somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামপাল - কয়লা পরিবহণ ঝুঁকি, জাহাজীদের কাঁঠাল, গোঁফ আর তেল

৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশী মেরিনাররা একটা কঠিন সময় পার করছি। মেরিনাররা দেশের প্রতিনিধি সাগরে, বন্দরে, বাহিরের দেশে। কিন্তু আমাদের দেশের ভাবমূর্তি আর অথর্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অনাগ্রহের ফলে ভিসা নাই, চাকুরীর সুযোগ কমে গেছে আমাদের। অবস্থা যখন এই, তখন গাছের কাঁঠালের মতো রামপাল এসে হাজির!
রামপালে মেরিনারদের কয়লা পরিবহণ ব্যাপারটায় ইন্টারেস্ট বেশি। তাই পরিবহণের কাঁঠাল দেখে অনেকেই গোঁফে তা দিচ্ছি।

উইকিতে লিখসে, রামপালে প্রতি বছর 4.72 মিলয়ন টন কয়লা আমদানী করতে হবে। বিশাল এমাউন্ট কিন্তু এইটা। কয়লা দেশের বাইরে থেকে আসবে মার্চেন্ট শিপে করে। বাল্ক ক্যারিয়ার শিপ। এইটা শুনে দেশের অনেক জাহাজীরা খুব হ্যাপী!!

কারন, স্বাভাবিক হিসেব মতে নিজেদের প্লান্টের কয়লা নিজেদের শিপ দিয়ে আনলে খরচ অনেক কম পড়বে। তাই, অনেকেই আশা করে আছেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন এত্তোগুলো জাহাজ কিনবে। তারপর নিজেদের কয়লা নিজেদের জাহাজ এবং জাহাজীরাই বহন করবে। কি মজা!! চাকুরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো!

উইকি আরও লিখসে, প্রতিটা ৮0,000 হাজার টনের মার্চেন্ট শিপ হিসেবে প্রতিবছর 59 টা জাহাজ মংলা পোর্টে আসবে! ওয়াও! জাস্ট ওয়াও!!

একজন জাহাজী হিসেবে এর চে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে!


অবশ্য ৮0,000 টনের জাহাজ বাংলাদেশে কারও আছে বলে জানা নাই। যেগুলো আছে সেগুলো সাধারণত 40,000-55,000 টনের জাহাজ। তাই 59 জাহাজ কয়লাতেও পোষাবে বলে মনে হয় না। সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলেই আমার বিশ্বাস। তাছাড়া মংলায় আশি হাজার টনের জাহাজের ড্রাফটও নাই। সেই সাগরে এংকর করে ডিসচার্জ করতে হবে। তারপর যদি ড্রাফট কমিয়ে মংলার ভেতরে আসতে পারে। (মেরিনাররা, মংলার আউটারে কিন্তু মোবাইল নেটওয়ার্ক নাই, মনে রাইখ। � )


কিন্তু ভয় হইলো, সরকার আর বি এস সি কে নিয়ে। তারা আসলে এই বিপুল পরিমান কয়লা কিভাবে আনাবে তা পরিষ্কার করে নাই। শুনেছি Bangladesh Shipping Co. কিছু জাহাজ কেনার বাজেট পাশ করিয়ে ফেলেছে। তবে আমার সন্দ লাগে, রামপালের অসম চুক্তির মতো কিছু জাহাজ দাদাদের থেকে আনবে চার্টারে। সেক্ষেত্রে আমাদের মেরিনারদের সাথে প্রচন্ড অবিচার করা হবে। শুধু এই রামপাল প্রজেক্টের জাহাজগুলোতেই চকুরি করে দেশের মেরিনারদের বেকারত্ব 50% কমিয়ে ফেলা সম্ভব।


উপরের অংশটুকু মার্চেন্ট মেরিনারদের জন্য। তাদের কাঁঠাল।


নিচের অংশটুকু সাধারণ মানুষের জন্য।


আমরা জাহাজীরা অন্য দেশ থেকে কয়লা এনে মংলা পর্যন্ত এনে পৌঁছে দিলাম। এবার জাহাজ থেকে প্ল্যান্ট পর্যন্ত 40 কিলোমিটার নদী পথে কিভাবে কয়লা যাবে?


- পিচ্চি পিচ্চি লাইটার জাহাজে করে।


আমরা আউটারে মাদার ভেসেল নিয়ে এংকর করবো আর লাইটার শিপ আমাদের পাশে ভিড়ে এংকর করবে। জাহাজের ক্রেন দিয়ে লাইটারে কয়লা দেওয়া হবে, সেই লাইটার পশুর নদী দিয়ে রামপালে কয়লা নিয়ে যাবে।


এখন কয়লা পরিবহনের এই পর্যায়ে এসে সবচাইতে বড় ঝুঁকি জড়িতে যা সুদরবনের ডাইরেক্ট ক্ষতি করতে পারে।

1. 4.72 মিলিয়ন টন কয়লা যাবে প্রতিবছর মাদার ভেসেল থেকে প্ল্যান্টে। গড়ে লাইটারের ক্যাপাসিটি 500-1500 টন হয়। বুঝার জন্য 1000 টনের হিসেবে 4,720 ট্রিপ লাইটার যাওয়া আসা করবে মাদার ভেসেল টু রামপাল!


এখন, আসেন লাইটার শিপগুলো নিয়ে ধারনা দেই। কম বেশি সবাই লাইটার শিপ দেখসেন, অভ্যন্তরীণ নদীতে পন্য পরিবহন করে তারা। দেশীয় লোকজন সেগুলে চালায়।


এতোগুলো নতুন লাইটার নিশ্চয়ই কিনবে না, যেগুলো আছে সেগুলো দিয়েই পরিবহণ করবে। ঘটনা যেটা সেটা হলো, লোকালবাসের মত কাগজে কলমে তাদের ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকলেও তাদের বেশিরভাগই ফিটনেস বিহীন। তাছাড়া নৌপরিবহন অধিদপ্তরের যে ইঞ্জিনিয়ার ফিটনেস সার্টিফিকেট দেন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে জাহাজ পরিদর্শন না করেই টাকার বিনিময়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যু করার।


উদা - 2012 তে শরীয়তপুর 1 নামের লঞ্চটা ডুবে 147 জন যাত্রী নিহত হন, 2015/16 তে এসে সেইটা আবার যাত্রী পরিবহণ করার সার্টিফিকেট পাইসে- যাত্রীদের প্রাণের মায়া না করে যে সার্ভেয়র লঞ্চের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয় সে লাইটারের তলা আর ইঞ্জিন চললেই সার্টিফিকেট দিয়া দিবে, সুন্দরবনের মায়া করবে কচুটা।


লিংক- http://goo.gl/Pf6uX8

2- লাইটার জাহাজের ইঞ্জিন বিকট শব্দ করে, মনে হবে হাজারটা মেশিনগান একসাথে গুলি ছুঁড়তেসে, ঠ্যাঠ্যাঠা।
যারা দেখসেন তারা জানেন। বিকট শব্দে সুন্দরবনের অভ্যন্তরীণ শান্ত পরিবেশ নষ্ট হবে।


3- বাংলাদেশি লাইটার ফিটনেসের অভাবে কদিন পর পর ডুবে যায়। কদিন আগেই সুন্দরবনে তেলবাহী টেংকার ডুবসে। যে পরিমাণ জাহাজ যাতায়াত করবে সুন্দর বনের ভেতর দিয়ে তাতে প্রতিবছর যে কয়টা করে লাইটার ডুববে তা চিন্তার বিষয়। ডুববে এইটা শিউর।
কে জানি কইসিলো, কয়লা পানি পরিষ্কার করবে। বোকচোদ, সুন্দরবনের পানি এমনিতেই অনেক পরিষ্কার, কয়লার জাহাজ ডুবাইয়া পরিষ্কার করার কোন প্রয়োজন নাই।


তাছাড়া লাইটারে জ্বালানি তেল থাকে। লাইটার ডুবলে সে তেল বেরিয়ে পড়ার আশংকাও আছে।

4- বাংলাদেশের পানিতে আইন কানুন খুব ঢিলে, পতেংগায় এক পাশে নেভাল একাডেমী, কোষ্টগার্ডে, বনৌজা ঈশাখাঁ। তারপরেও সেইখানে লাইটার শিপগুলো কোনকিছুর তোয়াক্কা করে না। তেলবাহী লাইটারগুলো দিনে দুপুরে কার্গোহোল্ড ধুয়ে তেল ফেলে সাগরে। কোন মনিটরিং নাই কিসুই নাই।


2011 সালে সামুতে এইটা নিয়া একটা প্রমাণভিত্তিক লেখা আছে, স্টিকিপোস্ট, চাইলে দেখে আসতে পারেন।


লিংক- http://goo.gl/nnzmt8
সুন্দরবনেও এরকম হবে আশা করি। আমরা এখনো এতো সভ্য হই নাই।


5- লাইটারের ইঞ্জিনরুমে বিলজ জমবে- ইঞ্জিনরুমের বিলজ মানে মেশিনারিজের তেল মিশ্রিত পানি। এই পানি কোনভাবেই অভ্যন্তরীণ পানিতে ফেলার নিয়ম নাই। লাইটারগুলো সেগুলোর তোয়াক্কা করলে তো! বাংলাদেশের লাইটার সেগুলো সুন্দরমতো ফেলে দিচ্ছে নদীতে। পশুর নদীর নাম হবে কালা পশুর।

6- লাইটারে সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নাই, লাইটারের লোকজনের হাগুমুতু সোজা পানিতে। যারা নদীতে গোসল করেন তাদের এগুলো দেখার কথা। �


আমি জাহাজী দৃষ্টিতে রামপালের কয়লা পরিবহণে আপাতত এই ঝুঁকিগুলো পেলাম।


আসলে পুরো রামপালটাই একটা নিশ্চিত ধ্বংশ, সুন্দরবন অবশ্যই ধ্বংশ হবে, আবুল মাল মুহিতও সেটা স্বীকার করেছেন।
আর আনু সাহেব যেরকম রামপাল চাই না আন্দোলন একা একা করতে চান তাতে ষড়যন্ত্রের পালের গোদা তাকেই মনে হয়। সেই পুরুনো কথাটাই তার জন্য প্রযোজ্য- বাংগালি একাই একশ হতে পারে কিন্তু একশ বাংগালি এক হতে পারে না ব্লা ব্লা ব্লা।


কিন্তু আমার মনে হয় না কেউ আওয়ামীলীগকে রামপাল থেকে বিরত রাখতে পারবে। আনু সাহেবও সুন্দরবনের সাথে পলিটিক্স করে ফেললেন, আওয়ামীলীগের কঠোর মনোভাবের কাছে দেশের মানুষের চাওয়ার পরাজিত ঘটবে মনে হয়।


রামপাল যদি হয়েই যায় আর আমি যদি কখনো রামপালের কয়লাবাহী জাহাজে চাকুরী করি তাহলে জাহাজের ব্রিজে শুয়ে স্মোকবাথ করবো। আমার মতো কাল চামড়ার কেউ জাহাজে বেড়াতে আসতে চাইলে দাওয়াত থাকলো। মিলেমিশে স্মোকবাথ করা যাবে আর আপনার জাহাজও দেখা হবে।


গোঁফে তেলটা কি বেশি বেশি হয়ে গেল?


আর যদি আমরা পারি রামপালকে ঠেকিয়ে দিতে, এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে পারি ফিরিয়ে আনতে তাহলে সুন্দরবন বেঁচে যাবে, বাঘমামারা বেঁচে যাবে, আরও অনেক কিছুই হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা সুন্দরবনকে হস্তান্তর করে যেতে পারবো অক্ষত অবস্থায়।


আমরা মেরিনাররাও কাঁঠালের কথা ভুলে যাব, গোঁফের তেল ধুয়ে শেইভ করে ফেলবো খুশি মনে, আমরা আফসোস করবো না চাকুরী নিয়ে। সমুদ্র অনেক বিশাল। জাহাজীদের মনটাও তাই!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:০২
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×