রিং বা কাটাছেঁড়া ছাড়া হৃদরোগের চিকিৎসা
বেশ কিছুদিন যাবত হৃদরোগ চিকিৎসায় রিং এবং বাইপাস সার্জারীর বিপক্ষে কিছু স্বার্থপর লোক অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা একটি প্রতিষ্ঠিত আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে । ইদানীং তাদের উদ্দেশ্য যে আংশিক সফল হচ্ছে তার একটি প্রমাণ হল প্রথম আলো পত্রিকার ৩য় পৃষ্ঠায় বড় সাইজের বিজ্ঞাপন। সেখানে বলা হচ্ছে যে, রিং বা কাটাছেঁড়া ছাড়া হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসা তারা দিচ্ছে।
এটা সম্পূর্ণ একটি অবৈজ্ঞানিক ব্যাপার।
কথা হল রিং বা কাটাছেঁড়া কোন বিষয় নয়। বিষয় হল আপনার রোগটি কি, তার মাত্রা কি, পরিধি কি, তার উপর নির্ভর করছে কোন্ চিকিৎসা পদ্ধতি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
হৃদরোগের ব্লক চিকিৎসার ৩টি পদ্ধতি আছে:
১। উপযুক্ত ওষুধ প্রয়োগ।
২। প্রয়োজনে stenting বা রিং এর ব্যবহার।
৩। বাইপাস বা ওপেন হার্ট সার্জারীর প্রয়োগ।
এখন প্রশ্ন হল কোন্ রোগীর কোন্ পদ্ধতি লাগবে?
প্রথমেই আপনার রোগের মাত্রা পরিধি বুঝে নিতে হবে।
হাই প্রেসার, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল ইত্যাদি আছে কিনা, থাকলে অবশ্যই ওষুধ, ব্যায়াম এবং খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে। ধূমপান অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে।
আপনার কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে। ইসিজি ইকো করে একটি সার্বিক ধারণা নিতে হবে। এরপরে প্রশ্ন আসবে আপনার ETT করতে হবে কিনা, অথবা সরাসরি angiogram করতে হবে কিনা।
ইটিটি , এ্যানজিওগ্রাম করার পর আপনার ব্লকের মাত্রা পরিধি বিস্তৃতি বুঝা যাবে।
এরপরে নির্ধারণ করতে হবে তিনটি পদ্ধতির কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত ।
১। যদি ছোট ছোট ব্লক, দূরবর্তী কোন শাখায় ব্লক হয়ে থাকে তাহলে ১ নম্বর পদ্ধতি অর্থাৎ শুধু ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা।
২। যদি হার্টের তিনটি মেজর রক্তনালীর এক বা দুটিতে ৭০% বা তার বেশী ব্লক ধরা পড়ে তাহলে ওষুধের পাশাপাশি রিং লাগানো যেতে পারে।
৩। যদি হার্টের তিনটি মেজর রক্তনালীর তিনটিতেই ৭০% বা তার বেশী ব্লক দেখা দেয় তাহলে ওষুধের পাশাপাশি ওপেন হার্ট সার্জারী বা বাইপাস করা যেতে পারে। তবে সার্জারী করা সম্ভব না হলে ( যেমন ক্যান্সার, ব্রেন স্ট্রোক, কিডনি ফেইল্যুর , রোগীর অনিচ্ছা ইত্যাদি) রিং লাগানো যেতে পারে।
এখানে লক্ষনীয় যে, তিনটি পদ্ধতির ক্ষত্রেই ওষুধের ব্যবহার অত্যাবশ্যক । ওষুধ ছাড়া কোন পদ্ধতিই কার্যকর নয়। তাই ব্লকের মাত্রা পরিধির উপর নির্ভর করে কোন্ পদ্ধতি আপনাকে নিতে হবে।
অসৎ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মানুষকে কাটাছেঁড়ার ভয় দেখিয়ে হৃদরোগের কোন আধুনিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না। ধোঁকাবাজদের খপ্পর থেকে সাবধান হোন। কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করব।
১। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড: মনমোহন সিং বাইপাস সার্জারীর রোগী। ধোঁকাবাজদের অন্যতম সাজেল থেরাপী ভারত থেকে আমদানীকৃত।
২। আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন রিং এবং বাইপাস সার্জারী উভয় পদ্ধতির রোগী। বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জো বাইডেন রিং লাগানো রোগী।
৩। মজার ব্যাপার হল প্রথম আলোর তৃতীয় পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপনদাতা নিজেও একজন রিং লাগানো রোগী
কপি ডাঃ মাহবুর রহমান স্যার (ICU পপুলার হসপিটাল)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৪৪