড়াতে শুরু করেছে । আর কিছু না হোক এর বিশাল জনসংখ্যা, খনিজ-কৃষিজ-বনজ সম্পদের কারনেই রাশিয়াতে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে ছিল ইউরোপ-আমেরিকার শিল্পপতি মহল । আর বেহিসেবী ভুস্বামীদের অনেকে দেরীতে হলেও শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছিলেন । যদিও এর গতি ছীল খুবই ধীর তবু একটা শহুরে খেটে খাওয়া শ্রেণীর জন্ম নিচ্ছিল । তাদের ভিখারী সুলভ মাইনে আর জঘন্য কাজের পরিবেশের জন্য এই শ্রমিক শ্রেণী উগ্রপন্থী ট্রেড ইউনিয়নের অত্যন্ত উর্বর ভুমি বলে পরিগনিত হবে ।

শিল্প স্থাপন প্রক্রিয়া কেন্দ্রীভুত ছিল সেইন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে মস্কো , মস্কো থেকে ওদেসা এই রেখায় । তাতে খুব একটা অসুবিধা ছিল না । দেশের মাথারা ওইসব জায়গাতেই থাকতেন, আর মধ্যবিত্তের বিকাশও ঘটছিল ও সমস্ত শহরে । উদীয়মান মধ্যবিত্ত আর বর্ধনশীল শ্রমিকশ্রেণী, এ দুই শক্তিতে একজোয়ালে বাঁধতে পারলেই বিপ্লবের লাঙ্গল, একনায়কতন্ত্রের অহল্যাভুমি চিরে ভবিষ্যতের বীজবপনের কাজটা শুরু হবে । কিন্তু শুরুটা করবে কে?

সন্দেহ নেই এই বিপ্লবীরা শুরুতে (এবং শেষেও!) খুব কেতাবী ও তাত্বিক ভাবে অগ্রসর হচ্ছিলেন । যদি তাঁদের সংস্থাগুলো এরকম গোপনে কাজ করতে বাধ্য না হতো, যদি তাঁরা মানুষের সাথে মিশে ভোটের জন্য দাঁড়াবার অভিজ্ঞতা পেতেন তাহলে হয়তো তাঁদের অনেক 'বৈজ্ঞানিক' গোঁয়ারতুমি এমনিতেই চলে যেত । বাস্তব, যে কোনো 'দ্বন্দমুলক বস্তুবাদের' চেয়ে বাস্তববাদী শিক্ষক । কিন্তু সে সুযোগ তাঁরা পান নি । আর বৈপ্লবিক কর্মাকান্ডের বিবর্তনের জন্য কয়েক দশকের মতো সময় কতোটা পর্যাপ্ত সেটাও অবশ্য ভেবে দেখা দরকার ।

তবে তার আগে আরেকটু পিছনে ফিরে যাওয়া যাক । ১৮৮৭ সালের মে মাসে বড় ভাই আলেক্সান্দার উলিয়ানভের গ্রেফতার ও ফাঁসির পরে ছোটভাই (জন্ম ১৮৭০) ভ্লাদিমির না কি বলেছিলেন যে 'আমরা ও পথে যাবো না' (অন্তত পরবর্তীকালের জীবনীগুলোতে তাই লেখা আছে) । উলিয়ানভ পরিবার তখন কাজান থেকে চল্লিশ কিলোমিটারের মত দূরে কোকুশকিনোতে থাকতেন । তার কিছুকাল পরে তিনি কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য বহিষ্কৃত হন ।

তবে তিনি তাঁর লেখাপড়া ব্যাক্তিগতভাবে চালিয়ে যেতে থাকেন । যার মধ্যে ডাস কাপিটাল বইটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল । ১৮৯১ সালে তিনি সেইন্ট পিটার্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত ছাত্র হিসেবে যোগ দেন ও বছর দুয়েকের মধ্যে আইন পাশ করেন ।

এরপরে সামারা আর সেইন্ট পিটার্সবুর্গে ওকালতি করেছেন তিনি । ১৮৯৫ সালের ৭ ই ডিসেম্বর কর্তৃপ্ক্ষ আবারো 'রাজনৈতিক প্রচারণার' দায়ে সাইবেরিয়ার শুশেনস্কোয়ে গ্রামে তাঁকে চালান করে দেয় (কমিউনিস্ট জমানায়্এই গ্রামের নাম রাখা হয়েছিল 'লেনিনস্কোয়ে') । সেইখানে তখন গেওর্গি প্লেখানভও নির্বাসন কাটাচ্ছিলেন । লেনিন অনেক সময় কাটিয়েছেন এঁর সাথে পরে আবার বিচ্ছেদ হবে সে অন্য গল্প । ১৮৯৮ সালে রাজনৈতিক কর্মী নাদেজদা ক্রুপস্কায়াকে বিয়ে করেন । ১৯০০ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাসন দন্ড শেষ হলে তিনি বিদেশ যাবার দরখাস্ত করলেন কর্তৃপক্ষের কাছে ।

সাইবেরিয়াতে থাকার সময়েই সেখানকার লেনা নদীর প্রেমে পড়েন তিনি । এবং সে যুগের আরো অনেক বিপ্লবীর ছদ্মনাম নেন 'লেনিন' (লেনা থেকে) ।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×