গৎ বাঁধা উদয়াস্ত পরিশ্রম হজম করেই দক্ষ হস্তশিল্পী হিসেবে নিজেকে তৈরি করে ফেলেছেন আনসার সদস্য মোহাম্মদ মানিক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের ফাঁকে পুঁতি দিয়ে লেডিস ব্যাগ তৈরির সময় মঙ্গলবার দুপুরে এই মানিকের দেখা পাওয়া যায় রাজধানীর পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালের সম্মুখে।
এই ব্যাগ তৈরি করতে করতেই মানিক নানা প্রশ্নের উত্তর দেন আমাদের সময় ডটকমের। তার ভাষ্য অনুযায়ী- ২০১৩ সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনন্সে বদলি করা হয় তাকে। এখানে তিনি দেখা পান আনসার সদস্য রবিউলের। যিনি পুঁতি দিয়ে ব্যাগ তৈরি করতেন। রবিউলের কাছেই হাতে খড়ি হয় মানিকের।
চার বছর ধরে আনসারে কর্মরত মানিক বলেন, ‘দেখতে সুন্দর লাগতো। ওনার কাজ দেখে আমারও শখ জেগেছিল, এরকম কাজ শেখার’।
জামালপুর সদরের সন্তান মানিকের বাবা জুলহাস ও মা আমেনা বেগম। এই দম্পত্তির তিন কন্যা ও দুই ছেলের মধ্যে মানিক সবার ছোট।
বর্তমানে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের প্রটোকল দলের সদস্য তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে যখন তার দেখা পাওয়া যায়, তখনও মানিক প্রটোকল দলের হয়ে এসেছিলেন। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে দেখতে রেলমন্ত্রী ছিলেন স্কয়ার হাসপাতালের ভেতর। আর মানিক সময়টাকে অর্থবোধক কাজে ব্যয় করছিলেন হস্তশিল্প দিয়ে। নির্ধারিত পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধানরত, অস্ত্রসহই মানিক পুলিশ ভ্যানে বসে কাজ করছিলেন, তার পাশে কিছু ব্যাগে দেখা যায়, পুঁতি, সুঁতোসহ অন্য সরঞ্জাম।
মানিক বলেন, ‘অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা কাজের সময় পাই। ইচ্ছে তো করে সারাদিনই এটা-সেটা বানাই’।
রবিউলের কাছ থেকে ব্যাগ তৈরি শিখলেও হস্তশিল্পের নেশায় বিভোর মানিক নানা ধরণের ফলমূল, নারীদের অলঙ্কার তৈরি করা শিখে ফেলেছেন নিজের ইচ্ছায়। নিজের ব্যবহৃত স্যামসাং ব্রান্ডের স্মার্ট ফোন থেকে কিছু ছবি দেখিয়ে মানিক আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, এই দেখেন ভাই। এইগুলা বিভিন্ন মার্কেট থেকে তোলা ছবি। এভাবে নতুন ডিজাইন সংগ্রহ করি। ছবি দেখে দেখে বানাই। অনেক সময় নিজের বুদ্ধি থেকেও নতুন ডিজাইন তৈরি করি।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান মানিক এই কাজের মাধ্যমে বাড়তি আয় করতেও সক্ষম হচ্ছেন। সুনির্দিষ্ট কোনো বিক্রয় কেন্দ্র না থাকলেও তার কাছ থেকে মানুষ কিনছেন এসব। তিনি জানান, প্রতিটি বড় আকৃতির লেডিস ব্যাগ এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০, ফল (আঙ্গুর, আপেল, টমেটো, কমলা, লিচু) ১০০, কানের দুল-মালা-জাদুর কাঠি ৫০টাকায় বিক্রি করেন।
বিক্রি পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, গাড়িতে বসে যখন কাজ করি, তখন অনেকেই দেখেন। তখনই তৈরি মাল থাকলে বিক্রি করে ফেলি। এখনও পাঁচটি কাজের আগাম অর্ডার আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মানিকের মনে চায়- কাজ আরও শিখতে। বিক্রি করুক আর নাইবা করুক।
মানিক বলেন, দৈনিক যদি ২ ঘণ্টা কাজ করতে পারি, তবে মাসে ৩ হাজার টাকা বিক্রি ব্যাপার না। এসব বিক্রি করে আমার মোবাইল খরচ, হাত খরচটা অন্ততঃ হয়ে যায়, অল্প বেতনের টাকার একটি অংশ বেঁচে যায়। এতে বাবা-মায়ের হাতে কিছু বেশি পরিমাণে হলেও টাকা পাঠানো যায়।
আনসার সদস্য মানিকের পুঁতির তৈরি অসাধারণ কাজ
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫১