somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবন্ধ

০১ লা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় ইন্দ্রিয়
বাবুল আবদুল গফুর

গোলাপকে মনে হয় লাল, শাপলা সাদা, অপরাজিতা নীল, মরিচ ঝাল, আমলকী টক, কাক কালো, ময়ূর বিচিত্র রঙে রাঙানো, আগুন উষ্ণ, বরফ শীতল। কেন এমন মনে হয়? কিসের জোরে আমরা এগুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে পারি? কোন অদৃশ্য শক্তি, না আমাদের শারীরিকি বিশেষ গঠন?
পাখি উড়ে যাওয়ার যে মনোরম হৃদয় কাঁপানো দৃশ্যটি আমরা চোখ দিয়ে অনায়াসে টেনে উপভোগ করি, প্রিয়তমার প্রিয় হাত ধরে রক্তের পর্দায় বুঝতে পারি কিভাবে ঢেউ উছলে পড়ছে- বুঝতে পারি সবচেয়ে সুখী চোখ দুটির রঙ! কেন?
এর কারণ হলো ইন্দ্রিয়। মানুষকে পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধের সন্ধান দিয়েছে আমাদের প্রিয় ইন্দ্রিয়। এত এত বিচিত্র রূপের সন্ধান কোন মানুষ দেয়নি, দিয়েছে আমাদের প্রিয় ইন্দ্রিয়গুলো।
মানুষের মূল ইন্দ্রিয় ধরা হয় ৫টিকে। যদিও শাখা-উপশাখায় এর প্রকারভেদ বিভিন্ন। সেগুলো কী? সেগুলো হলো-
১। দর্শণেন্দ্রিয় (Opthalmoceptor)
২। শ্রবণেন্দ্রিয় (Audioceptor)
৩। স্বাদেন্দ্রিয় (Gustaoceptor)
৪। ঘ্রাণেন্দ্রিয় (Olfacoceptor)
৫। স্পর্শেন্দ্রিয় (Tactioceptor)
যদিও এর বাইরে আরও একটি ইন্দ্রিয়কে বিজ্ঞানীরা প্রধান বলে দাবি করেছে। সেটি হলো, মন। যেকিনা কোন কানেক্টর ছাড়া খুব সহজে অন্যের দু:খ, ভালো-মন্দ, হাসি-খুশি বুঝতে পারে, উপভোগ করতে পারে।
যদিও উল্লিখিত ৫টি ইন্দ্রিয় মিলে জ্ঞানেন্দ্রিয়। তাছাড়া, বাক্ পাণি পাদ পায়ু উপন্থ : এই পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয়। আর, মন বুদ্ধি অহঙ্কার চিত্ত ইত্যাদিকে বলা হয় অন্তরিন্দ্রিয় )। এরপরও ইন্দ্রিয়ের কিছু হিসাব নিকাশ ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। সেগুলো হলো-
- আত্মেন্দ্রিয় (Proprioceptor): যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘নিজের উপরে দখলদারি’। এই বিশেষ অনুভূতিটি মানুষকে তার দেহের আয়তন এ পরিমাপ সম্পর্কে সচেতন রাখে। যে কোনও সময়-পরিসরে দেহকে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে।
- তাপেন্দ্রিয় (Thermoceptor): এর দ্বারা মানুষ তার চারপাশের তাপমাত্রাকে টের পায়। এই অনুভবই মানুষকে তার দেহের তাপমাত্রাকে সমমাত্রিক রাখে। এর দ্বারাই আমরা বুঝতে পারি, কখন লেপমুড়ি দিতে হবে আর কখন ঠান্ডা ঘোলের সরবত খেতে হবে।
- ইকুইলিব্রিওসেপশন: এর কাজ দেহের ভারসাম্য বজায় রাখা। এর কৃপাতেই মানুষ হাঁটা বা দৌড়াপাঁচটি নয়, আরও ইন্দ্রিয় রয়েছে মানুষেরনোর সময়ে পড়ে যায় না। এর বাইরেও রয়েছে ক্ষুধা-তৃষ্ণা, সময় এবং দিক-সংক্রান্ত অনুভূতি। ক্ষুধা-তৃষ্ণার অনুভূতি আমাদের দেহ কখন পুষ্টি চাইছে, তা ব্যক্ত করে।
-চুলকানেন্দ্রিয় (Pruriceptor): শুনতে অদ্ভুত শোনালেও সত্যি যে চুলকানির জন্য সম্পূর্ন আলাদা ইন্দ্রিয় রয়েছে! চুলকানেন্দ্রিয়ের মূল কাজ হলো আমাদের ত্বকে বা কলাতে (skin or tissue) ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি নির্দেশের মাধ্যমে আমাদের সতর্কতা প্রদান করা যাতে করে আমরা যথাসময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।
- ব্যথান্দ্রিয় (Nociceptor): এর মাধ্যমে মানুষ শরীরে ব্যথার অনুভূতি প্রত্যক্ষভাবে বুঝতে পারে।
তাছাড়া আমাদে জিহ্বার মৌলিক স্বাদ ৫টি। সেগুলো হলো- খাবারের গ্রহণযোগ্যতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে স্বাদ, "মিষ্টি", "টক", "লবণাক্ত", "তিতা", ও "উমামি", যেগুলো মৌলিক স্বাদ নামে পরিচিত৷ মৌলিক স্বাদ হচ্ছে একটি স্বতন্ত্র স্বাদ যা অন্য স্বাদগুলোর সমন্বয়েও তৈরি করা সম্ভব নয়৷
মৌলিক স্বাদের মধ্যে, উমামি ১৯০৮ সালে ড. কিকুনায়ে ইকেদা আবিষ্কার করেন, তিনি কমবু দাশি স্যুপের (কেলপের স্যুপ স্টক) স্বাদের উপর মনোযোগ দেন, এবং আবিষ্কার করেন যে এই স্বাদের উপাদান হচ্ছে গ্লুটামেট৷ তিনি এই স্বাদের নাম দেন ‘‘উমামি।
সে যা হোক। এখন আপনার সামনে একটি আইস ব্যাগ রাখা হয়েছে কিন্তু স্পর্শ করা হয়নি, তবু আপনি ঠাণ্ডা শিহরণ অনুভব করলেন। এটা করলেন কিন্তু চোখ দিয়ে, মানে দেখেই আপনার মধ্যে ঠাণ্ডা অনুভূতি তৈরি হলোএকবার ভাবুন, কোন ইন্দ্রিয় দিয়ে এটা করলেন আপনি? বিজ্ঞানীরা এর নাম দেন টেনশন সেন্সর। আরো আছে তৃষ্ণার্ত হওয়ার ইন্দ্রিয়। ক্ষুধা পাওয়ার অনুভূতির কথাও মনে পড়ল। আরেকটি সেন্সরের কথাও বলা হলো—স্ট্রেচ। ফুসফুস, ব্লাডার, পাকস্থলীতে এর উপস্থিতিও মিলল। এই সেন্সর প্রভাব বিস্তার করে রক্তনালিতে। ফলাফল মাথাব্যথা। তাই বিজ্ঞানীরা এখন সহমত, ইন্দ্রিয় পাঁচটি নয়; অনেক। এমনকি মানুষভেদে এর সংখ্যা বাড়ে বা কমে!
ইন্দ্রিয় বাড়ুক বা কমুক। কিন্তু আমাদের উপভোগ করার জন্য এসব ইন্দ্রিয়ের অবদান অপরিসীম। নতুবা পাথর আর প্রাণীর পার্থক্য কোথায়? কোন অন্ধকে দেখুন, তার চলার পথ কতটা কঠিন, বধিরকে দেখুন, বোবাকে দেখুন- ইন্দ্রিয়ের প্রতি আপনার ভালোবাসা তৈরি হবে। এই যে, ভালোবাসা তৈরি হলো সেটাও কিন্তু একটা ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি। সত্যি সব অদ্ভূত। রহস্য।
রহস্য ভরা এ জিবন। আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো তাই আমাদের মৌলিক পুঁজি। আমাদের বেঁচে থাকার সবচেয়ে দামি উপাদান। বেগুনী, নীল, আসমানি, সবুজ, কমলা, লাল রঙের রঙিন, সাদা-কালো এ দুনিয়ার সবকিছু উপভোগ করার জন্য এগুলোর বিকল্প নেই। ভাবতে বুকের মধ্যে একধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সত্যি তো, কতকিছু আমরা ধারণ করে বেঁচে আছি, আবার কতকিছুই রেখে একদিন চলে যাবো। আহ!!

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:২৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×